উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে যেতে চাইলে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা-পরবর্তী সময় উত্তম সময়। দেশে স্নাতক করে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় কোর্স আউটলাইনসহ অনেক সময় নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু স্নাতক স্তর থেকে বিদেশে পড়াশোনা শুরু করা গেলে পরবর্তী পর্যায়গুলোতে আর এ অসামঞ্জস্যতার আশঙ্কা থাকে না। তাই এইচএসসির পরপরই বিদেশে পড়তে যাওয়া সম্ভব হলে দূর ভবিষ্যতে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামগুলোতে প্রবেশ প্রক্রিয়া সহজ হয়ে ওঠে। দীর্ঘ মেয়াদে এই সুফলের জন্য দেশে থাকা অবস্থাতেই কিছু প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। এইচএসসির পরপরই বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক—

প্রবেশিকা পরীক্ষা

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন একাডেমিক পর্যায়ের প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তির জন্য অতিরিক্ত প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হয়। এগুলোর ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করা হয়। এর মধ্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য পরীক্ষাগুলো হলো এসএটি (স্কলাস্টিক অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট) এবং এসিটি (আমেরিকান কলেজ টেস্টিং)। এ পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর রিডিং, রাইটিং ও গাণিতিক বিশ্লেষণের মতো প্রাথমিক দক্ষতাগুলো যাচাই করা হয়। স্যাটে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ স্কোর তুলতে হয়, সেখানে শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির জন্য এসিটিতে ২৫ থেকে ৩০ স্কোর প্রয়োজন হয়। যুক্তরাজ্যের জন্য ইসিএএস (ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজেস অ্যাডমিশন সার্ভিস) ট্যারিফ বা এ লেভেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।

এ ছাড়া বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়নের জন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পৃথক কিছু পরীক্ষার ফলাফলকেও গুরুত্ব দেয়। যেমন যুক্তরাজ্যে মেডিকেল সায়েন্সের জন্য বিএমএটি (বায়োমেডিকেল অ্যাডমিশন টেস্ট) অথবা ইউসিএটি (ইউনিভার্সিটি ক্লিনিক্যাল অ্যাপটিটিউড টেস্ট) পরীক্ষা দিতে হয়।

ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা—

আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। এই আবশ্যকীয় যোগ্যতাটি যাচাইয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত বেশ কিছু পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। যেমন—

আইইএলটিএস (ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম)

টোয়েফেল (টেস্ট অব ইংলিশ অ্যাস ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ)

পিটিই (পিয়ার্সন টেস্ট অব ইংলিশ)

ডুওলিঙ্গো

এগুলোর মধ্যে আইইএলটিএস ও টোয়েফেল বহু বছর ধরে ইংরেজি ভাষাভাষীসহ অন্য ভাষার দেশগুলোতেও অগ্রাধিকার পেয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইইএলটিএস স্কোর সাধারণত ৬ থেকে ৭ দশমিক ৫-এর মধ্যে থাকলে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে আবেদন করা যায়।

অপর দিকে টোয়েফেলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৮০ থেকে ১০০-এর মধ্যে স্কোর দেখাতে হয়। কিছু ইউরোপীয় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এইচএসসির মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন (এমওআই) বা পাঠদানের মাধ্যম ইংরেজি ভাষায় হলেই ভর্তি নিয়ে নেয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি মূলত শুধু ইংলিশ মিডিয়াম ও ইংরেজি ভার্সন কলেজগুলোর জন্য প্রযোজ্য।

ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষার দেশগুলোতে অধ্যয়নের জন্য সেখানকার স্থানীয় ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য আলাদা পরীক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন জার্মানির ক্ষেত্রে টেস্টডিএএফ (টেস্ট অব জার্মান অ্যাস আ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ) বা ডিএসএইচ (জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সামিনেশন ফর ইউনিভার্সিটি এনট্রান্স) পাস করতে হয়। একইভাবে ফ্রান্সে গুরুত্ব দেওয়া হয় ডিএএলএফ (ডিপ্লোমা ইন অ্যাডভান্সড ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজ) পরীক্ষার ফলাফলকে।

আরও পড়ুনতুরস্কে বিলকেন্ট ইউনিভার্সিটির বৃত্তি, আইইএলটিএসে ৬.

৫ হলে আবেদন ০৮ মার্চ ২০২৫উচ্চশিক্ষা ও অভিবাসনের প্রয়োজনীয় নথি তৈরি—

শিক্ষার জন্য বিদেশ যেতে কিছু দরকারি নথি প্রয়োজন হয়। প্রথমটি হচ্ছে স্টেটমেন্ট অব পার্পাস (এসওপি)। এখানে আবেদনকারীর একাডেমিক লক্ষ্য, দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার পরিকল্পনা এবং নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বা তার প্রোগ্রাম নির্বাচনের কারণগুলো উল্লেখ করতে হয়।

এরপরেই আসে লেটার অব রিকমেন্ডেশন (এলওআর)। এটি হচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীর যোগ্যতার ব্যাপারে সুপারিশনামা। সাধারণত মাধ্যমিক ও উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা এই সুপারিশ করে থাকেন। সংগত কারণেই এই লেটারের কয়েকটি কপি তৈরি করে রাখতে হয়। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ থেকে ৩টি এলওআর সরবরাহের প্রয়োজন হয়।

এসওপি ও এলওআরের সঙ্গে একটি সিভি বা রেজুমি ও কাভার লেটার বা পারসোনাল স্টেটমেন্ট যুক্ত করা হলে আবেদনটি আরও শক্তিশালী হয়। সিভি বা রেজুমিতে শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে শুরু করে একাডেমিক ও একাডেমির বাইরের যাবতীয় অর্জনগুলো লিপিবদ্ধ থাকে। পারসোনাল স্টেটমেন্টের আরও একটি নাম মোটিভেশনাল লেটার। এখানে অধ্যয়নের জন্য নির্বাচিত কোর্সটিকে ঘিরে শিক্ষার্থীর আবেগের বিষয়টি পেশাগত কায়দায় ফুটিয়ে তুলতে হয়।

সর্বোপরি, এসব নথি তৈরির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিতে হয়, যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে।

ফাইল ছবি

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট এইচএসস র ত র জন য ন র জন য র জন য ব পর ক ষ এক ড ম য ক তর ভর ত র

এছাড়াও পড়ুন:

ভোলায় মহিলা দলের নেত্রীকে পিটিয়ে ছবি প্রকাশের দায়ে বিএনপি নেতা বহিষ্কার

ভিজিএফের চাল বণ্টন নিয়ে বিরোধ ও ইউনিয়ন মহিলা দলের সভাপতিকে পিটিয়ে দলীয় পদ হারালেন ভোলার তজুমদ্দিনের চাচড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হাওরাদার।  ইব্রাহিম হাওলাদার ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে মহিলা দল নেত্রীকে মারধরের পর তার আপত্তিকর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ো দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

শুক্রবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ইব্রাহিম হাওলাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড দলের নীতি আদর্শ ও সংহতি পরিপন্থী। সুতরাং এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য ইব্রাহিম হাওলাদারকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে বরাদ্দ ভিজিএফের বেশ কিছু স্লিপ ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তার কাছে দাবি করেন ইউনিয়ন মহিলা দলের সভাপতি মালেকা বেগম। তার চাহিদার বিপরীতে স্লিপ কম দেওয়ায় ইউপি কর্মকর্তার সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনার জেরে গত ৩ জুন ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। পনে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হাওলাদারের বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ সমর্থক মালেকা বেগমকে বেধড়ক মারধর করে সেসব ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা না হওয়ায় মহিলা দলের ওই নেত্রী বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জানান। তার প্রেক্ষিতে ঘটনার প্রায় একমাস পর অভিযুক্তকে বহিষ্কার করা হলো।

ওই বিএনপি নেতাকে বহিষ্কারের বিষয়টি বিষয়টি নিশ্চিত করেন তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ওমর আসাদ রিন্টু। তিনি বলেন, মালেকা বেগম চাঁচড়া ইউনিয়ন বিএনপির মহিলা দলের সভাপতি। ঘটনার দিন তিনি আমাকে ফোনে জানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের কক্ষে তালা দিয়েছিলেন, পরবর্তীতে তার প্রতিপক্ষের লোকজন তার ওপর হামলা চালায়, এতে তিনি আহত হন। পরবর্তীতে তিনি আর কিছু জানাননি। ওই ঘটনার পর আজ ইব্রাহিম হাওলাদারকে সেন্ট্রাল থেকে বহিষ্কার করেছে।

এ বিষয়ে জানতে ইব্রাহিম হাওলাদারের মুঠোফোনে কল করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রোমানিয়ায় উচ্চশিক্ষা: আইইএলটিএস স্কোর ৬, খরচ–বৃত্তিসহ জেনে নিন সব তথ্য
  • সংবাদ প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে ‘বিভ্রান্তি’ কেন
  • ভোলায় মহিলা দলের নেত্রীকে পিটিয়ে ছবি প্রকাশের দায়ে বিএনপি নেতা বহিষ্কার
  • পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে ‘হতাশ’ ট্রাম্প, পরপরই কিয়েভে ব্যাপক হামলা রাশিয়ার
  • চীনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে পড়াশোনা, আইইএলটিএসে ৭ হলেই আবেদন
  • ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে সর্বোচ্চ বহিষ্কার, ২৫ হাজার অনুপস্থিত
  • তজুমদ্দিনে ধর্ষণের নেপথ্যে সতীনের আক্রোশ: পুলিশ
  • তজুমদ্দিনে ধর্ষণের নেপথ্যে সতীনের আক্রোশ
  • এইচএসসিতে নকল করার অপরাধে ১০ জনকে বহিষ্কার