‘কী অপরাধ আছিন আমার ছেলের, কেন এভাবে মারল’
Published: 8th, August 2025 GMT
‘আমার ছেলেডারে কেন এভাবে মারল, কী অপরাধ আছিন আমার ছেলের? আমি তো কোনো দিন কারও ক্ষতি করি নাই, আমার ছেলেও তো মানুষের ক্ষতি করত না। যে ছেলে দুই দিন আগে আমার ওষুধ কেনার টাকা পাঠাইল, সেই ছেলেই আজ হত্যার শিকার হইল। ওরা কেন এভাবে মারল ছেলেডারে?’
ছেলে হারানোর শোকে আহাজারি করতে করতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুরে হত্যাকাণ্ডের শিকার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের বাবা হাসান জামাল। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তাঁকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহত আসাদুজ্জামান ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামাল ও সাহাবিয়া খাতুন দম্পতির সন্তান। সাত ভাইবোনের মধ্যে আসাদুজ্জামান সবার ছোট ছিলেন। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আসাদুজ্জামানকে হত্যার আগমুহূর্তের কিছু সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানিয়েছে, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করেন। পেছন থেকে সেই দৃশ্য ভিডিও করছিলেন আসাদুজ্জামান। এই দৃশ্য ভিডিও করায় তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
আজ দুপুরে আসাদুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি ভাটিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে দাফনের জন্য বাঁশ কাটছিলেন কয়েকজন। বাড়ির কাছেই কবর খোঁড়া হয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। কবরে যেন বৃষ্টির পানি না জমে, সে জন্য ত্রিপল টানানো হয়েছে। বাড়িতে স্বজনেরা আহাজারি করছেন। বৃদ্ধ বাবা-মা সন্তানের শোকে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন।
আরও পড়ুনগাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান হত্যাকাণ্ডে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা, আটক ৫২ ঘণ্টা আগেনিহত ব্যক্তির স্বজনেরা জানান, আসাদুজ্জামান স্থানীয় আল-হেরা একাডেমি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের এম সাইফুর রহমান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় বসবাস শুরু করেন। সেখানে স্ত্রী মুক্তা বেগম ও দুই ছেলেসন্তানকে নিয়ে থাকতেন। গাজীপুরে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন এবং একটি ক্লিনিক ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। পাশাপাশি প্রতিদিনের কাগজ নামের একটি পত্রিকায় সাড়ে তিন বছর ধরে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পত্রিকাটির সম্পাদক খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে আমাদের সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। একজনকে আক্রমণের ভিডিও ধারণ করায় তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো। এ ঘটনার ন্যায়বিচার চাই। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইতিমধ্যে গাজীপুরের বাসন থানায় অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
আজ বিকেলে আসরের নামাজের পর জানাজা শেষে সাংবাদিক আসাদুজ্জামানের লাশ দাফন করার কথা।
আরও পড়ুনপ্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা১৯ ঘণ্টা আগেগাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামানকে হত্যার প্রতিবাদে নিজ এলাকা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকদেরা। আজ বেলা ১১টায় ফুলবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের সামনে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব দ ক আস দ জ জ ম ন আম র ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
এক দিন রিকশা চালান, আরেক দিন কারুপণ্য বানান ময়মনসিংহের জাহাঙ্গীর
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মনতলা গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম (৩৫)। পেটের তাগিদে রিকশা চালান। আর মনের খোরাক জোগাতে নান্দনিক সব কারুপণ্য বানান। বাঁশ ও নারকেলের মালা দিয়ে তৈরি করেন নান্দনিক সব কারুপণ্য। শখের বশে শুরু করলেও এখন এসব বিক্রি করেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন, নিজের এসব কারুপণ্য বিদেশে বিক্রির।
স্ত্রী জান্নাত আক্তার, ৯ ও দুই বছর বয়সী দুই মেয়ে নিয়ে জাহাঙ্গীরের সংসার। ২০০৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর নানা পেশা পাল্টে এখন রিকশা চালান জাহাঙ্গীর। ময়মনসিংহ নগরে এক দিন পরপর রিকশা চালান। যেদিন বাড়িতে থাকেন, সেদিন কারুপণ্য তৈরি করেন।
সম্প্রতি নগরের কাছারিঘাটে চলা বাণিজ্য মেলায় ঢুকে দেখা যায়, একটি টেবিলে বাঁশ ও নারকেলের মালা দিয়ে তৈরি কারুপণ্য সাজিয়ে বসে আছেন জান্নাত আক্তার। রাস্তা দিয়ে চলা মানুষ এসে দাঁড়াচ্ছেন, আর কারুপণ্য দেখছেন। অনেকে দরদাম করছেন, কেউ কেউ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
হৃদয় মাহমুদ নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘নারকেলের খোসাকে আমরা আরছি বলি। এগুলো ফেলে দেওয়া ছাড়া কোনো কাজ নেই। কিন্তু এই আরছি দিয়ে ফুল, গাছ, টব কত–কী তৈরি করা হয়েছে। সত্যি মুগ্ধ হওয়ার মতো!’
সম্প্রতি মনতলা গ্রামে জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে রোদে শুকাচ্ছেন নারকেলের মালা। উঠানে নিজের তৈরি পণ্য রোদে দিয়ে সেগুলো পরিষ্কার করছিলেন। বাঁশের তৈরি কলমদানি, ব্রাশহোল্ডার, ফুলের টব, ওয়ালমেট, দেয়ালঘড়ি, কাপ, ল্যাম্প, চামচসহ কত–কী আছে সেখানে!
জাহাঙ্গীর আলম ২৫ থেকে ৩০ ধরনের পণ্য বানান বলে জানান