সুনামগঞ্জে সেনাবাহিনীর অভিযানে গোলাগুলি, একজনের মরদেহ উদ্ধার
Published: 23rd, June 2025 GMT
সুনামগঞ্জে জগন্নাথপুর উপজেলার একটি গ্রামে অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের ধরতে সেনাবাহিনীর অভিযানকালে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এসময় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
রোববার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রাত ১১টার দিকে এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত সেনাবাহিনী ওই গ্রাম ঘিরে রেখেছে বলে জানা গেছে।
নিহত ব্যক্তির নাম আবু সাঈদ (৩১)। তিনি পার্শ্ববর্তী দিরাই উপজেলার তারপাশা গ্রামের তাজ মিয়ার ছেলে। আবু সাঈদ পেশায় মোটর মেকানিক।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা বর্তমান চেয়ারম্যান যুবলীগের নেতা একরার হোসেন ও একই গ্রামের বাসিন্দা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আতিকুর রহমানের মধ্যে গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। এর জেরে দুদিন ধরে গ্রামে উত্তেজনা চলছিল। উভয় পক্ষের মধ্যে গত শুক্রবার পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়। এর আগেও দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি ও গুলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্র প্রদর্শন হয়েছে প্রকাশ্যে।
রোববার বিকেলে সেনাবাহিনীর একটি দল অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের ধরতে ওই গ্রামে অভিযান চালায়। খবর পেয়ে হাতিয়া থেকে সন্ত্রাসীরা নৌকায় করে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী জগন্নাথপুর উপজেলার গাদালিয়া গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেনাবাহিনী সেখানে গিয়ে ওই গ্রামে ঘেরাও দিলে সেখানে আশ্রয় নেওয়া সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। এ সময় সেনাবাহিনী গুলি চালায়। পরে ওই এলাকায় আবু সাঈদের লাশ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভুঞা রোববার রাত ১১টায় বলেন, আমাদের কাছে আসলে কোনো তথ্য নেই। এটি হাওরের দুর্গম একটি এলাকা। সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আছেন। পুলিশ জগন্নাথপুর থেকে রওনা হয়েছে। নৌকায় যেতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগবে।
সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গত ২০ জুন ২০২৫ তারিখ, দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা একরার আহমেদের লোকজনের সঙ্গে একই ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি আতিকুর রহমানের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গুলাগুলির ঘটনা ঘটে এবং একজন গুলিবিদ্ধ হয়। এছাড়াও একরার আহমেদ ও তার অনুসারীরা প্রায়ই বর্ণিত এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে আসছিল। এ ধরনের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ থেকে আজ রোববার (২২ জুন) তারিখে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল অস্ত্রধারীদের ধরতে হাতিয়া গ্রামে অভিযান চালায়। বিকেলে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দেখে এক পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনীও গুলি চালায়। পরবর্তীতে একরার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে শুরু করে। টহল দল ওই স্থানে গিয়ে একজনের মরদেহ দেখতে পায়। এই ব্যক্তি কার গুলিতে মারা গেছেন নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বর্তমানে যৌথবাহিনী ওই এলাকায় অস্ত্রধারীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। এখনও (রাত সাড়ে ১১ টা) ওখানে অভিযান চলছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অভ য ন ন হত স ন মগঞ জ দ র ধরত উপজ ল র র বব র একর র র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
একটি সম্ভাবনাময় উদ্যোগ
চট্টগ্রাম নগরীর অলিগলিতে প্রতিদিন জমে ওঠা প্লাস্টিক বর্জ্য আমাদের অজান্তেই হয়ে উঠছে ভবিষ্যতের সম্পদ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা উঠলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে দুর্গন্ধযুক্ত ডাস্টবিন বা বিশাল ল্যান্ডফিলের ছবি। অথচ সে চিত্রটাই বদলে দিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসার সমন্বিত উদ্যোগে গড়ে ওঠা একটি নতুন মডেল, যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য রূপ নিচ্ছে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যে।
এই উদ্যোগের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো– ‘সার্কুলার ইকোনমি’র ধারণা প্রতিষ্ঠা, অর্থাৎ একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে অর্থনৈতিক চক্রে ফিরিয়ে আনা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন একটি ওয়ার্ডের বাসিন্দা হুসনেআরা একজন সক্রিয় রিসাইকলার। প্রতিদিন সেকেন্ডারি ডাম্পিং স্টেশন থেকে গড়ে ৭০-১৫০ কেজি প্লাস্টিক, পলিথিন ও ধাতব বর্জ্য সংগ্রহকারীদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে তিনি সরবরাহ করেন স্থানীয় ডিলারদের কাছে। এ কাজ থেকে মাসে আয় হয় প্রায় ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। উদ্যোগের আওতায় কাজ করে হুসনেআরা শুধু নিজের জীবিকা নির্বাহই করছেন না, বরং অপচনশীল কঠিন বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায়ও ভূমিকা রাখছেন।
‘আগে লোকজন বলত, এসব কুড়িয়ে কী হবে? এখন বোঝে, আমি পরিবেশও বাঁচাই, ঘরও চালাই’– বলেন হুসনেআরা। সন্তানদের কথা জিজ্ঞেস করতে খানিকটা আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘আমি চাই না ওদের ওপর ভর করে চলি, যতদিন পারি নিজে কষ্ট করে খাই।’
হুসনেআরার এই নিষ্ঠা ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি তাঁকে চট্টগ্রামের শ্রেষ্ঠ ভাঙারিওয়ালা হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়েছে, যা তাঁর মতো আরও অনেককেই কঠোর পরিশ্রম ও পরিবেশ রক্ষায় উৎসাহ ও মর্যাদা দিয়েছে। চট্টগ্রাম শহরে হুসনেআরার মতো প্রায় তিন হাজার বর্জ্য সংগ্রাহক প্রতিদিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত আছেন, যা এ উদ্যোগটিকে একটি সফল পরিবেশ-অর্থনীতি সম্মিলিত মডেলে রূপ দিয়েছে।
চট্টগ্রাম শহরে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। ২০২২ সাল থেকে চালু হওয়া ‘প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ উদ্যোগের আওতায় এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ২৪ হাজার টনের বেশি কঠিন বর্জ্য, যার মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ প্লাস্টিক এবং ৭০ শতাংশ সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক।
আমাদের দেশের প্লাস্টিক পণ্যের বাজারের আকার বছরে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। প্রায় পাঁচ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন করে থাকে। এ শিল্পে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২০ লাখ মানুষ নিয়োজিত। এটি দেশের ১২তম বৃহৎ রপ্তানি খাত, যেখান থেকে প্রতিবছর ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় হয়। তাছাড়া সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হচ্ছে এ খাত থেকে।
একজন বর্জ্য সংগ্রাহক মাসে গড়ে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন, যা একদিকে তাদের জীবিকা নিশ্চিত করছে, অন্যদিকে শহরকে করে তুলছে পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য।
শিক্ষার্থী
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম কলেজ