ফেনীর ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ নারী ও শিশুসহ ২৪ জন বাংলাদেশিকে পুশ-ইন করেছে। 

বৃহস্পতিবার (২২ মে) ভোরে এই পুশ-ইনের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানায়, ভোররাতে ছাগলনাইয়া উপজেলার যশপুর এবং ফুলগাজীর খেজুরিয়া সীমান্ত দিয়ে এই ২৪ জন বাংলাদেশিকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায় বিএসএফ। পরে স্থানীয়রা তাদের আটক করে বিজিবির (বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড) হাতে তুলে দেন।

৪ বিজিবি ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৬ জন পুরুষ, ৫ জন নারী এবং ১৩ জন শিশু রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সবাই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন। তাদের ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

বিজিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রায়শই বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে এ ধরনের পুশ ইন কার্যক্রম চালায় বিএসএফ। এতে মানবিক সংকটের পাশাপাশি কূটনৈতিক জটিলতাও তৈরি হচ্ছে।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বারবার নারী ও শিশুসহ অসহায় মানুষদের পুশ ইন করার অভিযোগ উঠছে ভারতের বিরুদ্ধে। 

ঢাকা/সাহাব/টিপু 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প শ ইন ক ব এসএফ

এছাড়াও পড়ুন:

মুখোমুখি কবি ও কবি

কবিতা ও সাক্ষাৎকার শিল্পবিচারে আপাতদৃষ্টিতে পুরোপুরি বিপরীতে অবস্থিত দুই ধারা মনে হলেও, এই দুইয়ের মেলবন্ধন জন্ম দিতে পারে অভূতপূর্ব কিছু অভিজ্ঞতার। আর উভয় প্রান্তেই দুজন কবির উপস্থিতি এর মধ্যে দিতে পারে আলাদা ব্যঞ্জনা। তেমনই এক প্রকল্প শিমুল সালাহ্উদ্দিনের সাক্ষাৎকারমালা সিরিজের প্রথম বই ‘কবির মুখোমুখি কবি’। সাক্ষাৎকারগুলোতে ঢুকে পড়ার পর একেকজনের গোটা একটা দুনিয়া যেন এসে ধরা দেয় পাঠকের হাতে। আবার এত সব চোখধাঁধানো উপাদানের মধ্যে কবিতার প্রতিই কবিদের পক্ষপাতও ধরা পড়ে ক্ষণে ক্ষণে।

‘শিল্পের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম কবিতা’, এমন ঘোষণা পাওয়া যায় বইয়ের শুরুতেই। মনে হতে পারে, সাক্ষাৎকারগুলো শুধু কবিতাপ্রেমী পাঠকের উদ্দেশ্যেই গ্রন্থিত। তবে শিমুল সালাহ্উদ্দিন কবিতার জগৎ বা কাব্যিকতার কোনো জ্ঞানতাত্ত্বিক বিবরণ নিয়ে হাজির না হয়ে বরং তুলে ধরেন নিজেরই বিবর্তনের ইতিহাস। কবিতাযাত্রার পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে শিমুলের প্রত্যক্ষ সংযোগ, অধিকারভিত্তিক আন্দোলন আর সাংস্কৃতিক সংগঠনের নানা স্তরে সক্রিয়তার মধ্য দিয়ে অর্জিত বন্ধুত্ব ও সম্পর্কের মিথস্ক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যে দ্রোহযাত্রা, তা একই সঙ্গে পরবর্তী সময়ে সাক্ষাৎকারগুলোর বিচিত্র বাঁকবদলের ইঙ্গিত বহন করে। অন্যদিকে এ বইয়ের সাক্ষাৎদাতাদের অনেকেই কেবল কবি নন, তাঁদেরও রয়েছে শিল্পসংশ্লিষ্ট অন্যান্য মাধ্যমের পাশাপাশি সমাজ ও রাজনীতির নানামুখী জগতে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।

ফলে এই মুখোমুখি হওয়া কেবল কবির সঙ্গে কবির নয়; বরং একই যাত্রায় দুটি ভিন্ন সময়েরও, কোথাওবা নস্টালজিয়ার মানচিত্রে আলাদা হতে না পারা দুটি দেশেরও মুখোমুখি হওয়া। উপরন্তু আলাপের অস্থির ঘোড়া প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে ছোটাছুটি করে বেড়ায় নানান রুচির পাঠকের ভিন্ন ভিন্ন আগ্রহের দাবি মিটিয়েই।

কবির সঙ্গে কবি বা লেখকের মুখোমুখি লেখক—সাহিত্যের অপরিচিত কোনো জনরা নয়। এ–সংক্রান্ত বৈশ্বিক দৃষ্টান্তগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশে সাজ্জাদ শরিফ, রাজু আলাউদ্দিন ও ব্রাত্য রাইসুর এ ধরনের কাজের কথা বইয়ের উৎসর্গপত্রেই শিমুল জানিয়ে দেন। উৎসর্গপত্রটি তাই একধরনের পরম্পরাগত স্বীকৃতির জের টানে। শিমুল সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য গুণী মানুষের, যার মধ্য থেকে বাছাই করা ১৩ জন কবির সাক্ষাৎকার নিয়ে এই বই—নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, আহমদ রফিক, তরুণ সান্যাল, সৈয়দ শামসুল হক, আল মাহমুদ, অরুণাভ সরকার, রফিক আজাদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ, মোহাম্মদ রফিক, ফরহাদ মজহার, জয় গোস্বামী, মৃদুল দাশগুপ্ত ও সুবোধ সরকার। নামগুলোই পাঠকের মনে নানান বৈচিত্র্যপূর্ণ স্বাদ অন্বেষণের সম্ভাবনা জাগায়। তবে বাছাইপর্বে কোনো নারী কবির অন্তর্ভুক্ত না হওয়াটা বাছাই-বৈচিত্র্যের খানিক দারিদ্র্য প্রকাশ করে বৈকি।

কবির মুখোমুখি কবি না হয়ে যদি দুঁদে কোনো সাংবাদিক হতেন, তাহলে কি আরও বিচিত্র প্রশ্নের সমাবেশ ঘটত? হতেও পারত। তবে এই বইয়ের সাক্ষাৎকারগুলো পড়তে পড়তে মনে হয়েছে, একজন কবির মতো এতটা আপন করে আরেকজন কবির মনোজগৎ টের পাওয়া ও তুলে ধরা অন্য কারও পক্ষে বেশ কঠিন কাজই হতো। কারণ কবির জন্য এ যেন নিরন্তর নিজের সঙ্গে নিজেরই কথোপকথন। যেন স্বতঃস্ফূর্ত স্বগতোক্তিগুলোই প্রশ্নের খোলসে অগ্রজ কবির সামনে তুলে ধরা, আর উত্তরগুলো—নিজেকে হাজারবার দেওয়া জবাবের নীরিখে মেপে নিয়ে, তৎক্ষণাৎ বিরোধিতা বা সম্পূরক প্রশ্নে চলে যাওয়ার সাবলীলতাই এখানে একজন কবিকেই সূত্রধরের ভূমিকায় সবচেয়ে কাম্য করে তুলেছে।

নানান চমকপ্রদ উপলব্ধির পাশাপাশি কথোপকথনে অনুমিতভাবেই এসেছে কাব্যকৈবল্যবাদ বনাম সামাজিক দায়বদ্ধতার পুরোনো দ্বৈরথ। এসেছে রবীন্দ্রনাথ ও তৎপরবর্তী কবিদের প্রভাব; অনুজ কবিদের কথা, ছন্দ, ব্যাবহারিক ভাষা বনাম সাহিত্যের ভাষা; দশকের কবি নাকি কবির দশক, এ রকম অসংখ্য আলোচনা; কখনো সরাসরি, কখনো অন্য আলোচনার আড়ে-আবডালে। কবির ব্যক্তিগত জীবন, প্রেম-অপ্রেম, বন্ধুতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা, বুদ্ধিজীবিতার একাল-সেকাল ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গ এসেছে প্রত্যাশিত পথেই। ওপার বাংলার একাধিক কবির সাক্ষাৎকারে এসেছে দেশভাগের বেদনা, দুই দেশের সাহিত্যের তুলনামূলক আলোচনা। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও তারপরের প্রত্যাশা, বাঁকবদল বা আশাভঙ্গের বেদনার কথা বলেছেন অনেকেই। এর বাইরে দর্শন, সাম্যবাদ, পুঁজিবাদের মতো বহুল চর্চিত বিষয়ের পাশাপাশি গ্রামীণ ব্যাংক বা ডক্টর ইউনূস প্রসঙ্গও এসেছে কৌতূহলোদ্দীপকভাবে, যা বর্তমান সময়ে অনেকের আগ্রহের বিষয় হতে পারে।

মোদ্দাকথা, কবির নিজস্ব নিভৃত ছায়াময় জগৎ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক, জাতীয়, রাজনৈতিক কোনো অঙ্গনই আলোচনার বিষয়বস্তু থেকে বাদ পড়েনি। বইটির আরেকটা উল্লেখযোগ্য দিক সম্ভবত সাক্ষাৎকার নেওয়ার কলাকৌশল বিষয়ে আগ্রহীদের কিছু চিন্তার খোরাক দিতে পারা। সাক্ষাৎকার নেওয়ার আগের প্রস্তুতিমূলক পড়াশোনা ও ঘাঁটাঘাঁটির ব্যাপ্তি কেবল দু–চার দিনের না হয়ে, একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ ও লম্বা প্রস্তুতিকালের মধ্য দিয়ে ঋদ্ধ থাকার সুবিধাগুলো আগ্রহীরা সহজেই বুঝতে পারবেন।

কবির মুখোমুখি কবি
শিমুল সালাহ্উদ্দিন

প্রকাশক: আগামী প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশ: ডিসেম্বর ২০২৪
প্রচ্ছদ: সেলিম হোসেন সাজু
পৃষ্ঠা: ৩০৮
মূল্য: ১০৯৭ টাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ