রোমানিয়ায় উচ্চশিক্ষা: আইইএলটিএস স্কোর ৬, খরচ–বৃত্তিসহ জেনে নিন সব তথ্য
Published: 6th, July 2025 GMT
দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে উন্নত ক্যারিয়ার, জীবনধারণের সুযোগ ও সম্ভাবনা। সুযোগের প্রসঙ্গ এলে সামনে আসে ইউরোপের দেশগুলোর নাম। এগুলোর মধ্যে অন্যতমভাবে চলে আসে রোমানিয়ার কথা। বিশ্বমানের সব বিদ্যাপীঠ নিয়ে শেনজেনভুক্ত দেশটি প্রতিবছর আমন্ত্রণ জানায় হাজারো বিদেশি শিক্ষার্থীদের। রোমানিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন পদ্ধতি, খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার কথা জেনে নেওয়া যাক।
রোমানিয়ায় কেন পড়তে যাবেন—
গত দশকজুড়ে ব্যবসায়িক, শিক্ষা ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে উচ্চশিক্ষার জন্য সেরা গন্তব্য হতে পারে রোমানিয়া। রোমানিয়ায় পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার খরচ পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে কম। অথচ মানের দিক থেকে শিক্ষাব্যবস্থা একদমই আপসহীন। শুধু তা–ই নয়, ইউরোপের অন্য সেরা বিদ্যাপীঠগুলোর সঙ্গে এক সারিতে রয়েছে দেশটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ওয়ার্ল্ড কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ রোমানিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় হলো বাবেস-বলিয়াই ইউনিভার্সিটি, যেটি রয়েছে ৮০১ নম্বরে। এ ছাড়া বুখারেস্ট ইউনিভার্সিটির র্যাঙ্কিং ৮৫১। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের একটি সুবিধা হলো ক্রেডিটগুলো সহজেই অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা যায়। এমনকি অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে শিক্ষার্থীদের কোনো শর্ত পূরণ করতে হয় না। এ স্থানান্তরকে নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য বিশ্বজুড়ে কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। এগুলো হচ্ছে—
*ইউরোপীয় ক্রেডিট ট্রান্সফার অ্যান্ড অ্যাকুমুলেশন সিস্টেম
*ডিপ্লোমা সাপ্লিমেন্ট
*ইউরোপিয়ান কোয়ালিটি চার্টার ফর মোবিলিটি
*ইউরোপিয়ান কোয়ালিফিকেশন্স ফ্রেমওয়ার্ক ফর লাইফ লং লার্নিং
*ইউরোপিয়ান নেটওয়ার্ক অব ইনফরমেশন সেন্টার্স অন একাডেমিক রিকগনিশন অ্যান্ড মোবিলিটি
*ন্যাশনাল একাডেমিক রিকগনিশন ইনফরমেশন সেন্টার্স
আরও পড়ুনচীনে উচ্চশিক্ষা: স্কলারশিপের সঙ্গে আছে পড়ার শেষে চাকরি ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ২৬ আগস্ট ২০২৪আবেদনের পূর্বশর্ত—
*আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের রোমানিয়ার শিক্ষাব্যবস্থায় প্রবেশ করতে হলে ন্যূনতম ১২ বছরের শিক্ষাগত জীবন অতিবাহিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আন্ডারগ্র্যাজুয়েশনের জন্য হাইস্কুল ডিপ্লোমা বা তার সমতুল্য একাডেমিক ডিগ্রির প্রয়োজন হয়।
*মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য আবেদনকারীকে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকা জরুরি। পিএইচডির জন্য প্রধান শর্ত হলো প্রাসঙ্গিক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হওয়া।
*পড়াশোনা ও চাকরিসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার অগ্রাধিকার থাকায় রোমানিয়ান ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক নয়। ইংরেজি ভাষা দক্ষতার জন্য আইইএলটিএস স্কোর ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ এর কিংবা টোয়েফলে ৮০ থেকে ৯০ থাকতে হবে।
স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনগুলো—
যে স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রোমানিয়াসহ ইউরোপে সমাদৃত, সেগুলো হলো—
*বাবেস-বলিয়াই ইউনিভার্সিটি
*বুখারেস্ট ইউনিভার্সিটি
*আলেকজান্দ্রু ইওয়ান কুজা ইউনিভার্সিটি অব ইয়াসি
*টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ক্লুজ-নাপোকা
*গিওর্গে আসাকি টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ইয়াসি
*ট্রান্সিলভানিয়া ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসভ
*ইউনিভার্সিটি পলিটেকনিকা অব বুখারেস্ট
*ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অব টিমিসোয়ারা
*বুখারেস্ট ইউনিভার্সিটি অব ইকোনমিক স্টাডিজ
*গ্রিগোরে টি পোপা ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিন অ্যান্ড ফার্মেসি, ইয়াসি
প্রথম সারির কোর্সগুলো—
*জেনারেল মেডিসিন
*ডেন্টিস্ট্রি
*ফার্মেসি
*মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
*সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
*ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
*সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং
*আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স
*সাইবার সিকিউরিটি
*ফাইন্যান্স
*মার্কেটিং
*হিউম্যান রিসোর্স
আরও পড়ুনসুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: স্কলারশিপ, আইইএলটিএস ৬.৫, সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা কাজ ও খরচ কেমন৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আবেদনের উপায়—
ফল এবং স্প্রিং—এই দুই সেমিস্টারে সাধারণত রোমানিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি নিয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফলের সময়সীমা থাকে পরের বছরের জুলাই বা আগস্ট পর্যন্ত। আর স্প্রিং শেষ হয় ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে। ভর্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে অনলাইন আবেদন করতে হয়। এ সময় সরবরাহ করা তথ্যের সাপেক্ষে আপলোডের জন্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্রের স্ক্যান কপি প্রস্তুত রাখতে হবে। অনলাইন আবেদনের যাবতীয় কাজ শেষে পূরণ করা ফর্মটি ডাউনলোড করে নির্দিষ্ট স্থানে স্বহস্তে সাইন করতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় প্রাসঙ্গিক নথিপত্রসহকারে ডাকযোগে পাঠিয়ে দিতে হবে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র—
*নির্ভুলভাবে পূরণ করা ভর্তির আবেদনপত্র
*উচ্চমাধ্যমিক সনদ, স্নাতক ডিপ্লোমা বা সমমানের সনদের প্রত্যয়িত অনুলিপি (স্নাতকের জন্য)
*স্নাতক শংসাপত্রের প্রত্যয়িত অনুলিপি (স্নাতকোত্তরের জন্য)
*জন্ম শংসাপত্রের প্রত্যয়িত অনুলিপি
*মেডিকেল সার্টিফিকেট
*পাসপোর্টের প্রত্যয়িত কপি
*ভাষাদক্ষতা শংসাপত্র (আইইএলটিএস বা টোয়েফল স্কোর)
*দুটি সাম্প্রতিক ছবি (পাসপোর্ট সাইজের)
*গবেষণার প্রস্তাবনা (পিএইচডির ক্ষেত্রে)
*প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রকাশনা (পিএইচডির ক্ষেত্রে)
*সিভি বা পোর্টফোলিও (স্নাতকোত্তর বা পিএইচডির ক্ষেত্রে)
*লেটার অব রিকমেন্ডেশন
*আবেদনের ফি পরিশোধের রশিদ: ৫০ থেকে ১০০ ইউরো
মাস্টার্সের বিষয়ের ওপর নির্ভর করে জিআরই, জিম্যাট বা এলস্যাটের মতো অতিরিক্ত পরীক্ষার স্কোর প্রদর্শন করতে হতে পারে। এ ছাড়া এর বাইরেও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নথি চাওয়া হতে পারে। প্রতিটি নথি রোমানিয়ান, ইংরেজি ও ফরাসি যেকোনো একটি ভাষায় অনূদিত হতে হবে।
ভিসার জন্য আবেদন কোথায়—
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের রোমানিয়ায় পড়তে যাওয়ার জন্য ডি বা এসডি টাইপ দীর্ঘমেয়াদি ভিসা নিতে হবে। এই স্টুডেন্ট ভিসায় ৯০ থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ দিন পর্যন্ত শেনজেনভুক্ত দেশগুলোর ভেতরে যেকোনো অঞ্চলে ভ্রমণ করা যাবে। অনলাইনে আবেদনে তথ্য পূরণের সময় সব প্রয়োজনীয় নথির স্ক্যান কপি সঙ্গে রাখতে হবে। আবেদন শেষে ফর্ম প্রিন্ট করে অন্য কাগজপত্রসহ দূতাবাসে পাঠানোর জন্য একত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।
ভিসার আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র—
*রোমানিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তির অফার লেটার
*সম্পূর্ণরূপে পূরণ করা ভিসা আবেদনপত্র
*পাসপোর্ট (রোমানিয়ার পৌঁছার দিন থেকে কমপক্ষে ছয় মাসের মেয়াদসম্পন্ন)
*দুটি সাম্প্রতিক ৩–৪ সেন্টিমিটার রঙিন ছবি
*বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি প্রদানের প্রমাণ
*রোমানিয়ায় আবাসনের প্রমাণপত্র
*ভ্রমণ পরিকল্পনার প্রমাণ হিসেবে ফ্লাইট রিজার্ভেশনের নথি
*রোমানিয়ায় থাকার সময়ের জন্য কমপক্ষে ৩০ হাজার ইউরোর মেডিকেল ইনস্যুরেন্স
*প্রতি শিক্ষাবর্ষের জন্য সর্বনিম্ন ২ হাজার ৫০০ ইউরো তহবিলের ব্যাংক স্টেটমেন্ট। স্বাক্ষরিত এবং স্ট্যাম্পযুক্ত ব্যাংক স্টেটমেন্টের একটি স্ক্যান কপি [email protected] ই-মেইলে পাঠাতে হবে। ই-মেইলের সাবজেক্ট লাইনে ‘ব্যাংক স্টেটমেন্ট ফর্ম’-এর পর প্রার্থীর নিজের নাম লিখতে হবে। ই-মেইলটি অবশ্যই ব্যাংকের নিজস্ব অফিশিয়াল ই-মেইল ঠিকানা থেকে পাঠাতে হবে। কোনো গুগল বা ইয়াহু ই-মেইল ঠিকানা ব্যবহার করা যাবে না।
*ভাষাদক্ষতার প্রমাণ হিসেবে আইইএলটিএস বা টোয়েফলের সনদ
*পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
আরও পড়ুনসুইজারল্যান্ডে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় কি১২ এপ্রিল ২০২৪আবেদন–পরবর্তী প্রক্রিয়া—
ভিসার কাগজপত্র নিয়ে দূতাবাসে যাওয়ার আগে ই-মেইলের মাধ্যমে সাক্ষাৎকারের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিতে হবে। ফিরতি ই-মেইলে পাওয়া নির্দিষ্ট তারিখে উপস্থিত হতে হবে ভারতে অবস্থিত রোমানিয়ান দূতাবাসে। দূতাবাসের ঠিকানা: ৩/৬, সেক্টর-৩, শান্তিনিকেতন, নয়াদিল্লি, দিল্লি-১১০০২১, ভারত
ভিসা সাক্ষাৎকারের সময় ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি তোলার মাধ্যমে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে।
প্রক্রিয়াকরণের পর চূড়ান্তভাবে ভিসা হাতে পেতে সাধারণত প্রায় ১৫ থেকে ৩০ দিন সময় নেয়। রোমানিয়ার স্টাডি ভিসার প্রক্রিয়াকরণ ফি ১২০ ইউরো।
পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ
প্রতি শিক্ষাবর্ষে খরচ পড়ে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার ইউরো। এটি বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২ লাখ ৫৪ হাজার ২২৪ থেকে ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৯ টাকা। এখানে সবচেয়ে ব্যয়বহুল কোর্সগুলো হলো মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং। অন্যদিকে সামাজিক অধ্যয়ন, মনোবিজ্ঞান ও অর্থনীতি স্বল্প টিউশন ফির কোর্স। এগুলোতে খরচ হতে পারে প্রতিবছর ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ ইউরো বা প্রায় ২ লাখ ৫৪ হাজার ২২৪ থেকে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৭৮০ টাকা।
রোমানিয়ার জীবনযাত্রা বেশ সাশ্রয়ী। বাসস্থান, খাবার, পরিবহন, চিকিৎসা বীমা এবং ইন্টারনেট খরচ সব মিলে মাসিক খরচ ৩০০ থেকে ৬০০ ইউরো। বাংলাদেশি টাকায় এই খরচ প্রায় ৩৮ হাজার ১৩৪ থেকে ৭৬ হাজার ২৬৭ টাকার সমান। অবশ্য বুখারেস্টের মতো বড় শহরগুলোতে এ অঙ্কটি ৫০০ থেকে ৭০০ ইউরো (প্রায় ৬৩ হাজার ৫৫৬ থেকে ৮৮ হাজার ৯৭৯ টাকা) পর্যন্ত হতে পারে। অন্য শহরগুলোর জন্য সম্ভাব্য মাসিক বাজেট:
ক্লুজ-নাপোকা: ৪৫০ থেকে ৬০০ ইউরো
টিমিসোয়ারা: ৪০০ থেকে ৫০০ ইউরো
ইয়াসা: ৩০০ থেকে ৪০০ ইউরো
স্কলারশিপের সুবিধা
এই ব্যয়ভার বহন করার জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য আছে স্কলারশিপের ব্যবস্থা। এগুলোর মধ্যে এমএফএ স্কলারশিপ প্রোগ্রাম টিউশন ফি, মাসিক উপবৃত্তি, বাসস্থান ও চিকিৎসা বীমা মিলিয়ে মোট বহন করে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার ইউরো।
সিপাস প্রোগ্রামের আওতায় রয়েছে মাসিক অনুদান, আবাসন, ল্যাবরেটরি এবং চিকিৎসা পরিষেবা। এ সব মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার থেকে ৭ হাজার ইউরো পাওয়া যায়।
ইরাসমাস+প্রোগ্রামে আবাসন ও পরিবহনের জন্য মাসিক অনুদানসহ বৃত্তির মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার ইউরো।
লরিয়াল-ইউনেসকো উইমেন ইন সায়েন্স স্কলারশিপে ১০ হাজার ইউরো পর্যন্ত অর্থের সংকুলান ঘটে। ইউনিভার্সিটি-স্পেসিফিক স্কলারশিপ ইন রোমানিয়া উন্নয়নশীল দেশের নাগরিকদের জন্য ৫০ শতাংশ টিউশন ফি ছাড় দেয়।
আবাসনের ক্ষেত্রে ভাড়া কমানোর জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে শেয়ার করে থাকা যেতে পারে। এ ছাড়া ছাত্রাবাস বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরিগুলো অল্প খরচে থাকার জন্য উপযুক্ত উপায়।
ভ্রমণ খরচ বাঁচাতে বাস এবং ট্রেনের মতো পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট এবং অবকাশযাপনের জায়গাগুলোতে থাকে স্টুডেন্ট ডিসকাউন্ট।
আরও পড়ুনজার্মানিতে পড়তে যেতে চান, নজরে রাখুন এই ৮ বিষয়২০ নভেম্বর ২০২৪স্টুডেন্ট ভিসার অন্যতম একটি সুবিধা হলো, এটি পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরিরও অনুমতি দেয়। এই পারমিটে প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। আর ছুটির দিনগুলোতে কাজের সময়সীমার জন্য নির্দিষ্ট কোনো বিধিনিষেধ নেই, তাই ইচ্ছেমতো কাজ করা যায়। এই পার্টটাইম কাজ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শুধু ফুলটাইম অধ্যয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার স্ট্যাটাসটি বজায় রাখতে হয়।
চাকরি লাভ ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ
স্নাতক বা স্নাতকোত্তর যেকোনো ডিগ্রি শেষে রোমানিয়ায় স্থায়ী হতে হলে সর্বপ্রথম একটি ফুলটাইম কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। আর এই কাজের জন্য আলাদাভাবে ওয়ার্ক পারমিট নিতে হবে। সাধারণত যে কারও ক্ষেত্রে এই পারমিট সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত বৈধ থাকে। তবে দক্ষ কর্মী হলে দুই বছর পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি পাওয়া যায়।
এই অনুমতি লাভের জন্য আবেদনের প্রথম শর্ত হলো, একটি চাকরির অফার পাওয়া। এখানে মনে রাখতে হবে যে ভিসা বা রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস আগে থেকে এই আবেদন করা যায় না।
আবেদনের সময় নিয়োগকর্তা তাঁর পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ফাইল জমা দেন। সেই সঙ্গে জেনারেল ইন্সপেক্টরেট ফর ইমিগ্রেশনের অফিসে তিনি প্রযোজ্য কর পরিশোধ করেন। অন্যদিকে প্রার্থীকে বসবাসের অনুমতি বা দীর্ঘমেয়াদি ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য দরকারি নথিপত্র জমা দিতে হয়।
সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু হতে হতে ৩০ থেকে ৬০ দিন সময় লেগে যায়। পারমিট ইস্যু হওয়ার পর জমা দিতে হয় দীর্ঘমেয়াদি ভিসা রিনিউর কাগজ। এই রিনিউর জন্য সময় লাগে ৩০ দিন। এই প্রক্রিয়াকরণ ফি বাবদ ১২০ ইউরো দিতে হয়।
ওয়ার্ক পারমিট ইস্যুর মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৪০ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। রোমানিয়ায় ফুলটাইম চাকরির মাসিক বেতন গড়ে ১ হাজার ৬০০ ইউরো।
ইউরোপের দেশটিতে মাইক্রোসফট, ওরাকল, বোশ, বিটডিফেন্ডার, ওরাকল রোমানিয়া ও কন্টিনেন্টালের মতো শীর্ষ কোম্পানিগুলোর অফিস রয়েছে। তারা নিয়মিত নিজেদের প্রতিষ্ঠানের জন্য রোমানিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহু আন্তর্জাতিক স্নাতকদের নিয়ে থাকে। তথ্যসূত্র: ইউএনবি
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ট ইউন ভ র স ট ন ব শ বব দ য হ জ র ইউর ক গজপত র প এইচড র র র জন য র জন য স ন র জন য ব যবস থ ট উশন ফ প রক র ক জ কর টম ন ট এই প র র সময় ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করবে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ
মালয়েশিয়ায় সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ তদন্তে একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া।
গতকাল শুক্রবার (১১ জুলাই) কুয়ালালামপুরে ৩২তম আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরাম (এআরএফ) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ফাঁকে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো হাজি মোহাম্মদ বিন হাজি হাসানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ তথ্য জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
বাংলাদেশি নাগরিকদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান দৃঢ় এবং এ বিষয়ে তথ্য ও তদন্তের ফলাফল বিনিময়ের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও তথ্যপ্রাপ্তির আশ্বাস দেন।
আরো পড়ুন:
সন্ত্রাসে জড়িত বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাবে মালয়েশিয়া: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
মাহাথিরকে শততম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের চলমান সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট ও এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচ. ই. মি. উইনস্টন পিটার্স, শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচ. ই. অন. বিজিথা হেরাথ এবং কোরিয়ার ভাইস মিনিস্টার ও প্রধান প্রতিনিধি মি. পার্ক ইউঞ্জুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকগুলোতে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।
২০০৬ সালে বাংলাদেশ এআরএফের সদস্য হয়। এ ফোরামটি নব্বই দশকের শুরুতে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ২৭টি দেশের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে গঠিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ এআরএফের দুটি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র — ‘কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম’ এবং ‘ডিজাস্টার রিলিফ’ — এর সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে। আগামী এআরএফ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক ২০২৬ সালে ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত হবে।
দুপুরে এআরএফ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে জাতীয় বক্তব্য প্রদান করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি রোহিঙ্গা সংকটের জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রেক্ষাপট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার আহ্বান জানান। এছাড়া, বাংলাদেশকে আসিয়ান সেক্টোরাল ডায়ালগ পার্টনার হিসেবে গ্রহণের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনার জন্য আসিয়ান সদস্যদের আহ্বান জানান তিনি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এইচ. ই. মো. শামীম আহসান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. ফরহাদুল ইসলাম এবং সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
ঢাকা/হাসান/ফিরোজ