আওয়ামী লীগের সময় শুরু হওয়া অবৈধ পুকুর খনন শেষ করার দায়িত্বে ‘বিএনপির লোক’
Published: 22nd, May 2025 GMT
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার একটি ফসলের মাঠে গত বছর বোরো ধান কাটার পরে অবৈধভাবে প্রায় দেড় শ বিঘার পুকুর খনন শুরু হয়েছিল। প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ‘আওয়ামী লীগের লোক’ হিসেবে পরিচিত হওয়ায় গত ৫ আগস্ট সরকার বদলের পর তাঁরা আর পুকুরের কাছে আসতে পারেননি। তবে পুকুর কাটার কাজ থামেনি। তাঁদের অসমাপ্ত পুকুর কাটার দায়িত্ব নিয়েছেন অন্য এক ব্যক্তি, যিনি এলাকায় ‘বিএনপির লোক’ হিসেবে পরিচিত।
নিয়ম অনুযায়ী ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে কোনো ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা বেআইনি। তারপরও দীর্ঘদিন ধরে দুর্গাপুর উপজেলাসহ আশপাশের এলাকায় অবাধে কৃষিজমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদ গত বছর সংসদ সদস্য হওয়ার পর দুর্গাপুরের উজান খলসী মৌজায় এই পুকুরের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিক কাগজপত্র ছিল তাহেরপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা কার্তিক সাহার নামে। গত ২৪ এপ্রিল এই প্রকল্প বুঝে নিয়েছেন একই এলাকার বিএনপি সমর্থক হিসেবে পরিচিত বেলাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আবুল কালাম আজাদ বর্তমানে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
দুর্গাপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আবুল কালাম আজাদ যখন গত সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন, তারপর তিনি এলাকায় নির্বিচার পুকুর খনন শুরু করেন। তখন তাঁর নাম পড়ে যায় ‘ভেকু কালাম’। দুর্গাপুরের উজান খলসী মৌজায় তিনি দেড় শ বিঘার পুকুর খননের প্রকল্প হাতে নেন। কাগজপত্রে এই প্রকল্পের মালিক দেখানো হয়েছিল কার্তিক সাহাকে। বর্তমানে দায়িত্বে থাকা বেলাল হোসেনের সম্পর্কে জানতে চাইলে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘বেলাল আমাদের দলের ছেলে।’
আরও পড়ুনরাজশাহীতে শহরে পুকুর ভরাট করে বড় দালান, গ্রামে চাষের জমিতে পুকুর খনন ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩কয়েক দিন আগে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিন সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুকুর খননের কাজ বন্ধ করে দিয়ে আসেন। তিনি তাঁদের আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়ে আসেন। জানতে চাইলে ইউএনও জানান, পুকুরটি বেলাল হোসেন নামের একজন ব্যক্তির প্রকল্প। আগে এই প্রকল্প কার্তিক সাহা নামের অন্য এক ব্যক্তির ছিল। তিনি বেলাল হোসেনের কাছে মালিকানা হস্তান্তর করেছেন। তিনি ইউএনও হিসেবে এই উপজেলায় যোগদান করার আগে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ ওই বিলে পুকুর খনন শুরু করেছিলেন বলে লোকমুখে শোনা যায়। কিন্তু কাগজপত্রে আবেদন দেখা যায়, কার্তিক সাহার নামে।
বিঘাপ্রতি বছরে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার চুক্তিতে পুকুর খননের জন্য কৃষকদের জমি ইজারা নেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার উজান খলসী এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র গ প র উপজ ল প ক র খনন শ প রকল প এল ক য় ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রজাতন্ত্রের আমি এমন কর্মচারী মালিককে শাস্তিও দিতে পারি: বাউফলের ইউএনও
পটুয়াখালীর বাউফলে ‘অবহিত না করে’ অনুষ্ঠান আয়োজন করা নিয়ে তর্কের জেরে উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতিকে শাস্তির হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সোমবার দুপুরে বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগমের কক্ষে বসে তিনি এই হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেছেন দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শহীদুল হক। যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ এইচ এম শহীদুল হক দৈনিক কালের কণ্ঠের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি ও বাউফল উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি। তিনি স্থানীয়ভাবে এমরান হাসান সোহেল নামে পরিচিত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় ও বাউফল দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল। দুপুর ১২টার সময় বিতর্ক প্রতিযোগিতার শেষ পর্বে অংশ নিতে বিদ্যালয়ে আসেন ইউএনও আমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে এসেই ক্ষুব্ধ হন তিনি। এ নিয়ে এ এইচ এম শহীদুল হকের সঙ্গে ইউএনওর কথা-কাটাকাটি হয়। এ–সংক্রান্ত একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। ভিডিওতে দুজনের বাগ্বিতণ্ডার কথা শোনা যায়।
ইউএনও আমিনুল ইসলাম অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ না দেওয়ার কারণ জানতে চান শহীদুল হকের কাছে। তাঁর প্রশ্নের জবাবে শহীদুল হক বলেন, ‘আপনাকে একাধিকবার কার্যালয়ে গিয়ে পাইনি। এমনকি আপনাকে তিন দিন বিভিন্ন সময় ফোন করেছি, আপনি রিসিভ করেননি।’ এমন কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে ইউএনও বলেন, ‘আপনারা একটা আয়োজন করতেছেন, ইউএনও জানে না আপনারা কীসের আয়োজন করতেছেন, আশ্চর্য ব্যাপার। ইউএনওকে অবহিত না করে আপনাকে এ আয়োজন করার এখতিয়ার কে দিয়েছে?’
জবাবে শহীদুল হক বলেন, ‘আপনাকে আমন্ত্রণের জন্য আপনার কমপ্লেক্সে তিন দিন যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনাকে পাইনি।’ ইউএনও বলেন, ‘উপজেলা কমপ্লেক্সে কে গেছে? আপনি আমার বাংলোতে গেলেন না কেন? আমার বাংলোও একটা অফিস।’ এমন প্রশ্নের জবাবে শহীদুল হক বলেন, ‘আপনার বাংলোতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না।’ এর জবাবে ইউএনও বলেন, ‘বাংলোতে যখন অ্যালাউ করব, তখন ঢুকবেন। আপনারা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি হয়ে মনে করছেন আপনারা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে গেছেন। আমি আপনার ফোন ধরতে বাধ্য না। আপনি আপনার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ফোন দিলে আমি ধরব কেন?’
এ সময় শহীদুল হক বলেন, ‘আপনি ফোনই ধরলেন না, তা হলে ব্যক্তিগত স্বার্থ, নাকি রাষ্ট্রীয় কোনো কাজ বুঝলেন কীভাবে? আপনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, একজন কৃষকের ফোনও ধরতেও বাধ্য।’ এর পর খেপে গিয়ে ইউএনও আমিনুল বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের আমি এমন কর্মচারী মালিককে শাস্তিও দিতে পারি।’ তখন শহীদুল বলেন, ‘ক্ষমতা আছে, আপনি দেন শাস্তি।’ এ সময় দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
এ বিষয়ে জানতে ইউএনও আমিনুল ইসলামের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি কেটে দেন। পরে বার্তা পাঠিয়ে বলেন তিনি এখন ব্যস্ত। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন, ‘আমার কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য এখনো আসেনি, তথ্য পেলে মন্তব্য করতে পারব।’
উপজেলা দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সাংবাদিক এ এইচ এম শহীদুল হক বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম অনুষ্ঠানে ইউএনওকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। এসেই চটে যান।
ঘটনার বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম বলেন, ‘ইউএনও মহোদয় তাঁর বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। তাঁকে (ইউএনও) অবহিত করে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির কর্তৃপক্ষকে অনুষ্ঠান করার জন্য বলেছিলাম; কিন্তু ইউএনও মহোদয়কে অবহিত না করে তাঁরা বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়ায় ইউএনও স্যারের সঙ্গে শহীদুল হক উত্তেজিত হয়ে অসৌজন্যমূলকভাবে কথা বলেন। তখন ইউএনও স্যারও দুই-এক কথা বলেছেন।’