কে এই লরেন্স বিষ্ণোই? সালমান খানের সঙ্গে কিসের শত্রুতা?
Published: 9th, August 2025 GMT
সালমান খান। পর্দায় গ্যাংস্টার কিংবা খলনায়কের সঙ্গে লড়াই করেছেন বহুবার। শেষ পর্যন্ত হয়েছেন জয়ী। নায়ক সব সময় জিতবেন। নায়ক হারতে পারেন না। ‘রাধে’, ‘চুলবুল পান্ডে’ বা ‘টাইগার’-এর মতো সব চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক মাতিয়ে রেখেছেন। আবার ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ থেকে হয়ে গেছেন সবার ভাইজান। সেই ভাইজান এখন বাস্তবে লড়ছেন। লড়ছেন একজন গ্যাংস্টারের বিরুদ্ধে। গেল বছর এপ্রিল মাসে সালমান খানের বাড়িতে গুলি চালানো হয়েছে। অবশ্য যে দুজন গুলি চালিয়েছিলেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে বাড়ানো হয় সালমান খানের নিরাপত্তা।
এখানে শেষ নয়। এক মাসের ব্যবধানে ভারতীয় অভিনেতা কপিল শর্মার কানাডার রেস্তোরাঁয় দুইবার হামলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ভোরে সারে শহরে কপিলের রেস্তোরাঁ কপ'স ক্যাফেতে অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীরা গুলি চালায়। রেস্তোরাঁটির দিকে প্রায় ২৫টি গুলি চালানো হয়, যার মধ্যে অন্তত ছয়টি গুলি দেয়াল ও জানালায় লাগে। এক অডিও বার্তায় হামলার দ্বায় স্বীকার করেছে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং। সালমান খানের সঙ্গে কপিলের ঘনিষ্টতার কারণেই এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। লরেন্স বিষ্ণোইয়ের ঘনিষ্ঠ গোল্ডি ব্রারের সহযোগী গোল্ডি ঢিল্লন এ হামলার দায় স্বীকার করেছেন।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কে এই লরেন্স বিষ্ণোই? কেন তাঁর সালমান খানের সঙ্গে শত্রুতা?
ঘটনার শুরু
১৯৯৮ সালের ঘটনা। ভারতের যোধপুরে সালমান খান গিয়েছিলেন পুরো ইউনিট নিয়ে শুটিং করতে। ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ সিনেমার শুটিং চলাকালে ঘটনাক্রমে দুটি কৃষ্ণকায় হরিণ হত্যা করেন সালমান খান। মামলা করে বিষ্ণোই সম্প্রদায়। বিরল প্রজাতির এই হরিণকে বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের মানুষ অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করেন। মামলাটির পেছনে তাঁদের ক্রমাগত লেগে থাকার কারণে ২০ বছর পর ২০১৮ সালে এসে পাঁচ বছরের জেল হয় সালমানের। পরে অবশ্য জামিনে মুক্তি পান তিনি। সেখানেই ঘটনার সমাপ্তি ঘটতে পারত, কিন্তু তা হয়নি।
কৃষ্ণকায় হরিণ ও বিষ্ণোই সম্প্রদায়
প্রশ্ন জাগতেই পারে, কৃষ্ণকায় হরিণ হত্যার সঙ্গে বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের সম্পর্ক কী? তারা কেন মামলা করেছে? কেনই-বা লরেন্স বিষ্ণোই ও তাঁর গ্রুপ এত বছরের ঘটনা বয়ে চলেছে?
এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, বিষ্ণোই সম্প্রদায় ভারতের প্রভাবশালী একটি সম্প্রদায়। তারা কয়েক শ বছর ধরে অক্ষরে অক্ষরে ২৯টি রীতি মেনে চলার চেষ্টা করে। সেসব রীতির মধ্যে প্রকৃতির সুরক্ষা, বৃক্ষ রক্ষা, জঙ্গলের প্রাণী রক্ষা অন্যতম। এ সম্প্রদায় যে কৃষ্ণকায় হরিণকে পবিত্র হিসেবে গণ্য করে, সেই হরিণই হত্যা করেছেন সালমান। যা তাদের ভাবাবেগে আঘাত করেছে। বিলুপ্তপ্রায় এই কৃষ্ণকায় হরিণ চিংকার নামেও পরিচিত।
কে এই লরেন্স বিষ্ণোই
৩১ বছরের লরেন্স বিষ্ণোই প্রায় দুই ডজন হত্যা ও চাঁদাবাজির মামলায় আটক হয়ে বর্তমানে ভারতের তিহার জেলে বন্দী। পাঞ্জাবের ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ফাজিলকা জেলার দত্তরানওয়ালি গ্রামে লরেন্সের জন্ম। গ্রামটিতে বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অভিজাততন্ত্র থেকে কি আমাদের মুক্তি নেই
স্বাধীনতার পরের ৫৪ বছরে এবং ছয়টি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের (১৯৭৫, ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০৭ ও ২০২৪) পরেও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মৌল চরিত্র ‘গণপ্রজাতন্ত্র’ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বরং এই রাষ্ট্র ক্রমেই একটি অভিজাততন্ত্ররূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এ পরিচয়ে রাষ্ট্রকাঠামো শক্তিশালী হয়েছে, হচ্ছে এবং হয়তো ভবিষ্যতেও হতে থাকবে।
অভিজাততন্ত্রের রূপ একেক দেশে একেক রকম। বাংলাদেশে অভিজাততন্ত্রে যুক্ত রয়েছে রাজনৈতিক অভিজাত পরিবার, বৃহৎ করপোরেট প্রতিষ্ঠান, চিহ্নিত আমলা, আইনশৃঙ্খলা ও প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত কয়েকজন সদস্য, বিদেশি প্রভাবশালী গোষ্ঠী ইত্যাদি। দশকের পর দশক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকাকালে অভিজাততন্ত্রের বিকাশ ঘটেছে। পাশ্চাত্যের মূল্যবোধকেন্দ্রিক অভিজাত শ্রেণি বাংলাদেশে স্বার্থকেন্দ্রিক অভিজাত শ্রেণিতে পরিণত হয়েছে।
ক্ষমতার আসল উৎস কোথায়প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার উৎস জনগণ—এ কথা সংবিধানে বলা হলেও বাংলাদেশে সব ক্ষমতার উৎস কয়েকটি অভিজাত গোষ্ঠী। এই শ্রেণির অবস্থান সরকারে, সরকারের বাইরে, প্রশাসনে, সিভিল সোসাইটিতে, দেশের বাইরে বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীতে। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে ও সরকারের বাইরে বিরোধী পক্ষ হিসেবে যাদের দায়িত্ব পালন করার কথা, বেসরকারি খাত হিসেবে যাদের প্রতিনিধিত্ব করার কথা, তারা প্রকৃত অর্থে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেনি। বরং জনগণের নামে নিজের এবং অন্য কারও স্বার্থ রক্ষায় এরা ব্যস্ত। ফলে জনসাধারণ প্রতিনিয়ত বঞ্চিত, প্রতারিত হচ্ছে।
বঞ্চিত ও প্রতারিত জনগণের এমন অবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর উপায় সীমিত। রাষ্ট্রের দুর্বল অর্থনৈতিক ভিত্তি, দুর্বল মূল্যবোধ, দুর্বল নীতি, আইনের শাসনের অভাব, কালোটাকা ও পেশিশক্তির দাপটে সব সরকারের সময়েই জনগণ অভিজাততন্ত্রের বাস্তবতা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। সরকারপ্রধান জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হলেও মূলত অভিজাত শ্রেণির হয়েই কাজ করেন। তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নির্দেশে মন্ত্রিপরিষদ, আমলা, পদধারী ও সুবিধাভোগী সবাই নির্ধারিত হন। ফলে জনগণের সর্বময় ক্ষমতা নির্ধারিত হয় সরকারপ্রধান দ্বারা, তাঁর মর্জিমাফিক।
জনসংখ্যার একটা বড় অংশ আছে অভিজাততন্ত্রের বাইরে