ভারত কি চীনের সামুদ্রিক ‘উঠানে’ ঢুকে পড়ছে
Published: 9th, August 2025 GMT
গত সপ্তাহে ভারত ও ফিলিপাইন পশ্চিম ফিলিপাইন সাগরে যৌথ নৌ মহড়া চালিয়েছে। এ সাগর আসলে দক্ষিণ চীন সাগরেরই একটি অংশ। এ অংশকে চীন তার নিজের সমুদ্রসীমানা বলে দাবি করে।
অনেক সংবাদমাধ্যম বলেছে, এই প্রথমবার নাকি ভারত ও ফিলিপাইন একসঙ্গে এখানে মহড়া করল। কিন্তু সত্যি কথা হলো ২০২১ সালেও তারা এই একই এলাকায় মহড়া করেছিল।
তবে এবারের মহড়া আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বেশ ফলাও করে প্রকাশ পেয়েছে। কারণ, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের ভারতের সরকারি সফরের ঠিক আগেই এ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ফলে এর রাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়ে যায়।
কেন এই মহড়া আলোচনায়ভারত দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সমুদ্র বিরোধে সরাসরি জড়ায়নি। যদিও ভারত সব সময় বলে এসেছে, সমুদ্রপথে অবাধ চলাচল ও আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলা জরুরি। তবু বাস্তবে সে অঞ্চলে তার উপস্থিতি ছিল সীমিত ও অনেকটা প্রতীকী। তাই এবারকার মহড়াকে অনেকে ভারতের নীতি বদলের ইঙ্গিত মনে করছেন।
মনে হচ্ছে যেন ভারত বেইজিংয়ের সামুদ্রিক ‘উঠানে’ পা বাড়াতে যাচ্ছে।
তবে সবাই তা মনে করেন না। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এ মহড়া ভারতের বড় ধরনের কৌশল পরিবর্তন নয়; বরং এটি নিয়মিত বিদেশি নৌ মোতায়েনের অংশ হতে পারে। এ মহড়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বন্ধুত্ব ও সংহতির বার্তা দেওয়া, চীনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করা নয়।
প্রকৃতপক্ষে এ উদ্যোগ এসেছে ফিলিপাইনের দিক থেকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের সঙ্গে ম্যানিলা নিরাপত্তা সম্পর্ক মজবুত করেছে। এবার তারা ভারতকেও সেই তালিকায় আনল। উদ্দেশ্য, সরাসরি সংঘাতে যাওয়া নয়; বরং চীনের আগ্রাসন ঠেকাতে একধরনের ‘বড় জোট’ তৈরি করা।
ফিলিপাইনের সেনাপ্রধান জেনারেল রোমিও ব্রাউনর বলেছেন, এ যৌথ টহল হলো একধরনের প্রতিরোধ কৌশল যাতে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করে সমুদ্রের শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য মিত্রদের সঙ্গে ফিলিপাইনের টহল দেওয়ার উদ্দেশ্য যেখানে বেশি সামরিক কৌশলভিত্তিক, ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা সেখানে ভিন্ন। ভারত কোনো সামরিক জোটের অংশ নয়, দেশটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সেনা রাখে না এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনকে ঘেরাও করার পরিকল্পনাও তার নেই। কিন্তু ভারত পাশে থাকলে ফিলিপাইনের কাছে সেটি একটি প্রতীকী সমর্থন। এতে মনে হবে, প্রচলিত জোটের বাইরে থেকেও ভারত ফিলিপাইনের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
চীন-ফিলিপাইন দ্বন্দ্বচীনের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ শুধু ফিলিপাইনের সঙ্গে নয়, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, এমনকি তাইওয়ানের সঙ্গেও রয়েছে। কিন্তু ফিলিপাইনের ক্ষেত্রে বিরোধটা বেশি জটিল।
চীন মনে করে, ফিলিপাইন ইচ্ছাকৃতভাবে দক্ষিণ চীন সাগরের ইস্যুকে আন্তর্জাতিক করছে। যুক্তরাষ্ট্রকে ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া চীনের কাছে উসকানি। সম্প্রতি ফিলিপাইনের লিথুয়ানিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তিকেও চীন অপমানজনক মনে করেছে।
ফলে অবাক হওয়ার কিছু নেই, মহড়ার সময় চীনা জাহাজ ভারত ও ফিলিপাইনের যুদ্ধজাহাজের ওপর নজরদারি করেছে। যদিও কোনো সংঘর্ষ ঘটেনি।
ভারত এ অঞ্চলে কিছুটা আলাদা কৌশল মেনে চলে। ভারত সব সময় বলেছে, সমুদ্রপথে অবাধ চলাচল ও বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান জরুরি। উপস্থিতি দেখানো দরকার হলেও ভারত খুব হিসাব করে পদক্ষেপ নেয়, যেন তা প্ররোচনামূলক না হয়। ভারত জানে, এ বিরোধে তার সরাসরি কোনো অংশ নেই, তাই সংঘাতে জড়াতে চায় না।
ভারত বোঝে চীনের এখানে সামরিক সুবিধা অনেক বেশি। কৃত্রিম দ্বীপে শক্তিশালী ঘাঁটি, গুরুত্বপূর্ণ জলপথের নিয়ন্ত্রণ—এসবের কারণে চীন চাইলে বিদেশি নৌবাহিনীকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে।
ভারত ও চীন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একধরনের ‘ভারসাম্যের চুক্তি’ মেনে চলে। হিমালয় সীমান্ত ও ভারত মহাসাগরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও উভয়েই চেষ্টা করে যেন একে অপরের কাছাকাছি সমুদ্রে উসকানিমূলক পদক্ষেপ না নেয়। এ কৌশল ১০ বছর ধরে মোটামুটি কার্যকর থেকেছে। চীনের ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি বাড়ছে বটে, কিন্তু তা এখনো ভারতের জন্য সরাসরি সংকট নয়।
ফিলিপাইন-ভারত সম্পর্কসম্প্রতি ভারতের সঙ্গে ফিলিপাইনের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক অনেক বেড়েছে। এর বড় উদাহরণ ব্রহ্মস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি। ভারত এখানে নিজেকে চীনের বিরোধী হিসেবে নয়; বরং একজন নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করছে।
মালাক্কা প্রণালি দিয়ে ভারতের প্রচুর পণ্য আনা-নেওয়া হয়। তাই ভারত এ অঞ্চলে নিজের উপস্থিতিকে মূলত বাণিজ্য, যোগাযোগ আর ভালো সম্পর্ক গড়ার বিষয় হিসেবে তুলে ধরে। তবে যদি চীন আন্দামান সাগরে সেনাঘাঁটি বানায় বা ভারত মহাসাগরে স্থায়ী ঘাঁটি গড়ে ফেলে, তখন ভারত অবশ্যই দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে তার নীতি বদলাবে। কিন্তু এখনই এমন হওয়ার সম্ভাবনা কম।
এ মহড়া মূলত একটি প্রতীকী পদক্ষেপ। এ মহড়া বলে দিচ্ছে, ভারত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা চায় এবং চাপে থাকা এক বন্ধুর পাশে আছে। এটা কোনো যুদ্ধের প্রস্তুতির বার্তা নয়; বরং নৌ অভিনয়ের মাধ্যমে কূটনৈতিক সংহতির প্রকাশ।
অভিজিৎ সিং ভারতের একজন অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনীর কর্মকর্তা এবং ভারতের নয়াদিল্লিভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন বা ওআরএফের সামুদ্রিক নীতি উদ্যোগের সাবেক প্রধান। তিনি মূলত সামুদ্রিক নিরাপত্তা, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এবং নৌ–নীতি নিয়ে লেখালিখি ও গবেষণা করেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ল প ইন র উপস থ ত এ মহড়
এছাড়াও পড়ুন:
আমলকী ও ডালিমের রস একসঙ্গে খেলে পাবেন এই চার উপকার
আমলকী ও ডালিমে আছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট–জাতীয় অন্যান্য উপাদান। সুস্থতার জন্য অপরিহার্য এসব উপাদান যখন একই পানীয় থেকেই পেয়ে যাবেন, তখন পাবেন এসব উপকার—
বাড়বে রোগ প্রতিরোধক্ষমতারোগজীবাণুর আক্রমণ থেকে প্রাথমিক সুরক্ষা পাওয়ার জন্য আপনাকে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি গ্রহণ করতে হবে রোজ। এমনকি ঠান্ডা-কাশি উপশমে প্রদাহ কমাতে কাজে আসে ভিটামিন সি। ক্ষত সারাতেও সাহায্য করে এই ভিটামিন। আমলকী আর ডালিমের রস থেকে আপনি এসব উপকার পাবেন।
হৃৎপিণ্ড থাকবে সুস্থঅ্যান্টি–অক্সিডেন্ট–জাতীয় উপাদান থাকার কারণেই এই পানীয় আমাদের রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। আমাদের দেহে প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে।
দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহের কারণে রক্তনালীর ভেতর নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটতে পারে। প্রদাহ এবং কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রার কারণে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। অ্যান্টি–অক্সিডেন্টে ভরপুর আলমকী ও ডালিমের পানীয় পরোক্ষভাবে আপনার হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুনকোন পানীয় কখন আপনার কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে২৮ এপ্রিল ২০২৫ত্বক হবে কোমলবয়সজনিত কারণে ত্বকে যেসব পরিবর্তন হয়, সেসব সামলাতে প্রয়োজন ভিটামিন সি। কারণ, আমাদের ত্বক কোলাজেন নামের যে প্রোটিন দিয়ে গঠিত, সেই প্রোটিন তৈরির জন্য ভিটামিন সি আবশ্যক।
ত্বকের স্বাভাবিক স্থিতিস্থাপকতা এবং কোমলতা ধরে রাখতে তাই খেতে হয় ভিটামিন সি। তাতে বলিরেখার হারও কমে। বুঝতেই পারছেন, আমলকী আর ডালিমের রস ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে কতটা উপকারী।
মস্তিষ্কের ওপর প্রভাবঅ্যান্টি–অক্সিডেন্ট–জাতীয় উপাদান মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী। মস্তিষ্কের প্রদাহ কমাতে সহায়ক। মস্তিষ্ককে সতেজ রাখতে এবং স্মৃতিভ্রমের ঝুঁকি কমাতে আমলকী আর ডালিমের রস খেতে পারেন মাঝেমধ্যেই।
আরও পড়ুনএই ৪ পানীয় আর্টারি প্লাক দূর করতে সহায়ক, শুনুন চিকিৎসকের পরামর্শ২৩ অক্টোবর ২০২৫