বাজারভিত্তিক হলেও প্রথম দিনে ডলারের দামে প্রভাব পড়েনি
Published: 16th, May 2025 GMT
দেশে মার্কিন ডলারের দাম তিন বছর পর বাজারভিত্তিক করা হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার বড় কোনো প্রভাব পড়েনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকির কারণে ব্যাংকগুলো বাড়তি দামে প্রবাসী আয়ের ডলারও কেনেনি। এদিন অনেক ব্যাংক ডলারের দাম ঘোষণা করেনি। ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার প্রথম দিনে ডলারের বাজার স্বাভাবিকই ছিল। ব্যাংকে প্রতি ডলার ১২৩ টাকার মধ্যে কেনাবেচা হয়েছে।
এদিকে খোলাবাজারে গতকাল সকালে ও বিকেলে দুই ধরনের দাম দেখা গেছে। সকালে ১২৪ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি হওয়া ডলার বিকেলে ১২৫ টাকার বেশি চেয়েছেন বিক্রেতারা। বিক্রি অবশ্য খুব বেশি হয়নি। ক্রেতাদের পাশাপাশি কিছু উৎসুক মানুষও ডলারের বাজারের খোঁজখবর করেছেন।
গত বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা দেন। মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের কিস্তি ছাড়ের শর্ত হিসেবে এ উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংস্থাটি ডলারের দাম কী হবে, তা ব্যাংক ও গ্রাহকের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির পক্ষ থেকে অবশ্য জোর তদারকি থাকবে। এখন বাজারে ডলারের একটি ভিত্তিমূল্য থাকবে। এর কাছাকাছি দামে কেনাবেচা করতে হবে। সে অনুযায়ী গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম আগের মতো ১২২ টাকা ঘোষণা করে। এই দামে গতকাল ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে ১ কোটি ৪১ লাখ ডলার কেনাবেচা করে।
গতকাল দেশের শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো এদিন বাড়তি দাম ‘অফার’ করেনি। বেশি দাম চাওয়া কয়েকটি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ডলার না কেনার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল কিছু ব্যাংক সর্বোচ্চ ১২২ টাকা ৫০ পয়সা দামে ডলার কেনে। আবার অনেক ব্যাংক ১২২ টাকার বেশি দাম দিতে রাজি হয়নি। যদিও ঈদকে সামনে রেখে বেশি প্রবাসী আয় আসছে। পাশাপাশি নগদ ডলারও দেশে ঢুকছে। ফলে ঈদের আগে ডলারের বাজার অস্থির হওয়ার আশঙ্কা নেই।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ব্যবসায়ীসহ গ্রাহকেরা ডলারের খবর জানতে গতকাল অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে বেশি খোঁজখবর নিয়েছেন। খোলাবাজারে খানিক চাপ দেখা গেছে। কেউ কেউ বাড়তি মুনাফার আশায় ডলার মজুত করার পরিকল্পনা করছেন বলে শোনা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলোতে পাঁচ কোটি ডলারের নগদ মুদ্রা মজুত আছে। এসব ডলার তারা সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা দামে বিক্রি করছে। ব্যাংকগুলো এখন সবার কাছে ডলার বিক্রি করছে। তাই গ্রাহকেরা যাতে বাজার থেকে বেশি দামে ডলার না কেনেন, এমন পরামর্শ দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব কর্মকর্তা।
তবে খোলাবাজার ও মানি চেঞ্জারগুলোতে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা দেখা গেছে। সকালে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ১২৪ টাকা ৭০ পয়সায়, যা বিকেলে বেড়ে ১২৫ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর পর থেকে বাজার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কর্মকর্তাদের শীর্ষ ব্যাংকগুলোতে পাঠিয়ে বাজার তদারক করা হচ্ছে। পাশাপাশি খোলাবাজারেও তদারকি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বুধবারই স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রয়োজন অনুযায়ী হস্তক্ষেপ করবে।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঈদের আগে রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক প্রভাব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারির কারণে ডলারের বাজার আপাতত স্থিতিশীল দেখা যাচ্ছে। খোলাবাজারে বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও সতর্ক থাকতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে নগদ ডলার বিক্রি বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রয়েছে। তবে আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (এসিইউ) বিল পরিশোধের পর এখন রিজার্ভ আছে ২০ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রিজার্ভ ৩১.৩১ বিলিয়ন ডলার
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ আরও বেড়ে ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। গত ২৮ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। সর্বশেষ ২০২৩ সালের মার্চের শুরুতে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছিল। এরপর ওই মাসের ১৫ তারিখ সর্বোচ্চ ৩১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার হয়। এছাড়া সব সময়ই এখনকার চেয়ে রিজার্ভ কম ছিল বলে জানা গেছে।
গ্রস রিজার্ভ বৃদ্ধির পাশাপাশি আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ বেড়ে ২৬ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি মেনে হিসাব প্রকাশের পর থেকে যা সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে গ্রস রিজার্ভের পাশাপাশি বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০২৩ সালের জুনে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতিতে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। আর গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। সেখান থেকে ধারাবাহিকভাবে কমে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে গত জুলাই শেষে নেমে যায় ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে এখন বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান. রিজার্ভ বৃদ্ধির মূল কারণ অর্থ পাচারে কঠোর নিয়ন্ত্রণ। যে কারণে চলতি অর্থবছরের দুই দিন বাকি থাকতেই প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্স ৩০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়েছে। আবার আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে সরকার ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো ঋণ পেয়েছে।