বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশ থেকে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আগের ২০২৩–২৪ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৬ বিলিয়ন বা ২৭ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন তাঁরা। অন্যদিকে বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রপ্তানি আয়ে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে ডলার–সংকট কেটে গেছে, বদৌলতে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত বেড়েছে। পাশাপাশি দেশের লেনদেন ভারসাম্যের চিত্রও বদলে গেছে। চলতি হিসাবে বড় ধরনের যে ঘাটতি ছিল, তার অনেকটাই কমে এসেছে, যা স্বস্তি দিচ্ছে বৈদেশিক বাণিজ্যে। এ ছাড়া ডলারের বাজার স্থিতিশীল হওয়ায় আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি আটকে গেছে।
এদিকে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে তথা ব্যাংকগুলোতে ডলার এখন ১২৩ টাকার মধ্যে লেনদেন হচ্ছে। আমদানিতেও ডলারের একই দাম পড়ে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত জুন মাসে প্রায় ২ দশমিক ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে শেষ দিনে (৩০ জুন) এসেছে ১১ দশমিক ৩ মিলিয়ন। আগের অর্থবছরের জুনে এসেছিল ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশে সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। দেশের ইতিহাসে এর আগে কোনো অর্থবছরে এত প্রবাসী আয় আসেনি। এই আয় আগের অর্থবছরের ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে ৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার বা ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।
ডলারের বাজার স্থিতিশীল হওয়ায় আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। বৈদেশিক মুদ্রাবাজারেও স্বস্তি ফিরে এসেছে।এদিকে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক, ভারতের বিধিনিষেধসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও দেশের পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় আছে। গত মে মাসে ৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) তথ্য দেখা যায়, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) মোট ৪৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের মধ্যে ৭ মাসেই ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়।
এদিকে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলারের বাজার স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ ছাড়ের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরের শেষ দিনে গত সোমবার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ মান অনুযায়ী, রিজার্ভ অবশ্য ২৬ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।
ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রবাসী আয়ে উচ্চহারের প্রবৃদ্ধি দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে মুদ্রাবাজারে ডলারের ওপর চাপ কমেছে। অবৈধ পথে অর্থ পাঠানোর বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ এবং বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোকে উৎসাহিত করতে নানা প্রণোদনা প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে।
এদিকে ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের লেনদেন ভারসাম্যে উন্নতি ঘটেছে। তাতে চলতি হিসাবের ঘাটতি কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ৬ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার, যা বিদায়ী অর্থবছরের একই সময়ে কমে হয়েছে ১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে লেনদেনের ভারসাম্যে ৫ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি ছিল, যা বিদায়ী অর্থবছরের একই সময়ে কমে হয়েছে দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, গত কয়েক মাসে বিদেশি সব বকেয়া দেনা পরিশোধ হয়ে গেছে। লেনদেনের ভারসাম্যে উন্নতি হওয়ায় ডলারের ওপর চাপ কেটে গেছে। বাংলাদেশের প্রতি বিদেশি ব্যাংকগুলোর আস্থা ফিরে এসেছে, যা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে এনে দিয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ রস ম য র র একই ৬ দশম ক ল নদ ন প রব স র প রব
এছাড়াও পড়ুন:
তিন মাসে ওয়ালটনের মুনাফা ২২১ কোটি টাকা
ইলেকট্রনিকস খাতের দেশীয় জায়ান্ট ওয়ালটনের মুনাফা ৪৯ শতাংশ বেড়েছে। চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটি মুনাফা করেছে প্রায় ২২১ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির মুনাফার পরিমাণ ছিল ১৪৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে মুনাফা বেড়েছে ৭২ কোটি টাকা বা ৪৯ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ওয়ালটন ১ হাজার ৪৫১ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের চেয়ে চলতি বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে প্রায় ২৩৬ কোটি টাকার বা সাড়ে ১৯ শতাংশ। তবে ব্যবসা যতটা প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে কোম্পানিটির মুনাফায়। যার বড় কারণ ব্যাংকঋণের সুদ ব্যয়সহ আর্থিক খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যাওয়া। পাশাপাশি কমেছে প্রশাসনিক ব্যয়ও।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকঋণের সুদসহ কোম্পানিটির আর্থিক খরচের পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে তা কমে দাঁড়ায় ৪১ কোটি টাকায়। ফলে এ খাতে কোম্পানিটির বড় অঙ্কের খরচ কমেছে, যা কোম্পানিটির মুনাফা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ নানা সমস্যার মধ্যেও কোম্পানিটি চলতি বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ভালো ব্যবসা করেছে। খরচ কমাতে ও ব্যবসা বিক্রি বাড়াতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের নেওয়া নানা পদক্ষেপের সুফল পাওয়া গেছে ব্যবসা ও মুনাফায়।
জানতে চাইলে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যবসায় খুব ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ ছাড়া নানা খাতে খরচ কমানোর নানা উদ্যোগের সুফলও আমরা পেয়েছি। সব মিলিয়ে তাই মুনাফা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। এই ধারাবাহিকতা আগামী দিনেও বজায় থাকবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।’
কোম্পানিটি জানিয়েছে, চলতি বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ক্রেতাদের কাছ থেকে কোম্পানিটির আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২৫ কোটি টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি কাঁচামাল ও অন্যান্য পণ্য সরবরাহকারী বাবদ খরচ কমেছে ৩২৫ কোটি টাকা।
ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ২০২০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে এটি শেয়ারবাজারে ভালো মানের কোম্পানি হিসেবে এ শ্রেণিভুক্ত। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৩৬৪ টাকা।