নিজেদের তৈরি ফর্মুলা-কার নিয়ে চীনের প্রতিযোগিতায় যাচ্ছেন আইইউটির শিক্ষার্থীরা
Published: 22nd, September 2025 GMT
গাজীপুরে অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অব টেকনোলজির (আইইউটি) শিক্ষার্থীদের তৈরি ফর্মুলা-কার (রেসিং) যাচ্ছে চীনের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়। একদল শিক্ষার্থী তিন বছরের চেষ্টায় কারটি তৈরি করেছেন। এ নিয়ে উচ্ছ্বসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিযোগিতাটি ৮ থেকে ১২ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে চীনের হেনান প্রদেশের ঝেংঝো শহরে অনুষ্ঠিত হবে। ফর্মুলা স্টুডেন্ট চায়না (এফএস চায়না) নামের এই প্রতিযোগিতায় রাশিয়া, ইতালি, চীনসহ ১৪টি দেশের ৭০টি দল অংশগ্রহণ করবে।
প্রতিযোগিতাটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শিক্ষার্থীভিত্তিক ইঞ্জিনিয়ারিং চ্যালেঞ্জ বলে জানালেন দলনেতা আনসানুল আমীন। তিনি বলেন, সেখানে গাড়ির গতি নয়, নকশা, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ও টেকসই প্রযুক্তিও বিচার করে প্রতিযোগীদের স্থান নির্ধারণ করা হবে।
শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্বজুড়ে শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশল প্রতিভাদের সমাগম ঘটবে ফর্মুলা স্টুডেন্ট চায়না প্রতিযোগিতায়, যেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দলগুলো নিজেদের তৈরি ফর্মুলা-স্টাইল রেস কার প্রদর্শন করবে। প্রতিযোগিতায় দলগুলোকে মূল্যায়ন করা হবে দুটি ধাপে—স্থির ইভেন্টে (ডিজাইন, খরচ বিশ্লেষণ ও ব্যবসায়িক উপস্থাপনা) এবং গতিশীল ইভেন্টে (অ্যাক্সিলারেশন, স্কিড প্যাড, অটোক্রস ও এন্ডুরেন্স)।
৭০ জন শিক্ষার্থীর ৩ বছরের সাধনায় নির্মিত রেসিং কারটি ইঞ্জিন ব্যতীত সব উপাদান বাংলাদেশে তৈরি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে কেটিএমের ৩৯০ সিসি ইঞ্জিন, স্টেইনলেস স্টিল ওয়েল্ডেড স্পেসফ্রেম চ্যাসিস, ডাবল এ-আর্ম সাসপেনশন এবং ৯১ অকটেন জ্বালানি। গাড়িটির দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ১৮১ মিলিমিটার, প্রস্থ ১ হাজার ৪০৯ মিলিমিটার। উচ্চতায় গাড়িটি ১ হাজার ৩৯ মিলিমিটার।
আইইউটির মেকানিকাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের এ দলটি যাত্রা শুরু করে ২০২১ সালে। ইতিমধ্যে তাঁরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন। ফর্মুলা ভারত ২০২৩ (কনসেপ্ট ক্লাস)-এ তৃতীয় স্থান এবং ফর্মুলা ইম্পেরিয়াল ২০২৪-এ সপ্তম স্থান অর্জন করেন।
ফর্মুলা আইইউটি টিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল, আইপিই, সফটওয়্যার, ইলেকট্রিক্যাল, বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি ম্যানেজমেন্টের (বিটিএম) শিক্ষার্থীরা সমন্বিতভাবে কাজ করেছেন। খরচ হয়েছে ১২ লাখ টাকা, যা শিক্ষার্থীদের নিজস্ব উদ্যোগে অর্থায়ন করা হয়েছে।
চায়নার ফর্মুলা স্টুডেন্ট প্রতিযোগিতায় সম্মানজনক ফলাফলের মাধ্যমে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা বাংলাদেশের প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের। ফর্মুলা আইইউটির জ্যেষ্ঠ গবেষক রিদোয়ান ইবনে সিদ্দিক বলেন, এই অংশগ্রহণ আইইউটির জন্য একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে নিজেদের উপস্থাপনের সুযোগ এনে দেবে, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করবে এবং প্রকৌশল প্রতিযোগিতায় উৎকর্ষ ধরে রাখার ঐতিহ্যকে সুদৃঢ় করবে।
মেকানিকাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আহসান হাবিব বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে এ সফলতা অর্জন করেছেন। চলতি মাসেই তাঁরা গাড়িটির সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন। এখন গাড়িটি প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত। তাঁরা দেশের বাহিরে প্রতিযোগিতায় যাচ্ছেন, এটি যেমন শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা বাড়াবে, তেমনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের জন্য গৌরবের।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইইউট র কর ছ ন ফর ম ল র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কারো চোখে পানি, ফেলছেন স্বস্তির শ্বাস: মামদানির জয়ে কী বললেন গার্ডিয়ানের পাঠকেরা
‘নিউইয়র্ককে যেন আবার নিউইয়র্ক বলে মনে হচ্ছে। এটা শুধু একটা নির্বাচন ছিল না। সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন, যেন বহুদিন ধরে লাখ লাখ মানুষ তাঁদের শ্বাস আটকে রেখেছিলেন।’ কথাগুলো বলছিলেন নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটান এলাকার বাসিন্দা কেইথ অ্যালান ওয়াটস। শহরের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির জয়ে যারপরনাই খুশি তিনি।
নিউইয়র্কের বাসিন্দারা মামদানির জয়ে খুশি হবেন—এটাই স্বাভাবিক। তাঁদের সমর্থনেই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে মেয়র পদে জিতেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির এই প্রার্থী। তবে নিউইয়র্কের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য শহরের বাসিন্দারাও মামদানিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তাঁর ওপর ভরসা করছেন। তাঁরা বলছেন, ‘মামদানির জয় নির্মল বাতাসে নতুন করে শ্বাস নেওয়ার মতো।’
গত মঙ্গলবার স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে টপকে বিজয়ী হন ৩৪ বছর বয়সী মামদানি। এ নিয়ে পাঠকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। এর জবাবে নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের শত শত পাঠক তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার গার্ডিয়ানের ওয়েবসাইটে সেগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।
তরুণদের আস্থানির্বাচনী প্রচারে নিউইয়র্কবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মামদানি। ম্যানহাটানের বাসিন্দা অ্যালান ওয়াটস দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে নিউইয়র্কবাসী একধরনের গ্লানির মধ্যে ছিলেন। বাড়িভাড়া বাড়ছিল, বেতন বৃদ্ধি থমকে ছিল, আশা হারিয়ে গিয়েছিল। তবে মামদানি যখন মুখ খুললেন, মনে হলো তিনি মানুষের জন্যই কথা বলছেন।’
মামদানিকে নিয়ে একই ধারণা নিউইয়র্কের বাসিন্দা মার্গারেট কোগানের। ৮১ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা এখন অবসর যাপন করছেন। তাঁর আশা—মামদানির নেতৃত্বে নিউইয়র্ক শহরে বসবাস করাটা আরও সাশ্রয়ী হবে; বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণি সুবিধা পাবেন, যাঁদের ওপর সবাইকে নির্ভর করতে হয়। মামদানির জয় ‘ঘুমিয়ে থাকা’ ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য একটি জাগরণের বার্তা বলে মনে করেন তিনি।
মার্গারেট কোগানের বয়স হয়েছে। মার্কিন রাজনীতির বহু কিছু দেখেছেন তিনি। সেদিক দিয়ে ৩২ বছর বয়সী ডিলান এখন তরুণ। তিনি রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছিলেন। তবে মামদানির প্রচারে মুগ্ধ ডিলান বলেন, তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি বা প্রার্থী বাছাইপর্বে ভোট দেননি। শেষ পর্যন্ত প্রচারে মামদানির উৎসাহ–উদ্দীপনা দেখে মেয়র নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।
নিউইয়র্কের বাইরেও আনন্দের ছোঁয়ামার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রক্ষণশীল রাজনীতির মুখে মামদানির এই জয়ের আনন্দে ভাগ বসিয়েছেন নিউইয়র্কের বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা। যেমন ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা স্কট রিচিংয়ের কথা বলা যায়। ‘মেধাবী তরুণ’ মামদানি যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে ট্রাম্প ও ধনকুবেরদের একহাত নিয়েছেন, তা মন জয় করে নিয়েছে ৭৪ বছর বয়সী এই নারীর। রিচিংয়ের এখন নজর নিউইয়র্কের ভবিষ্যতের দিকে।
স্কট রিচিং বলেন, ‘আমি জানি, প্রচারে মামদানি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার সব কটি পূরণ করতে পারবেন না। তবে আশা করি, নিউইয়র্কের যোগাযোগব্যবস্থা ও খাদ্যস্বল্পতার সমস্য নিয়ে কিছু করবেন। পাশাপাশি ধনীদের ওপর কর আরোপ করতে পারবেন। তিনি এগুলো করতে পারলে, আশা করা যায় তা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অন্যান্য নির্বাচনী প্রার্থীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’
মামদানির জয়ের খবরে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি টেনেসি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা কেফিয়াস স্ট্রাচান (৫৪)। তিনি বলেন, বহু বছরের মধ্যে এই প্রথম ঘুম থেকে উঠে কোনো ভালো খবর পেয়েছেন। আর মিশিগানের বাসিন্দা ৩২ বছর বয়সী ডেভন বলেন, ‘মামদানিকে কেন্দ্রীয় সরকার নানাভাবে বাধা দেবে জানি। আশা করি, ভোটাররা তা বুঝতে পারবেন এবং বামপন্থী রাজনীতির প্রতি আশা হারাবেন না।’
আরও পড়ুনপ্রভাবশালী মার্কিন ডানপন্থীরা কীভাবে মামদানিকে আইএসের সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন৭ ঘণ্টা আগেউদ্বিগ্ন অনেকেমামদানিকে নিয়ে আশাবাদের পাশাপাশি তাঁর সামনে থাকা কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন অনেকে। ফ্লোরিডার বাসিন্দা ৭১ বছর বয়সী ব্রুস ওয়েকস বলেন, মামদানির জয় নিউইয়র্ক ও পুরো দেশের জন্য বড় একটি মোড়বদল। তাঁকে এখন বড় লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন যেকোনো উপায়ে মেয়র হিসেবে তাঁর যাত্রায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে।
মেয়র হিসেবে মামদানির কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই—এ বিষয় নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন বলেন, মামদানি নিউইয়র্ক নিয়ে যেসব পরিকল্পনা করেছেন, তার অনেকগুলো ‘অবাস্তব’। তাই ভবিষ্যতে সেগুলো কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে শঙ্কা আছে তাঁর।
তবে উদ্বেগ ও শঙ্কার মধ্যেও সবশেষে নিউইয়র্কের জন্য ভালোটাই হবে বলে গার্ডিয়ান–এর কাছে আশা প্রকাশ করেছেন বেশির ভাগ নিউইয়র্কবাসী। আগামী জানুয়ারিতে মেয়র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন মামদানি। শহরটির বাসিন্দা, ৩৩ বছর বয়সী কিম্বারলি মাইকেল বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, ভালো কিছু হবে। এখন যেটি দরকার, তা হলো আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকা।’
আরও পড়ুনমামদানি একই সঙ্গে ভারতের গর্ব, আবার মোদির মতো নেতাদের কঠোর সমালোচক৩ ঘণ্টা আগে