ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের চত্বরে অনুমতি ছাড়াই অনুষ্ঠান করা নিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী তাহমিনা সারমিন আশুগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

জিডিতে উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম, যুগ্ম সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম, সমন্বয়কারী সুমন মৃধা ও জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী আকিব জাবেদের নামসহ অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এদিকে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ওই চত্বরে বিকেলে জুলাই স্মৃতিচারণা ও শহীদদের স্মরণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করেছে উপজেলা এনসিপি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী তাহমিনা সারমিন প্রথম আলোকে বলেন, ভূমি কার্যালয়ের পেছনে একটি ম্যুরাল ছিল। সেটি ৫ আগস্টের সময় ভাঙচুর করা হয়। জায়গাটি টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল। সেখানে অনুষ্ঠান করবে বলে সকালে এনসিপির নেতা আমিনুল ইসলামসহ অন্যরা এসে টিনের বেড়া ভাঙচুর করে। ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি তাঁদের বাধা দেন। অনুষ্ঠানের বিষয়ে তাঁরা কাউকে জানাননি। তাঁরা সেখানে জুলাই মঞ্চ বানাতে চান। এটা করা যাবে না বলে জানিয়ে দেন। কিন্তু তাঁরা জুলাই মঞ্চ করবেন বলে ঘোষণা দেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি বাধা দিয়ে এসেছি। এ জন্য তাঁরা উল্টো আমাকে হুমকি দিয়েছেন। আমার সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। তাঁরা আইন মানবেন না, আমাদের যা ইচ্ছা তা করার জন্য তাঁরা বলেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আশুগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি।’

জিডিতে উল্লেখ করা হয়, এনসিপি নেতা আকিব জাবেদ ফোন করে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়ার জন্য হুমকি দেন এবং অনুমতি না দিলে ‘মব’ সৃষ্টি করে ভূমি কার্যালয় ভাঙচুর ও এসি ল্যান্ডকে বদলি করে দেওয়ার হুমকি দেন। তাঁদের অনুমতির দরকার নেই এবং পারলে তাঁদের ঠেকাতে বলেছেন বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়।

জানতে চাইলে এনসিপির উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৬ আগস্ট উপজেলায় জুলাই আহতদের নিয়ে সর্বদলীয় একটি অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপস্থিত ছিলেন না। তবে উপজেলা জামায়াতের আমির শাহজাহান ভূঁইয়াসহ বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা জামায়াত, বিএনপি ও এনসিপি মিলে আমরা উপজেলা পরিষদের ভেতরে জুলাই মঞ্চ করতে চাই। উপজেলা পরিষদের ভেতরে বঙ্গবন্ধুর একটি ম্যুরাল ছিল। সেখানে মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের নামে মঞ্চ করতে চাই বলে ওই অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার সকালে মিলাদ মাহফিলের জন্য এনসিপির সদস্যরা সেখানে পরিষ্কার করতে গিয়ে টিনের একটি বেড়া খুলেছিলেন। তখন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফোন করে আমাদের পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন।’ হুমকির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা বানোয়াট কথা। উনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, উনি বলেছেন আমাদের পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করবেন। আমরা বলেছি, গ্রেপ্তার করেন। এখন এটি যদি হুমকি হয় তাহলে তো আর কিছু বলার নেই।’

আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল আলম বলেন, ‘ভূমি অফিসের পেছনে বেড়া খুলে অনুষ্ঠান করবে এনসিপি। অনুমতি না থাকায় এসি ল্যান্ড স্যারের সঙ্গে তাদের কথা–কাটাকাটি হয়। এ ঘটনায় এসি ল্যান্ড মহোদয় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।’

এ বিষয়ে ইউএনও রাফে মোহাম্মদ ছড়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘অফিসে গোপনীয় নথি আছে। আমরা এখানে অনুষ্ঠান করতে দিতে পারি না। তারা কোথাও থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। এসি ল্যান্ডের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। বিষয়টি জানালে এনসিপির জেলার যুগ্ম সমন্বয়ক আকিব জাবেদ উল্টো আমাকে বলেছেন, “আপনি অনুষ্ঠানের অনুমতি দেন, অনুমতি না দিলে আমরা নিজেরাই করে ফেলব। আপনার অনুমতি লাগবে না। আপনি পারলে ঠেকান। অনুষ্ঠানে আপনার দাওয়াত।”’

অনুমতি ছাড়াই অনুষ্ঠান

এদিকে অনুমতি ছাড়াই উপজেলা ভূমি কার্যালয় চত্বরে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করেছে উপজেলা এনসিপি। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টায় তাঁরা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এ বিষয়ে এনসিপি নেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, আসর নামাজের পর জুলাই স্মৃতিচারণা এবং শহীদদের স্মরণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। তিনি বলেন, টিনের বেড়া দিয়ে মুগ্ধ চত্বর ঢেকে রাখা হয়েছিল। অনুষ্ঠান করতে সেখান থেকে বেড়া সরানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম ন ল ইসল ম সমন বয়ক র এনস প র বল ছ ন সহক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের হুমকির কাছে পুতিনের মাথা নত করার সম্ভাবনা কম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার আল্টিমেটামের কাছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মাথা নত করার সম্ভাবনা কম। তিনি ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে দখলের লক্ষ্য ধরে রেখেছেন। ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

ট্রাম্প রাশিয়ার উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন এবং রাশিয়ার তেল কিনবে এমন দেশগুলোর উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।

ক্রেমলিনে আলোচনার সাথে পরিচিত তিনটি সূত্রের মতে, রাশিয়া জয়লাভ করছে বলে পুতিনের বিশ্বাস। সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধে অর্থনৈতিক শাস্তির ধারাবাহিক ঢেউয়ের পরে বিশ্বে আরো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়বে এমন সন্দেহ থেকেই পুতিনের এই পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার দৃঢ় সংকল্প উদ্দীপিত হয়েছে।

দুটি সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়ার নেতা ট্রাম্পকে রাগাতে চান না এবং তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি ওয়াশিংটন ও পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার সুযোগ প্রত্যাখ্যান করছেন। তবে এর মধ্যেও তার যুদ্ধের লক্ষ্যগুলো প্রাধান্য পাচ্ছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, পুতিনের লক্ষ্য হলো ইউক্রেনীয় অঞ্চল দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন সম্পূর্ণরূপে দখল করা, যেগুলোকে রাশিয়া নিজেদের বলে দাবি করেছে এবং তারপর একটি শান্তি চুক্তি নিয়ে কথা বলা।

‘দ্য রিটার্ন অফ রাশিয়া’-এর লেখক জেমস রজার্স বলেছেন, “পুতিন যদি রাশিয়ার জন্য দাবি করা চারটি অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে দখল করতে সক্ষম হন, তাহলে তিনি দাবি করতে পারেন যে ইউক্রেনে তার যুদ্ধ তার লক্ষ্যে পৌঁছেছে।”

প্রথম রুশ সূত্রটি জানিয়েছে, পুতিন মার্কিন সম্পর্কের সাম্প্রতিক অবনতি নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন। পুতিন এখনো আশাবাদী যে রাশিয়া আবার আমেরিকার সাথে বন্ধুত্ব করতে এবং পশ্চিমাদের সাথে বাণিজ্য করতে পারবে।

মস্কোর বাহিনী প্রবল সামরিক চাপের মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্র এবং ইউক্রেনে অগ্রসর হচ্ছে। তাই পুতিন বিশ্বাস করেন না যে এখন যুদ্ধ শেষ করার সময় এসেছে।

লেখক রজার্স জানিয়েছেন, পুতিন তার রাজনৈতিক খ্যাতি এবং উত্তরাধিকার ইউক্রেনের যুদ্ধে বিনিয়োগ করেছেন।

তিনি বলেন, “আমরা তার পূর্ববর্তী লেখা ও বিবৃতি থেকে জানি যে তিনি রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষার জন্য পশ্চিমা এবং বিশ্বের বাকি অংশের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর একটি শক্তিশালী ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে নিজেকে দেখেন।”

দ্বিতীয় রাশিয়ান সূত্রটি জানিয়েছে, “ক্রেমলিন নেতা ট্রাম্পের সাথে সম্পর্ককে মূল্য দেন এবং তাকে রাগাতে চান না, তবে, তার কেবল একটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার রয়েছে - ট্রাম্প কেবল এটি চান বলেই পুতিন যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন না।”

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ