আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এর আগে গত এপ্রিলে সংস্থাটির পূর্বাভাস ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। 

আজ সোমবার ওয়াশিংটনে আইএমএফের নির্বাহী পর্যদ বাংলাদেশের জন্য চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির ১৩৪ কোটি ডলার ছাড় করার অনুমোদনের সঙ্গে বাড়তি ৮০ কোটি ডলার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর আইএমএফ এক বিবৃতিতে এ তথ্যের পাশাপাশি জিডিপির পূর্বাভাসসহ অর্থনীতির বেশকিছু উল্লেখ করেছে। 

এতে বলা হয়, আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে। এ দিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্যও আইএমএফ প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে। যা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ অনুমানের চেয়ে কম। একই সঙ্গে সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ।  

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর দ্রুত অন্তর্বর্তী সরাকর গঠন রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হয়। ফলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে পর্যায়ক্রেম যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। তবে চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান বাধা এবং ব্যাংকিং খাতে চাপ বাড়ার কারণে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আগের চেয়ে কমেছে। 

আইএমএফের ডিএমডি এবং পর্ষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ার নাইজেল ক্লার্ক বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় নীতি কার্যক্রম ও সংস্কার বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এবং বাজেটে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানায় আইএমএফ। 

তিনি আরও বলেন, কঠিন রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত এবং বর্ধিত নিম্নমুখী ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি সংক্রান্ত অগ্রগতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্তোষজনক। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, ঝুঁকিগ্রস্থ মানুষকে রক্ষা করা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং পরিবেশবান্ধব টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য সংস্কার এজেন্ডা এগিয়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইএমএফ প রব দ ধ প রব দ ধ দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

তেমন পরিবর্তন ছাড়াই পাস হচ্ছে বাজেট

তেমন কোনো পরিবর্তন আসছে না আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত জাতীয় বাজেটে। তবে ফ্ল্যাট কেনা ও ভবন নির্মাণে অপ্রদর্শিত বা কালোটাকা সাদা করার সুযোগটি বাতিল হতে পারে। এ ছাড়া সোনার আংটি কেনা, চোখে কর্নিয়া স্থাপন ইত্যাদি বাবদ ৫ শতাংশ হারে যে কর ছিল, সেটি আর থাকছে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রগুলো জানায়, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট আজ রোববার উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করবে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

সূত্রগুলো জানায়, প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট, নির্দিষ্টকরণ অধ্যাদেশ এবং অর্থ অধ্যাদেশ, ২০২৫ সংশোধনের প্রস্তাবও উপস্থাপন করবেন।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এগুলো পাস হওয়ার কথা রয়েছে। অর্থ অধ্যাদেশ, ২০২৫ সংশোধন ছাড়া বাকি দুটির ভেটিং (আইনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা) ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। কাল শুধু অনুমোদন হবে। আর অর্থ অধ্যাদেশ সংশোধনের বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পর ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে। এরপর তা যাবে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। সব মিলিয়ে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই অর্থ অধ্যাদেশ সংশোধনের প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

সংসদ না থাকার কারণে পেশ করা বাজেট নিয়ে বেশি আলোচনা হয়নি এবার। বাজেট পেশের পরদিন ৩ জুন অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে যেসব প্রশ্ন উঠে আসে, তার কিছুর জবাব দিলেও কিছু আবার এড়িয়ে যান উপদেষ্টারা। এর বাইরে অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে বাজেট নিয়ে উন্মুক্ত মতামত দেওয়ার সুযোগ রাখা যায়। এ ছাড়া কয়েকটি চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন নিজেদের মতো সংবাদ সম্মেলন করেছে। কেউ কেউ আবার বৈঠক করতে পেরেছে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মতামত দেওয়ার জন্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যে আহ্বান জানানো হয়েছিল, তাতে ১০০টি মতামতও পাওয়া যায়নি। বেশির ভাগ মতামত এসেছে আবার ব্যাখ্যা না বোঝার বিষয়ে। এগুলোর ব্যাখ্যা আজ বা কালের মধ্যেই জানিয়ে দেবে অর্থ বিভাগ।

সম্পূরক বাজেট পাস হবে

এদিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট আজ উপদেষ্টা পরিষদে পাস হবে। এর মাধ্যমেই সরকারের যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তাদের মূল বরাদ্দের চেয়ে চলতি অর্থবছরে বেশি ব্যয় করেছে, তা অনুমোদন করা হবে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ রোববার ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) অধ্যাদেশ-২০২৫’ উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করবেন। ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরের কার্যক্রম নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল থেকে মঞ্জুরীকৃত অর্থের বেশি বরাদ্দ ও নির্দিষ্টকরণের কর্তৃত্ব দেওয়ার জন্য এ অধ্যাদেশ উপস্থাপন করা হবে। সংসদ থাকলে যা পাস হতো কণ্ঠভোটে, আজ তা পাস হবে উপদেষ্টাদের সম্মতিতে।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার নিট বরাদ্দ ছিল। বাজেট উপলক্ষে অর্থ বিভাগ প্রকাশিত সম্পূরক বাজেট বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংশোধিত বাজেটে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ বেড়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্থ বিভাগের সম্পূরক দাবিই ১ লাখ ৪ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা বেশি। বাকি ৫২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বাজেট কারও কমেছে, কারও অপরিবর্তিত রয়েছে।

অর্থ বিভাগের সম্পূরক দাবি এত বেশি কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বিভাগটির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এটা মোট (গ্রস) টাকা। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ, ভর্তুকি ও প্রণোদনা, ট্রেজারি বিল, ট্রেজারি বন্ড ইত্যাদি দায়ের টাকা আছে এর মধ্যে। তাই পরিমাণটা বেশি দেখাচ্ছে।

সাধারণত সম্পূরক বাজেটে বিভিন্ন মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে সংসদ সদস্যরা ছাঁটাই প্রস্তাব দেন। মঞ্জুরি দাবির ওপর সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনা করেন। সংসদ না থাকায় সংগত কারণেই এবার সে আলোচনা হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫.৪ শতাংশে নামিয়ে আনল এমআইএফ
  • চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২১৪৫ কোটি টাকার বাজেট, জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্ব
  • সেন্ট্রাল ফার্মার ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নিরীক্ষকের শঙ্কা, পরিদর্শনের নির্দেশ
  • সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা বাড়ল
  • সরকারি কর্মচারীদের ন্যূনতম বিশেষ সুবিধা বাড়ছে
  • সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ল ১০ হাজার কোটি টাকা
  • কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা
  • বাজেট অনুমোদনে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক চলছে
  • তেমন পরিবর্তন ছাড়াই পাস হচ্ছে বাজেট