এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সামনে বিক্ষোভ করেছেন একদল পরীক্ষার্থী। আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত শিক্ষা বোর্ডের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরীক্ষা অন্তত দুই মাস পেছাতে হবে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়ছে। এতে অনেক পরীক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে তাঁরা প্রস্তুতি নিতে পারছেন না। এখন পরীক্ষা নেওয়া হলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়বে।

সরেজমিনে বেলা দুইটার দিকে দেখা যায়, শিক্ষা বোর্ডের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তাঁরা মূল ফটক বন্ধ করে দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর সেখানে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা এসে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তবে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত ছাড়া সরবেন না বলে জানান। বিক্ষোভে থাকা ইসলামিয়া কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ বলেন, ‘পরীক্ষা দিতে একজন শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হলে সে দায়ভার কি শিক্ষা বোর্ড নেবে? শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে একটি যৌক্তিক সময়সূচি নির্ধারণ করতে হবে।’

ঘটনাস্থলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আবদুল মন্নান ও মোহাম্মদ দিদারুল আলম। তাঁরা বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন হবে। শিক্ষার্থীদের বিষয়টি জানানোর পর তাঁরা সরে যান।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন ৩৮৫ শিক্ষার্থী 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ফাহমিদা আকতার। থাকেন ক্যাম্পাসের শামসুন নাহার হলে। তাঁর হলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। ক্যানটিনে নিম্নমানের খাবার। এসব নিয়েই তিনি কাজ করতে চান। তাই হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে লড়তে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। 

ফাহমিদা আকতার স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। প্রথম আলোকে এই শিক্ষার্থী বলেন, তিনি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সব সময় সোচ্চার ছিলেন। হলে যেসব সংকট রয়েছে, সেসব নিয়ে বিস্তারিত কাজ করবেন। এ জন্যই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

ফাহমিদাসহ ৩৮৫ শিক্ষার্থী সপ্তম চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। ইতিমধ্যে এই শিক্ষার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আগামী বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। তবে এরই মধ্যে ক্যাম্পাসে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। তাঁদের অনেকেই ভোটারদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। কুশল বিনিময় করছেন। 

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরেছে কেন্দ্রীয় সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। শিক্ষার্থীরা একে বলছেন ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’। এই নির্বাচনে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়—স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঢল, যা প্রতিযোগিতার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সব ঠিক থাকলে আগামী ১২ অক্টোবর চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। 

নির্বাচনে লড়তে ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছেন পদার্থবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাসনিয়া ফাইরুজ হাসান। তিনি বিজয়-২৪ হল সংসদের যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তাসনিয়া প্রথম আলোকে বলেন, হলে আবাসনের চরম সংকট রয়েছে। একটি খাটে দুজন করে থাকতে হচ্ছে। নির্বাচিত হতে পারলে তিনি এ বিষয়ে কাজ করবেন। 

স্বতন্ত্রদের আগ্রহ 

এবারের নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৯৩১ জন। এর মধ্যে চাকসুতে জমা পড়েছে ৪২৯টি। চাকসুতে ২৬টি পদে নির্বাচন হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে ১২টি প্যানেল। এসব প্যানেলের ২৫৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বাকি ১৭০ জন স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন। এর মধ্যে ভিপি পদে ১৪ জন, জিএস পদে ১১ জন ও এজিএস পদে ১১ জনের স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার কথা রয়েছে। 

অন্যদিকে ১৪টি হলে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪৮১ জন। এর মধ্যে ছাত্র হলে ৩৫৬ জন ও ছাত্রী হলে ১২৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। প্রতিটি হলে ভিপি ও জিএসসহ ১৪টি করে পদ রয়েছে। এখন পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে ছাত্রদের ৭টি হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরাও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। 

হিসাব অনুযায়ী, ৭ হলে ছাত্রশিবিরের ৯৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। আর ৯ হলের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন ছাত্রদলের অন্তত ১৪০ জন। সব মিলিয়ে দুই সংগঠনের অন্তত ২৩৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বাকি ১১৮ জন স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন। 

ছাত্রীদের দুই হলে দুটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্যানেল থেকে ২৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সে হিসাবে ছাত্রী হলে স্বতন্ত্রভাবে লড়বেন ৯৭ জন। অবশ্য চূড়ান্ত সংখ্যা জানা যাবে আগামী বৃহস্পতিবার। 

দাবি আদায়ের ‘প্ল্যাটফর্ম’

স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম, যা তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে সহযোগিতা করে। 

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আলীমুল শামীম চাকসুর সহদপ্তর সম্পাদক পদে নির্বাচন করতে চান। স্বতন্ত্রভাবেই তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচনী ইশতেহারও প্রকাশ করেছেন গতকাল। শামীম প্রথম আলোকে বলেন, চাকসুর গঠনতন্ত্রে সহদপ্তর সম্পাদকের যে কাজ রয়েছে, তা তিনি করবেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য ১১ দফা প্রকাশ করেছেন। ইশতেহার পছন্দ হলে তাঁকে ভোট দেবেন শিক্ষার্থীরা। 

জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন পর নির্বাচন হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা জোট বেঁধে ও একা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ