Prothomalo:
2025-09-24@07:23:27 GMT

ঘর বাঁচল পাখিগুলোর

Published: 24th, September 2025 GMT

দিনটা ছিল গত ৭ জুন। ভারী বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টির পানিতে ঢাকার আশপাশের ডোবা-নালা পানিতে টইটম্বুর। চারদিকে গাছপালাগুলো সতেজ সবুজ। এ সময় পাখিদের বাসা বানানোর ভরা মৌসুম। পাখিরা তাদের সংসার নিয়ে খুব ব্যস্ত। এবার বেশ কয়েকটা পাখির বাসা রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মেট্রোরেল ডিপোর দক্ষিণ পাশের একটি বালুর ঢিবিতে দেখা গেছে। এর একটি বাসা ধলাবুক মাছরাঙার। বাকিগুলো নীললেজ সুইচোরার। সম্ভবত এই সুইচোরাদের একটি বাসা দখল করে মাছরাঙারা সংসার পেতেছে। বাসাগুলোর সন্ধান পেয়েছেন আমার বন্ধু আসকার ইবনে ফিরোজ। তিনি আমাকে পাখির খোঁজখবর দেন। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ঢাকার পাখির ওপর একটি তথ্যচিত্র বানাচ্ছেন। নাম দিয়েছেন ঢাকার পাখি: ছোট হয়ে আসছে আকাশ। এ কাজ করতে গিয়েই বাসাগুলোর দেখা পান তিনি।

বৃষ্টি কমার লক্ষণ না থাকায় আসকারের মনে হলো, মাছরাঙা ও সুইচোরার বাসাগুলো হয়তো ডুবে যাবে। আর তা ঘটলে ব্যাপারটা খুব খারাপ হবে। চোখের সামনে পাখিগুলোর সংসার শেষ হয়ে যাবে! ভয়ে ভয়ে ৭ জুনই বালুর মাঠে গিয়ে দেখা গেল, এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে বাসাগুলো ডুবে যেতে পারে। কোনো কিছু না ভেবে পানি কমানোর জন্য সেচযন্ত্র লাগানো হলো। ১০ ও ১১ জুন—দুই দিনে পানি সেচে রক্ষা করা হলো পাখিগুলোর বাসা।

সুইচোরারা এ রকম বালুর ঢিবিতে নিয়মিতই বাসা করে থাকে। ঢাকায় এ রকম জায়গা নেই বললেই চলে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ তাদের কাজের জন্য বালুর স্তূপ করে রেখেছিল। দূর থেকে দেখলে মনে হবে ছোট ছোট বালুর টিলা। সেখানেই কয়েক বছর ধরে সুইচোরারা নিয়মিত বাসা করছে। এ বছর বালুর ঢিবির উচ্চতা কমে গেছে। তারপরও সুইচোরারা সরে যায়নি। জায়গাটিকে নিরাপদ ভেবে বাসা করে। সঙ্গে একটি মাছরাঙাও নির্ভয়ে বাসা বাঁধে। গত ২০ এপ্রিল মাছরাঙাটি জোড়া বাঁধে ও সংসার সাজায়। মে মাসের শেষ ভাগে এই সংসারে আসে চারটি বাচ্চা। বাচ্চাগুলোকেই মা-বাবা যত্ন করে খাবার এনে খাওয়াচ্ছিল। তারপরই এল সেই বৃষ্টি এবং বেধে গেল বিপত্তি।

ধলাবুক মাছরাঙা ও নীললেজ সুইচোরা দুটি প্রজাতিই বাংলাদেশে সহজেই দেখা যায়। সুইচোরারা মূলত নদীর বালুচরে ও অথবা নদীর কিনারায় দলে দলে বাসা করে। একসঙ্গে নদীতীরে অর্ধশত বাসাও আমি দেখেছি। তবে ঢাকায় এই পাখির একসঙ্গে এতগুলো বাসার খবর প্রথম শুনলাম আসকারের কাছ থেকে। অন্যদিকে মাছরাঙারা দল বেঁধে বাসা করে না। একা একা সংসার করে এবং নিভৃতে বাচ্চা ফোটায়।

সেদিন তো বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেল মাছরাঙা ও সুইচোরার সংসার। আসকার পানি সেচার কাজ না করলে হয়তো বাচ্চাগুলো মারা পড়ত! আমরা কোনোরকমে রক্ষা করতে পেরেছি পাখিগুলোর বাসা। অন্য কোনো জায়গার খবর আমাদের জানা নেই। হয়তো এ রকম ঘটনা আরও ঘটছে; আমরা কেউ তা খেয়াল করি না!

ঢাকার পাখির আকাশ আসলেই ছোট হয়ে আসছে। চারপাশটা শুধু মানুষেরই জন্য। ঢাকা শহর অন্য প্রাণীর জন্য একটুখানি জায়গাও নেই। কেউ এটা নিয়ে চিন্তাও করে না। এ শহরের কোটি মানুষের জন্য শত শত হাসপাতাল আছে, অথচ প্রাণীদের জন্য হাসপাতাল তো দূরের কথা, একটি বাসা করার জন্য একটুখানি নিরাপদ জায়গাও নেই!

সুইচোরা ও মাছরাঙারা এ বছর কোনোরকমে বেঁচে গেছে। তাদের ‘ঘর’ আলো করে এসেছে ফুটফুটে বাচ্চা। বাচ্চাগুলো এখন বড় হয়ে উড়তে শিখেছে। মা-বাবাকে ছেড়ে বাচ্চাগুলো আলাদা হয়ে গেছে। আগামী বছর এই বালুর মাঠ থাকবে কি না, আমাদের জানা নেই। অথবা বালুর ঢিবির উচ্চতা হয়তো আরও কমে যাবে। আর তা হলে এ এলাকা থেকে সরে পড়বে প্রিয় দুই পাখি—মাছরাঙা ও সুইচোরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য আসক র র একট

এছাড়াও পড়ুন:

গর্ভবতী নারীদের প্যারাসিটামল না খাওয়ার পরামর্শ ট্রাম্পের, চিকিৎসকদের তীব্র প্রতিক্রিয়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গর্ভবতী নারীদের জনপ্রিয় ব্যথানাশক ওষুধ টাইলেনল, যা প্যারাসিটামল নামেও পরিচিত, এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই ওষুধটির সঙ্গে অটিজমের সম্পর্ক থাকতে পারে।

এদিকে, ট্রাম্পের এমন মন্তব্য চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে। কারণ প্যারাসিটামলের সঙ্গে অটিজমের সংযোগ এখনও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণত নয়। 

আরো পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূস নিজের স্বার্থে পার্টিগুলোকে ব্যবহার করছেন, দাবি সামান্তার

নির্বাচনের জন্য দেশ প্রস্তুত: প্রধান উপদেষ্টা

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এফডিএ) সম্প্রতি ঘোষণা দেয় যে, প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের প্যাকেজে এমন এক লেবেল যুক্ত করা হবে, যেখানে উল্লেখ থাকবে যে এই ওষুধ শিশুদের অটিজম ও অতি-চঞ্চলতা বা মনোযোগহীনতার (এডিএইচডি) ঝুঁকি বাড়াতে পারে। 

এই সতর্কবার্তার পরপরই ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “টাইলেনল খাবেন না। খাবেন না। যেভাবেই হোক খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।” তবে তিনি আরো বলেন, “কখনো কখনো হয়তো এই ওষুধ খেতে হতে পারে। তখন সেটা নিয়ে আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” 

ট্রাম্প শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়া নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন যে, হাম, মামস ও রুবেলার মতো টিকা একসঙ্গে না দিয়ে আলাদা আলাদা দেওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমার মতে, হাম, মামস ও রুবেলা- তিনটি টিকা আলাদাভাবে দেওয়া উচিত। এগুলো একসঙ্গে নিলে সমস্যা হতে পারে।”

এদিকে, ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন। আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস ও আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টস দীর্ঘদিন ধরে প্যারাসিটামলকে গর্ভাবস্থায় নারীদের জন্য নিরাপদ ওষুধ হিসেবে সুপারিশ করে আসছে।

বিশ্বজুড়ে প্রায় অর্ধেক গর্ভবতী নারী ব্যথা কমানো বা জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল সেবন করেন বলে ধারণা করা হয়।বিভিন্ন দেশে এই ওষুধ ডাইম্যান, প্যানাডল ও প্যানাম্যাক্সসহ নানা নামে বিক্রি হয়। গর্ভবতী নারী ও ভ্রূণ উভয়ের জন্যই জ্বর ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টসের প্রেসিডেন্ট স্টিভেন জে. ফ্লেইশম্যান ট্রাম্পের মন্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গর্ভাবস্থায় ওষুধ সেবনের সময় সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং তার পাশাপাশি উপকারিতা দুটোই বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। অসংখ্য গবেষণার ফলাফল বলছে, গর্ভবতী নারীদের সুস্থতায় অ্যাসিটামিনোফেন (প্যারাসিটামল) গুরুত্বপূর্ণ ও নিরাপদ ভূমিকা রাখে।”

যুক্তরাষ্ট্রে প্যারাসিটামল ‘অ্যাসিটামিনোফেন’ নামে পরিচিত। 

আল-জাজিরা জানিয়েছে, কিছু গবেষণায় প্যারাসিটামল ও অটিজমের মতো স্নায়বিক সমস্যার মধ্যে সম্পর্ক পাওয়া গেলেও, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় আকারের ও শক্তিশালী গবেষণাগুলোতে এ ধরনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গত বছর দ্য জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনে সুইডেনের গবেষকদের বড় আকারের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, গর্ভাবস্থায় ব্যথানাশক ওষুধের সংস্পর্শে আসা শিশুদের সঙ্গে ব্যথানাশক ওষুধের সংস্পর্শে না আসা তাদের ভাইবোনদের তুলনা করার সময় কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি।

 

নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রসম্যান স্কুল অব মেডিসিনের বায়োএথিসিস্ট আর্থার ক্যাপলান ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপগুলোকে জনস্বাস্থ্যের জন্য ‘অত্যন্ত নেতিবাচক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘অটিজম নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল তথ্য, প্রমাণের অভাব, বাজে পরামর্শ ও একটি ভুয়া ব্যাখ্যা।’ তিনি আরো বলেন, “মূলধারার চিকিৎসাবিদ্যা ট্রাম্পের এই মন্তব্য উপেক্ষা করবে। এখন যুক্তরাষ্ট্রে রোগীরা ফেডারেল বিজ্ঞানকে ভরসা করতে পারছেন না, বরং অন্য নির্ভরযোগ্য উৎসে তাকাতে হচ্ছে।”

অটিজম বিশেষজ্ঞ ও লস অ্যাঞ্জেলসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যার অধ্যাপক ক্যাথেরিন লর্ড বলেন, “আমি মনে করি চিকিৎসক সমাজ দৃঢ়ভাবে একমত হবে যে, গর্ভাবস্থায় টাইলেনল (প্যারাসিটামল) অটিজমের কারণ হয় না। তবে গর্ভবতী নারীদেরকে ওষুধের বিষয়ে সবসময়ই সতর্ক থাকা উচিত।”

তিনি আরো বলেন, “কিন্তু এটাও বুঝতে হবে, গর্ভবতী নারীর উচ্চ জ্বর বা ব্যথা থাকা ভ্রণের জন্যও ভালো নয়, তাই তাদের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।”

এদিকে সোমবার ঘোষিত যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (এফডিএ) নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কিছু গবেষণায় প্যারাসিটামল ব্যবহার ও অটিজমের মধ্যে ‘সম্পর্ক’ পাওয়া গেছে, বিশেষ করে যখন গর্ভাবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে এটি সেবন করা হয়।

তবে এফডিএ স্পষ্ট করেছে যে, এর কারণ বা যোগসূত্র এখনো নিশ্চিত নয় এবং বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে এর বিপরীত ফলাফলও রয়েছে।

সংস্থাটি আরো বলেছে, ‘অ্যাসিটামিনোফেন (প্যারাসিটামল) গর্ভাবস্থায় জ্বর কমানোর জন্য অনুমোদিত একমাত্র ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ এবং গর্ভবতী নারীর উচ্চ জ্বর সন্তানের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।’

আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস বলছে, অটিজমের কোনো একক কারণ জানা নেই। এটি জিনগত ও পরিবেশগত নানা উপাদানের মিলিত প্রভাবে ঘটে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গর্ভবতী নারীদের প্যারাসিটামল না খাওয়ার পরামর্শ ট্রাম্পের, চিকিৎসকদের তীব্র প্রতিক্রিয়া
  • টিকার সঙ্গে আসলে কি অটিজমের সম্পর্ক আছে, কেন ট্রাম্প এমন বলছেন
  • প্রেমের গুঞ্জনের মধ্যেই কার বিয়েতে হাজির হচ্ছেন জায়েদ-মাহি?