সরকারের চেষ্টা থাকবে সবচেয়ে ভালো নির্বাচন উপহার দেওয়া: প্রেস সচিব
Published: 7th, August 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রচুর সভা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেই গত এক মাসে দুটি সভা করেছেন। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আট লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এই সংখ্যা আরও ৫০ হাজার বাড়তে পারে। সেনাবাহিনী ৬০ হাজার সদস্য দেবে বলেছে। সেখানে আরও বেশি সদস্য লাগতে পারে।
সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলন করেন শফিকুল আলম। সেখানে এক সাংবাদিক আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি কেমন চলছে জানতে চাইলে প্রেস সচিব এ কথা বলেন।
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য কী জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। সরকারের চেষ্টা থাকবে সবচেয়ে ভালো একটি নির্বাচন উপহার দেওয়া। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন তাদের কাজ শুরু করেছে। প্রশাসন প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনা। তিনি (হাসিনা) যাতে ন্যায়বিচার পান, সেটি নিশ্চিত করা হবে। আল–জাজিরা ও বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তিনি কী করেছেন। প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিশ্ববাসী এখন তা জানে। সরকার আশা করে যে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসবেন এবং বিচারের মুখোমুখি হবেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সাংবাদিক জানতে চান, অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে আগামীকাল (৮ আগস্ট)। এ সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য কী?
আরও পড়ুনদ্বিতীয় অধ্যায় শুরু আজ থেকে, প্রধান কাজ সুষ্ঠু নির্বাচন: প্রেস সচিব১ ঘণ্টা আগেজবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আপনি যদি বিগত সময়ের সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে দেখবেন, অপরাধ ও খুন কম হচ্ছে। একটা–দুইটা খুন হলেই বলা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। প্রতি মাসে অপরাধ ও খুনের চিত্র তুলে ধরতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপনারা সেখান থেকে তথ্য নেন। দেখবেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কী।’
আর প্রশাসন ভেঙে পড়লে গত এক বছরে এত অর্জন হতো কি না, পাল্টা প্রশ্ন রাখেন শফিকুল আলম। তিনি অর্জনের হিসাব দিতে গিয়ে বলেন, শেখ হাসিনা পালানোর সময় দেশে খাদ্যের মজুত ছিল ১৮ লাখ টন। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ টনে। প্রথমবারের মতো ৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। ব্যাংক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। রিজার্ভ বাড়ছে। এসব কারা করছে? আমলাতন্ত্র করেছে। আমলাতন্ত্র ভেঙে পড়লে ছয়টি বন্যা মোকাবিলা করা সম্ভব হতো না।
এ সময় আরেক সাংবাদিক জানতে চান, পুলিশ যদি সক্রিয়ই হয়, তাহলে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামতে হলো কেন? তখন প্রেস সচিব বলেন, এ ধরনের অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন
আজ মহালয়া। সনাতন ধর্মের ভাষ্যমতে, দিনটি পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং দেবীপক্ষের সূচনার প্রতীক। মহালয়ায় হিন্দু সম্প্রদায় তাঁদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করেন, তাঁদের শান্তি কামনা করেন এবং একই সঙ্গে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানান।
মহালয়াকে কেবল আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান নয়; বরং সনাতনী সমাজের সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং সামাজিক সংহতির এক গভীর প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। ভোরের আলো আর শিশিরসিক্ত প্রভাতে এ মহালয়ার আচার আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রত্যেক প্রজন্মকে অতীতের শিক্ষার আলো ধরে সমাজের নৈতিক ও সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা প্রতিবছরের মতো এবারও ভক্তি, সংস্কৃতি ও সামাজিক সম্প্রীতির মিলনক্ষেত্র হিসেবে উদ্যাপিত হবে। এ উৎসবের মর্যাদা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র, সম্প্রদায় ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব।
দুঃখজনক হলেও সত্য, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অশুভ চক্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে প্রতিমা ভাঙচুরের মাধ্যমে অনৈতিক প্ররোচনা সৃষ্টি করছে। গত কয়েক দিনে কুষ্টিয়া, গাজীপুরসহ কয়েকটি জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে, যেটি উদ্বেগজনক। এ কর্মকাণ্ড শুধু ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করে না; বরং সমাজের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংহতিতেও ক্ষতি করে। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের ৫টি জেলাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ও ২৪টি জেলাকে মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ‘সম্প্রীতি যাত্রা’ নামের একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম। তাই দুর্গাপূজায় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়াই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তৎপরতা এ প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। কমিশনারের নেতৃত্বে ডিএমপি ইতিমধ্যে ২৫৮টি মণ্ডপে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্ত আছে মণ্ডপভিত্তিক পাহারা, পৃথক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, প্রতিমা বিসর্জনের দিন সার্বিক তৎপরতা, সিসিটিভি স্থাপন, অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রতিরোধে নজরদারি। এটি প্রমাণ করে, সামাজিক ন্যায় ও আইনশৃঙ্খলার অটল ভিত্তি রক্ষায় রাষ্ট্র সচেতন ও সংবেদনশীল ভূমিকা গ্রহণ করছে।
একইভাবে সারা দেশে প্রায় ৩০ হাজার মণ্ডপে নিরাপত্তার আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি মণ্ডপে পর্যাপ্ত পুলিশি পাহারা, সিসিটিভি নজরদারি, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা, জরুরি সেবা সংযোগ ও দর্শনার্থীদের সুশৃঙ্খল চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। তবে সরকারের একক তৎপরতা যথেষ্ট নয়, স্থানীয় কমিউনিটি, পূজা উদ্যাপন পরিষদ এবং সাধারণ নাগরিকদের সচেতন অংশগ্রহণ সমানভাবে অপরিহার্য। প্রতিটি মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রম এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।
দার্শনিকভাবে ভাবলে দুর্গাপূজা কেবল দেবীর আরাধনা নয়, এটি মানবসমাজের নৈতিক সংহতি ও সাম্প্রদায়িক ঐক্যের এক জীবন্ত প্রতীক। প্রতিমা ভাঙচুর বা অশুভ প্ররোচনার বিরুদ্ধে সক্রিয় তৎপরতা মানে কেবল আইন রক্ষা নয়; বরং সমাজের নৈতিক ক্ষেত্রও রক্ষা করা। নাগরিকের সচেতনতা ও রাষ্ট্রের সংহত তত্ত্বাবধানের সমন্বয় নিশ্চিত করলে উৎসবের মর্যাদা ও সামাজিক সম্প্রীতি অটুট থাকবে।
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রত্যেকের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব সুস্পষ্ট। সেটি হলো কেউ যেন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পবিত্রতা বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সূক্ষ্ম সূত্রকে বিপন্ন করতে না পারে। রাষ্ট্রের নীতি ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত কার্যক্রম যদি জনগণের সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার সঙ্গে মিলিত হয়, তবেই আমরা দেখতে পাব উৎসবমুখর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজার চিত্র। তখন এটি কেবল ধর্মীয় উৎসবের মহিমা বহন করবে না; বরং মানবসমাজের নৈতিক সংহতি, সাংস্কৃতিক ঐক্য ও সামাজিক সুষমতার স্থায়ী প্রতীক হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হবে।