গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যান্টিনের সমস্যা বহুদিনের। দীর্ঘদিন ধরে উচ্চমূল্য ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের খাবার নিয়ে নাকাল শিক্ষার্থীরা।

এ সমস্যার উত্তরণ ঘটিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই তরুণ শিক্ষার্থী। তারা পড়াশোনার পাশাপাশি তৈরি করেছেন সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও শিক্ষার্থীবান্ধব খাবারের ব্যবস্থা, যা ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে বেশ সাড়া ফেলেছে। 

আরো পড়ুন:

রাবিতে ছাত্রীদের পরিচয় নিশ্চিতে সর্বোচ্চ সংবেদনশীলতা বজায় রাখার নির্দেশ

ইবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটি গঠন

সম্প্রতি রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন ওই দুই শিক্ষার্থী। তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস অনুষদের মোজাম্মেল হাওলাদার শুভ এবং বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিক্যুলার বিভাগের মারুফ হাসান।

স্বপ্নের সংগ্রাম থেকে ‘শুভর ক্যান্টিন’
কুয়াকাটার সাগরপাড়ে বেড়ে ওঠা ছেলে শুভ জানত, জীবনে কিছু পাওয়ার জন্য সংগ্রাম ছাড়া কোনো মোমবাতি জ্বলে না। ছোটবেলা থেকেই সে দেখেছে বাবার ছোট্ট খাবারের দোকান, গৃহিণী মায়ের যত্নে গড়া সংসার আর তিন ভাইবোনের মধ্যে তার একমাত্র শিক্ষিত হওয়া। সবমিলিয়ে এক ধরনের ভারী দায়িত্বের সঙ্গে অর্থের সীমাবদ্ধতা ছড়িয়ে আছে তার চোখের সামনে।

কলেজ জীবন শুরু করার পর থেকেই পড়াশোনার খরচের ভার এসেছে কাঁধে। সে থেমে যায়নি, বরং এই সংগ্রাম তাকে অনুপ্রাণিত করেছে।

মোজাম্মেল হাওলাদার শুভ গবির ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস অনুষদে ভর্তির পরই দেখেন উচ্চমূল্যের খাবার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। অর্থ সংকটে সারাদিন না খেয়ে থাকার অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি অনুভব করেন, নিজে কিছু করে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ও ফ্রেন্ডলি বাজেটে খাবারের ব্যবস্থা করার।

অনুমতির পথে একাধিক বিঘ্ন আসে। প্রশাসনের অনুমতি বারবার মেলেনি। কিন্তু সে হতাশ হয়নি। ছাত্র সংসদের সহায়তায় অবশেষে ক্যাম্পাসের ভিতরে চালু হয় তার ছোট্ট আয়োজন ‘শুভর ক্যান্টিন’। 

প্রতিদিন নিজে রান্না করে শিক্ষার্থীদের কাছে ৩৫ টাকায় ভর্তা-খিচুড়ি পৌঁছে দেন এই শিক্ষার্থী। ক্লাস-ল্যাবের পাশাপাশি এই কাজ চাপের হলেও তিনি সহযোগিতা পাচ্ছেন অনেকেরই।

তার ক্যান্টিন কেবল খাবারের জন্য নয়, এই উপার্জনের অংশ যাচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়াশোনার খরচের জন্যও। পড়াশোনা শেষ হলে তিনি চান কার্টটি তারই মতো একজন শিক্ষার্থীকে হস্তান্তর করতে, যেন বেঁচে থাকে ‘শুভর ক্যান্টিন’।

খিদে মেটাচ্ছে ‘ক্ষুদে ঘর’
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিক্যুলার বিভাগের ছাত্র মারুফ হাসান তার ছোট্ট উদ্যোগে চালু করেছেন ‘ক্ষুদে ঘর’। এই তরুণের গল্পটা একটু ভিন্ন। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা চলাকালেই মাথায় আসে ফ্রেন্ডলি বাজেটে নিরাপদ খাবার সরবারহ করার উদ্যোগ। নিজেও যে এই সমস্যার মুখোমুখি, তা ছিল মূল প্রেরণা।

শুরুটা সহজ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অনুমতি না থাকায় প্রথমে বাইরে ফুড কার্ট চালু করেন মারুফ। সেখানেও স্থায়ী হতে পারেননি। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। ছাত্র সংসদের উদ্যোগে ক্যাম্পাসের ভেতরে ফুড কার্ট স্থাপনের অনুমতি পেয়ে শুরু করেন নতুন যাত্রা। 

মারুফ বলেন, “আমার কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নেই। শুধু চাই, শিক্ষার্থীরা যেন সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ খাবার খেতে পারে। বাজেটের মধ্যে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যেন তাদের জন্য সহজ হয়।”

পরিবারের পূর্ণ সমর্থন এবং আর্থিক সহায়তা ছিল তার পাশে। ক্লাস ও পরীক্ষার চাপের মধ্যেও কাজ চালানো কঠিন, তবে বন্ধুরা সহযোগিতা করে। প্রতিদিন নিজের রান্না করা মাংস খিচুড়ি তার মূল আকর্ষণ, যা মাত্র ৪৫ টাকায় শিক্ষার্থীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে।

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য ন র পদ

এছাড়াও পড়ুন:

সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে: ভূমি উপদেষ্টা

ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন হয়। তাই সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে। কেউ যদি সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দ্রুত সেবার ক্ষেত্রে সবার আগে জনগণ।”

সোমবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) অডিটরিয়ামে ‘উপজেলা ভূমি অফিসের সেবা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

‘জ্ঞান জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করাই প্রকৃত সাফল্য’

ভূমিসেবা নিশ্চিতের মূল ভিত্তি সঠিক সার্ভে ও সেটেলমেন্ট: ভূমি উপদেষ্টা

তিনি বলেন, “ভূমি প্রশাসন বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত, যার কার্যক্রম মূলত উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা ভূমি অফিসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সাধারণ মানুষের ভূমি-সংক্রান্ত প্রায় সব সেবা এখান থেকেই দেওয়া হয়। তাই উপজেলা ভূমি অফিস নাগরিক সেবার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।”

তিনি আরো বলেন, “ভূমি সেবার মান ও সুশাসন নিশ্চিত করতে এখনও নানা চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সেবায় জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্টেকহোল্ডারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। কিভাবে কাজ করলে জনগণের কল্যাণ হবে, তা নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নির্ধারণ করতে হবে।”

সুশাসন ছাড়া অগ্রগতি অসম্ভব
ভূমি উপদেষ্টা বলেন, “সুশাসন একটি রাষ্ট্রের অগ্রগতির পূর্বশর্ত। এটি এমন একটি কাঠামো, যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়—ভূমি সেবার ক্ষেত্রেও তাই।”

তিনি বলেন, “ভূমি মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এটি খাদ্য, শিল্প, আবাসন ও অর্থনীতির মূল উৎস। ভূমি সেবার মানোন্নয়ন কেবল প্রযুক্তিনির্ভর নয়, এটি মানবিকতা, সততা ও দায়িত্ববোধের সমন্বয়।”

জনবান্ধব ভূমি প্রশাসনের আহ্বান
ভূমি উপদেষ্টা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “স্বচ্ছতা, দেশপ্রেম, সততা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে ভূমি খাতকে জনবান্ধব করা সম্ভব। সহকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে, অসততার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”

তিনি বলেন, “অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কাজের জন্য ওপর থেকে সুপারিশ এলে দ্রুত হয়ে যায়, কিন্তু সাধারণ মানুষ সেই দ্রুত সেবা পায় না। এসব অসঙ্গতি পরিহার করতে হবে।”

ভূমি খাতে সুশাসন এখন সময়ের দাবি
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, “ভূমি খাত বাংলাদেশের উন্নয়ন ও জনকল্যাণে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। এটি শুধু উৎপাদনের উপকরণ নয়; এটি নাগরিকের অধিকার, জীবিকা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল ভিত্তি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ভূমি প্রশাসনে সুশাসনের অভাব ও স্বচ্ছতার ঘাটতির কারণে জনগণ ভোগান্তিতে ছিল।”

নতুন বাংলাদেশের পথে
ভূমি উপদেষ্টা আরো বলেন, “সহকারী কমিশনার (ভূমি) শুধু প্রশাসনিক দায়িত্বই পালন করেন না, বরং নির্বাচন পরিচালনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁরা নির্বাচনের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।”

তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশকে পুরোনো জীর্ণতা ভুলে সামনে এগোতে হবে। সামনে নির্বাচন—নতুন আশা ও নতুন প্রত্যয়ের প্রতীক। তাই এমন একটি নির্বাচন উপহার দিতে হবে, যেখানে জনগণ নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ।স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন টিআইবির পরিচালক (সিভিক এনগেজমেন্ট) ফারহানা ফেরদৌস, প্রফেসর ড. সুরাইয়া খায়ের, উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা), টিআইবি, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এমদাদুল হক চৌধুরী প্রমুখ।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ