ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) হুমকি দেওয়ার অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী তাহমিনা সারমিনকে ‘মুজিববাদের সমর্থক’ দাবি করে তাঁকে প্রত্যাহারসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

আজ বুধবার দুপুরে আশুগঞ্জ প্রেসক্লাবের নাসির আহমেদ সম্মেলনকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এনসিপির উপজেলা শাখা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলটির উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম। এ সময় এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ মাহাদী, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য যুগ্ম আহ্বায়ক মো.

আতাউল্লাহ, জেলার প্রধান সমন্বয়কারী আজিজুর রহমান, জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী আকিব জাবেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ভূমি কার্যালয় চত্বরে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করে এনসিপি। অনুমতি ছাড়াই অনুষ্ঠান করতে গেলে সকালে এনসিপির নেতাদের বাধা দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)। এ সময় বাগ্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে ওই কর্মকর্তাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এনসিপির নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এনসিপির উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম, জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী আকিব জাবেদসহ অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ৩০ জনের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন কাজী তাহমিনা সারমিন।

আজ সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে এনসিপি নেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, গত ১৬ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতিচারণা ও মাগফিরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মাহফিলের স্থান হিসেবে উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের পাশে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ চত্বরে’ অনুমোদন চাওয়া হলে উপজেলা প্রশাসন অনুমতি দেয়। যাবতীয় নিয়মাবলি মেনে অনুষ্ঠানটি আয়োজনে ওই চত্বরকে স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে চত্বরটির নাম ছিল ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’। ৫ আগস্টের পর উপজেলা বিএনপি, জামায়াতের শীর্ষ নেতারাসহ গণ-অভ্যুত্থানে অংশীজনের পরামর্শে চত্বরটির নামকরণ করা হয় ‘মীর মুগ্ধ চত্বর’।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘৫ আগস্ট পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনের জন্য উপজেলা এনসিপির নেতারা চত্বরে অনুষ্ঠান আয়োজনের কাজ করতে গেলে এসি ল্যান্ড কাজী তাহমিনা সারমিন বাধা দেন এবং অনুষ্ঠান বন্ধ করার জন্য বলেন। এ সময় এসি ল্যান্ড বলেন, “বঙ্গবন্ধু চত্বরে জুলাইয়ের কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না। ৫ আগস্টে এই চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুরের সময় আপনারা কোথায় ছিলেন?” এরপরে তিনি এনসিপি নেতাদের গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়ে চলে যান। পরে সেই স্থানে দোয়া মাহফিল করতে কোনো আইনি বাধা না থাকায় আমরা সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী সেখানে দোয়া মাহফিল সম্পন্ন করি।’

লিখিত বক্তব্যে আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এখানে নিয়মিত শেখ পরিবারের জন্মোৎসবসহ রাজনৈতিক অনুষ্ঠান হতো। শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠানে এসি ল্যান্ড বাধা দিয়ে ক্ষান্ত হননি; সঙ্গে ফ্যাসিবাদের আইকন মুজিবের ম্যুরাল ভেঙে ফেলায় মর্মাহত হয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি মুজিববাদের একজন কট্টর সমর্থক হিসেবে প্রমাণ করেছেন। পরে আমরা জানতে পারি, এসি ল্যান্ড এনসিপি নেতাদের নামে আশুগঞ্জ থানায় কিছু মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এতে এনসিপির বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়। অনতিবিলম্বে মুজিববাদী এই এসি ল্যান্ডকে প্রত্যাহার ও তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য শেষে প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে অনুষ্ঠান করা, সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) বদলির হুমকি দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে এনসিপি নেতারা কোনো উত্তর দেননি। যোগাযোগ করলে জেলার সমন্বয়ক আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসি ল্যান্ড মৌখিক অনুমতি দিয়েছে। আমরা কি শহীদদের জন্য দোয়া মাহফিল করতে পারি না? উনি (এসি ল্যান্ড) অনুষ্ঠানের অনুমতি দেবে কেন? যারা রক্ত দিয়েছে, তাদের জন্য দোয়া মাহফিল করেছি। এখন আমাদের কী অনুমতি লাগবে? জেলা প্রশাসন বরাবর এ জন্য কী দরখাস্ত লাগবে?’

অভিযোগের বিষয়ে কাজী তাহমিনা সারমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫ আগস্টের সময় আমার দপ্তরে ভাঙচুর, চুরি ও লুটপাট হয়েছে। তখন আপনারা কোথায় ছিলেন বলেছিলাম, ম্যুরাল ভাঙচুর নিয়ে কোনো কথা বলিনি। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ৫ আগস্টের পর চুরি ঠেকাতে ও মাদকসেবীদের কাছ থেকে দপ্তর নিরাপদ রাখতে অস্থায়ী টিনের বাউন্ডারি দিয়ে রেখেছিলাম। কারণ, দপ্তরে চুরি হতো এবং মানুষ এসে নেশা করত।...যেখানে ম্যুরাল ভাঙা নিয়ে কোনো কথাই হয়নি, সেখানে মর্মাহত হব কেন? আর আমি এটি বলতে যাব কেন?’ তিনি বলেন, ‘তারা অনুষ্ঠান আয়োজনের কোনো অনুমতি নেয়নি। উল্টো ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে আমাকে বদলির হুমকি দিয়েছেন। এখন তাঁরা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোসহ অপসারণের দাবি করছেন।’

আরও পড়ুনআশুগঞ্জে সরকারি কার্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠান ঘিরে এসি ল্যান্ডের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বাগ্‌বিতণ্ডা, জিডি০৫ আগস্ট ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম ন ল ইসল ম সমন বয়ক র অন ষ ঠ ন ম জ বব দ র উপজ ল ৫ আগস ট এনস প র র জন য সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

কাল থেকে ‘তেল ছাড়া পরোটা’

আগামীকাল ৭ আগস্ট থেকে মাছরাঙা টেলিভিশনে শুরু হচ্ছে নতুন ধারাবাহিক নাটক ‘তেল ছাড়া পরোটা’। নাটকটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন কচি খন্দকার। প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার রাত আটটায় প্রচারিত হবে নাটকটি।
নাটকের গল্পে দেখা যাবে, সমাজে বসবাসকারী দুই ধরনের মানুষ। একদল বিশ্বাস করে উন্নতির জন্য তেল বা তোষামোদের বিকল্প নেই। অন্য দলটি তোষামোদবিমুখ, নীতির জায়গায় অটল থেকে লড়ে যায় প্রতিকূলতার সঙ্গে। এই দুই বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করে নাটকের দুটি পরিবার।

একটি পরিবার একসময় তিলের খাজার ব্যবসা করত। এখন তারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষমতাবানদের তোষামোদ করে বিশাল ব্যবসা গড়ে তুলেছে। তাদের ব্যবসা শর্ষের তেল, নারকেল তেলের। এমনকি পেট্রলের ব্যবসাও আছে। তাদের কোম্পানির নাম তিলের খাজা অয়েল মিল কোম্পানি লিমিটেড। অন্যদিকে রয়েছে আরেক পরিবার, যারা সহজ-সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তোষামোদ নয়, তারা নিজেদের নীতিতেই বিশ্বাসী। এই দুই পরিবারের মধ্যকার সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও সামাজিক সংঘাত নিয়েই এগোবে নাটকের কাহিনি।

‘তেল ছাড়া পরোটা’ নাটকের দৃশ্য

সম্পর্কিত নিবন্ধ