স্বাস্থ্যবিমা কেন করবেন, কীভাবে করবেন
Published: 3rd, July 2025 GMT
দেশে স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তির পকেট ব্যয় অনেক বেশি। রাষ্ট্রের ভূমিকা কম। সে কারণে দেশে চিকিৎসা করাতে গিয়ে মানুষ হিমশিম খান। এই বাস্তবতায় স্বাস্থ্যবিমার ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু এবিষয়ক সচেতনতা ও প্রচারের অভাব আছে।
বাংলাদেশের বিমা কোম্পানিগুলো দুই ধরনের স্বাস্থ্যবিমা দিয়ে থাকে। প্রথমত, মূল বিমা পলিসির সঙ্গে সহযোগী বিমা হিসেবে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যবিমা। দ্বিতীয়ত, কিছু কিছু কোম্পানি কেবল স্বাস্থ্যবিমাও দেয়। নির্দিষ্ট কিছু অসুখের জন্য এসব বিমা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে মনে রাখা দরকার, সব ধরনের রোগের জন্য এই বিমা নয়। বিমার আওতায় থাকে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্যানসার, কিডনি রোগের মতো গুরুতর প্রাণঘাতী রোগ, তেমনি রয়েছে পক্ষাঘাত, বাক্শক্তি লোপ, মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতো রোগও। এ ছাড়া এ বিমার আওতায় আছে মৌসুমি রোগ ডেঙ্গুও।
যেসব সুবিধা পাওয়া যায়
স্বাস্থ্যবিমা থাকলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেসব আর্থিক সুরক্ষা পাওয়া যায়, তার মধ্যে আছে ডাক্তারের ভিজিট, রোগ নির্ণয় পরীক্ষার খরচ, আইসিইউ, সিসিইউ, এইচডিইউ খরচ, হাসপাতালে ভর্তি ফি, হাসপাতালের বেড ভাড়া, অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া, অপারেশন কক্ষের ফি, সার্জন ফি, ওষুধের খরচ, ড্রেসিং ফি ইত্যাদি।
এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিমা থাকলে হেলথ কার্ডের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিভুক্ত হাসপাতালে গ্রাহকের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় পাওয়া যায়।
প্রচলিত স্বাস্থ্যবিমা পলিসি
বাংলাদেশে প্রচলিত বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিমার দুই ধরনের সুবিধা আছে। কোম্পানির সঙ্গে যেসব হাসপাতালের চুক্তি আছে, সেই সব হাসপাতালে সরাসরি বিল পরিশোধ হয়। এ ছাড়া চিকিৎসার পর বিল জমা দেওয়ার পর খরচ পুনর্ভরণ। অবশ্যই যে অঙ্কের বিমা নেওয়া হয় এবং পলিসিতে যেসব শর্ত থাকে, তার মধ্যেই এই সুবিধা পাওয়া যায়। কোম্পানিগুলো ভিন্ন ভিন্ন নামে এসব স্বাস্থ্যবিমা পলিসি বাজারে এনেছে।
হাসপাতাল খরচ পুনর্ভরণ পলিসির ক্ষেত্রে গ্রাহক বিমা অঙ্কের সমপরিমাণ অর্থ চিকিৎসা খরচ বাবদ ফেরত পায়। এই বিমা পলিসিতে বছরে একবার প্রিমিয়াম দিতে হয়। সাধারণত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের জন্য এই বিমা পলিসি গ্রহণ করে থাকে।
ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারিসহ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতো কিছু সুনির্দিষ্ট দুরারোগ্য রোগের ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেয় দুরারোগ্য ব্যাধির বিমা পলিসি। চিকিৎসা খরচের পাশাপাশি জীবন বিমা সুবিধাও দেওয়া হয় এই বিমা পলিসিতে।
দুরারোগ্য ব্যাধির বিমা পলিসির ক্ষেত্রে সাধারণত দুটি ভাগে বিমা দাবির টাকা দেওয়া হয়। রোগ নির্ণয় হলে বিমা অঙ্কের একটি অংশ দেওয়া হয় এবং চিকিৎসা খরচের বিপরীতে দেওয়া হয় বিমা অঙ্কের বাকি টাকা। এই ধরনের বিমা পলিসির প্রিমিয়ামের পরিমাণও সাধারণত কম হয়।
কীভাবে করবেন
বিমা করতে চাইলে সরাসরি বিমা কোম্পানির কার্যালয়ে চলে যাওয়া ভালো। এ ছাড়া বিমা প্রতিনিধির মাধ্যমেও বিমা করা যায়। মনে রাখতে হবে, যেকোনো ধরনের লেনদেন অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেকের মাধ্যমে করা উচিত। এ ছাড়া এখন অনেক কোম্পানি ই-প্রিমিয়ামের সুবিধা দিচ্ছে। ফলে গ্রাহকদের এখন আর অফিসে গিয়ে বা বিমা প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রিমিয়াম পরিশোধের প্রয়োজন নেই; বরং ঘরে বসে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ও বিকাশের মাধ্যমে প্রিমিয়াম পরিশোধ করা যাচ্ছে। এ ছাড়া বিমার মেয়াদ, অঙ্ক ও বিমাগ্রহীতার বয়সসহ বিভিন্ন তথ্য দিয়ে প্রিমিয়াম হিসাবও করা হয় ওয়েবসাইটে। বিভিন্ন কোম্পানি এই সেবা দিচ্ছে।
যা খেয়াল রাখবেন
বিমা করার সময় কিছু কাজ করা যাবে না, যেমন শুধু এজেন্টের কথা শুনে সিদ্ধান্ত না নেওয়া (নিজে পড়ুন, প্রশ্ন করুন), প্রিমিয়াম হিসাব না বুঝে সই করা, নথিপত্র না পড়ে ফরমে স্বাক্ষর করা, নমিনির ঘর খালি রাখা যাবে না। বিমা মানুষকে দেয় নিরাপত্তা অর্থাৎ নির্ধারিত কিছু ঘটনার ক্ষেত্রে বিমা আপনাকে সুরক্ষা দেবে। গ্রাহকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যাংক কোনো সুবিধা দেয় না, বিমা দেয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পল স র এই ব ম ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
র্যাগিংয়ের অভিযোগে কুবির একটি ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, তদন্ত
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মার্কেটিং বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিংসহ গালিগালাজ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষ স্থগিত করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) ভুক্তভোগী ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধানের কাছে এই অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল (বুধবার) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগে প্রথমদিনের মতো ক্লাস করতে যান। ক্লাস শেষে সিনিয়র শিক্ষার্থীরা (২০২৩–২৪ বর্ষ) তাদের ক্লাসরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর ক্রমান্বয়ে পরিচয়পর্ব আর ম্যানার শেখানোর নামে শুরু হয় র্যাগিং, সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ। তারা নবীনদের শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চের উপরে দাঁড় করিয়ে রাখেন।
আরো পড়ুন:
যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি চান ইবি শিক্ষার্থীরা
সংবাদমাধ্যমে যোগ্যতার ভিত্তিতে সবার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে: জবি উপাচার্য
এ সময় ঠিকভাবে পরিচয় দিতে না পারায় এক শিক্ষার্থীকে থাপ্পড় মারেন ২০২৩-২৪ বর্ষের একজন এবং ‘আমরা তোদের বাপ লাগি’ বলে হুমকিও দেন তারা। এছাড়া ‘শার্টের হাতা ভাঁজ করা কেন?’ বলে এক শিক্ষার্থীর ডায়ালাইসিস করা হাতে হ্যাঁচকা টান দিলে তার হাতের ক্যানুলা খুলে যায়। এতে তার স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ২০২৩-২৪ আবর্তনের শিক্ষার্থীরা অস্বীকার করেন।
অভিযুক্ত আবর্তনের শ্রেণি প্রতিনিধি ইরফান অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা শুধু জুনিয়রদের ক্রেস্ট দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে র্যাগিংয়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। শুধু ডায়ালোসিসের সমস্যা যে ছেলের, তার সঙ্গে রুমে ঢোকার সময় একজনের ধাক্কা লাগে। এতে ওই বিষয়টি ঘটে গেছে। এছাড়া বাকি অভিযোগগুলো মিথ্যা। এমন কিছু ঘটেনি, আমি পুরোটা সময় সেখানে ছিলাম।”
একই আবর্তনের আরেক শিক্ষার্থী রাকিব ইসলাম বলেন, “ওরিয়েন্টেশনের দিন কিছু ক্রেস্ট দেওয়া বাকি ছিল, আমরা সেগুলো দিতে গিয়েছিলাম। এ সময় আমাদের ব্যাচের একজন দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় জুনিয়রদের একজনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তখন আমাদের ব্যাচের ওয়াহিদ সেই ছাত্রের শার্টের হাতা ফোল্ড করা দেখে নামিয়ে দিতে বলে এবং নিজেই তা নামাতে যায়। এতে করে ওই ছাত্রের হাতে লাগানো ক্যানুলা খুলে যায়।”
রাগিংয়ের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি মাত্র ৫-১০ মিনিটের মতো ক্লাসে ছিলাম। আমার জানা মতে, সেখানে কোনো র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেনি।”
তবে ভুক্তভোগী আবর্তনের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “তারা (ইমিডিয়েট সিনিয়র) পরিচয় পর্বের নামে আমাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে তাদের ব্যাচের শয়ন নামের একজন আমাদের একজনের গায়ে হাত তুলে। এটা দেখে আমরা ভয় পেয়ে যাই।”
লিখিত অভিযোগ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, “এ ঘটনা নিয়ে আমরা শুরুতে লিখিত অভিযোগ করব বলে সিদ্ধান্ত নেই। পরে বিভাগের কিছু সিনিয়র এসে বিষয়টি থামানোর চেষ্টা করেন। এখন তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও জেনে গেছে।”
থাপ্পড় মারার অভিযোগে শয়ন দাসের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। একপর্যায়ে তার সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে গেলে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলবেন না জানিয়ে অন্যত্র চলে যান। এছাড়া আরেক অভিযুক্ত ওয়াহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র পরামর্শক প্রভাষক আফজাল হোসাইন বলেন, “র্যাগিংয়ের ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগী ও তার বড় ভাই আমাদের বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কক্ষে এসে ঘটনার বিস্তারিত জানান। সে সময় আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাসরুমে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলি এবং সিআরদের (ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ) দায়িত্ব দিই অভিযুক্তদের নাম জানানোর জন্য।”
তিনি বলেন, “যদিও তারা তাৎক্ষণিকভাবে নাম দেয়নি, তবুও আমরা নিজেরা অনুসন্ধান করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রশাসন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।”
এ বিষয়ে কল দিলে বিভাগীয় প্রধান ড. মেহের নিগার ব্যস্ততা দেখিয়ে পরে কথা বলবেন জানিয়ে ফোন রেখে দেন।
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রশাসন থেকে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে আছেন ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ, প্রক্টর আবদুল হাকিম, মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম এবং সহকারী রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, “আমরা বিষয়টি তদন্তের জন্য চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছি। তারা আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন। আপাতত অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী