বর্তমান সংবিধান মেনে শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের গণভোট দেওয়ার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, যিনি জুলাই অভ্যুত্থানের পর এই সংবিধান বাতিল করার মত জানিয়েছিলেন।

সংবিধান সংস্কারে গণভোটের দিকে সরকারের এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় এই প্রশ্ন তোলেন ফরহাদ মজহার। ‘নতুন বাংলাদেশ গঠনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘গণভোট কে দেবে? এই সরকারের কি এখতিয়ার আছে গণভোট দেওয়ার? তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) তো বলছেন, এই সংবিধান রক্ষা করব। কিসের গণভোট?’

পুরোনো সংবিধান রেখে নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি সংবিধান রাখবেন, আবার সংবিধানবিরোধী ভূমিকাও নেবেন, দুটো তো হতে পারে না।’

জুলাই অভ্যুত্থানের পর যখন অন্তর্বর্তী সরকার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো.

সাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে শপথ নিয়েছিল, তখনই তা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন ফরহাদ মজহার; যদিও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে তাঁর স্ত্রী ফরিদা আখতারও অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেন।

ফরহাদ মজহার মনে করেন, গত বছর ৮ আগস্ট দেশে একটি ‘সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব’ হয়েছিল। বর্তমানে যাদের অন্তর্বর্তী সরকার নামে অভিহিত করা হচ্ছে, তারা শেখ হাসিনা সরকারের তৈরি করা সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের জায়গা হারিয়েছে। এখন একমাত্র গণপরিষদ গঠন করে গণপরিষদের সম্মতিতে গণভোট আয়োজন বৈধ হতে পারে।

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এই সরকার অন্তর্বর্তী সরকার নয়। এই সরকার উপদেষ্টা সরকার। এই উপদেষ্টা সরকারের একটাই কাজ, ঠিকমতো উপদেশ দেওয়া।...এদের কাছ থেকে বেশি কিছু পাওয়ার নেই। এখন তার উচিত হবে, যত দ্রুত সম্ভব যদি কছু দেওয়ার থাকে সে দিয়ে যাবে।’

এখন একমাত্র গণপরিষদ গঠন করে সেই পরিষদের সম্মতিতে কেবল গণভোট আয়োজন বৈধ হতে পারে, বলেন ফরহাদ মজহার।

গত বছরের ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের বিজয়ের পর আট তারিখের মধ্যে কোনো একটি অংশ ‘চরম বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছে বলেও অভিযোগ করেন ফরহাদ মজহার। জুলাই অভ্যুত্থানে সৈনিকদের ভূমিকা থাকলেও ৫ আগস্টের পরে তাদের অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

আলোচনা সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরের নায়েবে আমির হেলাল উদ্দিন বলেন, ছাত্ররা যে ন্যায়বিচারের দাবি করেছিল, দেশের নেতৃত্বে সৎ লোক না এলে কখনো সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না। এখনো টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না।

ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার আলোচনায় দেশের সংখ্যালঘুদের কথা পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ তোলেন জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘সেই ১৯৪৭ সালের ৩৩% মাইনরিটি এখন তো বিলুপ্তির পথে। তো সেখানে তাদের তো দু’চারটা কথা শোনার দরকার ছিল, তারা কিন্তু সেটাও শুনল না।’

সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সাদেক রহমানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ নতুনধারা জনতার পার্টির চেয়ারম্যান মুহাম্মাদ আবদুল আহাদ নূর, গণমুক্তি জোটের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার ইফতেখার, যুবনেতা এ বি এম ইউসুফ, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান, জামাল হায়দার, ফেরদৌস আজিজ, অধ্যাপক দেওয়ান সাজ্জাদ, এ আর খান প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ফরহ দ মজহ র এই সরক র উপদ ষ ট সরক র র গণভ ট

এছাড়াও পড়ুন:

রাবিতে নবমবারের মতো আয়োজিত হবে চাকরি মেলা

রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ক্যারিয়ার ক্লাব (আরইউসিসি) নবমবারের মতো আয়োজন করতে যাচ্ছে ‘জব ফেয়ার ২০২৫’।

আগামী ১৯ ও ২০ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (সিসিডিসি) সংযুক্তিতে ও রাকসুর সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে এ আয়োজন করা হবে।

আরো পড়ুন:

রাবিতে ছাত্রীদের পরিচয় নিশ্চিতে সর্বোচ্চ সংবেদনশীলতা বজায় রাখার নির্দেশ

ছয় শতাধিক উদ্যোক্তা, গাছী ও গবেষক নিয়ে রাবিতে গুড় সম্মেলন

বুধবার (১০ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় সিসিডিসি ভবনে একটি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান আরইউসিসির সভাপতি প্রান্ত বড়ুয়া।

তিনি জানান, মেলায় অংশ নেবে বিকাশ, আপন গ্রুপ, আনোয়ার গ্রুপ, প্রাইম ব্যংক, প্রাণ-আরএফএল, ইস্পাহানি লিমিটেডে, ব্র্যাক, আড়ং, ম্যারিকো বাংলাদেশসহ দেশের বিভিন্ন কর্পোরেট ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে প্রান্ত বড়ুয়া বলেন, “চাকরি মেলা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বাস্তবমুখী প্ল্যাটফর্ম। এখানে তারা সরাসরি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এইচআর ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলতে পারবে, সিভি জমা দিতে পারবে, ক্যারিয়ার বিষয়ে দিকনির্দেশনা নিতে পারবে এবং অনেকে অন-স্পট ভাইভায়ও অংশ নিতে পারবেন।”

তিনি বলেন, “অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বাস্তব জব মার্কেট, রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়া এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতার চাহিদা বোঝার সবচেয়ে কার্যকর সুযোগগুলোর একটি।”

তিনি আরো বলেন, “জব ফেয়ার উপলক্ষে এবার আমরা আয়োজন করেছি দুইটি ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেশন। যেখানে কোম্পানির উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ বর্তমান জব মার্কেট এবং চাকরির পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করবেন। এছাড়াও থাকবে সিভি সাবমিশন বুথ, সিভি রিভিউ, স্কিল মূল্যায়ন, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং, ইন্টার্নশিপ ও ফুলটাইম চাকরির সুযোগ।”

তিনি জানান, গত বছর আয়োজিত অষ্টম আরইউসিসি জব ফেয়ার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সাড়া পেয়েছিল। প্রান-আরএফএল, এসিআই, মেঘনা গ্রুপ, নাবিল, ব্রিটিশ কাউন্সিলসহ অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়ে দুইদিনে ৩ হাজারের বেশি সিভি সংগ্রহ করে এবং বেশকিছু শিক্ষার্থী অন-স্পট ভাইভাতে চাকরি সুযোগ পেয়েছিল।

সিসিডিসির পরিচালক অধ্যাপক নুরুল মোমেন বলেন, “১৯ ও ২০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে নবমবারের মতো জব ফেয়ার অনুষ্ঠিত হবে। ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের সহযোগিতায় আয়োজিত এ ফেয়ারের লক্ষ্য, শিক্ষার্থীদের চাকরি বাজারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করা ও স্কিল ডেভেলপমেন্টে সহায়তা করা।”

তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা যেন তাদের অ্যাকাডেমিক ডিসিপ্লিন ও দক্ষতার সঙ্গে মিল থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল ভিজিট করে সিভি জমা দিতে পারে, সেটাই মূল উদ্দেশ্য। গত বছর তিন হাজারের বেশি সিভি জমা পড়েছিল; এবার আরও বেশি অংশগ্রহণ ও সরাসরি জব প্লেসমেন্টের হবে বলে আশা করছি।”

এ বিষয়ে রাকসুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ তোফা বলেন, “আরইউসিসির আয়োজনে রাবিতে প্রতি বছরই জব ফেয়ার হয়ে থাকে। এবার যেহেতু রাকসু হয়েছে, তাই আশা করছি এবারের আয়োজন আরো বড় পরিসরে ও সফলভাবে অনুষ্ঠিত হবে। আমরা আশা করছি, অনেক নামী প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসে বহু মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছেন। আমরা চাই, এই মেধাবী শিক্ষার্থীরা যেন জব ফেয়ারের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারেন এবং তাদের মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হয়। কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলা যায়, রাকসু সব সময় এমন কার্যক্রমে সহযোগিতা করবে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ