ইউএসএআইডির আনুষ্ঠানিক বন্ধে বিশ্বব্যাপী ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের প্রাণহানির শঙ্কা
Published: 2nd, July 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি ৬৪ বছরের দীর্ঘ পথচলার পর আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হয়ে গেল। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন গতকাল মঙ্গলবার এ ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়ে পুরোনো ‘চ্যারিটি-নির্ভর মডেল’-এর অবসান ঘটানোর কথা জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এ সিদ্ধান্তের ফলে লাখো মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
১৯৬১ সালে শীতল যুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির উদ্যোগে গঠিত হয়েছিল ইউএসএআইডি। ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি সংস্থাটিকে পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে আনে। এরপর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এর ৮৫ শতাংশ কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।
গত সোমবার ইউএসএআইডির বিদায়ী কর্মীদের উদ্দেশে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামা ভিডিও বার্তা দেন। বুশ বলেন, ‘আমার শাসনামলের অন্যতম সেরা উদ্যোগ ছিল এইডস মোকাবিলা-সংক্রান্ত পিইপিএফএআর প্রকল্প। এটি সারা বিশ্বে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিল।’
ওবামা বলেন, ‘ইউএসএআইডি বন্ধ করা অবিশ্বাস্য রকমের ভুল। নৈতিক দৃষ্টিকোণ ও কৌশলগত দিক—উভয় বিবেচনা থেকে এটি বিপর্যয়কর সিদ্ধান্ত।’
কিন্তু ইউএসএআইডি বন্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও। তিনি সংস্থাটিকে ‘নগদে এনজিও ব্যবসার প্ল্যাটফর্ম’ মন্তব্য করে বলেন, ‘সহায়তার ওপর নির্ভরতা উন্নয়নশীল দেশের নেতাদের জন্য একধরনের নেশায় পরিণত হয়েছিল।’ বাণিজ্য ও কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধিকে উন্নয়নের কার্যকর উপায় বলে মনে করেন তিনি।
চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণায় আশঙ্কা করা হয়, ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধ হওয়ায় ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে, যাদের এক-তৃতীয়াংশ শিশু।
কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দাবি করেন, ‘এ গবেষণায় ভুল অনুমান রয়েছে।’ তিনি জানান, এইডস মোকাবিলায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের জরুরি কর্মসূচি (পিইপিএফএআর) অব্যাহত থাকবে। তবে সংক্রমণপূর্ব প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা (পিআরইপি) দেওয়া বন্ধ করবে, যা এইচআইভি বা এইডস সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা সংক্রমণের আগেই গ্রহণ করেন, যাতে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলেও তা সংক্রমণ না ঘটাতে পারে। এটি এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইউএসএআইডির কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হলেও ভিন্ন উপায়ে গাজার জন্য খাদ্যসহায়তা চালানো হবে। বর্তমানে তা সামরিক কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে, ইসরায়েলের সেনারা যার নিরাপত্তায় রয়েছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শী, জাতিসংঘ ও গাজা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এই সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে কয়েক শ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির জরুরি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট বব কিচেন বলেন, ইউএসএআইডি বন্ধ হওয়ার কারণে শুধু সুদানের চার লাখ শরণার্থী জরুরি সহায়তা হারিয়েছে। আফগানিস্তানে পাঁচ লাখ নারী-শিশুর শিক্ষাও থমকে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপের দেশগুলোও সহায়তা কমিয়ে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াচ্ছে।
কিচেনের হুঁশিয়ারি, ‘এটা শুধু নৈতিক নয়, নিরাপত্তার বিষয়ও। সহিংসতা ও রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়লে এর প্রতিরোধে কিন্তু আর কোনো প্রাচীর থাকবে না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউএসএআইড র পরর ষ ট র স ক রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত: মৃত্যু ঝুঁকিতে দেড় কোটি মানুষ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিদেশি মানবিক সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ তহবিল কমানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিবিসি জানায়, দ্য ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই পদক্ষেপের ফলে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশই শিশু।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গত মার্চ মাসে জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, ইউএসএআইডি’র ৮০ শতাংশেরও বেশি কর্মসূচি বাতিল করেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন।
ল্যানসেট প্রতিবেদনের সহ-লেখক ডেভিড রাসেলা এক বিবৃতিতে বলেছেন, “অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের জন্য, এর ফলে যে ধাক্কা আসবে তা বিশ্বব্যাপী মহামারি বা একটি বড় সশস্ত্র সংঘাতের সাথে তুলনা করা যেতে পারে।”
তিনি আরো বলেন, “এই তহবিল হ্রাসের কারণে গত দুই দশকে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য খাতে অর্জিত অগ্রগতি হঠাৎ থেমে যেতে পারে, এমনকি তা উল্টে যেতে পারে।”
গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় মানবিক সহায়তা সম্মেলন হচ্ছে স্পেনের সেভিয়া শহরে। জাতিসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে অংশ নিয়েছেন বিশ্বের বহু নেতারা। ঠিক এমন সময় এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো।
২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৩৩টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখিয়েছেন, ইউএসএআইডি’র সহায়তা ওই সময়ের মধ্যে ৯ কোটি ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে সহায়তা করেছে।
তারা আরো বলেন, চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৮৩ শতাংশ বাজেট ছাঁটাই যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু ঘটতে পারে।
এই মৃত্যুর মধ্যে ৪৫ লাখের বেশি শিশু থাকবে যাদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে—অর্থাৎ বছরে গড়ে ৭ লাখ শিশুর মৃত্যু ঘটতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসন, এর আগে ইলন মাস্কের নেতৃত্বে খরচ কমানোর উদ্যোগ হিসেবে ফেডারেল কর্মী সংখ্যা কমাতে কাজ করেছিল। প্রশাসনের দাবি, ইউএসএআইডি ‘উদারপন্থী প্রকল্পগুলোকে সহায়তা দিচ্ছে’।
এখন পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সহায়তা প্রদানকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে কাজ করেছে, যার বেশিরভাগই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে।
রুবিও বলছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে এখনও হাজারটা কর্মসূচি রয়েছে। যা কংগ্রেসের পরামর্শক্রমে ‘আরো কার্যকরভাবে’ পরিচালিত হবে। কিন্তু জাতিসংঘের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মতে, বাস্তব পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না।
গত মাসে, জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছিলেন, কেনিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে শত শত মানুষ ধীরে ধীরে অনাহারে মরছে, কারণ মার্কিন সহায়তা কমে যাওয়ায় খাদ্য সরবরাহ রেকর্ড পরিমাণে কমে গেছে।
ঢাকা/ইভা