রাজবাড়ীতে সক্রিয় বিএনপি-জামায়াত, আত্মগোপনে আওয়ামী লীগ
Published: 25th, June 2025 GMT
বিগত বছরগুলোতে রাজবাড়ীর রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সরব অবস্থান থাকলেও গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সবাই আত্মগোপনে। অনেক নেতা–কর্মী গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। আগে মাঝেমধ্যে বিএনপির নেতা–কর্মীদের রাজপথে দেখা গেলেও জামায়াতে ইসলামী ছিল নীরব। এখন জামায়াতের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো।
এর বাইরে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের অনেকটা চুপিসারে দলীয় কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা ছাড়া তেমন কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করছে। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে রাজপথে ব্যানার নিয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের তেমন কোনো কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি। এ ছাড়া সদ্য প্রতিষ্ঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড নেই।
বিভক্তির মধ্যেই সক্রিয় বিএনপি
রাজবাড়ীতে আওয়ামী লীগের আমলে নানা ধরনের মামলা-মোকদ্দমায় কোণঠাসা বিএনপি-জামায়াত চাঙা হয়ে উঠেছে। রাজবাড়ী-১ (রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ) ও রাজবাড়ী-২ (পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী) আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। জাতীয় নেতাদের উপস্থিতিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দলীয় কর্মসূচি পালনে মাঠে বাঁশ দিয়ে পৃথক ভেন্যু তৈরির ঘটনায় বিএনপির দুই গ্রুপের প্রকাশ্য বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জেলা শহরে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ে বর্তমান কমিটি ছাড়া সাবেক নেতা–কর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায় না। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে ব্যক্তিগত কার্যালয়। আগামী নির্বাচনের সম্ভ্যব্য প্রার্থীরা ছুটে বেড়াচ্ছেন মাঠপর্যায়ে।
রাজবাড়ী বিএনপির একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ (খৈয়ম) এবং সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিরুল হক (সাবু)। অপর অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসলাম মিয়া এবং জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ।
রাজবাড়ী–১ আসনে এক পক্ষে আছেন আলী নেওয়াজ মাহমুদ (খৈয়ম) এবং অন্য পক্ষে আছেন আসলাম মিয়া। বর্তমান জেলা ও উপজেলা বিএনপির কমিটি আসলাম-হারুন গ্রুপের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে গঠনতন্ত্রের আলোকে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি হয়। ইতিমধ্যে কাউন্সিলের ভিত্তিতে ৮টির মধ্যে ৭টি ইউনিটে কমিটি হয়েছে। সদর উপজেলা কাউন্সিল বাকি আছে, তারও প্রস্তুতি চলছে।
রাজবাড়ী-২ আসনে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ বেড়ে চলেছে। একদিকে আছেন নাসিরুল হক (সাবু), আরেক দিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ। নাসিরুল দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় ৫ আগস্ট পরবর্তী অধিকাংশ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে থাকতে পারেননি। হারুন জেলায় দলীয় কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি নির্বাচিত এলাকায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। নিজেদের আধিপত্য নিয়ে ১৭ জুন বিকেলে পাংশা উপজেলার কসবামাজাইলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হন।
জনসংযোগে ব্যস্ত জামায়াত
জামায়াত মাঝেমধ্যে জেলা শহর ছেড়ে উপজেলা, ইউনিয়নসহ তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করছে। নেতা–কর্মীরা ধর্মীয় ও সামাজিক নানা কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি রাজবাড়ীর দুটি আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর নেতৃবৃন্দ মাঠ পর্যায়ে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
রাজবাড়ী-১ আসনে জেলা জামায়াতের ইসলামীর আমির মো.
নুরুল ইসলাম আশা প্রকাশ করেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ছাত্র–জনতার পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকেরা বিকল্প হিসেবে জামায়াতকে বেছে নিবে।
আত্মগোপনে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, উপজেলা পর্যায়ের কার্যালয় ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলীর বাসভবন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
গ্রেপ্তার এড়াতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অসংখ্য নেতা আত্মগোপনে আছেন। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে রাজবাড়ী জেলা কারাগারে আছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী। জেলা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ ঘাট থানা এবং ডিবি কার্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা পাঁচটি মামলা করেন। এতে ৩৭০ জনকে এজাহারভুক্ত এবং প্রায় ৯০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এসব মামলায় মাঝেমধ্যে নেতা–কর্মী গ্রেপ্তার হচ্ছেন।
এনসিপিসহ অন্য দলের অবস্থা
এনসিপি রাজবাড়ী জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে সদস্য সংগ্রহ ও কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। তবে তাদের তেমন কোনো দলীয় কর্মসূচি বা কার্যক্রম দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের মিত্র হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ওয়ার্কার্স পার্টির দলীয় কোনো কর্মসূচি দৃশ্যমান নয়। আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও স্থানীয় নানা ইস্যুতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণ অধিকার পরিষদের কিছু কর্মসূচি বা তাদের তৎপরতা চোখে পড়ে। এর বাইরে বিভিন্ন দাবি নিয়ে মাঝেমধ্যে সিপিবির তৎপরতা দেখা যায়।
জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হাবিবুর রহমান (বাচ্চু) বলেন, ‘বর্তমানে দলীয় কোনো কর্মসূচি না থাকায় আমরা চুপচাপ আছি। তবে মাঝেমধ্যে দলীয় কার্যালয়ে বসছি, নেতা–কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রাজবাড়ীতে অনেকটা উজ্জীবিত। আগামী জাতীয় নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে মাঝেমধ্যে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। ইসলামী আন্দোলন রাজবাড়ী জেলা শাখার সদ্য বিদায়ী সভাপতি ও উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য মুফতি শামসুল হুদা বলেন, ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে একমত হলে জামায়াতের সঙ্গে জোট হতে পারে। আদর্শগত মতপার্থক্য থাকলে ইসলামী আন্দোলন একাই নির্বাচন করবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র স ব ক স কর ম দ র পর য য় দল য় ক উপজ ল সদস য আওয় ম ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
এক বছরে সড়কে ৬ হাজারের বেশি নিহত, কোথায় বেশি, কারণ কী
দেশে সড়কপথে এক বছরে ৬ হাজার ৪২০ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৪৮ শতাংশই নারী-শিশু ও পথচারী।
এ হিসাব গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সড়কে নারী, শিশু, পথচারী এবং চালক-সহকারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন এবং এঁদের মৃত্যুর হারও বেশি।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গত ১২ মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সংস্থাটির পরিসংখ্যান বলছে, সড়কে বেশি মৃত্যু হয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। ওই ১২ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মানুষের সংখ্যা ১২ হাজার ৫২৮। ১২ মাসে মোট সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৬ হাজার ৪৩৭।
মোট নিহত ব্যক্তির মধ্যে নারী ৯০৮, শিশু ৮৭১ এবং পথচারী ১ হাজার ৩২২ জন—যা মোট মৃত্যুর ৪৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে যানবাহনের চালক ও তাঁদের সহকারীর সংখ্যা ৮৫৫। সব মিলিয়ে এই চারটি ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণি (নারী, শিশু, পথচারী এবং চালক-সহকারী) মোট নিহতের প্রায় ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যা প্রমাণ করে দেশের সড়কে বিদ্যমান নিরাপত্তাকাঠামো সমাজের দুর্বলতম অংশকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা এখন আর বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়; বরং এটি একটি ভয়াবহ জাতীয় সংকট।
সড়কে নারী, শিশু, পথচারী এবং চালক-সহকারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন এবং এঁদের মৃত্যুর হারও বেশি।সড়কে প্রধান ঘাতক ‘মোটরসাইকেল’মহাসড়কে বিপজ্জনক বাঁকে কাছাকাছি দূরত্বে বাস-ট্রাক-মোটরসাইকেল। রংপুর নগরের হাজিরহাট এলাকায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের এই স্থানে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। তবু ওভারটেকিং করে চলাচল করছে যানবাহন