চা রপ্তানি বাড়াতে কাজ করছে সরকার: বাণিজ্য উপদেষ্টা
Published: 21st, May 2025 GMT
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে চা রপ্তানি বাড়াতে কাজ করছে সরকার। এ সময় তিনি চা শিল্পকে শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিক বাজারেও সমানভাবে তুলে ধরতে কাজ করার আহ্বান জানান।
আজ বুধবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পঞ্চম জাতীয় চা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি কথা বলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা শ্রমিকদের কাছ থেকে শুনতে পাচ্ছি চায়ের উপযুক্ত মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে বসেই ছোট্ট একটা হিসাব করে দেখলাম- যদি ৯ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপন্ন হয়, বাজারের যে মূল্যমানে বিক্রি হয় তাতে খসড়াভাবে ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকার চা বাজারে বিক্রি হয়। একই সময়ে যদি স্ট্রিট ভ্যালুতে কনভার্ট করি তাহলে মিনিমাম ডাবল থেকে ত্রিপল একটি মূল্যমান দাঁড়াবে। অর্থাৎ ভোক্তা পর্যায়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার ব্যয় সংগঠিত হয়।
তিনি বলেন, আমরা যদি এটার একটা সুষম বণ্টন করতে পারি তাহলে চা শিল্পের যে দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে যাচ্ছি, সেখান থেকে জাতীয় সম্পদ চা রক্ষার উপায় খুঁজে বের করতে পারব। চা শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনাকে আমাদের কাজে লাগাতে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। চা শিল্পে বিভিন্ন রকম শুল্ক ও কর অব্যবস্থাপনা আছে- আমরা সেটিকে বন্ধ করতে চাই। এই শিল্পে ডিসিপ্লিন আনতে চাই। যাতে এর মাধ্যমে বাজারে পণ্যমূল্যে স্থিতিশীলতা আসে এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
তিনি আরও বলেন, চা শিল্পের জন্য যত পরিমাণ জমি নিয়োজিত আছে তার একটা উপযুক্ত ব্যবহার দরকার। এর অন্যান্য ব্যবহার সেটা নবায়নযোগ্য জ্বালানি হোক অথবা পর্যটনকেন্দ্র হোক সেদিকে মনযোগ বাড়াতে হবে। তবে মূল লক্ষ্য হচ্ছে চা থেকেই চায়ের বাগানের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। চা শ্রমিক, মালিক সকলের সম্মিলিত চেষ্টা দরকার। চায়ের উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে বিক্রি মূল্য বাড়াতে হবে। বিক্রি বাড়াতে হলে চা পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও আকর্ষণীয় করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো.
অনুষ্ঠানে দেশের চা শিল্পে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ আট ক্যাটাগরিতে জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৫ প্রদান করা হয়। এছাড়াও জাতীয় চা দিবস উপলক্ষে এ বছর সর্বোচ্চ চা উৎপাদনকারী কারখানা ক্যাটাগরিতে দুইটি বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির হাতে সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন।
এর আগে বেলুন উড়িয়ে পঞ্চম জাতীয় চা দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। পরে তিনি চা মেলায় চায়ের বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ণ জ য উপদ ষ ট ব ণ জ য উপদ ষ ট প রস ক র
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’
হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।
এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।