চট্টগ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত কিশোরে মা বললেন ‘আমি না চিৎকার করলে রবিউল নামত না’
Published: 18th, May 2025 GMT
বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী আবু তৈয়ব (৪৫) বিদ্যুতায়িত হওয়ার বিষয়টি প্রথম নজরে আসে ভাড়াটে ফাতেমা বেগমের। তখন সকাল সাড়ে ছয়টা। নিজেদের চায়ের দোকান থেকে বাড়িতে ঢুকছিলেন ফাতেমা। তখন দেখতে পান, জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে আটকা পড়া তৈয়ব ছটফট করছেন। এ সময় ফাতেমা চিৎকার দিলে ভবনের তৃতীয় তলা থেকে তাঁর স্বামী ও ছেলে নেমে আসেন। নিরাপত্তা প্রহরীকে উদ্ধারে পানিতে নামার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতায়িত হয় তাঁর ছেলে রবিউলও।
চোখের সামনে প্রহরী তৈয়বের সঙ্গে নিজের ১৪ বছরের ছেলে রবিউলের করুণ পরিণতি দেখতে পান ফাতেমা। এখন হয়তো নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে তাঁর। তিনি এভাবে চিৎকার-চেঁচামেচি না করলে ছেলে নেমে আসত না, এমন ভাবনা মনের কোণে উঁকি দিতেই পারে। নিজেকে কোনোভাবেই সান্ত্বনা দিতে পারছিলেন না তিনি।
চট্টগ্রাম নগরের এম এম আলী সড়কের বশর ভিলায় আজ রোববার সকালে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। রাতে বৃষ্টি হওয়ায় জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান এ দুজন। আবু তৈয়বের বাড়ি মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া এলাকায়। তিন বছর ধরে তিনি এই বাসার নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করছিলেন। কিশোরগঞ্জের হুমায়ূন কবিরের ছেলে রবিউল ইসলাম পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। এরপর বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানে সময় দিত সে।
তিন ভাইয়ের মধ্যে রবিউল মেজ। পাঁচ মাস আগে তারা দোকানের কাছাকাছি এই বাসায় উঠেছে। দোকান নগরের জিইসি মোড় এলাকার মেট্রোপলিটন হাসপাতালের সামনে। হুমায়ূনের এই দোকানে বলতে গেলে পরিবারের সবাই সময় দেন। সকাল সকাল স্ত্রী ফাতেমা দোকানে কিছু মালামাল রাখতে গিয়েছিলেন। তিনি ফিরে আসার পথে এই দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে ফাতেমা বলেন, ‘বাসার নিচে পানি ছিল। যাওয়ার সময় কিছু হয়নি। দোকানে মালামাল রেখে ফিরে আসার সময় দেখি দারোয়ান পানির মধ্যে আটকে আছেন। তিনি হয়তো পানি সরানোর জন্য সুইচবোর্ডের দিক থেকে কিছু নিতে গিয়ে আটকে যান। তা দেখে আমি চিৎকার করি। আমি তখন রাস্তার দিকে। ওপর থেকে আমার ছেলে ও ছেলের বাবা নেমে আসে। কখন যে ছেলে দারোয়ানকে উদ্ধারে ছেলেটা পানিতে নেমে যায় টের পাইনি।’
তখনো সবাই ঘুমে। ফাতেমার ডাক শুনে বাসার অনেকে সিঁড়ির নিচে নেমে আসেন। আশপাশের লোকজনও জড়ো হন। আহাজারি করতে করতে ফাতেমা বলেন, ‘আমি যদি চিৎকার না দিতাম তাহলে ছেলে নেমে আসত না। সে ঘুমাচ্ছিল। চিৎকার শুনে বাপসহ নিচে আসে আমার রবিউল।’
ছেলের মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছেন না কিশোর রবিউলের মা ফাতেমা বেগম। আজ দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কঠোর অভিযানের মধ্যে কৌশলে পাথর ‘লুট’
নদীতে বড় বড় নৌযান সারিবদ্ধভাবে নোঙর করা, যা ‘বাল্কহেড’ নামে পরিচিত। শত শত শ্রমিক নদীর পাড়ে জমা করে রাখা পাথর টুকরিতে ভরে সেই সব নৌযানে ওঠাচ্ছেন। কাছেই নদীতে চলছে খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর), যা দিয়ে পানির নিচ থেকে পাথর ওঠানো হচ্ছে।
সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় পাথর লুটকারীদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের মধ্যেও এই দৃশ্য দেখা গেল কানাইঘাট উপজেলার লোভা নদীতে। লোভা নদী সীমান্তের ওপার থেকে এসে সুরমায় মিশেছে। এই নদীতেও পানির স্রোতের সঙ্গে ওপার থেকে পাথর আসে।
লোভা নদীর বাংলাদেশ অংশের শুরুতে একটি পাথর কোয়ারি (যেখানে পাথর উত্তোলন করা হয়) রয়েছে। সেই কোয়ারিতে ২০২০ সাল পর্যন্ত পাথর উত্তোলন করা যেত। তারপর সরকার আর কোয়ারি ইজারা দেয়নি, মানে হলো পাথর তোলা নিষিদ্ধ। তবে নিলামে বিক্রি করা পাথর স্থানান্তরের নামে এখন সেখানে লুট চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁরা বলছেন, পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা, যাঁরা বিএনপির কোনো কোনো নেতার সঙ্গে মিলে কাজটি করছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের সঙ্গে নিলামে পাথর কেনা ঠিকাদারের যোগসাজশ রয়েছে।
লোভা নদী সিলেট শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে। কানাইঘাট উপজেলা শহর থেকে এর দূরত্ব আট কিলোমিটারের মতো। গতকাল রোববার বেলা একটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত নৌপথে সুরমা নদী হয়ে ভারতের সীমান্তবর্তী লোভা নদীর জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, সুরমা নদীর কানাইঘাট বাজারের বিপরীত অংশ স্টেশন এলাকায় একটি বাল্কহেডে অন্তত ১৫ জন শ্রমিক পাথর তুলছিলেন। আশপাশের অন্তত আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাথরের এমন স্তূপ দেখা গেছে। পাশে ক্রাশার মেশিনে (পাথর ভাঙার কল) পাথর ভাঙার কাজও করছিলেন শ্রমিকেরা।
ভাঙার পর শ্রমিকেরা নৌকায় পাথর তুলছেন। গতকাল দুপুরে কানাইঘাটের লোভাছড়ায়