কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে দুই সন্তানসহ নারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এক মাসের বেশি সময় ধরে পুরো গ্রাম প্রায় ‘পুরুষশূন্য’ বলে দাবি করেছেন নারীরা। আজ মঙ্গলবার কড়ইবাড়ি গ্রামের শতাধিক নারী এক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে অভিযোগ করেন, তাঁদের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের হয়রানি করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রামের বেশির ভাগ পুরুষ এলাকাছাড়া। দীর্ঘ সময় তাঁরা এলাকাছাড়া থাকায় তাঁদের সংসারে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার কড়ইবাড়ি স্ট্যান্ড এলাকায় কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন নারীরা।

গত ৩ জুলাই সকালে উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে ‘মব’ সৃষ্টি করে মা, মেয়ে, ছেলেসহ একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করা হয়। তাঁরা হলেন কড়ইবাড়ি গ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকি (২৯)। হত্যাকাণ্ডের পরদিন ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানায় মামলা করেন রোকসানার বড় মেয়ে রিক্তা আক্তার।

মামলায় ইতিমধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আলোচিত তিন খুনের এক মাস পেরিয়ে গেলেও প্রধান আসামি স্থানীয় আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ এখনো গ্রেপ্তার হননি।

আজ দুপুরে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া গ্রামের বাসিন্দা জামিলা আক্তার বলেন, তিন খুনের ঘটনায় প্রকৃত অপরাধী ছাড়াও নিরীহ গ্রামবাসীকে হয়রানি করা হচ্ছে। এতে আতঙ্কে গত এক মাসের বেশি ধরে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে পুরো কড়ইবাড়ি গ্রাম। এ ছাড়া ঘটনাটি নিয়ে একটি পক্ষ ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। যার কারণে গ্রামের পুরুষেরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকায় ফিরে আসছেন না।

জায়েদা বেগম নামের আরেক নারী বলেন, ‘আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি বিনা অপরাধে বাড়িছাড়া। এতে পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমরা চাই যারা প্রকৃত অপরাধী, তাদের বিচার হোক। কিন্তু গ্রামের সবাইকে যেন হয়রানি না করা হয়।’

সালমা বেগম বলেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে গ্রাম পুরুষশূন্য থাকায় চুরি-ডাকাতিরও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে গ্রামের সবার মধ্যে। সব মিলিয়ে গ্রামের নারীরা আতঙ্কে আছেন।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জেলা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) নয়ন কুমার চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত নিরীহ একজন মানুষকেও হয়রানি করা হয়নি। তাঁরা শুরু থেকেই মামলাটি নিয়ে সতর্ক। গ্রামবাসীর আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়, তাদের গ্রামে ফিরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধান আসামি গ্রেপ্তার না হওয়া প্রসঙ্গে নয়ন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই যারা ঘটনায় জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করছি না।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কড়ইব ড় পর ব র র উপজ ল র এক ম স আতঙ ক হয়র ন

এছাড়াও পড়ুন:

রাবি উপ-উপাচার্যসহ শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ অন্যান্য শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর হওয়া হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এই কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

আরো পড়ুন:

বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় জাবির ৮ শিক্ষক-শিক্ষার্থী

হাবিপ্রবিতে ঘুষের অভিযোগে দুদকের অভিযান

শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের দাবি, শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) যারা শিক্ষকের গায়ে হাত দিয়েছে তাদের বহিষ্কার করতে হবে। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা (পোষ্য কোটা) নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা রক্ষায় যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবেন বলেও জানান তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল আলিম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্মকর্তা-শিক্ষকদের ওপর সাম্প্রতিক বর্বরোচিত হামলাকে আমরা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখি। এমন জঘন্য কর্মকাণ্ড কোনো আদর্শবান শিক্ষার্থীর কাজ হতে পারে না। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা এবং ছাত্রত্ব বাতিলসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন।”

অফিসার্স সমিতির সভাপতি মুক্তার হোসেন বলেন, “উপ-উপাচার্যহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দের উপর যে ন্যাক্কারজনক হামলা হয়েছে, তেমন নিদর্শন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি। যারা এ কার্যকলাপে জড়িত, তাদের ছাত্রত্ব অবিলম্বে বাতিল করা হোক এবং তারা প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুক। আমরা প্রশাসনের দ্রুত ন্যায্য বিচার প্রক্রিয়া চালানোর দাবি জানাই। যদি তা না হয়, আমরা সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থান নেওয়ার দিকে যেতে বাধ্য হবো।”

এর আগে, রাবিতে কর্মরতদের সন্তানদের ভর্তির জন্য আগে থেকেই ৪ শতাংশ পোষ্য কোটা ছিল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। এরপর থেকেই শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পোষ্য কোটাকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দাবি করে একের পর এক আন্দোলন শুরু করেন।

সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে ১৮ তারিখের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেন তারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে জরুরি অ্যাকাডেমিক কমিটির সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সভায় ১০ শর্তে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু এর বিরুদ্ধে আবার টানা আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মাঈন উদ্দিনসহ প্রশাসনে থাকা তিনজন কর্মকর্তা জুবেরী ভবনে শিক্ষার্থীদের হাতে লাঞ্ছিত হন। পরে জুবেরী ভবনে উপ-উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে সেখানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করতে থাকেন। রাতে জুবেরী ভবনের সামনে থেকে অবরোধ উঠিয়ে নিয়ে শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হন। পরে গভীর রাতে হল থেকে বের হয়ে এসে ছাত্রীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। তারা মাঝরাত পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

পরে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব মধ্যরাতে বাসার প্রধান ফটকের সামনে এসে ঘোষণা দেন, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তি আপাতত স্থগিত। এ নিয়ে রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শনিবার রাতেই কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এদিন তারা ঘোষণা দেন, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় সন্তানদের ভর্তির সুযোগ না দিলে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) থেকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে যাচ্ছেন তারা। তবে ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য রাকসু নির্বাচন এ কর্মসূচির বাইরে থাকবে।

এ ঘোষণা পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত আছে।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের
  • সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহীসহ ১৪ জনের নামে মামলা, গ্রেপ্তার ১
  • রংপুরে সাংবাদিককে হেনস্থার প্রতিবাদে মানববন্ধন, থানায় মামলা
  • ভাঙ্গায় সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে মানববন্ধন
  • রাবি উপ-উপাচার্যসহ শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
  • সহ-উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
  • রাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা
  • রূপগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে অভিভাবকদের মানববন্ধন
  • পাবনা-১ আসন পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন
  • অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মানবব