বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল বাবদ অর্থ পরিশোধ ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এযাবৎকালের মধ্যে সরকারকে বিদেশি ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, চলতি অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণ শোধের পরিমাণ ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) পক্ষ থেকে আজ রোববার প্রকাশিত বিদেশি ঋণ পরিশোধ–সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থছরের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের সুদ ও আসল বাবদ সরকার পরিশোধ করেছে ৩৭৮ কোটি মার্কিন ডলার। যেখানে গত অর্থবছরের পুরোটা সময়ে বিদেশি ঋণের আসল ও সুদ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৩৩৪ কোটি ডলার।

ইআরডির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ সরকার পরিশোধ করেছিল প্রায় ৩০৭ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ অর্থ পরিশোধের পরিমাণ ২৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সরকার এ বাবদ যে অর্থ ব্যয় করেছে, তার মধ্যে ঋণের আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ২৩৮ কোটি ডলার। ঋণের সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৪০ কোটি ডলার।

ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত সময়ে নেওয়া বড় বড় মেগা প্রকল্প ও বাজেট সহায়তার ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে হওয়ায় বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। একই সঙ্গে বাজারভিত্তিক উচ্চ সুদহারের বিভিন্ন ঋণ গ্রহণও এতে প্রভাব ফেলেছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই অর্থনীতিবিদেরাও বিদেশি ঋণ গ্রহণের বিষয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছিলেন।

এদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাড়লেও কমেছে বিদেশি ঋণছাড় ও ঋণের প্রতিশ্রুতি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বিদেশি ঋণছাড় হয়েছে ৫৬০ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭০২ কোটি ডলার। একই সময়ে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে ৫৪৮ কোটি ডলারের। যদিও গত অর্থবছেরর একই সময়ে ঋণ প্রতিশ্রুতি এসেছিল ৭৯২ কোটি ডলারের।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: একই সময় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাজেট ব্যর্থ

জুলাই অভ্যুত্থানের পর একটা বড় প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। তবে দেশের চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট। কিছু রাজস্ব পদক্ষেপ বাজেটের মূল প্রতিপাদ‍্যের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বাজেটে ভৌত অবকাঠামোর পরিবর্তে মানুষের উপর অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এসব লক্ষ্যকে বাস্তবায়নে যথাযথ বরাদ্দ বা পদক্ষেপ নেই। তবে বাজেটে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ রয়েছে। এগুলো হলো কর ছাড়, বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ ও প্রণোদনা এবং ক্ষতিকর কার্যক্রমে উচ্চ কর আরোপ।

আজ রোববার রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) সংলাপে এসব কথা বলা হয়। অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর সবার মধ্যে একটা বড় পরিবর্তনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিলো। তবে অন্তবর্তী সরকারের বাজেট তা পূরণ হয়নি। বাজেটের মূল দর্শন যাদের বেশি আয় তাদের থেকে বেশি কর নিয়ে তুলনামূলক পিছিয়ে পড়াদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যয় হবে। তবে আমাদের বাজেটের তিন ভাগের দুই ভাগই পরোক্ষ কর।
 
মূল প্রবন্ধে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া রাজস্ব বাড়বে না। সংস্কারের ক্ষেত্রে একটা সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দরকার। তিনি বলেন, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট আকারে ব্যতিক্রম। এটি চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ছোট। বাজেটে প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে সামগ্রিক উন্নয়নে এবং ভৌত অবকাঠামোর পরিবর্তে মানুষের উপর অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এসব লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ বাজেট বরাদ্দ বা পদক্ষেপ নেই। বাজেটে কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ প্রস্তাব করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে কর ছাড়, বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ ও প্রণোদনা এবং ক্ষতিকর কার্যক্রমে উচ্চ কর আরোপ। তবে, প্রস্তাবিত বাজেট সামগ্রিকভাবে চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই চ‍্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারলে জনগণ ও ব্যবসায়ীদের জন্য স্বস্তি আনতে পারত। অন‍্যদিকে কিছু রাজস্ব পদক্ষেপ বাজেটের মূল প্রতিপাদ্য– ‘একটি সমতাভিত্তিক ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গঠন’ – এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যেহেতু ২০২৬ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদনের পথে।

তিনি বলেন, সিপিডি বাজেট বাস্তবায়নকে দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করছে। এই প্রেক্ষাপটে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির জন্য বাজেট বাস্তবায়নের মধ্যমেয়াদি পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনের ব্যবস্থা থাকা দরকার।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাস্তবতার নিরিখে এই বাজেট বড়। তবে অর্থনৈতিক প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। এছাড়াও বাজেটে পরোক্ষ করের উপর নির্ভরশীল। এটি বাজেটের মূলদর্শনের সঙ্গে সাংর্ঘষিক। কারণ, বাজেটের লক্ষ‍্য সম্পদ পূর্ণবন্টন। অর্থাৎ ধনীদের কাছ থেকে কর নিয়ে গবিবদের দেওয়া হবে। কিন্তু পরোক্ষ কর বাড়লে দরিদ্রদের ওপর করের বোঝা চাপে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন সপ্তাহে ১৯৮ কোটি ডলারের প্রবাসী আয়
  • সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ল ১০ হাজার কোটি টাকা
  • কালেটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল, বাজেটে শুল্ক–করে নানা পরিবর্তন
  • কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা
  • চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাজেট ব্যর্থ
  • উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন
  • বাজেট অনুমোদন, থাকছে না কালো টাকা সাদা করার সুযোগ
  • শিক্ষা নিয়ে নাগরিকদের উদ্বেগ আমলে নিন
  • বাংলাদেশকে ১৩০ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি