বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী আবু তৈয়ব (৪৫) বিদ্যুতায়িত হওয়ার বিষয়টি প্রথম নজরে আসে ভাড়াটে ফাতেমা বেগমের। তখন সকাল সাড়ে ছয়টা। নিজেদের চায়ের দোকান থেকে বাড়িতে ঢুকছিলেন ফাতেমা। তখন দেখতে পান, জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে আটকা পড়া তৈয়ব ছটফট করছেন। এ সময় ফাতেমা চিৎকার দিলে ভবনের তৃতীয় তলা থেকে তাঁর স্বামী ও ছেলে নেমে আসেন। নিরাপত্তা প্রহরীকে উদ্ধারে পানিতে নামার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতায়িত হয় তাঁর ছেলে রবিউলও।

চোখের সামনে প্রহরী তৈয়বের সঙ্গে নিজের ১৪ বছরের ছেলে রবিউলের করুণ পরিণতি দেখতে পান ফাতেমা। এখন হয়তো নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে তাঁর। তিনি এভাবে চিৎকার-চেঁচামেচি না করলে ছেলে নেমে আসত না, এমন ভাবনা মনের কোণে উঁকি দিতেই পারে। নিজেকে কোনোভাবেই সান্ত্বনা দিতে পারছিলেন না তিনি।

চট্টগ্রাম নগরের এম এম আলী সড়কের বশর ভিলায় আজ রোববার সকালে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। রাতে বৃষ্টি হওয়ায় জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান এ দুজন। আবু তৈয়বের বাড়ি মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া এলাকায়। তিন বছর ধরে তিনি এই বাসার নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করছিলেন। কিশোরগঞ্জের হ‌ুমায়ূন কবিরের ছেলে রবিউল ইসলাম পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। এরপর বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানে সময় দিত সে।

তিন ভাইয়ের মধ্যে রবিউল মেজ। পাঁচ মাস আগে তারা দোকানের কাছাকাছি এই বাসায় উঠেছে। দোকান নগরের জিইসি মোড় এলাকার মেট্রোপলিটন হাসপাতালের সামনে। হ‌ুমায়ূনের এই দোকানে বলতে গেলে পরিবারের সবাই সময় দেন। সকাল সকাল স্ত্রী ফাতেমা দোকানে কিছু মালামাল রাখতে গিয়েছিলেন। তিনি ফিরে আসার পথে এই দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে ফাতেমা বলেন, ‘বাসার নিচে পানি ছিল। যাওয়ার সময় কিছু হয়নি। দোকানে মালামাল রেখে ফিরে আসার সময় দেখি দারোয়ান পানির মধ্যে আটকে আছেন। তিনি হয়তো পানি সরানোর জন্য সুইচবোর্ডের দিক থেকে কিছু নিতে গিয়ে আটকে যান। তা দেখে আমি চিৎকার করি। আমি তখন রাস্তার দিকে। ওপর থেকে আমার ছেলে ও ছেলের বাবা নেমে আসে। কখন যে ছেলে দারোয়ানকে উদ্ধারে ছেলেটা পানিতে নেমে যায় টের পাইনি।’

তখনো সবাই ঘুমে। ফাতেমার ডাক শুনে বাসার অনেকে সিঁড়ির নিচে নেমে আসেন। আশপাশের লোকজনও জড়ো হন। আহাজারি করতে করতে ফাতেমা বলেন, ‘আমি যদি চিৎকার না দিতাম তাহলে ছেলে নেমে আসত না। সে ঘুমাচ্ছিল। চিৎকার শুনে বাপসহ নিচে আসে আমার রবিউল।’

ছেলের মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছেন না কিশোর রবিউলের মা ফাতেমা বেগম। আজ দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স মন প রহর

এছাড়াও পড়ুন:

আমার জীবনটা ট্র্যাজেডিতে ভরা

ছবি: দীপু মালাকার

সম্পর্কিত নিবন্ধ