গর্ভবতী মায়ের ভিটামিন ডি ও নবজাতকের স্বাস্থ্য
Published: 22nd, June 2025 GMT
ভিটামিন ডি শরীরের অতি গুরুত্বপূর্ণ নিত্যপ্রয়োজনীয় ভিটামিন। এর অভাব সব বয়সী মানুষের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষের শরীরে কোনো না কোনো মাত্রায় ভিটামিন ডির অভাব রয়েছে।
ভিটামিন ডি একমাত্র ভিটামিন, যা খাদ্যে খুব কম থাকে। এর ৯০ শতাংশের উৎস সূর্যালোক। বাস্তবতা হলো সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত আমরা খুব কমই অফিস বা শিক্ষায়তনের বাইরে থাকি বা ৩০ মিনিট ‘রৌদ্রস্নান’ করি। এ কারণে যাঁরা বাইরে কাজ করেন, তাঁরা ছাড়া বেশির ভাগ মানুষেরই ভিটামিন ডির অভাব দেখা দেয়।
মা ও নবজাতকের ঝুঁকি
গর্ভবতী মায়ের ও নবজাতকের শরীরে ভিটামিন ডির অভাব নিয়ে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য স্বাস্থ্য-গবেষকদের নতুন করে ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে। যদিও এই তথ্যের সবকিছুর কার্যকর ব্যাখ্যা এখনো পরিপূর্ণভাবে খোলাসা করা সম্ভব হয়নি। তবে নবজাতকের শরীরে ভিটামিন ডির অভাবের সঙ্গে বিভিন্ন সমস্যার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে অপরিণত বয়সে জন্ম, খিঁচুনি, জন্মের পরপরই শ্বাসকষ্ট, মারাত্মক সংক্রমণ, খাদ্যনালির প্রদাহ ইত্যাদি। এসব নবজাতকের হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। এর পেছনে যেসব প্রক্রিয়া কার্যকর বলে মনে করা হচ্ছে, তার মধ্যে ভিটামিন ডি রিসেপ্টরের বহুমুখীনতা, রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার কোষগুলোর অকার্যকারিতা, প্লাসেন্টার প্রদাহ ও অন্ত্রে ভালো-মন্দ ব্যাকটেরিয়ার অসামঞ্জস্য অন্যতম।
নবজাতকের ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত খিঁচুনির ৫০ শতাংশই হয় ভিটামিন ডির অভাবে। রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ৮ মিলিগ্রাম বা ডিএলের কম হলে ঝুঁকির আশঙ্কা বেশি বিবেচনা করে চিকিৎসা করতে হবে। এর ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুনির্ভর বিকাশজনিত (নিউরো ডেভেলপমেন্টাল) জটিলতা ছাড়াই খিঁচুনি বন্ধ করা সম্ভব হয়।
যা করতে হবে
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভকালে ভিটামিন ডি ঠিক রাখতে পারলে নবজাতকের জন্মকালীন ওজন, দৈর্ঘ্য, মাথার পরিধি, অস্থির বৃদ্ধি তথা জন্মগত রিকেটস ইত্যাদি ঠিক রাখা সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়ের ভিটামিন ডির মাত্রা রক্তে কমপক্ষে ২০ ন্যানোগ্রাম/ডিএল নিশ্চিত করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গর্ভবতী মায়ের শরীরে ভিটামিন ডির মাত্রা সঠিক রাখার সঙ্গে সন্তানের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যগত অনেক বিষয়ের সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে হাইপোক্সিক ব্রেন ইনজুরি (মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত বা কমে যাওয়া) প্রতিরোধ ও ব্রেন ডেভেলমেন্টে সহায়তা করা অন্যতম। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে সার্বিক বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতার ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা রয়েছে।
গর্ভবতী মায়ের শরীরে ভিটামিন ডির মাত্রা কম থাকলে মা নিজেও কিছু জটিলতায় ভুগতে পারেন। যেমন প্রি-একলামসিয়া, ডায়াবেটিস, ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস ও সিজারিয়ান (সি) সেকশনের হার বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি।
ডা.
রবি বিশ্বাস: শিশু হরমোন রোগবিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে শত্রুঘ্ন–মমতা–সৌরভ এক মঞ্চে
চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য এবারও কলকাতা পরিণত হয়েছে সিনেমার শহরে—এক উৎসবের নগরে। বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো ৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধনধান্য অডিটরিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদীপ প্রজ্বালন করে উৎসবের উদ্বোধন করেন বলিউড তারকা শত্রুঘ্ন সিনহা, পরিচালক রমেশ সিপ্পি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলী ও বর্ষীয়ান সংগীতশিল্পী আরতি মুখোপাধ্যায়।
উদ্বোধনী মঞ্চেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বঙ্গবিভূষণ সম্মান প্রদান করেন দুই বরেণ্য শিল্পী—শত্রুঘ্ন সিনহা ও আরতি মুখোপাধ্যায়কে। এরপর প্রদর্শিত হয় উৎসবের উদ্বোধনী ছবি—উত্তমকুমার ও সুচিত্রা সেন অভিনীত ক্লাসিক চলচ্চিত্র ‘সপ্তপদী’।
এ বছর উৎসবের আয়োজন কিছুটা সংযত হলেও গাম্ভীর্য ও ঐতিহ্যে ছিল পূর্ণ। বলিউডের বড় তারকাদের উপস্থিতি না থাকলেও দেশ–বিদেশের সিনেমাপ্রেমী, চলচ্চিত্রকার ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভিড়ে জমে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল। উৎসবের আমেজ ছিল স্পষ্ট।