ট্রাম্পের সঙ্গে বিরোধ, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা ইলন মাস্কের
Published: 6th, July 2025 GMT
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্ক নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।
শনিবার নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তিনি জানান, ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে এই নতুন দলটি গঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের দুইদলীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে।
তবে এখনো এই দলটি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ইলেকশন কমিশনের (এফইসি) কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তীব্র রাজনৈতিক বিরোধে জড়ানোর কয়েক সপ্তাহের মাথায় ইলন মাস্ক এই ঘোষণা দিলেন। এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র ট্রাম্পের প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পর গত মে মাসে হঠাৎ করেই মাস্ক পদত্যাগ করেন। এরপরই দুজনের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে।
দুজনের চলমান এই দ্বন্দ্বের সময় মাস্ক এক্স-এ একটি জনমত জরিপ চালান। সেখানে তিনি জিজ্ঞেস করেন— যুক্তরাষ্ট্রে নতুন একটি রাজনৈতিক দল প্রয়োজন কি না?
সেই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে শনিবার মাস্ক বলেন, দুই-এক অনুপাতে আপনারা নতুন একটি রাজনৈতিক দল চান এবং আমি আপনাদের তা করে দেখাচ্ছি। আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আজ ‘আমেরিকা পার্টি’র জন্ম হলো।
তবে মাস্ক নিজে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে জন্ম নেওয়ায় (দক্ষিণ আফ্রিকা) মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার সাংবিধানিক যোগ্যতা নেই। এই নতুন দলের নেতৃত্বে কে থাকবেন তা তিনি এখনও জানাননি।
ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের আগে ইলন মাস্ক ছিলেন তার একজন বড় সমর্থক। নির্বাচনী প্রচারণায় মাস্ক ট্রাম্পের পাশে নেচেছেন, এমনকি তার চার বছর বয়সী ছেলেকে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করাতে হোয়াইট হাউজে নিয়ে গিয়েছেন।
নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী সময় বিভিন্ন খবরে জানা যায়, ট্রাম্পকে ক্ষমতায় ফেরাতে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৯০০ কোটি টাকা) ব্যয় করেছিলেন ইলন মাস্ক।
এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ অবশ্য নির্বাচনের পর ট্রাম্প তাকে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’র প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। এই দপ্তরের মূল দায়িত্ব ছিল ফেডারেল বাজেটে ব্যাপক কাটছাঁটের জন্য পরামর্শ দেওয়া।
তবে ট্রাম্পের কর ও ব্যয়ের পরিকল্পনার সমালোচনা করে মে মাসে তিনি প্রশাসন ছেড়ে দেন। এরপরই তাদের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে।
সম্প্রতি কংগ্রেসে অনুমোদিত এবং ট্রাম্প স্বাক্ষরিত নতুন এক ‘বৃহৎ, চমৎকার বিল’ নিয়ে মাস্কের আপত্তি ওঠে। এতে বিপুল পরিমাণ ব্যয় ও কর ছাড় অন্তর্ভুক্ত থাকলেও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ ও টেসলার মতো বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য কোনো প্রণোদনা রাখা হয়নি টাম্পের পক্ষ থেকে। যে কারণে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন মাস্ক। এ নিয়ে ট্রাম্পও একহাত নিয়েছেন মাস্ককে।
নিজ মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ ট্রাম্প লেখেন, ইলন সম্ভবত মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি পাওয়া ব্যক্তি। ভর্তুকি ছাড়া তাকে হয়তো দোকান বন্ধ করে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যেতে হতো। এ ছাড়া ট্রাম্প মাস্কের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভর্তুকি খতিয়ে দেখার হুমকিও দেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে দুইদলীয় ব্যবস্থার বাইরে রাজনৈতিক দলগুলোর টিকে থাকা বা ক্ষমতায় আসা অত্যন্ত কঠিন। লিবার্টেরিয়ান পার্টি, গ্রীন পার্টি কিংবা পিপলস পার্টির মতো দলগুলো অতীতে বেশ কজন প্রার্থী দিলেও মূলধারার প্রার্থীদের সামনে তারা টিকতে পারেনি। তবে ইলন মাস্কের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ও বিপুল অর্থবল নিয়ে ‘আমেরিকা পার্টি’ আদৌ কতদূর যেতে পারে, তা এখন দেখার বিষয়।
সূত্র: এক্স পোস্ট, যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম, বিবিসি
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক স প সএক স র জন ত ক দল ম র ক ন য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র ইলন ম স ক
এছাড়াও পড়ুন:
শতকোটি বছর আগের ছত্রাক কেমন ছিল
জাপানের ওকিনাওয়া ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা উন্নত জেনেটিক কৌশল ব্যবহার করে ছত্রাকের বিবর্তনের নতুন তথ্য জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, প্রাচীন ছত্রাক কেবল নিষ্ক্রিয় জীব ছিল না, বরং তারা সক্রিয়ভাবে প্রাচীনতম স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের গঠনে প্রভাব ফেলেছিল। উদ্ভিদ নয়, ছত্রাকই ছিল পৃথিবীর প্রথম স্থল উপনিবেশ স্থাপনকারী।
অনেক বছর ধরেই উদ্ভিদকে পৃথিবীর স্থলভাগের প্রথম উপনিবেশ স্থাপনকারী হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তবে নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, ভূপৃষ্ঠে উদ্ভিদের শিকড় হওয়ার বহু আগে থেকেই ছত্রাক স্থলজ বাস্তুতন্ত্র শাসন করত। এর ফলে ছত্রাক প্রাথমিক পরিবেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। প্রাচীন পৃথিবীর মূল বাস্তুতন্ত্রের প্রাকৃতিক প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে ছত্রাক প্রাণ বিকাশের ভিত্তি তৈরি করেছিল।
গবেষণার তথ্যমতে, বন ও স্থলজ উদ্ভিদের উত্থান কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। ছত্রাক যুগ যুগ ধরে বাস্তুতন্ত্রের বিকাশ ঘটায়। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন উদ্ভিদের বিকাশ ঘটে। বিভিন্ন ছত্রাক জলবায়ু, মাটির উর্বরতা ও অগণিত জীবের বিবর্তনকে এমনভাবে প্রভাবিত করেছিল, যা এত দিন কল্পনাও করা হয়নি। অন্য প্রাণী বা উদ্ভিদের তুলনায় ছত্রাকের আদি তারিখ বা সময় নির্ধারণ করা বেশ কঠিন।
গবেষণার তথ্যমতে, ছত্রাকের পূর্বপুরুষ প্রায় ৯০ লাখ বছর থেকে ১৪০ কোটি বছর আগে বিদ্যমান ছিল। আর প্রথম স্থলজ উদ্ভিদ প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ বছর আগে আবির্ভূত হয়। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ছত্রাক সম্ভবত জলজ পরিবেশে ও স্যাঁতসেঁতে উপকূলরেখা বরাবর বৈচিত্র্য তৈরি করেছিল। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী লেনার্ড সানথো বলেন, ছত্রাক বাস্তুতন্ত্র চালায়। পুষ্টি পুনর্ব্যবহার করে, মিথজীবী সম্পর্ক তৈরি করে এবং কখনো কখনো রোগ সৃষ্টি করে। ছত্রাক উদ্ভিদ জন্মানোর বহু আগে থেকেই পরিবেশগত ভূমিকা রাখছে। ছত্রাক হলো প্রকৃতির রাসায়নিক জাদুকর। ছত্রাক শিলা ক্ষয় করে, ফসফরাস মুক্ত করে এবং পুষ্টি স্থানান্তর করে। এই প্রক্রিয়া কঠিন স্থলজ পরিবেশকে নরম করেছিল।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
আরও পড়ুনজার্মানির হ্রদে প্লাস্টিকখেকো ছত্রাকের সন্ধান২২ জুলাই ২০২৫