বাংলাদেশকে ৮০ কোটি ডলার বাড়তি ঋণ দিছে আইএমএফ
Published: 24th, June 2025 GMT
চলমান ঋণ কমসূচির দুই কিস্তির ১৩৪ কোটি ডলার বাড়টি ৮০ কোটি ডলার ছাড় করার অনুমোদনের সঙ্গে বাড়তি ৮০ কোটি ডলার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ। এতে করে বাংলাদেশের অনুকূলে সংস্থাটির মোট ঋণ দাঁড়বে ৫৫০ কোটি ডলার।
গতকাল সোমবার ওয়াশিংটনে আইএমএফের নির্বাহী পর্যদ এ অনুমোদন দেয়। আইএমএফ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
আইএমএফ ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। প্রথম তিন কিস্তি স্বাভাবিকভাবে দেওয়ার পর চতুর্থ কিস্তি আটকে যায়। এর পেছনে ছিল রাজস্ব আয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করা এবং বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে দেরি হওয়া। দীর্ঘ আলোচনার পর এ বিষয়ে সমঝোতা হয়। যার ফলে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় হচ্ছে।
আইএমএফ বলছে, বাড়তি সহায়তা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে দেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রীলঙ্কা এখন ৭% প্রবৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছে
অর্থনৈতিক দুর্যোগ কাটিয়ে শ্রীলঙ্কা ইতিমধ্যে স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। এখন তারা উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের স্বপ্ন দেখছে। রেকর্ড পরিমাণ সরকারি মূলধন ব্যয়ের কল্যাণে দেশটি আশা করছে, ২০২৬ সালে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে। যদিও চলতি বছর কাঙ্ক্ষিত হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত না–ও হতে পারে।
২০২২ সালে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার দুই বছরের মধ্যেই শ্রীলঙ্কা জোরালোভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। ২০২৪ সালে দেশটির অথনীতিতে প্রবৃদ্ধি হয় ৫ শতাংশ। তবে চলতি ২০২৫ সালের বাজেট পাসে দেরি হওয়ায় সরকারি ব্যয় কমেছে। তার জেরে এ বছর প্রবৃদ্ধি ৪ থেকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে নেমে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর রয়টার্সের
শ্রীলঙ্কার শ্রম ও অর্থনৈতিক উন্নয়নবিষয়ক উপমন্ত্রী অনীল জয়ন্তা ফার্নান্দো বলেছেন, স্বাধীনতার পর ২০২২ সালে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। এখন সেই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার পথে। এই পরিস্থিতিতে দেশের জনগণ ও বিনিয়োগকারীদের উচিত অর্থনীতি নিয়ে ‘আশাবাদী’ হওয়া।
অনীল জয়ন্তা ফার্নান্দো বলেন, ‘আগামী বছর আমাদের ৫ থেকে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা সেদিকেই অগ্রসর হব।’ তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদে, অর্থাৎ পাঁচ বছর পর আমাদের লক্ষ্য হবে গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর পর্যায়ে উন্নীত করা, প্রায় ৬ থেকে ৭ শতাংশ।’ ২০২৬ সালে সরকার উন্নয়ন ব্যয় ৮ শতাংশ বাড়িয়ে রেকর্ড ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি রুপি বা ৪৬৪ কোটি ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে।
* শ্রীলঙ্কার জিডিপিতে এ বছর ৩ দশমিক ৩ শতাংশ ও ২০২৬ সালে ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আইএমএফের।* এ বছর তা রেকর্ড ৮ বিলিয়ন কোটি ডলারের প্রবাসী আয়ের প্রত্যাশা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২৩ সালের মার্চ মাসে শ্রীলঙ্কাকে সহায়তা দিয়েছিল। সংস্থাটি এ বছর শ্রীলঙ্কার জিডিপিতে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। সরকারি হিসাবে, চলতি ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করেছে শ্রীলংকা সরকার।
সে দেশের মন্ত্রী অনীল জয়ন্তা ফার্নান্দো বলেন, ‘আগামী বছর সবকিছু বদলে যাবে, এমন দাবি আমরা করছি না। তবে জনগণ, বিশ্ব সম্প্রদায় ও বিনিয়োগকারীদের বলছি, আশাবাদী থাকুন। এরকম পূর্বাভাস আগামী বাজেটে আসতে পারে।’
বাজেট পাসে বিলম্ব
২০২৫ সালের জন্য শ্রীলঙ্কা মূল উন্নয়ন ব্যয় বরাদ্দ রেখেছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি রুপি। তবে প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকের নেতৃত্বে নতুন সরকার দেরিতে বাজেট অনুমোদন করায় ব্যয় পিছিয়ে যায়। দেশটি সাধারণত নভেম্বরে মাসে সংসদে বাজেট উপস্থাপন করে এবং ডিসেম্বরে অনুমোদন দেয়। এ বছর সেই নিয়মে ফেরার পরিকল্পনা আছে তাদের।
অনীল জয়ন্তা ফার্নান্দো বলেন, এ বছর বাজেট অনুমোদনে দেরি হওয়ায় অনেক মন্ত্রণালয় ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু করতে দ্বিধায় ছিল। দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যয় বাড়লেও তা এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। ফলে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি সেই ক্ষতি পূরণ না করলে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন কঠিন। জুলাই শেষে বাজেটের মাত্র পাঁচ ভাগের একভাগ খরচ হয়েছে।
জয়ন্তা ফার্নান্দো বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিক বাজেট চক্রে ফিরব। ফলে আগামী বছর সব ঠিকঠাক চলবে। আমরা নতুন হওয়ায় কিছুটা শিক্ষা পেয়েছি।’
ঋণের ধরন পরিবর্তন
অনীল জয়ন্তা ফার্নান্দো আরও জানান, ২০২৬ সালে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) দ্বিগুণের বেশি হয়ে ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলারের ওপর যেতে পারে। মূলত চীন, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে এই এফডিআই প্রবাহ আসবে। শ্রীলঙ্কা এখন বড় প্রকল্প ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের সঙ্গে যুক্ত কৌশলগত বৈদেশিক ঋণে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। মজুত বাড়ানো বা পুরোনো উদ্যোগ চালাতে বাজারভিত্তিক যে ঋণ নেওয়ার রীতি ছিল, সেই পথ থেকে সরে আসছে দেশটি।
অত্যধিক ঋণের বোঝায় জর্জরিত দেশটি আইএমএফের কাঠামোর মধ্যে থেকে ঋণ কমানোর পথে কাজ করছে। লক্ষ্য—২০৩২ সালের মধ্যে ঋণ-জিডিপি অনুপাত ৯৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। সেই লক্ষ্যের আরও আগ্রাসী রূপ হলো এই অনুপাত ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০৯ দশমিক ৬ শতাংশ।
ফার্নান্দো আরও বলেন, কেবল জরুরি বিনিয়োগের জন্য ঋণ নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও পর্যটন খাতে গতি এনে বৈদেশিক মজুত শক্তিশালী করায় জোর দেবে সরকার।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বছরের প্রথম ৮ মাসে ৫ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ৫২০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এ বছর তা রেকর্ড ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার স্পর্শ করতে পারে। গত বছর প্রবাসী আয় এসেছিল ৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন বা ৬৫৭ কোটি ডলার। এর আগে সবচেয়ে বেশি এসেছিল ২০১৬ সালে—৭ দশমিক ২৪ বিলিয়ন বা ৭২৪ কোটি ডলার।
ঋণসংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি ছিল করুণ। ২০২২ সালে দেশটির মূল্যস্ফীতি ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু ২০২৫ সালের মধ্যে দেশটি মূল্যহ্রাসের ধারায় নেমে এসেছে। কঠোর মুদ্রানীতি, রাজস্ব সংস্কার ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সহায়তায় পরিচালিত পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।