অভিযান থেকে অস্ত্রবিরতি: যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে পথ বদলালো
Published: 24th, June 2025 GMT
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে এলো সুখবর। অবশেষে ইরান ও ইসরায়েল একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে। কয়েকদিনের গোপন কূটনৈতিক তৎপরতা, সামরিক চাপ এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার ধারাবাহিকতায় এলো এ খবর।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি মূলত মার্কিন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফল। তবে যুদ্ধবিরতির টেকসই হওয়া নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।
ট্রাম্পের মধ্যস্থতা: ইরানে ইসায়েলের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এতে যোগ দেয়। তারা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। ট্রাম্প এই হামলাকে ‘খুব সফল একটি আক্রমণ’ বলে দম্ভোক্তিভরা দাবি করেছেন। এমনকি যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও তিনি দাবি করেছেন, ‘নিখুঁত হামলার’ কারণে এ চুক্তি সম্ভব হয়েছে।
আরো পড়ুন:
‘নিখুঁত হামলার’ কারণে চুক্তি সম্ভব হয়েছে: ট্রাম্প
‘ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা না যাচাইযোগ্য, না স্থায়ী’
নিজেকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দাবি তিনি লেখেন, তার সহায়তাতেই এই ‘চুক্তি’ সম্ভব হয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, “আজকের ‘চুক্তি’ সম্ভব হতো না আমাদের অসাধারণ বি টু পাইলটদের সাহস এবং দক্ষতা ছাড়া। তাদের অসাধারণ কাজ পুরো পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “একটি নিখুঁত ‘হামলা’ সবাইকে একত্রিত করেছে এবং এরপরই চুক্তি হয়েছে!!!”
যুদ্ধ শুরুর পরপরই বিশ্ব তেলবাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাড়ে মূল্যস্ফীতি, দেখা দেয় রাজনৈতিক চাপ। ফলে দ্রুত দিক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় হোয়াইট হাউস। সামরিক অভিযান চালিয়ে পরপরই ফেরে কূটনীতির টেবিলে।
রয়টার্স জানায়, সোমবারই ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর নেতানিয়াহুর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন এবং তার প্রশাসনের সদস্যরা তেহরানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হোয়াইট হাউসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ইসরায়েল রাজি হয়েছে যুদ্ধবিরতিতে, তবে শর্ত একটাই—ইরান যেন নতুন করে আর কোনো হামলা না চালায়।” তিনি আরও বলেন, “ইরান জানিয়েছে, তারা আর হামলা চালাবে না।”
এই আলোচনায় ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। তিনি ও তার কূটনৈতিক টিম তেহরানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যান।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি কূটনৈতিক সাফল্য হলেও, যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নির্ভর করছে উভয় পক্ষের ভবিষ্যৎ আচরণের ওপর।
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘তুমি কি মুসলিম’ বলেই নিউইয়র্কের সাবওয়েতে নারীর ওপর হামলা
নিউইয়র্ক নগরের সাবওয়েতে ৫৫ বছর বয়সী নারী হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ওই নারী বলেন, ‘তুমি কি মুসলিম’ প্রশ্ন করার পরই তাঁকে মারধর করেছেন হামলাকারী।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডব্লিউএবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সংবাদমাধ্যমটি ওই নারীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছে।
গত বুধবার ভোরে নিউইয়র্ক নগরের কুইন্স এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই নারী যখন সাবওয়েতে ট্রেনে উঠছিলেন, তখন ৩৪ বছর বয়সী নাভেদ দুরানি নামের ওই হামলাকারী তাঁর খুব কাছাকাছি চলে আসেন।
ওই নারী বলেন, ‘তিনি (হামলাকারী) আমাকে বললেন, তুমি কোথা থেকে এসেছ? তুমি কি মুসলিম?’
হামলার শিকার নারী বলেন, ‘আমি বললাম, হ্যাঁ। তখনই ওই ব্যক্তি আমাকে লাথি–ঘুষি মারতে শুরু করেন, সবদিক থেকে আঘাত করেন।’
ডব্লিউএবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রেনের দরজা বন্ধ হওয়ার পরপরই হামলা শুরু হয়। পরবর্তী স্টেশনে যাওয়া পর্যন্ত হামলা চলে। পরের স্টেশনে ট্রেন থামার পর নাভেদ দুরানি পালিয়ে যান।
ওই নারী বলেন, ‘আমি শুধু বলছিলাম, থামুন থামুন। কিন্তু হামলাকারী থামেননি। আমি বুঝতেই পারিনি, কী হচ্ছে।’
নিউইয়র্ক নগর পুলিশ বিভাগের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, নাভেদ দুরানি মুখ ঢেকে রেখেছিলেন। তিনি ওই নারীর মুখ, মাথা ও ঘাড়ে ঘুষি ও লাথি মেরেছেন।
ডব্লিউএবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ জানিয়েছে, দুরানি ওই নারীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি মুসলিম কি না। পরে তাঁকে মারধর করে পালিয়ে যান। দুজন নারী যাত্রী ও সাবওয়ে কন্ডাক্টরের সহায়তায় পুলিশ দুরানিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
নিউইয়র্ক নগর পুলিশ বিভাগ ইনডিপেনডেন্টকে জানিয়েছে, ঘৃণা ছড়ানোর অপরাধ ও আক্রমণের অভিযোগে দুরানিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডব্লিউএবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আক্রান্ত নারী মাথায় চোট পেয়েছেন। হামলায় তাঁর নাক ভেঙে গেছে এবং তিনি সারা শরীরে আঘাত পেয়েছেন।
ওই নারী বলেন, ‘এই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আগে কখনো এমন কিছু ঘটেনি। আমি কীভাবে তাঁর (হামলাকারীর) মুখ ভুলতে পারি?’
ওই নারীর চিকিৎসা, মানসিক সহায়তা, বাসাভাড়া ও খাবার কেনার মতো জরুরি খরচ মেটাতে ‘গো ফান্ড মি’ নামে একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করা হয়েছে। উদ্যোক্তা নিজেকে ওই নারীর সন্তান উল্লেখ করে পেজে লিখেছেন, ‘তিনি (ওই নারী) শুধু নিজের ও তাঁর পরিবারের দুজন সদস্যের ভরণপোষণের চেষ্টা করছিলেন। একজন ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি মুসলিম কি না। তিনি শান্তভাবে ‘‘হ্যাঁ’’ বলার পরপরই লোকটি আচমকা তাঁকে হিংস্রভাবে আঘাত করেন।’
ওই নারী ‘শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করছেন’ বলে জানিয়েছেন তহবিল সংগ্রহকারী। তিনি বলেন, সন্দেহভাজন হামলাকারীকে আটক করা হলেও ‘শুধু ন্যায়বিচার পেলেই মানসিক আঘাত দূর হয় না, চিকিৎসার খরচও কমানো সম্ভব নয়।’
তহবিল সংগ্রাহক আরও বলেন, ‘জরুরি চিকিৎসা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানো, ওষুধ এবং পরীক্ষা–নিরীক্ষার খরচ অনেক বেশি। তার চেয়েও খারাপ কথা হলো, মাথায় আঘাতের লক্ষণ এখনো যাচ্ছে না। এর ফলে তিনি কাজে ফিরতে পারছেন না। এ জন্য নিজের ও পরিবারের সদস্যদের খরচ জোগাড় করতে পারছেন না। বাসাভাড়া, বিদ্যুৎ ও ন্যূনতম জীবনযাত্রার খরচ মেটাতেও হিমশিম খাচ্ছেন।’