সাবেক কাউন্সিলর বকুলকে রেখে এজাহারভুক্ত ৩ আসামি বাদ
Published: 4th, July 2025 GMT
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নারীকে পাসপোর্ট পেতে সহযোগিতার মামলায় নিজেদের এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে বাদ দিয়ে শুধু একজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে দুদক। অভিযোগপত্র অনুযায়ী, এই মামলার বর্তমানে একমাত্র আসামি কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা মহিলা দলের সাবেক সভাপতি নেত্রী নাছিমা আক্তার বকুল।
বৃহস্পতিবার কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে এ চার্জশিট জমা দেন দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ। কক্সবাজার আদালতে দুদকের আইনজীবী আব্দুর রহিম জানান, আদালত শুনানির জন্য ১৩ জুলাই দিন ধার্য করেছেন।
রোহিঙ্গা নারীকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাইয়ে দিতে সহযোগিতার অভিযোগে ২০২১ সালের ১৫ মার্চ এ মামলাটি করেছিল দুদক। বাদী ছিলেন দুদকের চট্টগ্রাম-২-এর তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন। এজাহারটি নথিভুক্ত করেন একই কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (বর্তমানে উপপরিচালক) রতন কুমার দাশ।
মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন– রোহিঙ্গা নারী ছামিরা বেগম, কক্সবাজার পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও কক্সবাজার শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি জাবেদ মোহাম্মদ কায়সার নোবেল, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের সাবেক নারী কাউন্সিলর নাছিমা আকতার বকুল এবং পৌরসভার অফিস সহকারী দিদারুল আলম। এর মধ্যে সাবেক কাউন্সিলর বকুল ছাড়া সবার নাম বাদ গেছে অভিযোগপত্র থেকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ছামিরা বেগম নামে ওই রোহিঙ্গা নারী নিজেকে কক্সবাজার পৌরসভার নাগরিক পরিচয় দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে বাংলাদেশি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। আবেদনপত্রের সঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভা থেকে নেওয়া জাতীয়তা সনদও জমা দেন। সনদে কাউন্সিলর হিসেবে স্বাক্ষর করেন কাউন্সিলর বকুল। একই সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত না হয়েও এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে মেয়র হিসেবে স্বাক্ষর করেন কাউন্সিলর নোবেল। এ ছাড়া পৌরসভা থেকে নেওয়া একটি প্রত্যয়নও পাসপোর্ট অফিসে জমা দেন ছামিরা। এ প্রত্যয়নে স্বাক্ষর করেন কাউন্সিলর বকুল। পাসপোর্ট অফিসে জমা দেওয়া কক্সবাজার পৌরসভা থেকে ছামিরার নামে ইস্যুকৃত জন্মসনদে যাচাই-বাছাইকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেন পৌরসভার অফিস সহকারী দিদারুল আলম।
ছামিরা এসব কাগজপত্র কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসে ২০১৯ সালে জমা দেওয়ার পরপরই সন্দেহ হয় কর্মকর্তাদের। যার কারণে আবেদনটি পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য না পাঠিয়ে তা স্থগিত করে দেওয়া হয়। এর আগে গত ১৫ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয়ের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি সংস্থার কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদকে দেওয়া হয়। চিঠিতে জানানো হয় অভিযোগপত্র অনুমোদনের বিষয়টি।
কেন তিন আসামির নাম বাদ গেছে– এ প্রসঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ বলেন, দীর্ঘ সময় নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে মামলায় এজাহারভুক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে সাবেক কাউন্সিলর বকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় তাঁর নাম অভিযোগপত্রে রাখা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপসহক র প রসভ র র বক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভূমি অধিগ্রহণ না করেই কাজ
সাঁথিয়া উপজেলার গাগড়াখালী-সোনাতলা বাইপাস সড়ক উন্নয়নকাজ শুরু হয়েছিল ছয় বছর আগে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আগের অপ্রশস্ত সড়কের পাশে মাটি ফেলাসহ কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু করে। সড়কের বর্ধিত অংশের বেশির ভাগই ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় জমির মালিকেরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে কাজে বাধা দেন। তারা একজোট হয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে আদালতে মামলা করলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে সড়কটি খুঁড়ে রাখায় খানাখন্দে ভরে গেছে। বৃষ্টিতে বেহাল সড়কটি কাদাপানিতে সয়লাব। পাটগাড়ি এলাকায় কালভার্ট নির্মাণ করে ফেলে রাখা হয়েছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় সেটিও কোনো কাজে আসছে না। এতে অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এ পথে চলাচলকারী ৫০ হাজার মানুষ।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের পাবনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়াই গাগড়াখালী-সোনাতলা বাইপাস সড়কের কাজ শুরু হয়। আট কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয় ২৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কাজ পায় ঢাকার এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কাজের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। প্রথমদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের পাশে মাটি ফেলাসহ কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু করে।
গাগড়াখালি, ফেচুয়ান ও তেঘরি গ্রামের সড়কের বর্ধিত অংশের বেশির ভাগ জমিই ব্যক্তিমালিকানাধীন। মালিকদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে কাজ শুরু করায় তারা বাধা দেন এবং ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে মামলা করেন। এখনও মামলার চূড়ান্ত রায় হয়নি। এ কারণে কাজ বন্ধের জন্য আদালত থেকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বর্ধিত অংশ অধিগ্রহণের জন্য টাকা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কাগজপত্র জমা দিয়ে ভূমিমালিকরা টাকা তুলে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নামমাত্র কয়েকজন জমির মালিক ক্ষতিপূরণ পেলেও অনেকেই পাননি। কর্তৃপক্ষ বলছে তাদের কাগজপত্র সঠিক নয়।
এ বিষয়ে জমির মালিক তেঘড়ি গ্রামের সৈয়দ গোলাম মওলা বলেন, ‘আমার কাগজপত্র সঠিক আছে। আমার মতো গাগড়াখালি, ফেচুয়ান ও তেঘরি গ্রামের ৩০ থেকে ৩৫ জনের কাগজপত্র ঠিক থাকলেও তারা ক্ষতিপূরণ পায়নি।’
তেঘড়ি গ্রামের সৈয়দ গোলাম মাওলা, গোলাম রসুল, আব্দুস সাত্তার, আব্দুল ওহাব, গোলাম মোস্তফা, আব্দুল বারি, আলমগীর হোসেন, রিজিয়া খাতুনসহ কয়েকজন জমির মালিক বলেন, ‘২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট ক্ষতিপূরণ চেয়ে পাবনা আদালতে মামলা করেছি। ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাড়া পাইনি। ক্ষতিপূরণ পেলে মামলা তুলে নেব।’
মামলার বাদী ফেচুয়ান গ্রামের মকবুল হোসেন, সুজন হোসেন ও আজিজ খাঁ জানান, সড়ক হলে সবারই সুবিধা হয়। জমির মালিকরা সড়কের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। এ ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
কথা হলে সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী মাহবুব হাসান জানান, সোনাতলা থেকে পাটগাড়ি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ঠিকাদারের সময় পেরিয়ে যাওয়াসহ কিছু জটিলতার কারণে কাজ শুরু করা যায়নি।
সরেজমিন পাটগাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক ছাড়াই কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এ কালভার্টের দুই পাশে মাটি ফেলে রাখায় কাদামাটিতে একাকার। এ পথ দিয়ে চলাচল এখন কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কটি দ্রুত নির্মাণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন তেঘড়ি গ্রামের গোলাম কিবরিয়া, পাটগাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলাম সান, স্কুলশিক্ষার্থী সিমি খাতুনসহ অনেকে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপক প্রহ্লাদ কুমার বলেন, ‘আমরা যথাসময়ে কাজ শুরু করেছিলাম। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা এবং মামলার কারণে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হই। এরই মধ্যে সময় পেরিয়ে যাওয়ায় আমাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হয়েছে।’
পাবনা সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাদেকুর রহমান বলেন, ‘যাদের জমির কাগজপত্র সঠিক ছিল, তারা টাকা পেয়েছেন। যাদের কাগজ সঠিক নেই, তারা পাননি। জটিলতা এখনও কাটেনি। মেয়াদ শেষ হওয়ায় প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন প্রকল্প এলে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। অনুমোদন হলে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সড়কটির কাজ শুরু করা হবে।’