এইচএসসির পর বিদেশে পড়াশোনা, এসওপি-বৃত্তি পেতে কীভাবে নেবেন প্রস্তুতি
Published: 6th, July 2025 GMT
উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে যেতে চাইলে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা-পরবর্তী সময় উত্তম সময়। দেশে স্নাতক করে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় কোর্স আউটলাইনসহ অনেক সময় নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু স্নাতক স্তর থেকে বিদেশে পড়াশোনা শুরু করা গেলে পরবর্তী পর্যায়গুলোতে আর এ অসামঞ্জস্যতার আশঙ্কা থাকে না। তাই এইচএসসির পরপরই বিদেশে পড়তে যাওয়া সম্ভব হলে দূর ভবিষ্যতে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামগুলোতে প্রবেশ প্রক্রিয়া সহজ হয়ে ওঠে। দীর্ঘ মেয়াদে এই সুফলের জন্য দেশে থাকা অবস্থাতেই কিছু প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। এইচএসসির পরপরই বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক—
প্রবেশিকা পরীক্ষা
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন একাডেমিক পর্যায়ের প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তির জন্য অতিরিক্ত প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হয়। এগুলোর ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করা হয়। এর মধ্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য পরীক্ষাগুলো হলো এসএটি (স্কলাস্টিক অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট) এবং এসিটি (আমেরিকান কলেজ টেস্টিং)। এ পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর রিডিং, রাইটিং ও গাণিতিক বিশ্লেষণের মতো প্রাথমিক দক্ষতাগুলো যাচাই করা হয়। স্যাটে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ স্কোর তুলতে হয়, সেখানে শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির জন্য এসিটিতে ২৫ থেকে ৩০ স্কোর প্রয়োজন হয়। যুক্তরাজ্যের জন্য ইসিএএস (ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজেস অ্যাডমিশন সার্ভিস) ট্যারিফ বা এ লেভেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।
এ ছাড়া বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়নের জন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পৃথক কিছু পরীক্ষার ফলাফলকেও গুরুত্ব দেয়। যেমন যুক্তরাজ্যে মেডিকেল সায়েন্সের জন্য বিএমএটি (বায়োমেডিকেল অ্যাডমিশন টেস্ট) অথবা ইউসিএটি (ইউনিভার্সিটি ক্লিনিক্যাল অ্যাপটিটিউড টেস্ট) পরীক্ষা দিতে হয়।
ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা—আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। এই আবশ্যকীয় যোগ্যতাটি যাচাইয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত বেশ কিছু পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। যেমন—
আইইএলটিএস (ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম)
টোয়েফেল (টেস্ট অব ইংলিশ অ্যাস ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ)
পিটিই (পিয়ার্সন টেস্ট অব ইংলিশ)
ডুওলিঙ্গো
এগুলোর মধ্যে আইইএলটিএস ও টোয়েফেল বহু বছর ধরে ইংরেজি ভাষাভাষীসহ অন্য ভাষার দেশগুলোতেও অগ্রাধিকার পেয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইইএলটিএস স্কোর সাধারণত ৬ থেকে ৭ দশমিক ৫-এর মধ্যে থাকলে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে আবেদন করা যায়।
অপর দিকে টোয়েফেলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৮০ থেকে ১০০-এর মধ্যে স্কোর দেখাতে হয়। কিছু ইউরোপীয় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এইচএসসির মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন (এমওআই) বা পাঠদানের মাধ্যম ইংরেজি ভাষায় হলেই ভর্তি নিয়ে নেয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি মূলত শুধু ইংলিশ মিডিয়াম ও ইংরেজি ভার্সন কলেজগুলোর জন্য প্রযোজ্য।
ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষার দেশগুলোতে অধ্যয়নের জন্য সেখানকার স্থানীয় ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য আলাদা পরীক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন জার্মানির ক্ষেত্রে টেস্টডিএএফ (টেস্ট অব জার্মান অ্যাস আ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ) বা ডিএসএইচ (জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সামিনেশন ফর ইউনিভার্সিটি এনট্রান্স) পাস করতে হয়। একইভাবে ফ্রান্সে গুরুত্ব দেওয়া হয় ডিএএলএফ (ডিপ্লোমা ইন অ্যাডভান্সড ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজ) পরীক্ষার ফলাফলকে।
আরও পড়ুনতুরস্কে বিলকেন্ট ইউনিভার্সিটির বৃত্তি, আইইএলটিএসে ৬.৫ হলে আবেদন ০৮ মার্চ ২০২৫উচ্চশিক্ষা ও অভিবাসনের প্রয়োজনীয় নথি তৈরি—
শিক্ষার জন্য বিদেশ যেতে কিছু দরকারি নথি প্রয়োজন হয়। প্রথমটি হচ্ছে স্টেটমেন্ট অব পার্পাস (এসওপি)। এখানে আবেদনকারীর একাডেমিক লক্ষ্য, দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার পরিকল্পনা এবং নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বা তার প্রোগ্রাম নির্বাচনের কারণগুলো উল্লেখ করতে হয়।
এরপরেই আসে লেটার অব রিকমেন্ডেশন (এলওআর)। এটি হচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীর যোগ্যতার ব্যাপারে সুপারিশনামা। সাধারণত মাধ্যমিক ও উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা এই সুপারিশ করে থাকেন। সংগত কারণেই এই লেটারের কয়েকটি কপি তৈরি করে রাখতে হয়। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ থেকে ৩টি এলওআর সরবরাহের প্রয়োজন হয়।
এসওপি ও এলওআরের সঙ্গে একটি সিভি বা রেজুমি ও কাভার লেটার বা পারসোনাল স্টেটমেন্ট যুক্ত করা হলে আবেদনটি আরও শক্তিশালী হয়। সিভি বা রেজুমিতে শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে শুরু করে একাডেমিক ও একাডেমির বাইরের যাবতীয় অর্জনগুলো লিপিবদ্ধ থাকে। পারসোনাল স্টেটমেন্টের আরও একটি নাম মোটিভেশনাল লেটার। এখানে অধ্যয়নের জন্য নির্বাচিত কোর্সটিকে ঘিরে শিক্ষার্থীর আবেগের বিষয়টি পেশাগত কায়দায় ফুটিয়ে তুলতে হয়।
সর্বোপরি, এসব নথি তৈরির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিতে হয়, যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে।
ফাইল ছবিউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট এইচএসস র ত র জন য ন র জন য র জন য ব পর ক ষ এক ড ম য ক তর ভর ত র
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সুপারিশ ঐক্যকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে: রাষ্ট্র সংস্কার
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৃষ্ট ঐক্যকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তাই সংকট এড়াতে কমিশনকে দ্রুত সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশগুলো নিয়ে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়েছেন রাষ্ট্র সংস্কারের নেতারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা সংস্কার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে আলাপ-আলোচনার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে। ঐকমত্য কমিশন যে ঐক্যকে সামনে রেখে প্রায় এক বছর ধরে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে, বাস্তবায়নের সুপারিশ সেই ঐক্যকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে।
চ্যালেঞ্জের মূল কারণ হিসেবে বলা হয়, ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যেটুকু আলোচনা করেছিল, সেখানে এ প্রস্তাবে উল্লেখিত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া উপস্থাপন করা হয়নি। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর পর যদি এ প্রস্তাব জাতির সামনে হাজির করা হতো, তাহলে চ্যালেঞ্জ পরিহার করা যেত।
এতে আরও বলা হয়, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলো গণভোটের মাধ্যমে পরবর্তী সংসদকে সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় গঠনগত ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল। কিন্তু যেসব প্রস্তাবে কিছু দল আপত্তি জানিয়েছিল, সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সেই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এমন অবস্থায় সংস্কার প্রস্তাবে লিপিবদ্ধ আপত্তির বিষয়গুলোকে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ থেকে মুছে দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মনে করে, দ্রুত ওই সুপারিশ থেকে বের হয়ে না এলে রাজনৈতিক দলগুলোর একাংশের ভেতরের যৌক্তিক ক্ষোভ পরবর্তী সময়ে দেশের মানুষের ভেতর ছড়িয়ে পড়বে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশের মানুষ যখন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে, তখন রাজনৈতিক দলগুলোর একাংশের প্রতি অন্যায় আচরণ অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠলে দেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। দেশের মানুষকে স্বৈরাচারী সরকারের চেয়ে উন্নত জীবন উপহার দেওয়ার সুযোগ হারিয়ে যাবে।
সংকট এড়াতে ঐকমত্য কমিশনকে দ্রুত তাদের সুপারিশগুলো নিয়ে পুনরায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার দাবি জানিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। তারা বলেছে, সংবিধান টেকসই ও সর্বজনীন করতে তাড়াহুড়ো থেকে বিরত থেকে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানোই সংবিধান সংস্কারের একমাত্র পথ। ঐকমত্য কমিশন সঠিক বিবেচনাবোধকে গুরুত্ব দিয়ে দেশকে সংকট থেকে মুক্ত রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।