জুলাই ঘোষণাপত্রে কিছু বিষয় অনুপস্থিত থেকে গেছে বলে মনে করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ ছাড়া আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আগেই সরকারের কাছে মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিতের বিষয়ে নিশ্চয়তা চেয়েছে দলটি৷

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এ কথা বলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার পঠিত জুলাই ঘোষণাপত্র এবং প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়ে দলীয় প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকে এনসিপি।

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, কিছু বিষয় যদি জুলাই ঘোষণাপত্রের মধ্যে উল্লেখ থাকত, তাহলে এটি পরিপূর্ণ হতো বলে তাঁরা মনে করছেন। এরপর জুলাই ঘোষণাপত্রে ‘অনুপস্থিত’ বিষয়গুলো তিনি তুলে ধরেন।

আখতার বলেন, ‘ঘোষণাপত্রে উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই ভূখণ্ডের মানুষের উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের অন্যতম রেফারেন্স পয়েন্ট ১৯৪৭-কে এখানে উল্লেখ করা হয়নি। আমরা মনে করি, এই বাংলাদেশের বা এই ভূখণ্ডের একটা সার্বভৌম রাষ্ট্র পাওয়ার পেছনে ১৯৪৭, ১৯৭১ এবং আমাদের চব্বিশের আন্দোলন—এই সবকিছুর একটি সম্মিলন এই ঘোষণাপত্রকে আরও সম্পৃক্ত করতে পারত। এ ঘোষণাপত্রে (চব্বিশের) শহীদের সংখ্যার ব্যাপারে “প্রায় এক হাজার” শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ হাজার ৪০০ মানুষ এই অভ্যুত্থানের সময়কালে শহীদ হয়েছেন। এ পরিসংখ্যান আমাদের সবার জানা। সে ক্ষেত্রে এক বছর ধরে সরকার যে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছে, তার একটা ছাপ আমরা এই ঘোষণাপত্রের মধ্যে দেখতে পেলাম।’

এনসিপির এই নেতা আরও বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা গণহত্যা, বিচারিক হত্যাকাণ্ড, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার বিরুদ্ধে আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলন, মোদিবিরোধী আন্দোলনের কথা এ ঘোষণাপত্রে উল্লেখ নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ আরও অসংখ্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু ইতিহাসের এই পরতে যে ঘটনাগুলো আমাদের জাতীয় জীবনে দীর্ঘমেয়াদি ছাপ রেখে গেছে, সেই ঘটনাগুলোর উল্লেখ করা আমাদের জাতির জন্য গর্বের বিষয় হতে পারত। একই সঙ্গে ঘোষণাপত্রের মধ্য দিয়ে আমাদের সংগ্রামগুলোর আরও ঐতিহাসিক স্বীকৃতি সুনির্দিষ্টভাবে অর্জন করতে সক্ষম হতাম।’

এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এই ঘোষণাপত্রের ২৫ ও ২৭ নম্বর পয়েন্টে আয়োজিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্রকে উল্লেখ করার কথা বলা হয়েছে।

এনসিপি দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে একটি নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়ে আসছে উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, সেই লক্ষ্যে গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সংবিধান, সংবিধান পুনর্লিখনের দাবি এনসিপি সরকারের কাছে করে আসছে। ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়বস্তুতে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেখানে বাস্তবায়নের পথ কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। সে ক্ষেত্রে যখন এই ঘোষণাপত্রকে পরবর্তী সংস্কারকৃত সংবিধানের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, স্বভাবতই এনসিপি যে নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়েছে, গণপরিষদের কথা বলেছে, সংবিধানের অন্তর্ভুক্তির কথা বলেছে, সেই প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে পঠিত জুলাই ঘোষণাপত্র এবং প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়ে দলীয় প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলন ডাকে এনসিপি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এনস প র আম দ র আখত র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এক বছরে সড়কে ৬ হাজারের বেশি নিহত, কোথায় বেশি, কারণ কী

দেশে সড়কপথে এক বছরে ৬ হাজার ৪২০ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৪৮ শতাংশই নারী-শিশু ও পথচারী।

এ হিসাব গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সড়কে নারী, শিশু, পথচারী এবং চালক-সহকারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন এবং এঁদের মৃত্যুর হারও বেশি।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গত ১২ মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সংস্থাটির পরিসংখ্যান বলছে, সড়কে বেশি মৃত্যু হয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। ওই ১২ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মানুষের সংখ্যা ১২ হাজার ৫২৮। ১২ মাসে মোট সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৬ হাজার ৪৩৭।

মোট নিহত ব্যক্তির মধ্যে নারী ৯০৮, শিশু ৮৭১ এবং পথচারী ১ হাজার ৩২২ জন—যা মোট মৃত্যুর ৪৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে যানবাহনের চালক ও তাঁদের সহকারীর সংখ্যা ৮৫৫। সব মিলিয়ে এই চারটি ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণি (নারী, শিশু, পথচারী এবং চালক-সহকারী) মোট নিহতের প্রায় ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যা প্রমাণ করে দেশের সড়কে বিদ্যমান নিরাপত্তাকাঠামো সমাজের দুর্বলতম অংশকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা এখন আর বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়; বরং এটি একটি ভয়াবহ জাতীয় সংকট।

সড়কে নারী, শিশু, পথচারী এবং চালক-সহকারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন এবং এঁদের মৃত্যুর হারও বেশি।সড়কে প্রধান ঘাতক ‘মোটরসাইকেল’মহাসড়কে বিপজ্জনক বাঁকে কাছাকাছি দূরত্বে বাস-ট্রাক-মোটরসাইকেল। রংপুর নগরের হাজিরহাট এলাকায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের এই স্থানে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। তবু ওভারটেকিং করে চলাচল করছে যানবাহন

সম্পর্কিত নিবন্ধ