ঋতুপর্ণা চাকমার জোড়া গোলে স্বাগতিক মিয়ানমারকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। ২০২৬ এএফসি নারী এশিয়ান কাপে জায়গা করে নিয়ে লাল-সবুজের মেয়েরা পৌঁছে গেছে এশিয়ার অভিজাত ফুটবলের আসরে। সেই সাফল্যের পর এবার নতুন স্বপ্ন, বিশ্বকাপে খেলা!

এই সাফল্যকে ‘কঠিন পরিশ্রমের ফসল’ বলছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। বৃহস্পতিবার বাফুফে ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কিরণ বলেন, ‘এই সুযোগ বারবার আসে না। আমাদের মেয়েরা দারুণ কিছু করেছে। এবার লক্ষ্য হবে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করা। সেই পরিকল্পনা আমাদের আছে এবং আমরা এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করব।’

ঋতুপর্ণা চাকমার প্রশংসায় ভেসেছেন অনেকেই। তবে কিরণ তাকে তুলনা করেছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির সঙ্গে। তার ভাষায়, ‘ঋতুপর্ণা আমাদের মেয়েদের মেসি। ওর বল কন্ট্রোল, গতি আর ফিনিশিং সবই অসাধারণ। বল টেনে নিয়ে যাওয়ার স্টাইলে মেসির ছায়া দেখা যায়। হামজা দেওয়ান ছেলেদের দলে যেমন তারকা, মেয়েদের দলে ঠিক তেমনিই ঋতুপর্ণা।’

এদিকে বিশ্বকাপ এবং অলিম্পিকের সম্ভাবনা মাথায় রেখে এখন থেকেই কঠোর প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছেন কিরণ। তিনি বলেন, ‘এশিয়ান কাপে চীন, জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মতো দল খেলবে। আমাদের তাদের মতো শক্ত দলের বিপক্ষে খেলতে হবে। সেজন্য আমরা ভালো প্রস্তুতির সময়টুকু কাজে লাগাতে চাই।’

কিরণ জানান, ম্যাচের আগে তিনি খেলোয়াড়দের নিয়ে কথা বলেন, শপথ পড়ান। কিরণ যোগ করেন, ‘মেয়েরা আমার কথা শোনে। ম্যাচের আগে আমি তাদের শপথ পড়াই, কথা বলি। আমি যা যা বলি, ওরা ঠিক সেগুলো মাঠে বাস্তবায়ন করে। এ থেকেই বোঝা যায়, ওদের নিবেদন ও শৃঙ্খলা কতটুকু আছে। মিয়ানমার ম্যাচের আগে আমি তাদের বলেছিলাম ২০ মিনিটের ভেতর অবশ্যই গোল করবে। সেটার জন্যই মাঠে নামবে। এগিয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই ওরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে। ওদের মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্য এটা তোমাদের করতে হবে। ঋতুপর্ণা কিন্তু ১৮ মিনিটে গোল করেছে। তারা সেই কথা রেখেছে এবং রুপনাকে যা বলেছি, গোলপোস্টে ঠিক সেটাই করেছে। প্রতিটা জিনিস যা যা বলেছি, সব খেলোয়াড় তা করেছে।’

এদিকে বিদেশি লিগে মেয়েদের পাঠানো নিয়ে কিরণ বলেন, ‘ভুটান লিগ খুব ভালো মানের নয়। ওখানে তারা মানসিক রিফ্রেশমেন্টের জন্য যাচ্ছে। তবে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ভালো মানের ইউরোপিয়ান বা মধ্যপ্রাচ্যের লিগে মেয়েদের খেলানো। অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় মঞ্চে ভালো খেললে ওদের প্রতি নজর পড়বে ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুরে এ কে আজাদের বাড়িতে চড়াও বিএনপির একাংশ

ফরিদপুর–৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে আজাদের বাড়িতে চড়াও হয়েছেন স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা। ‘আওয়ামী লীগের গোপন মিটিং’ হচ্ছে অভিযোগ তুলে এই ঘটনা ঘটানো হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের ঝিলটুলীতে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই বাড়িতে ছিলেন হা-মীম গ্রুপের ল্যান্ড অফিসার মো. রাফিজুল খান, হা-মীম গ্রুপের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. সোলাইমান হোসেন, সিকিউরিটি গার্ড মেহেদী হাসান ও ক্লিনার মো. হান্নান মিয়া।

রাফিজুল খান বলেন, কিছু লোক বাড়ির গেটে বারবার আঘাত করলে সিকিউরিটি গার্ড মেহেদী হাসান এগিয়ে যান। একপর্যায়ে গেট খুলে দিলে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব গোলাম মোস্তফা, মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম নাহিদসহ কয়েকজন বাড়িতে ঢুকে পড়েন। তাঁরা বাড়িতে আওয়ামী লীগের গোপন সভা হচ্ছে কি না, এই বলে ধমকাধমকি করেন। একপর্যায়ে খালি বাড়ি থেকে তাঁরা বেরিয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ কে আজাদের বাসা থেকে বের হয়ে মহানগর বিএনপির নেতা–কর্মীরা পাশে ভূমি অফিসের সামনে জড়ো হন। পরে সেখানে শতাধিক লোক জড়ো করা হয়। তাঁরা মিছিল বের করেন। মিছিলটি ভূমি অফিসের সামনে থেকে শুরু হয়ে অনাথের আচারের মোড় এলাকায় যায়।

মিছিলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন ফরিদপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলী রেজোয়ান বিশ্বাস, ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব শাহরিয়ার হোসেন, মহানগর ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুনিব হাসান প্রমুখ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ বলেন, ‘আমরা জানতে পারি ঝিলটুলীর ওই বাড়িতে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য সভা করছে। সে জন্য আমরা ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম।’

একটি রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে দেশের শীর্ষ একজন ব্যবসায়ীর বাড়িতে এভাবে চড়াও হতে পারেন কি না, জানতে চাইলে মিরাজ বলেন, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছে পুলিশ।

এ কে আজাদ হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্বত্বাধিকারী। তিনি ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ফরিদপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এ কে আজাদকে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পদ থেকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এ কে আজাদ।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচন করতে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন এই সংসদীয় আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান প্রয়াত চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে নায়াব ইউসুফ। তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ কে আজাদের বাড়িতে যাঁরা চড়াও হয়েছিলেন, তাঁরা সবাই নায়াব ইউসুফের সমর্থক।

এ ব্যাপারে নায়াব ইউসুফ জানান, ‘শহরে এ কে আজাদের অনেকগুলো বাড়ি। আজ (গতকাল) বিএনপির একটি মিছিল হয়েছে, কিন্তু কোন বাড়িতে বিএনপির নেতা–কর্মীরা চড়াও হয়েছে, এ খবর আমার জানা নেই।’

নায়াব ইউসুফ দাবি করেন, ‘এ কে আজাদ আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এলাকায় মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তবে আমি হিংসার রাজনীতি করি না, হামলার রাজনীতি করি না। আমি এর পক্ষপাতী নই। সন্ত্রাস–বিশৃঙ্খলা আমি পছন্দ করি না এবং আমার নেতা–কর্মীদের করতে দিই না।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী জানান, তিনি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ কে আজাদের বাড়িতে কিছু ঘটেছে বলে তাঁর জানা নেই। কেউ তাঁকে জানায়নি।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদউজ্জামান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে খবর পাই, এ কে আজাদের বাড়িতে বিএনপির লোকজন গেছে। পরে দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ কাউকে পায়নি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ