ইসলামে জিকির মুমিনের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ, যা আল্লাহর সঙ্গে আধ্যাত্মিক সংযোগ দৃঢ় করে এবং মনকে শান্তি প্রদান করে। এর মধ্যে “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” একটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ জিকির, যা কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত।

এই জিকিরটি মানুষের দুর্বলতা ও আল্লাহর সর্বশক্তিমান ক্ষমতার প্রতি ঈমান প্রকাশ করে। এটি কঠিন পরিস্থিতিতে, দুশ্চিন্তায় বা কোনো কাজ শুরুর আগে পড়া হয়, যা মুমিনকে আল্লাহর উপর ভরসা করতে উৎসাহিত করে।

অর্থ

“লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” এর অর্থ:“কোনো শক্তি বা ক্ষমতা নেই আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতা ছাড়া।”

অর্থাৎ, এটি মানুষের সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে যে, কোনো কিছুই মানুষের নিয়ন্ত্রণে নয়; সবকিছু আল্লাহর হাতে। এই কথার মাধ্যমে একজন মুমিন স্বীকার করে যে, সকল শক্তি ও সাফল্যের উৎস একমাত্র আল্লাহ।

এই জিকির মানুষকে আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল হতে শেখায় এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করে। (তাফসির মা’আরিফুল কুরআন, মুফতি শফি উসমানী, পৃষ্ঠা: ৮/২৪৫, মাকতাবাতুল আশরাফ, ২০১০)

আরও পড়ুনসর্বশ্রেষ্ঠ জিকির লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ফজিলত

হাদিসে এই জিকিরের গুরুত্ব ও পুরস্কার সম্পর্কে বর্ণনা পাওয়া যায়। আবু মুসা আল-আশআরি (রা.

) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়ে, তা জান্নাতের ধনসম্পদের মধ্যে একটি।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪২০২)

এই জিকিরের ফজিলতের মধ্যে রয়েছে:

গুনাহ মাফ: এটি পড়ার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয় এবং আল্লাহর রহমত অর্জিত হয়।

মানসিক শান্তি: কঠিন পরিস্থিতিতে এই জিকির মনের উদ্বেগ দূর করে এবং আল্লাহর উপর ভরসা বাড়ায়।

জান্নাতের পথ: হাদিস অনুযায়ী, এটি জান্নাতে প্রবেশের একটি মাধ্যম।

সুরক্ষা: এটি শয়তানের ক্ষতি ও বদ নজর থেকে রক্ষা করে। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৭১)

আরও পড়ুনতাওহিদ বলতে কী বোঝায়১২ জুলাই ২০২৫কখন পড়তে হবে?

এই জিকিরটি যেকোনো সময় পড়া যায়, তবে নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে এটি বিশেষভাবে উপকারী:

কঠিন পরিস্থিতিতে: দুশ্চিন্তা, ভয় বা চাপের সময় এটি পড়া মানসিক শক্তি প্রদান করে।

কাজ শুরুর আগে: যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করার আগে আল্লাহর সাহায্য কামনা করা।

সকাল-সন্ধ্যার জিকির: প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় নিয়মিত পড়া।

নামাজের পর: ফরজ নামাজের পর জিকিরের অংশ হিসেবে পড়া। (ফিকহুস সুন্নাহ, সাইয়্যিদ সাবিক, পৃষ্ঠা: ২০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৮)

“লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর তাৎপর্যপূর্ণ জিকির, যা মানুষকে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হতে শেখায়। এর অর্থ—“কোনো শক্তি বা ক্ষমতা নেই আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতা ছাড়া”—মুমিনের ঈমানকে দৃঢ় করে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার গুরুত্ব তুলে ধরে। এই জিকির জান্নাতের ধনসম্পদ, গুনাহ মাফের কারণ এবং মানসিক শান্তির উৎস। আধুনিক জীবনে ব্যস্ততা, উদ্বেগ ও চাপের মাঝে এই জিকির নিয়মিত পড়ার মাধ্যমে আমরা আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করতে পারি।

আরও পড়ুনধৈর্য গড়ে তুলতে কোরআনের ৬ শিক্ষা১৩ জুলাই ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত ত এই জ ক র আল ল হ ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারের কি গণভোট দেওয়ার এখতিয়ার আছে, প্রশ্ন ফরহাদ মজহারের

বর্তমান সংবিধান মেনে শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের গণভোট দেওয়ার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, যিনি জুলাই অভ্যুত্থানের পর এই সংবিধান বাতিল করার মত জানিয়েছিলেন।

সংবিধান সংস্কারে গণভোটের দিকে সরকারের এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় এই প্রশ্ন তোলেন ফরহাদ মজহার। ‘নতুন বাংলাদেশ গঠনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘গণভোট কে দেবে? এই সরকারের কি এখতিয়ার আছে গণভোট দেওয়ার? তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) তো বলছেন, এই সংবিধান রক্ষা করব। কিসের গণভোট?’

পুরোনো সংবিধান রেখে নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি সংবিধান রাখবেন, আবার সংবিধানবিরোধী ভূমিকাও নেবেন, দুটো তো হতে পারে না।’

জুলাই অভ্যুত্থানের পর যখন অন্তর্বর্তী সরকার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে শপথ নিয়েছিল, তখনই তা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন ফরহাদ মজহার; যদিও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে তাঁর স্ত্রী ফরিদা আখতারও অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেন।

ফরহাদ মজহার মনে করেন, গত বছর ৮ আগস্ট দেশে একটি ‘সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব’ হয়েছিল। বর্তমানে যাদের অন্তর্বর্তী সরকার নামে অভিহিত করা হচ্ছে, তারা শেখ হাসিনা সরকারের তৈরি করা সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের জায়গা হারিয়েছে। এখন একমাত্র গণপরিষদ গঠন করে গণপরিষদের সম্মতিতে গণভোট আয়োজন বৈধ হতে পারে।

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এই সরকার অন্তর্বর্তী সরকার নয়। এই সরকার উপদেষ্টা সরকার। এই উপদেষ্টা সরকারের একটাই কাজ, ঠিকমতো উপদেশ দেওয়া।...এদের কাছ থেকে বেশি কিছু পাওয়ার নেই। এখন তার উচিত হবে, যত দ্রুত সম্ভব যদি কছু দেওয়ার থাকে সে দিয়ে যাবে।’

এখন একমাত্র গণপরিষদ গঠন করে সেই পরিষদের সম্মতিতে কেবল গণভোট আয়োজন বৈধ হতে পারে, বলেন ফরহাদ মজহার।

গত বছরের ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের বিজয়ের পর আট তারিখের মধ্যে কোনো একটি অংশ ‘চরম বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছে বলেও অভিযোগ করেন ফরহাদ মজহার। জুলাই অভ্যুত্থানে সৈনিকদের ভূমিকা থাকলেও ৫ আগস্টের পরে তাদের অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

আলোচনা সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরের নায়েবে আমির হেলাল উদ্দিন বলেন, ছাত্ররা যে ন্যায়বিচারের দাবি করেছিল, দেশের নেতৃত্বে সৎ লোক না এলে কখনো সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না। এখনো টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না।

ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার আলোচনায় দেশের সংখ্যালঘুদের কথা পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ তোলেন জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘সেই ১৯৪৭ সালের ৩৩% মাইনরিটি এখন তো বিলুপ্তির পথে। তো সেখানে তাদের তো দু’চারটা কথা শোনার দরকার ছিল, তারা কিন্তু সেটাও শুনল না।’

সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সাদেক রহমানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ নতুনধারা জনতার পার্টির চেয়ারম্যান মুহাম্মাদ আবদুল আহাদ নূর, গণমুক্তি জোটের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার ইফতেখার, যুবনেতা এ বি এম ইউসুফ, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান, জামাল হায়দার, ফেরদৌস আজিজ, অধ্যাপক দেওয়ান সাজ্জাদ, এ আর খান প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ