জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও লবণাক্ত জোয়ার এখন আরও ভেতরের দিকে ঢুকে পড়ছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানিও ধীরে ধীরে নোনা হয়ে যাচ্ছে। অনেক এলাকায় টিউবওয়েল বসিয়েও মিঠাপানি মেলে না।

সুপেয় পানির সংকটে অনেকেই এই উপকূলে থাকতে চান না। দাকোপ উপজেলার দক্ষিণের শেষ জনপদ শিবসাতীরের কালাবগী ঝুলন্তপাড়া। নদীর চরে গাদাগাদি গড়ে ওঠা অসংখ্য ঝুলন্ত ঘরের সামনে দিয়ে চলার পথ। ১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর ঝুলন্তপাড়ায় বসতি গড়ে ওঠে। এরপর সাত-আটবার নদীভাঙনে শিবসা-সুতারখালীর পেটে চলে গেছে বসতঘরের জমি। ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা ও আম্পানের আঘাত সয়ে টিকে আছেন সাড়ে তিন হাজারের মতো বাসিন্দা। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে শিবসা-সুতারখালী নদীর কোলে দোল খাওয়া জনবসতি ‘ফকিরকোনা’ কালাবগী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখানে খাবার পানি যেন সোনার হরিণের মতো।

ঝুলন্তপাড়ার বাসিন্দা রুমা রানী বলছিলেন, আগে গ্রামীণ উৎস থেকে খাবারের পানি সংগ্রহের জন্য নারীদের পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দূরে যেতে হতো। পানি মিলবে, সেই ভরসাও ছিল না। খাবাপ পানি খেলে পেটের অসুখ লেগেই থাকত। কিন্তু গত কয়েক বছরে এখানে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট হওয়ার পর সহজে লবণমুক্ত বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন তারা। রুমা রানী বলেন, ‘পানির অভাবে বাচ্চারা কষ্ট পাইত, স্কুলে যাইতে পারত না, পেটের অসুখ লাইগা থাকত। অখন তো ভালো পানি পাই। স্কুলে যাচ্ছে নিয়মিত, আর সমস্যা হয় না। বাচ্চারা পড়ালেখা করব, বড় হইব—এটাই আমাদের স্বপ্ন।’

ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট হওয়ার পর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেলজিয়ামের রানি মাথিল্ডে লজিক প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের পানি সংগ্রহ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। সেই সঙ্গে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন রুমা রানি।

রুমা রানীর মতো আরও অনেকের জীবন বদলের সঙ্গী হয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনসিডিএফ) এবং ইউএনডিপির লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (লজিক) প্রকল্প। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন পরিচালিত লজিক প্রকল্প বাংলাদেশ সরকার, সুইডেন, ডেনমার্ক, ইউএনসিডিএফ ও ইউএনডিপির একটি যৌথ প্রয়াস।

পটুয়াখালীর মানুষের কাছে আশীর্বাদ। এখানে আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম বা সিগন্যাল টাওয়ারগুলো কার্যকর সতর্কতা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করছে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বৈষম্যবিরোধী আইনের অধ্যাদেশ জারির দাবি দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের

সমাজে এখনো অনেক শক্তি আছে, যারা সর্বজনীন মানবাধিকারে পূর্ণভাবে আস্থা রাখতে পারে না বলে মনে করেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, সেই শক্তিকে রাজনৈতিক দলগুলো খুবই সম্মান করে। ‘বৈষম্যবিরোধী আইন’ যে এখনো করা গেল না, সেটা এ কারণেই কি না, তা চিন্তা করে দেখতে হবে।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী আইনের অধ্যাদেশ জারির দাবি দাবি জানিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, বৈষম্যবিরোধী কথা বলা হবে, কিন্তু কোনো কোনো বৈষম্য নিয়ে কথা বলা হবে আর কোনো কোনো বৈষম্য নিয়ে কথা বলা হবে না, এটা হতে পারে না।

‘একটি কার্যকর বৈষম্যবিরোধী আইন প্রবর্তন’ শীর্ষক একটি নাগরিক সংলাপে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন। শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এ সংলাপের আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ। এতে সহ–আয়োজক ছিল বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও নাগরিক উদ্যোগ। আয়োজনে সহযোগিতা করেছে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।

নাগরিক সংলাপে সভাপতি হিসেবে সূচনা বক্তব্যে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ন্যায্য বিচার চাইলে নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে হবে। তাঁদের মৌলিক অধিকারগুলোকে রক্ষা করতে হবে। ন্যায্য বিচার চাওয়া হবে, কিন্তু নাগরিকের সুরক্ষা থাকবে না—এটা হতে পারে না।

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক বলেন, একইভাবে নির্বাচন চাইলে অবশ্যই এই সর্বজনীন বৈষম্যবিরোধী আইন প্রয়োজন। এই আইনের প্রবর্তন নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি বাতাবরণ পরিবেশ সৃষ্টি করবে। একইভাবে কার্যকর সংস্কার প্রথিত আছে নাগরিকের সর্বজনীন অধিকারে। সর্বজনীন অধিকার না থাকলে সংস্কারটা কার্যকর হবে না।

পছন্দ অনুযায়ী নারীর চলন-বলন ও জীবনযাপনের যে অধিকার, সেটার ওপর খবরদারি করলে তা সর্বজনীন অধিকার হলো না বলেও মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, যে ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আছে, তারা যদি জীবনযাপনের ক্ষেত্রে অসহায়ত্ব বোধ করে, তাহলে তো বৈষম্যবিরোধী চেতনা হলো না। এই ছোট দেশের ভেতরেও যদি আঞ্চলিক বৈষম্য থাকে, তাহলে তো সেই বৈষম্যই রয়ে গেল। শিশু থেকে প্রবীণ, বহু ভাষা, বহু ধর্ম, বহু চিন্তার ভেতরে যে দেশ আছে, তাকে সুরক্ষা দিতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের যেটুকু সময় হাতে আছে, তার ভেতরে বৈষম্যবিরোধী আইনের অধ্যাদেশ জারির দাবি জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, তাঁরা এই সরকারের অবশিষ্ট সময়ে সর্বজনীন মানবাধিকারের ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী আইন দেখতে চান। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে এটাকে (বৈষম্যবিরোধী আইন) অন্তর্ভুক্ত করার দাবিও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ইউনিভার্সিটি অব আলস্টারের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ এস আর ওসমানী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান ত. রহমান, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, ইউএনডিপি বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা গভর্ন্যান্স ড্রাগান পোপোভিচ, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আরিফ খান প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈষম্যবিরোধী আইনের অধ্যাদেশ জারির দাবি দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের