রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর ‘হতাশ’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুজনের মধ্যে ফোনালাপের পর এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের ভাষ্য, ফোনালাপে তাঁর মনে হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে চান না পুতিন। দুই নেতার এই ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টা পরেই ইউক্রেনে ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।

ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ওই ফোনালাপ হয় গতকাল বৃহস্পতিবার। আজ শুক্রবার ওয়াশিংটন থেকে আইওয়া অঙ্গরাজ্যের দিকে যাত্রা শুরুর আগে ফোনালাপের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান তিনি। পুতিনের সঙ্গে আলাপের পর এদিনই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপের পরিকল্পনা ছিল ট্রাম্পের।

সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে যে আলাপ হয়েছে, তা নিয়ে আমি খুবই হতাশ। কারণ, আমি মনে করি না, আলাপে তাঁর মন ছিল। আর আমি খুবই হতাশ হয়েছি। আমার মনে হয় না তিনি (রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ) থামাতে চাচ্ছেন। এটি খুবই খারাপ একটি বিষয়। তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি।’

গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসার পরপরই রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে তৎপর হন ট্রাম্প। এ নিয়ে মস্কো ও কিয়েভ—দুই পক্ষের সঙ্গেই দফায় দফায় আলোচনা করেছে মার্কিন প্রতিনিধিদল। তবে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার জন্য পুতিনকে চাপ দিতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে।

ট্রাম্প–পুতিন ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মস্কোও। ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অস্ত্রের সরবরাহ স্থগিত করা নিয়ে আলাপে কোনো কথা হয়নি বলে জানান পুতিনের সহযোগী ইউরি উশাকভ। এ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ পুরোপুরি স্থগিত করা হয়নি। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশটিকে এত অস্ত্র দিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দুর্বল হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছিল।

অস্ত্রের ওই চালান স্থগিতের পর চলমান যুদ্ধ ঘিরে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ইউক্রেনের নেতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছিল। পরে গত বুধবার কিয়েভে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে অস্ত্র সরবরাহের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তাঁরা। ইউক্রেনের নেতারা বলেন, মার্কিন অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের নিজেদের রক্ষা করার সক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়বে।

কিয়েভে সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে কিয়েভে সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালিয়েছে মস্কো। ট্রাম্প–পুতিন ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টা পর চালানো এই হামলায় রাজধানী শহরটিতে বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২৩ জন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত কিয়েভে আত্মঘাতী কামিকাজে ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়। এ সময় শহরজুড়ে বাজতে থাকে সাইরেন। একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ধোঁয়ায় ঢেকে যায় শহর। পরিবার নিয়ে নিরাপদে আশ্রয় নেন কিয়েভের বাসিন্দারা। ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, এই রাতে ৫৩৯টি ড্রোন ও ১১টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে রাশিয়া।

কিয়েভের কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়ার হামলায় কিয়েভের ১০টি এলাকায় ৪০টি ভবন, ৫টি স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন, রেলওয়ের স্থাপনা, ক্যাফে এবং যানবাহনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হামলায় পোল্যান্ডের দূতাবাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটি। কিয়েভে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের বসবাস। বিগত সপ্তাহগুলোতে শহরটিতে ব্যাপক হারে হামলা বাড়িয়েছে রুশ বাহিনী।

ইউক্রেনে ‘রাসায়নিক’ অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ

ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া ব্যাপক হারে নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ এনেছে নেদারল্যান্ডস ও জার্মানি। দেশ দুটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ নিয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। গতকাল তারা দাবি করেছে, এই অস্ত্রগুলোর মধ্যে শ্বাসরোধকারী গ্যাস রয়েছে। পরিখা থেকে ইউক্রেনের সেনাদের বের করতে এই গ্যাস ব্যবহার করা হয়। পরে তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হয়।

এমন অভিযোগ এনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুবেন ব্রেকেলম্যানস। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রে ব্যবহার দিন দিন আরও বিস্তৃত হচ্ছে এবং তা সাধারণ একটি বিষয়ে পরিণত করা হচ্ছে। এটি উদ্বেগের।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে প্রথম রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ এনেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই রাসায়নিকটির নাম ‘ক্লোরোপিক্রিন’। দাঙ্গা দমনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে গ্যাস ব্যবহার করে, তার চেয়ে এটি বেশি বিষাক্ত। ক্লোরোপিক্রিন প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। ইউক্রেনে ক্লোরোপিক্রিনের মজুত রয়েছে বলে অভিযোগ এনেছে মস্কোও। বুধবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দেশটির সামরিক বাহিনীর বিস্ফোরক মজুত রাখার স্থানে ক্লোরোপিক্রিন সংরক্ষণ করতে দেখা গেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ব যবহ র কর ইউক র ন র র সরবর হ

এছাড়াও পড়ুন:

৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনেছে।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

সিএমএসএমই ঋণ সহজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা

ব্যাংকের কার্ড থেকে নগদ, বিকাশে টাকা পাঠানোর নতুন সুবিধা

তিনি জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণে রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে বাজার থেকেই ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। নিলামের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত। আর এই প্রাইসেই ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামে ডলার কেনার ফলে বাজারে তারল্য বাড়ছে, আর রিজার্ভে যোগ হচ্ছে নিলামে কেনা ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট দুই হাজার ১২৬ মিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে। এসব ডলার দেশের ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯ দফায় ডলার কিনেছিল। এর মধ্যে গত ৬ অক্টোবর ৮টি ব্যাংক থেকে নিলামে ১৪০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ১৩৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে,  ২ সেপ্টেম্বর একই দরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ ব্যাংক থেকে ৪৭.৫০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে, ১৩ জুলাই ১৮টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে,  একই দরে গত ১৫ জুলাই ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া গত ২৩ জুলাই ডলার কিনেছে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। গত ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫  পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় এবং  গত ১০ আগস্ট ১১টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে, চাহিদা কমেছে। এ কারণে ডলারের দাম কিছুটা কমে গেছে। আর ডলারের দাম আরও কমে গেলে রপ্তানিকারকরা একদিকে সমস্যায় পড়বে অপরদিকে রেমিট্যান্স আয় বৈধ পথে আসা কমে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। যা খুবই যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। তাতে ডলারের বাজার স্থিতিশীল থাকবে ও চাহিদার ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।

গত ১৫ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সঙ্গে আলোচনার পর ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন থেকে ব্যাংক ও গ্রাহক নিজেরাই ডলারের দর নির্ধারণ করছে।

ঢাকা/নাজমুল/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বেরাদারান-ই-মিল্লাত’ বলার পরপরই দুই গুলিতে মঞ্চে ঢলে পড়লেন লিয়াকত আলী খান
  • ত্বক সতেজ রাখতে এই ফল খান
  • রাকিবের রঙিন মাছের খামার, মাসে আয় ৪৫ হাজার টাকা
  • যুদ্ধবিরতির পরও শান্তি ফিরছে না গাজায়
  • বিশ্ব অর্থনীতিতে ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব এখনো তেমন একটা পড়েনি: আইএমএফ
  • এক ছাতার নিচে ৪৮ ব্র্যান্ডের ফার্নিচার, ৫-১৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়
  • ৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক
  • নবম-দশম শ্রেণির সাড়ে পাঁচ কোটি পাঠ্যবই ছাপাবে সরকার
  • কুষ্টিয়ায় দুই দিনে ১৪ কোটি টাকার কারেন্ট জাল জব্দ
  • পুতিন যুদ্ধ না থামালে ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেবেন ট্রাম্প