নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ার পর সাতজন নিহত হওয়ার ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে। মামলাটিতে মাইক্রোবাসটির চালককে আসামি করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে বেগমগঞ্জ থানায় মামলাটি করা হয়।

এর আগে গত বুধবার ভোরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আলাইয়াপুর এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। মাইক্রোবাসটিতে মোহাম্মদ বাহার উদ্দিন নামে এক ওমানপ্রবাসীকে নিয়ে তাঁর স্বজনেরা লক্ষ্মীপুর সদরের উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাসটি খালে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই সাতজন নিহত হন। তাঁরা হলেন বাহারের নানি ফয়জুন নেসা (৮০), মা খুরশিদা বেগম (৫৫), স্ত্রী কবিতা বেগম (৩০), মেয়ে মীম আক্তার (২), ভাবি লাবনী বেগম (৩০), ভাতিজি লামিয়া আক্তার (৯) ও রেশমি আক্তার (১০)।

পুলিশ জানায়, রাতে বেগমগঞ্জ থানায় দায়ের হওয়া মামলাটির বাদী ওমানপ্রবাসী মোহাম্মদ বাহার উদ্দিনের বাবা আবদুর রহিম। এ মামলায় মাইক্রোবাসের চালক ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের চরচামিতা এলাকার পাটওয়ারী বাড়ির মৃত ফয়েজ আহমেদের ছেলে এনায়েত হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। চালককে সতর্ক করার পরও চোখে ঘুম ভাব নিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনায় সাতজনের প্রাণহানি হয়েছে বলে অভিযোগ নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের।

মামলার বিষয়টি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সাতজন নিহত হওয়ার ঘটনায় মাইক্রোবাসের চালককে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলার পরবর্তী কার্যক্রম চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার পুলিশ দেখবে

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব গমগঞ জ র ঘটন য় স তজন

এছাড়াও পড়ুন:

এক পরিবারে একই দিনে সাত কবরের শোক

এক পরিবারে একই দিনে খোঁড়া হয়েছে সাত কবর। তাদের দাফনের প্রস্তুতি চলছে। জানাজা শেষে ওই কবরে শুইয়ে দেওয়া হবে তাদের। এই শোকে বিমর্ষ-বিমূঢ় পরিবারটি; শোকে স্তব্ধ এলাকাবাসী।

মঙ্গলবার গভীর রাতে ওমান থেকে ফেরা লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম চওপল্লী গ্রামের বাহার উদ্দিনের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমেছে। তাকে আনতে ঢাকায় গিয়ে ফেরার পথে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আলাইয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাড়ির রাস্তার মাথায় বুধবার (৬ আগস্ট) ভোরে দুর্ঘটনায় নিহত হন তার পরিবারের সাতজন।

বাহার উদ্দিন বলছেন, তাদের বহনকারী হায়েস গাড়ির চালকের ঘুমের কারণে এই দুর্ঘটনায় পড়েন তারা। গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খালে গিয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই সাতজন মারা যান।

আরো পড়ুন:

‘চালকের ঘুমই’ চিরঘুমে পাঠাল সাতজনকে

আশুলিয়ায় উল্টো পথে চলা রিকশাকে চাপা দিল লরি, নিহত ৩

নিহত সাতজনের পরিচয় জানিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন: বাহার উদ্দিনের মা মোরশিদা (৫৫), স্ত্রী কবিতা (২৪), মেয়ে মিম (২), নানি ফয়জুন্নেছা (৮০), ভাবি লাবনী (৩৩), ভাতিজি রেশমী (৮) ও লামিয়া (৯)।

নিহতদের মধ্যে বাহারের নানি ফয়জুন্নেছার দাফনের প্রস্তুতি চলছে তার গ্রামের বাড়িতে। আর ছয়জনের কবর খোঁড়া হয়েছে পশ্চিম চওপল্লী গ্রামে।

হায়েস গাড়ি খালে পড়ে যাওয়ার পর এলাকাবাসীর সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মরদেহগুলো উদ্ধার করেন। 

উদ্ধারকারীরা বলেছেন, খালে পড়ে গাড়িটি পানিতে ডুবে যায়।

বাহার উদ্দিন, তার শ্বশুর ও আরো দুজন বেঁচে আছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর মধ্যে বাহার বাড়ি ফিরেছেন। অন্য তিনজনের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে।

বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন বাহার।

ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা হয় তার। সেখানে আগে থেকে ঠিক করে রাখা হায়েস গাড়িটি প্রস্তুত ছিল। তবে চালককে তিনি বলেছিলেন, এত রাতে না গিয়ে ভোরে রওনা দিলে ভালো হতো।

তবে চালক বাহারের কথা শোনেননি। আস্তে-ধীরে চালানোর কথা বলে রওনা হন চালক। পথের মধ্যে চালককে ঘুমে ঢলে পড়তে দেখে তাকে বিশ্রাম নিতে পরামর্শ দিলেও চালক তা উপেক্ষা করে গাড়ি চালাতে থাকেন। এই ঘুমের কারণেই দুর্ঘটনা হয়েছে বলে অভিযোগ তার।

বাহার বলেন, “তিন বছর পর দেশে ফিরলাম। পরিবারের সবাই আমাকে আনতে গিয়েছিল। এখন তারা কেউ নেই। আমি একা হয়ে গেলাম।”

ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানান চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মোবারক হোসেন। 

ঘটনাস্থল থেকে বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি মো. লিটন দেওয়ান বলেন, “রেকারের সাহায্যে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটি খাল থেকে তোলা হয়েছে। ঘটনাস্থলে আর কোনো মরদেহ নেই।”

বাহারের স্বজনদের মাতমে ভারী হয়ে উঠেছে পশ্চিম চওপল্লী গ্রাম। একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ঢাকা/লিটন/রাসেল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাতজনের মৃত্যু, মাইক্রোবাস চালকের বিরুদ্ধে মামলা
  • এমন করুণ দশায় থাকবে উপজেলাটি?
  • চালকের ‘ঘুমে’ নিহত ৭, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়নি
  • এক মাস ধরে পানির নিচে সড়ক-উঠান, ভোগান্তিতে মানুষ
  • এক পরিবারে একই দিনে সাত কবরের শোক