ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার একটি মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে তিন ছাত্রী নিখোঁজ হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর রাতে তারা ওই মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে যায়। দুই মাস পার হলেও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে স্বজনদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই মাদ্রাসার ছাত্রীর সংখ্যা ১২৫। এর মধ্যে ১২ জন আবাসিকে থাকে। ৮ সেপ্টেম্বর রাতে খাওয়ার পর ছাত্রীরা ঘুমিয়ে পড়ে। ফজরের সময় তত্ত্বাবধায়ক ছাত্রীদের ডাকতে গিয়ে দেখেন, তিনজন রুমে নেই। বারান্দায় মশারি ঝুলে ছিল। তত্ত্বাবধায়ক ধারণা করেন, ওই তিনজন মশারি বেয়ে নিচে নেমেছে। এর পর থেকে তাদের আর খোঁজ মেলেনি।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে, তারা কেউই বাড়িতে যায়নি। পরে শহরের বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, রাত দেড়টার দিকে তিন ছাত্রী একটি রিকশায় পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যায়। পরে রিকশা বদল করে ঠাকুরগাঁও রোড রেলস্টেশনের দিকে যায়। সেখানকার একটি আবাসিক হোটেলে রাত ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করে। এরপর তারা হোটেল থেকে বের হয়ে রিকশাযোগে রেলস্টেশনে যায়, কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আবার রিকশাস্ট্যান্ডে ফিরে আসে। পরে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় পীরগঞ্জের দিকে রওনা হয়। এর পর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।

এ ঘটনায় ১০ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ তিন ছাত্রীর পরিবার ঠাকুরগাঁও সদর থানায় পৃথক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পরে ১৪ অক্টোবর এক ছাত্রীর বাবা মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় মাদ্রাসার পরিচালক, প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক এবং ঠাকুরগাঁও রোড আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থাপক মো.

আসাদুজ্জামানকে।

এ বিষয়ে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘রাত ২টার দিকে তিন মেয়ে এসে বলে, তারা কিছুক্ষণ থাকবে। প্রায় দুই ঘণ্টা থেকে ভোরে চলে যায়। আমি তাদের ব্যাগ রিকশায় তুলে দিই। তবে তাদের নাম-ঠিকানা হোটেলের রেজিস্ট্রারে লেখা হয়নি।’

এক ছাত্রীর (১৫) বাবা অভিযোগ করে বলেন, ‘৭ সেপ্টেম্বর আমার মেয়ে ফোনে জানিয়েছিল, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কথায় কথায় তাদের ওপর নির্যাতন চালায়। শৌচাগারে দেরি হলে ৫০ টাকা জরিমানা দিতে হয়। এ ঘটনায় দুজন প্রতিবাদ করলে তাদের ওপরও নির্যাতন চলে। বিষয়টি শুনে আমি পরিচালকের কাছে মেয়ের ছাড়পত্র (টিসি) চাইলে মাদ্রাসার লোকজন মেয়েদের স্টোররুমে আটকে রাখে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাদ্রাসায় আবাসিক ছাত্রী থাকলেও বারান্দায় কোনো গ্রিল ছিল না। তিন মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পরই তারা তড়িঘড়ি করে সেখানে গ্রিল লাগিয়েছে। দুই মাস হয়ে গেল, মেয়েকে দেখি না। আমরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছি, কিন্তু পাচ্ছি না। পুলিশ শুধু বলছে, তারা কাজ করছে। মেয়েরা কোথায় আছে, কেমন আছে—একমাত্র আল্লাহই জানেন।’

নিখোঁজ আরেক ছাত্রীর (১৫) মা বলেন, ‘মাদ্রাসায় অনেক ছাত্রী থাকা সত্ত্বেও কোনো নিরাপত্তাপ্রহরী ছিল না। আবাসিকে গ্রিলও না থাকায় সহজেই কেউ বাইরে যেতে বা ভেতরে ঢুকতে পারত। এখন গ্রিল লাগানো হয়েছে। আমরা মেয়েদের মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের ভরসায় রেখে গিয়েছিলাম, তারা এত দায়িত্বহীন হলো কীভাবে।’

আরেক ছাত্রীর (১৩) বোন বলে, ‘দুই মাসেও তাদের কোনো খোঁজ পাইনি। ওদের সঙ্গে কী ঘটেছে, তা বুঝতে পারছি না। আমরা খুব উদ্বিগ্ন।’

অভিযোগ অস্বীকার করে মাদ্রাসার পরিচালক বলেন, ‘ছাত্রীরা পরিকল্পনা করেই পালিয়েছে। তা না হলে ব্যাগভর্তি কাপড় নিয়ে যাবে কেন। মাদ্রাসায় আরও ছাত্রী আছে, তাদের তো কোনো অভিযোগ নেই। আমরা নিজেরাও নিখোঁজ ছাত্রীদের খুঁজছি। আমাদের নামে মামলা হয়েছে, এ বিষয়ে কিছু জানি না।’

ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তিন শিক্ষার্থী নিখোঁজের ঘটনা আমাকে ব্যথিত করেছে। আমরা সবদিক বিবেচনা করে কাজ করছি। তবে এখনো উল্লেখযোগ্য ফল মেলেনি। কেউ অপরাধ করলে তাকে খুঁজে বের করা কঠিন হয়, আবার কেউ স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গেলে তাকেও পাওয়া কঠিন। আমার ধারণা, মাদ্রাসা থেকে বের হওয়ার পর তারা কোনো চক্রের খপ্পরে পড়েছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প ট ম বর ঠ ক রগ

এছাড়াও পড়ুন:

দিনাজপুরে ভুল অস্ত্রোপচারে দুই যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ

দিনাজপুরের বিরামপুর ও নবাবগঞ্জের দুটি অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভুল অস্ত্রোপচারে দুই যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। 

শনিবার (৮ নভেম্বর) রাতে বিরামপুরের মা ও শিশু জেনারেল হসপিটালে ১৭ বছর বয়সী শফিকুল ইসলামের টনসিল অপারেশনের পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। পরিবারের অভিযোগ, অপারেশনের পরপরই রক্তক্ষরণ শুরু হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে দ্রুত রংপুরে নেওয়া হলে পাঁচ ব্যাগ রক্ত দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।

মৃত শফিকুলের বড় ভাই আব্দুল আজিজ বলেছেন, নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা. মো. শের আলী মর্তুজা ভুল অস্ত্রোপচার করায় আমার ভাই মারা গেছে। আমি বিচার চাই, ডাক্তারের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

এর আগে ২৯ অক্টোবর নবাবগঞ্জের ভাদুরিয়ায় রেনেসাঁ ক্লিনিক অ্যান্ড হাসপাতালে ৩১ বছর বয়সী মমিনুল ইসলাম লাবুর টনসিল অপারেশন করেন ডা. মো. শের আলী মর্তুজা। অপারেশনের পর লাবু অচেতন থাকায় তাকে দিনাজপুরে নেওয়া হয়।

লাবুর বাবা আফজাল হোসেন অভিযোগ করেছেন, দিনাজপুরে নেওয়ার পথে বিরামপুর রেলগেটে মোটরসাইকেল নেওয়ার কথা বলে পালিয়ে যান ডা. শের আলী মর্তুজা। দিনাজপুর হাসপাতালে পৌঁছালে ডাক্তাররা জানান, লাবুর মৃত্যু হয়েছে। তারা বলেন, অপারেশনের সময় ছেলের শ্বাসনালী কেটে গেছে।

বিরামপুরের মা ও শিশু জেনারেল হসপিটালের ম্যানেজার হুমায়ুন জানিয়েছেন, ডা. শের আলী মর্তুজা তাদের অপারেশন থিয়েটার ভাড়া নিয়ে দুই রোগীর টনসিল অপারেশন করেন। পরে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে রংপুরে পাঠানো হয় এবং রাতে তার মৃত্যুর খবর আসে।

অন্যদিকে, ভাদুরিয়ার রেনেসাঁ ক্লিনিক অ্যান্ড হাসপাতালের মালিক জোবায়ের আহমেদ বলেছেন, ২৯ অক্টোবর আমাদের এখানে কোনো অপারেশন হয়নি। ডা. মর্তুজা তার চেম্বারে একজন রোগী এনেছিলেন। রোগীটি সম্ভবত স্ট্রোক করেছে।

এসব বিষয়ে ডা. শের আলী মর্তুজার বক্তব্য জানতে তার বিরামপুরের কলাবাগানস্থ চেম্বারে গেলে দেখা যায়, সেখানে তালা ঝুলছে। তার মোবাইল ফোনে কল করা হলে এক নারী ফোন রিসিভ করে বলেন, ‘স্যার ফোন রেখে ঢাকায় গেছেন।’ এরপর কল কেটে দেন ওই নারী।

বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেছেন, মা ও শিশু জেনারেল হসপিটাল অনুমোদনবিহীন। এর আগে তাদের লিখিতভাবে জানিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিরামপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার নুজহাত তাসনীম বলেছেন, এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/মোসলেম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ