পাবনার সুজানগরে মোবাইলে কথা বলাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে গেছেন তিন সদস্যের বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিনিধি দল।

শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেলে সুজানগর উপজেলায় গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তারা। এছাড়াও সাধারণ জনগণের কাছ থেকে তথ্য সরবরাহ করেন। 

এর আগে গত বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে সুজানগর বাজারের নন্দিতা সিনেমা হলের সামনে দুইগ্রুপের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

তিন সদস্যের প্রতিনিধিরা হলেন- রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিম, ওবায়দুর রহমান চন্দন, বিএনপির তথ্য সেলের সদস্য মাহবুবুর রহমান। 

পরিদর্শন ও তদন্ত শেষে রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিম বলেন, “পত্রপত্রিকার মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন গত বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর তিনটার একটু আগে সুজানগরের নন্দিতা সিনেমা হল রোড এলাকায় বিএনপির নামধারী কতিপয় সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র, চাইনিজ কুড়াল, চাপাতি দিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায়। যা বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তা তিনি তাৎক্ষণিক তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা কার্যকর করেছেন এবং ভালোভাবে তদন্ত করতে ও শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে ঘটনাস্থলে তিন সদস্যের টিম পাঠিয়েছেন।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা এলাকায় এসে জনগণের মতামত গ্রহণ করেছি এবং প্রশাসনের নিকট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জোর দাবি জানিয়েছি। অপরাধীদের কোন ক্ষমা নেই। অপরাধী যেই হোক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে বলেছি। শাস্তি কার্যকর করতে হবে।”

তিনি বলেন, “যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তারা যদি আদালতের মাধ্যমে নির্দোষ প্রমাণিত হয়, তাহলে বহিষ্কার তুলে নেওয়ার বিষয়ে দল বিবেচনা করবে। সংবাদে যেটা উল্লেখ করা হয়েছে যাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাতেই প্রমাণিত হয়েছে কারা জড়িত ঘটনার সঙ্গে।”

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা থেকে তদন্ত করতে সুজানগরে বিএনপির তিন সদস্যের দলটি আসেন। সুজানগর বাজারের নন্দিতা সিনেমা হল এলাকার বাসিন্দাদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। এছাড়াও বাজারের আশপাশের কয়েকটি এলাকায় গিয়ে তথ্য সরবরাহ করেন তারা। 

সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের কাছে থাকা গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ভিডিও ও ছবি সংগ্রহ করেন। অস্ত্র হাতে কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়েছে ওসব ছবিও সংগ্রহ করেন তারা। এরপর সুজানগর থানা ও সার্কেল অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুজানগর ডাক বাংলোর অডিটোরিয়ামে কয়েক ঘণ।টাব্যাপী জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 

অনুষ্ঠান শেষ করে সাংবাদিকদের সংক্ষিপ্ত ব্রিফ করেন। এছাড়াও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে লিখিত অভিযোগ দেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিম।

কেন্দ্রীয় বিএনপির তথ্য সেলের সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা তারেক রহমানের নির্দেশনায় এখানে আসছিলাম। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কার্পণ্য না করেন। কারও ভয় পেয়ে যেন প্রকৃত দোষী যেন ছাড় পেয়ে না যায়। সেই বিষয়ে ওসি সাহেবকে বলেছি। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে লিখিতভাবে অভিযোগগুলো থানায় দিয়ে আসছি।”

সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবর রহমান বলেন, “শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিএনপির প্রতিনিধি দল ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গ বৈঠক হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পরে আপনাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে পারব।”

এর আগে ফোনে কথা বলাকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সুজানগর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মজিবর খাঁয়ের অনুসারী আশিকের ফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুর রউফ শেখের ভাতিজা ছাত্রদল নেতা কাউছার ও তার অনুসারীরা। এরপর এ ঘটনা মীমাংসা হলেও পরদিন বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে আশিককে সিনেমা হলের সামনে আবার ডাকে কাউছার ও তার দল। 

এসময় তাদের সঙ্গে দেখা করতে আশিক তার চাচাতো ভাই ছাত্রদল নেতা সবুজকে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে কাওছার ও আশিকের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে সবুজ বাধা দিতে গেলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। এরপর মজিবর খা, লেবু খা, মানিকসহ দলবদ্ধভাবে এসে কাউছারদের ওপর হামলা চালানো হয়। 

এসময় আব্দুর রউফ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়পক্ষকে থামাতে গেলে তাকেও কুপিয়ে ও মারধর করে আহত করা হয়। এসময় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। আহত উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিবকে মুমূর্ষ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। 

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে বিএনপির সদস্য সচিব সহ ১০ জনকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

ঢাকা/শাহীন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত ন সদস য র য় ব এনপ র ব এনপ র স ক ব যবস থ তদন ত কর স ঘর ষ র র রহম ন র সদস য স জ নগর ন ত কর হ কর ন র ঘটন ত করত উপজ ল গঠন ক

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে সোহাগকে হত্যা: ডিসি জসীম উদ্দিন

রাজধানীর পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) হত্যার ঘটনায় লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেছেন, চাঁদাবাজি নয়, ভাঙারি ব্যবসা এবং একটি দোকানে কারা ব্যবসা করবে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগ এবং হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তাদের একসঙ্গে ব্যবসাও ছিল।

শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে জসীম উদ্দিন বলেন, ভাঙারি ব্যবসা এবং দোকানে কারা ব্যবসা করবে সেটা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগ এবং যারা হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে তারা একসঙ্গে কিছুদিন ব্যবসা করেছে। যখন ব্যবসা লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় তখনই তারা বিবাদে লিপ্ত হয়। এর ফলে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লালবাগ বিভাগের ডিসি বলেন, গত বুধবার বিকেল ৬টার দিকে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে একদল লোক লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ নামের এক ব্যক্তিকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর কোতয়ালি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ১০ জুলাই এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

গত ১১ জুলাই পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে এজাহারভুক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেপ্তার করে। এ সময় গ্রেপ্তার তারেক রহমান রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে র‍্যাব আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে ছোট মনির (২৫) নামের আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া শুক্রবার রাতে মো. টিটন গাজী (৩২) নামে আরও এক এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ অত্যন্ত তৎপর রয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মূল রহস্য উৎঘাটন, সংশ্লিষ্ট সব অপরাধী গ্রেপ্তার এবং সোহাগ কেন এই ঘটনার শিকার হলো তা উদঘাটনের জন্য একটি চৌকস টিম গঠন করা হয়েছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ