আগের পাঁচ মাসের চেয়ে জুনে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি, ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ ঘোষণার পক্ষে বিশেষজ্ঞরা
Published: 2nd, July 2025 GMT
দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪ হাজার ৩৪৫ জন। তবে এক জুন মাসেই এর চেয়ে বেশি মানুষ এডিস মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন; এ সংখ্যা ৫ হাজার ৮০৪। সরকারি হিসাব বলছে, এযাবৎকালের মধ্যে এক মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়েছে জুনে।
জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে আর্দ্রতা ছিল বেশি। জনস্বাস্থ্যবিদ ও কীটতত্ত্ববিদেরা মনে করছেন, এ কারণে ডেঙ্গুর রোগবাহী এডিস মশার বিস্তার বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে ডেঙ্গুকে ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ ঘোষণার পক্ষে তাঁরা।
আরও পড়ুনডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর০১ জুলাই ২০২৫এ বছর ঢাকার চেয়ে সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এলাকাভিত্তিক ম্যাপিংয়ের দরকার বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এ নিয়ে দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই।
চলতি বছরে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ১০ হাজার ৬৮২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ সোমবার সকাল আটটা থেকে গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮৬ জন। এ সময় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ গেল ৪৩ জনের।
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি, বাড়ছে ডেঙ্গু-করোনাও০১ জুলাই ২০২৫এমন পরিস্থিতিতে দেশে ডেঙ্গুকে ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ ঘোষণার পক্ষে মত জনস্বাস্থ্যবিদ ও কীটতত্ত্ববিদদের।এ পরিস্থিতি গত সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে দেশে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বাসস জানায়, একটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। মেয়াদ ছিল ৩০ জুন পর্যন্ত। নতুন প্রজ্ঞাপনে সময়সীমা আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে এনএস ফর ডেঙ্গু, আইজিজি ফর ডেঙ্গু ও আইজিএম ফর ডেঙ্গু পরীক্ষার সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ ফি ৫০ টাকা। আরেক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এনএস ফর ডেঙ্গু, আইজিজি ফর ডেঙ্গু ও আইজিএম ফর ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সিবিসি পরীক্ষা করাতে ফি দিতে হবে ৪০০ টাকা।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে স্থানীয়ভাবে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু৩০ জুন ২০২৫পাঁচ মাসের চেয়ে বেশি আক্রান্ত জুনে
গত জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৪ হাজার ৩৪৫ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আর এ সময় মৃত্যু হয় ২৩ জনের। তবে শুধু জুন মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮০৪ জন, যা আগের পাঁচ মাসের চেয়ে ১ হাজার ৪৫৯ জন বেশি। আর এ মাসে মারা গেছেন ২০ জন।
দেশে নতুন করে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে জুনে। এরপর থেকে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে।
আরও পড়ুনটানা ৫ দিন ধরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হচ্ছে২৯ জুন ২০২৫এখন যেভাবে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে, তাতে একে আর হেলাফেলা করা উচিত নয়। এখন ডেঙ্গু পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে একে জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করা দরকার।ডা.মুশতাক হোসেন, জনস্বাস্থ্যবিদ
এর আগে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর ব্যাপক সংক্রমণ হয়। ওই বছরের জুন মাসে ১ হাজার ৮৮৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরপর ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালের জুনে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২৭২, ৭৩৭ ও ৫ হাজার ৯৫৬ জন। ২০২৩ সালের জুন মাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছিল। এরপর এবারের জুন মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ হলো।
দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয় ২০২৩ সালে। ওই বছর মোট ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আগের ২৩ বছরে যতজন আক্রান্ত হয়েছিলেন, ওই বছর তার চেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৭০৫ জন মারা যান।
আরও পড়ুনটাকা নয়, ডেঙ্গুমৃত্যু পর্যালোচনা হচ্ছে না সদিচ্ছার অভাবে২৫ জুন ২০২৫‘আবহাওয়া ডেঙ্গুর অনুকূলে’
সাধারণত এক বছর সংক্রমণ বেশি হলে পরের বছর ততটা হয় না। ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর সংক্রমণ কিছু্টা কম হয়েছে। কিন্তু এবার সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। এবারের আবহাওয়া পরিস্থিতি ডেঙ্গুর অনুকূলে বলে মনে করছেন কীটতত্ত্ববিদেরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, জুন মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ২০ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। বাতাসে আর্দ্রতা কখনো কখনো ৯০ শতাংশ থেকেছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান কীটতত্ত্ববিদ তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আবহাওয়া পরিস্থিতি ডেঙ্গুর অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে ডেঙ্গুর নতুন ধরনের বিস্তার এবার সংক্রমণ পরিস্থিতি জটিল হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ডেঙ্গুতে বড় সংক্রমণের সময় ২০২৩ সালে এবং গত বছরও ডেঙ্গুর চারটি ধরনের বা সেরোটাইপের মধ্যে ২–এর প্রাধান্য ছিল। এবার দেশজুড়ে কোনটি প্রাধান্য পাচ্ছে, তা জানা না গেলেও গত জুন মাসে আইইডিসিআর বরগুনায় জরিপ করে দেখেছে, সেখানে সেরোটাইপ–৩–এর বিস্তার ঘটছে।
নতুন কোনো ধরনের বিস্তার ঘটলে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা শুধু বাড়ে না, রোগীর পরিস্থিতিও নাজুক হয়। বরগুনায় এবারের সংক্রমণের পেছনে এটি বড় কারণ বলে মনে করেন তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ।
আরও পড়ুনডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ১১ সদস্যের কারিগরি কমিটি গঠন২২ জুন ২০২৫এলাকাভিত্তিক ম্যাপিং দরকার
এবার দেশের মোট সংক্রমণের প্রায় ২৫ শতাংশ হয়েছে দক্ষিণের জেলা বরগুনায়। এ জেলায় গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮৩৯ জন। আর দেশের মোট আক্রান্তের ৭৫ শতাংশই ঢাকার বাইরে। এর মধ্যে বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কক্সবাজারে সংক্রমণ অপেক্ষাকৃত বেশি। এ পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর অঞ্চলভিত্তিক ম্যাপিং দরকার বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন যেভাবে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে, তাতে একে আর হেলাফেলা করা উচিত নয়। এখন ডেঙ্গু পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে একে ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ ঘোষণা করা দরকার।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের চেষ্টা যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে মুশতাক হোসেন বলেন, প্রয়োজনীয় বরাদ্দেরও সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এ জন্য সরকারকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচ) সহযোগিতা নেওয়া দরকার।
আরও পড়ুনডেঙ্গু সংক্রমণ: ৫২ শতাংশ রোগী উপকূলের ১৩ জেলার২২ জুন ২০২৫অঞ্চলভিত্তিক ম্যাপিংয়ের বিষয়টি আইইডিসিআর করবে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক হালিমুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির বিষয়টি আপনারা ডব্লিউএইচওকে বলেন।’
অঞ্চলভিত্তিক ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে কোন অঞ্চলে সংক্রমণ কত, তার চিত্র পাওয়া যায়।
২১ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু বিষয়ে ১১ সদস্যের কারিগরি কমিটি গঠন করে। এ কমিটিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশারকে রাখা হয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত তাঁকে এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি বলে জানান এই কীটতত্ত্ববিদ।
আরও পড়ুনবরগুনায় ডেঙ্গু এত বৃদ্ধির পেছনে ‘ভিন্ন’ একটি কারণ, কী সেটা১৮ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জনস ব স থ য পর স থ ত স ক রমণ হয় পর ক ষ র ফ পর স থ ত ত র স ক রমণ ২০২৩ স ল ফর ড ঙ গ হয় ছ ল ন দরক র সরক র গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
সাগর থেকে মাছ আহরণ বাংলাদেশের কমছে, ভারত-মিয়ানমারে বাড়ছে
বঙ্গোপসাগর থেকে গত তিন বছর বাংলাদেশের মাছ আহরণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। ব্যাপকভাবে কমেছে সামুদ্রিক ইলিশ, কাঁকড়া ও চিংড়ি আহরণ। সাগর থেকে মাছ ধরার পরিমাণ কমতে থাকায় সার্বিকভাবে দেশের মাছের জোগানের গতিও কমে গেছে। যদিও ভিন্ন চিত্র প্রতিবেশী দেশগুলোর। বছর বছর সাগর থেকে মাছ ধরা বাড়িয়ে মাছ আহরণে বিশ্বের শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে ভারত। এমনকি গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমারেও প্রতিবছর বাড়ছে সামুদ্রিক মাছ আহরণ।
সাগর থেকে বাংলাদেশের মাছ আহরণ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও ঘূর্ণিঝড়কে দায়ী করছেন এ দেশের মৎস্য কর্মকর্তারা। তা ছাড়া অতিরিক্ত মাছ আহরণের কারণেও মাছের মজুত কমে আসছে বলে জানান তাঁরা।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মোট সামুদ্রিক মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৬ হাজার টন। পরের অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৭৯ হাজার টনে। সর্বশেষ গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা আরও কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ২৮ হাজার টনে। অর্থাৎ ২০২২–২৩ অর্থবছরের চেয়ে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সাগর থেকে মাছ আহরণ প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ কমেছে। গত জুনে শেষ হওয়া ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এই পরিমাণ আরও কমেছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে এখনো অনুষ্ঠানিকভাবে গত অর্থবছরের তথ্য প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।
সমুদ্র খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে সাগরে অতিরিক্ত মাছ আহরণের কারণে মাছের মজুত কমে গেছে। এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের সামুদ্রিক শাখার সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ২০ বছর আগেও সাগরে বাণিজ্যিক ট্রলারের সংখ্যা ছিল এক শর কম। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৫টিতে। তিনি জানান, সাগরের ৪০ মিটারের ভেতরে মাছ না ধরার কথা থাকলেও এসব নৌযান তা মানছে না। আবার ছোট নৌযানের সংখ্যা এখন ২৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এসব নৌযানেও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা তাদের ব্যবহার করার কথা নয়। পাশাপাশি অবৈধ জালও ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি উপকূলের ৫ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে মাছ ধরা হচ্ছে। এতে ডিম থেকে নতুন পোনা তৈরির সুযোগ নষ্ট হচ্ছে।
বিশ্বে সমুদ্র থেকে মাছ আহরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। এ ছাড়া শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে ভারত ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। ভারতের মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১–২২ সালে সাগর থেকে দেশটির মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৪১ লাখ ২৭ হাজার টন, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। সর্বশেষ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ৪৪ লাখ ৯৫ হাজার টন মাছ আহরণ করেছে ভারত।
মিয়ানমারের মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে ২০২০-২১ সালে সাগর থেকে মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ ৯৫ হাজার। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ লাখ ১৪ হাজার টনে। অর্থাৎ গৃহযুদ্ধের মধ্যেও দেশটির সাগর থেকে মাছ আহরণ বাড়ছে।
এদিকে বাংলাদেশে সাগরে সবচেয়ে বেশি আহরণ কমছে ইলিশ ও চিংড়ির। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সাগর থেকে ইলিশ আহরণ তার আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ কমেছে। আর চিংড়ির আহরণ কমেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। কাঁকড়া আহরণও কমেছে ১৬ শতাংশের বেশি।
সাগর থেকে মাছ আহরণ কমে যাওয়া এবং এ বিষয়ে করণীয় প্রসঙ্গে সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপপরিচালক মোহাম্মদ শরিফুল আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকেই চিংড়ি আহরণ কমে যাওয়ার তথ্য পাচ্ছিলাম। তাই সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালায় চিংড়ি ধরার ট্রলারের লাইসেন্স আর না বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করি। ২০২৮ সাল পর্যন্ত এসব ট্রলাররের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না।’
সাগর থেকে মাছ আহরণ বাড়াতে হলে বঙ্গোপসাগরের নিয়ন্ত্রণহীন মৎস্য আহরণকে নজরদারির মধ্যে আনার কথা বলছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে পাঁচটি ট্রলারে স্যাটেলাইট ট্রেকার বসিয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব ট্রলার ডিজিটাল নজরদারির আওতায় আনার পরামর্শ তাঁর।
এদিকে মাছ আহরণ কমতে থাকায় সাগরের ওপর নির্ভরশীল জেলেরাও বিপাকে পড়ছেন। ঋণের দাদনের টাকা শোধ করে লাভের অঙ্ক মিলছে না তাঁদের। কক্সবাজারে পাঁচ হাজারের বেশি মাছ ধরার কাঠের নৌযান আছে। এসব নৌকায় এখন মাছ ধরা পড়ছে কম। কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, টানা ছয় থেকে সাত মাস তেমন মাছ ধরা পড়ছে না। কয়েক বছর ধরেই মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। এক সপ্তাহের জন্য সাগরে গেলে দুই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। কিন্তু মাছ কম পাওয়ায় দাদন পরিশোধ করাই এখন কষ্টকর হয়ে গেছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের ব্লু ইকোনমি সেলের পরিচালক মো. সাজদার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাগরে এখন ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। সাগরের তাপমাত্রাও বেড়ে গেছে। তা ছাড়া জেলিফিশের প্রকোপ বেড়েছে। আর অতিরিক্ত মৎস্য আহরণের কারণে মাছের মজুত কমছে। তাই মাছ আহরণ আরও কমিয়ে আনতে হবে।
এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির এক সভায় গণমাধ্যমে সঙ্গে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘ভারতের জেলেরা যাতে বাংলাদেশে এসে মাছ ধরতে না পারেন, সেটা আমাদের বন্ধ করতে হবে।’
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সারা বিশ্বে সাগর থেকে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টন মাছ ধরা হয়। যার মধ্যে অর্ধেক মাছ আহরণ করেছে এশিয়ার দেশগুলো। ওই বছর বিশ্বের মোট সামুদ্রিক মাছের ১৪ দশমিক ৮ শতাংশই আহরণ করেছিল চীন, যার পরিমাণ ১ কোটি ১৮ লাখ ১৯ হাজার টন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়া ওই বছর আহরণ করেছে ৬৮ লাখ ৪৩ হাজার টন মাছ। আর ভারত আহরণ করেছে ৩৫ লাখ ৯৭ হাজার টন। যেখানে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল বৈশ্বিক মাছ আহরণের মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ।