৩০ বছরের বেশি সময় টিকে আছে অ্যাথলেটিকসের এই ৫ রেকর্ড
Published: 9th, August 2025 GMT
বলা হয়ে থাকে রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্য। আর পৃথিবীজুড়ে ক্রীড়াবিজ্ঞান, খেলোয়াড়দের পুষ্টি, অনুশীলনপদ্ধতি আর প্রযুক্তি ব্যবহারের মতো বিষয়গুলোর যোগফলে পুরোনো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ার ঘটনাও প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে।
তবে বেশির ভাগ খেলায় রেকর্ড, পাল্টা রেকর্ডের ঘটনা প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠলেও কিছুটা উল্টো চিত্র অ্যাথলেটিকসে। এই খেলায় এমন কিছু রেকর্ড আছে, যা যুগের পর যুগ ধরে টিকে আছে। প্রতি দুই বছরে একবার বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ এবং চার বছরে একবার অলিম্পিকের আসর বসলেও রেকর্ডগুলো দীর্ঘদিন ধরে কেউ ভাঙতে পারছে না।
অ্যাথলেটিকসে মোটের ওপর তিন ধরনের ইভেন্ট হয়ে থাকে। এর মধ্যে ট্র্যাকে হয়ে থাকে স্প্রিন্টস, মিডল ডিসট্যান্স, লং ডিসট্যান্স, হার্ডলস এবং রিলে। ফিল্ড পর্যায়ে হয়ে থাকে জাম্প ও থ্রো। আর ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড মিলিয়েও হয়ে থাকে পেনতাথলন, হেপতাথলন ও ডেকাথলনের মতো ইভেন্ট।
তিন দশক বা এর বেশি সময় ধরে টিকে আছে পাঁচটি ইভেন্টের রেকর্ড।
১.হ্যামার থ্রো
হ্যামার থ্রোর বিশ্ব রেকর্ডটি ইউরি সেদিখের। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এই অ্যাথলেট স্টুটগার্টে ১৯৮৬ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ৮৬.৭৪ মিটার বা ২৮৪ ফুট ৬ ইঞ্চি দূরত্বে হ্যামার থ্রো করেছিলেন। এরপর ৩৯ বছর ধরে কেউ এর ধারেকাছে যেতে পারেননি। যাবেনই বা কীভাবে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ দূরত্বের রেকর্ড সেদিখেরই।
সাবেক সোভিয়েত তারকার রেকর্ডটি যে কত বেশি সুরক্ষিত, সেটা বোঝা যাবে আরেকটি তথ্যের দিকে তাকালে। একবিংশ শতাব্দীতে ২০০৫ সালে সর্বোচ্চ ৮৪.৯০ মিটারে হ্যামার ছুড়তে পেরেছেন বেলারুশের ভ্যামিদ দেব্যতোভস্কি। দূরত্বের দিক থেকে তিনি এখন ১৪তম।
আরও পড়ুনরাগবি, অ্যাথলেটিকস, বক্সিং, ফুটবলের পর ক্রিকেট—কোন খেলায় নেই তিনি০১ মার্চ ২০২৫২. লং জাম্প১৯৯১ সালে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের লং জাম্পে ৮.৯৫ মিটার অতিক্রম করেছিলেন মাইক পাওয়েল। যুক্তরাষ্ট্রের এই অ্যাথলেট ভেঙেছিলেন ১৯৬৮ সালের বব বিমনের রেকর্ড। পাওয়েল ২৩ বছর পর রেকর্ড ভাঙতে পারলেও তাঁর রেকর্ডটি ৩৪ বছরেও কেউ পেছনে ফেলতে পারেননি। তাঁর বিশ্ব রেকর্ডের পর কাছাকাছি যেতে পেরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডোয়াইট ফিলিপস, তবে ২০০৯ সালের সেই দীর্ঘ লাফ ছিল ৮.৭৪ মিটার, দূরত্বের দিক থেকে যা যৌথভাবে দশম।
৩. হাই জাম্পহাই জাম্পের বিশ্ব রেকর্ডটি হাভিয়ের সোতোমায়োরের। উচ্চতা অতিক্রমের এই খেলায় কিউবার এই অ্যাথলেট ১৯৯৩ বিশ্ব অ্যাথলেটিকসে ২.৪৫ মিটার লাফিয়েছিলেন। ১৯৯২ অলিম্পিকে একই ইভেন্টে সোনা জেতা সোতোমায়োর একমাত্র অ্যাথলেট, যিনি এখন পর্যন্ত দুবার ৮ ফুট বা তার বেশি লাফিয়েছেন। আর কোনো হাই জাম্পার আট মিটার উঁচুতে উঠতে পারেননি। ২০১৪ সালে ডায়মন্ড লিগে ২.৪৩ মিটার লাফিয়ে তাঁর কাছাকাছি গিয়েছেন কাতারের মুসাত এসা বারশিম।
আরও পড়ুনহাঁটু গেড়ে বিয়ের প্রস্তাব, বিশ্ব অ্যাথলেটিকসে ভালোবাসার অন্য রকম গল্প লিখলেন তাঁরা২৪ আগস্ট ২০২৩৪. ৪X৪০০ মিটার রিলেদীর্ঘদিন টিকে থাকা বিশ্ব রেকর্ডগুলোর মতো এটি ব্যতিক্রম—একমাত্র দলগত। ১৯৯৩ সালে জার্মানির স্টুটগার্টে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অ্যাথলেটিকসে ৪ গুণিতক ৪০০ মিটার রিলে ২ মিনিট ৫৪.২৯ সেকেন্ডে শেষ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। দলটির হয়ে খেলেছিলেন তিন অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন মিখায়েল জনসন, বাচ রেনোল্ডস, কুইনসি ওয়াটস ও অ্যান্ড্রু ভালমন। এই রেকর্ডটি টিকে আছে ৩২ বছর ধরে।
৫. ট্রিপল জাম্পহপ, স্টেপ আর জাম্প—তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয় ট্রিপল জাম্প। মোটের ওপর অতিক্রম্য দূরত্বই এখানে জয়ের মানদণ্ড। অ্যাথলেটিকসের এই ইভেন্টের বিশ্ব রেকর্ডটি ইংল্যান্ডের জনাথন এডওয়ার্ডসের। ১৯৯৫ সালে সুইডেনের গুটেনবার্গে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১৮.২৯ মিটার অতিক্রম করেছিলেন তিনি, যা এখনো কেউ পার হতে পারেননি। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিস্টিয়ান টেলর বেইজিংয়ে ১৮.২১ মিটার পর্যন্ত পেরেছেন, গত বছর স্পেনের জর্ডান দিয়াজ পেরেছেন ১৮.১৮ মিটার দূরত্বে যেতে। কিন্তু এডওয়ার্ডস রয়ে গেছেন শীর্ষেই।
দীর্ঘদিন ধরে রেকর্ডের মালিক হয়ে থাকা গর্বের হলেও অ্যাথলেটিকসের স্বার্থে বিষয়টি যথাযথ নয় বলে মনে করেন এডওয়ার্ডস। সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না কোনো অ্যাথলেটিকস রেকর্ড ৩০ বছর ধরে অক্ষত থাকাটা খেলা হিসেবে অ্যাথলেটিকসের জন্য ভালো লক্ষণ।’
আরও পড়ুনইউরোপীয় অ্যাথলেটিকসে ধারাভাষ্য দেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা১৪ জুন ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব শ ব র কর ড চ য ম প য়নশ প য ক তর ষ ট র র র কর ড প র নন কর ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
অভিজাততন্ত্র থেকে কি আমাদের মুক্তি নেই
স্বাধীনতার পরের ৫৪ বছরে এবং ছয়টি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের (১৯৭৫, ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০৭ ও ২০২৪) পরেও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মৌল চরিত্র ‘গণপ্রজাতন্ত্র’ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বরং এই রাষ্ট্র ক্রমেই একটি অভিজাততন্ত্ররূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এ পরিচয়ে রাষ্ট্রকাঠামো শক্তিশালী হয়েছে, হচ্ছে এবং হয়তো ভবিষ্যতেও হতে থাকবে।
অভিজাততন্ত্রের রূপ একেক দেশে একেক রকম। বাংলাদেশে অভিজাততন্ত্রে যুক্ত রয়েছে রাজনৈতিক অভিজাত পরিবার, বৃহৎ করপোরেট প্রতিষ্ঠান, চিহ্নিত আমলা, আইনশৃঙ্খলা ও প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত কয়েকজন সদস্য, বিদেশি প্রভাবশালী গোষ্ঠী ইত্যাদি। দশকের পর দশক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকাকালে অভিজাততন্ত্রের বিকাশ ঘটেছে। পাশ্চাত্যের মূল্যবোধকেন্দ্রিক অভিজাত শ্রেণি বাংলাদেশে স্বার্থকেন্দ্রিক অভিজাত শ্রেণিতে পরিণত হয়েছে।
ক্ষমতার আসল উৎস কোথায়প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার উৎস জনগণ—এ কথা সংবিধানে বলা হলেও বাংলাদেশে সব ক্ষমতার উৎস কয়েকটি অভিজাত গোষ্ঠী। এই শ্রেণির অবস্থান সরকারে, সরকারের বাইরে, প্রশাসনে, সিভিল সোসাইটিতে, দেশের বাইরে বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীতে। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে ও সরকারের বাইরে বিরোধী পক্ষ হিসেবে যাদের দায়িত্ব পালন করার কথা, বেসরকারি খাত হিসেবে যাদের প্রতিনিধিত্ব করার কথা, তারা প্রকৃত অর্থে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেনি। বরং জনগণের নামে নিজের এবং অন্য কারও স্বার্থ রক্ষায় এরা ব্যস্ত। ফলে জনসাধারণ প্রতিনিয়ত বঞ্চিত, প্রতারিত হচ্ছে।
বঞ্চিত ও প্রতারিত জনগণের এমন অবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর উপায় সীমিত। রাষ্ট্রের দুর্বল অর্থনৈতিক ভিত্তি, দুর্বল মূল্যবোধ, দুর্বল নীতি, আইনের শাসনের অভাব, কালোটাকা ও পেশিশক্তির দাপটে সব সরকারের সময়েই জনগণ অভিজাততন্ত্রের বাস্তবতা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। সরকারপ্রধান জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হলেও মূলত অভিজাত শ্রেণির হয়েই কাজ করেন। তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নির্দেশে মন্ত্রিপরিষদ, আমলা, পদধারী ও সুবিধাভোগী সবাই নির্ধারিত হন। ফলে জনগণের সর্বময় ক্ষমতা নির্ধারিত হয় সরকারপ্রধান দ্বারা, তাঁর মর্জিমাফিক।
জনসংখ্যার একটা বড় অংশ আছে অভিজাততন্ত্রের বাইরে