অন্তরে ত্যাগের মহিমা লালন করতে হবে
Published: 6th, July 2025 GMT
আজ পবিত্র আশুরা। হিজরি ১৪৪৭ সনের ১০ মহররম। মুসলমান সম্প্রদায়ের গভীর শোকের দিন। হিজরি ৬১ সনের এই দিনে সত্য-মিথ্যার লড়াইয়ে কারবালার প্রান্তর রক্তাক্ত হয়েছিল। এই লড়াইয়ে ইমাম হোসেন সপরিবার জীবন উৎসর্গ করে সত্যের জয়গান গেয়ে যান, যা আজও পৃথিবীর তাবৎ মুসলিমকে অনুপ্রাণিত করে।
মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে ইয়াজিদ অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেন এবং এ জন্য ষড়যন্ত্র ও বলপ্রয়োগের পথ বেছে নেন। মহানবী (সা.
অবরুদ্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন, ৭২ জন সঙ্গীসহ শাহাদাতবরণ করেন হজরত ইমাম হোসেন (রা.)। এ হত্যাকাণ্ড ছিল অত্যন্ত নির্মম। শাহাদাতের পর ইমাম হোসেন (রা.)–এর শরীরে বর্শা, তির ও তরবারির অসংখ্য জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়।
কারবালা প্রান্তরের সেই শোকাবহ ঘটনার স্মরণে প্রতিবছর ১০ মহররম পবিত্র আশুরা পালিত হয়। শিয়া সম্প্রদায় এদিন তাজিয়া মিছিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। সুন্নি সম্প্রদায়ও নফল রোজা রাখাসহ নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে এ দিবস পালন করে থাকে। বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে শিয়া-সুন্নিনির্বিশেষে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আশুরা পালিত হয়ে আসছে।
কারবালার যুদ্ধ ছাড়াও এই দিন ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। হাদিস শরিফে পূর্ববর্তী নবী-রাসুল (সা.)–এর স্মৃতিসংবলিত ও ঘটনাবহুল দিনটির কথা বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে।
এটি শিয়া সম্প্রদায়ের অবশ্যপালনীয় দিন হলেও সব মুসলমানই এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করবে আশা করি। এ বছর যাতে সারা দেশে তাজিয়া মিছিলসহ আশুরার অনুষ্ঠান আয়োজন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতায় আশুরার ত্যাগের শিক্ষাই হোক পাথেয়। এদিনের মূল চেতনা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম। আশুরার শিক্ষা ও চেতনার আলোকে জাতি এগিয়ে যাবে, এটাই প্রত্যাশিত।
ঢাকাসহ সারা দেশে যাতে শান্তিপূর্ণভাবে পবিত্র আশুরা পালিত হয়, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। আশুরার মূল চেতনা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম। সেই সংগ্রামে সাময়িক আঘাত এলেও চূড়ান্ত বিজয় অবধারিত। এটাই মহররমের শিক্ষা। কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, ‘ত্যাগ চাই, মর্সিয়া-ক্রন্দন চাহি না’।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রব ল র
এছাড়াও পড়ুন:
কোস্টগার্ড ও প্রশাসনের ভূমিকা হতাশাজনক
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে, যা সেখানকার পরিবেশ এবং কৃষিকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে। প্রশাসনের ইজারা দেওয়া এলাকার বাইরে গিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী বিএনপি নেতাদের একটি চক্র যে হারে বালু লুট করছে, তাতে নদীতীরবর্তী তিন ফসলি উর্বর জমিগুলোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেখানে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারছে না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, জেলা বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন সরকারের নামে পরিচালিত একটি বৈধ বালুমহালের নাম ব্যবহার করে এই অবৈধ কার্যক্রম চলছে। কাগজে-কলমে বৈধ ইজারা থাকলেও, চক্রটি প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে ইজারা মৌজা থেকে দেড় হাজার ফুট গভীরে না গিয়ে, পাশের চরমসুরা মৌজার কৃষিজমির সীমানা ঘেঁষে দিন-রাত খননযন্ত্র (ড্রেজার) চালাচ্ছে। এই চক্রের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড যেভাবে হোক থামাতেই হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জমিগুলো মুন্সিগঞ্জের সবচেয়ে উর্বর কৃষিজমি। বালুখেকোদের কারণে ইতিমধ্যে অনেক কৃষিজমি বিলীন হয়ে গেছে। একজন কৃষক ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, ‘আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতেও হাত-পাও ধরলে তারা নদীর মধ্যে গিয়ে বালু কাটত। এখন বিএনপির নেতারা কোনো কিছু মানে না। দিন-রাইত বালু কাটতাছে। কিছু কইতে গেলে উল্টা মাইরের ভয় দেখায়।’
ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞাকে পর্যন্ত এই চক্র মানেনি। প্রতিদিন শতাধিক বাল্কহেড বোঝাই করে বালু বিক্রি হচ্ছে, যা থেকে চক্রটি দৈনিক ৫০ লাখ টাকার ওপরে আয় করছে। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা স্মারকলিপি দিয়েছেন, গ্রামবাসী ধাওয়া দিয়েছেন, এমনকি উপজেলা প্রশাসন ১৮টি অভিযান চালিয়েছে, মামলা করেছে এবং জরিমানা করেছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই এই বালু লুট বন্ধ করা যাচ্ছে না। এই ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে গেলে বেরিয়ে আসে আরও গুরুতর তথ্য। বালু তোলার শ্রমিকেরাই বলছেন, কোস্টগার্ড বা প্রশাসন কখন অভিযানে বের হবে, সেই খবর বালুখেকোরা আগেই পেয়ে যায়। অভিযান শুরুর আগে ড্রেজারগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। অভিযান শেষে আবার বালু তোলার কাজ শুরু হয়ে যায়।
কোস্টগার্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে এ গুরুতর অভিযোগ কোনোভাবেই গুরুত্বহীন করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ, বালু তোলার শ্রমিকদের থেকেই এমন বক্তব্য পাওয়া গেছে। তা ছাড়া ১৮টি অভিযান চালানোর পরও অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধ না হওয়ার বিষয়টি প্রশ্ন তৈরি করে। এখন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রমাণ করতে হবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে তারা কতটা আন্তরিক। শুধু শ্রমিকদের ধরলেই হবে না, অভিযুক্ত বড় ব্যক্তিদেরও ধরতে হবে। বাল্কহেড ও বালু পরিবহনের ট্রাকও আটক করতে হবে।