ট্রাম্পকে হতাশ করে এবিসিতে ফিরছে ‘জিমি কিমেল লাইভ’
Published: 23rd, September 2025 GMT
ছয় দিন বন্ধ থাকার পর আজ মঙ্গলবার থেকে সম্প্রচারে ফিরছে ‘জিমি কিমেল লাইভ’। যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল রাজনৈতিক কর্মী ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড নিয়ে উপস্থাপক জিমি কিমেলের মন্তব্যের পর ট্রাম্প প্রশাসনের হুমকির মুখে ডিজনি মালিকানাধীন এবিসি নেটওয়ার্কের এই টেলিভিশন অনুষ্ঠানটির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
এই অনুষ্ঠান বন্ধ করার পর বোধ হয় সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি এবিসির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছিলেন। তবে এবার তাঁকে হতাশ হতে হচ্ছে।
গতকাল সোমবার ‘জিমি কিমেল লাইভ’ আবার সম্প্রচারে ফেরানোর ঘোষণা দেয় ডিজনি কর্তৃপক্ষ।‘জিমি কিমেল লাইভ’ রাতের বেলা প্রচার করা একটি কৌতুক অনুষ্ঠান। ১৫ সেপ্টেম্বর প্রচারিত অনুষ্ঠানে জিমি কিমেল বলেছিলেন, ‘মাগা (এমএজিএ) গ্যাং চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করছে।’
সেই রাতের অনুষ্ঠানে কিমেলের করা আরও কয়েকটি মন্তব্য তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশনের (এফসিসি) চেয়ারম্যান ব্রেন্ডান কারও কিমেলের বক্তব্যের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এবিসির এই উপস্থাপক সম্ভবত সবচেয়ে অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ডিজনির প্রতি জিমি কিমেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
আমাদের দেশের জন্য একটি আবেগময় পরিস্থিতিতে উত্তেজনার আগুন আরও ছড়িয়ে পড়া এড়াতে এবিসি নেটওয়ার্কের এই মধ্যরাতের কৌতুক অনুষ্ঠানটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।...ডিজনির বিবৃতি
এরপর এবিসি কর্তৃপক্ষ ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য’ এই কমেডিয়ানের অনুষ্ঠানের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। তাঁকেও সাময়িকভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান বন্ধ ও কিমেলকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়।
এ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে ‘জিমি কিমেল লাইভ’ অনুষ্ঠান আবার সম্প্রচার শুরুর সিদ্ধান্ত ট্রাম্প প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রচেষ্টায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ট্রাম্প নিয়মিত তাঁর ও তাঁর প্রশাসনের সমালোচনাকারী সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ও নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি দিয়ে থাকেন।
এবিসি নেটওয়ার্কের মালিকদের চাপে বা যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের গণমাধ্যম ও যোগাযোগব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশনের (এফসিসি) চাপে পড়ে নয়; বরং বিনোদন সংস্থার স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।গতকাল সোমবার ‘জিমি কিমেল লাইভ’ আবার সম্প্রচারে ফেরানোর ঘোষণা দিয়ে ডিজনির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের দেশের জন্য একটি আবেগময় পরিস্থিতিতে উত্তেজনার আগুন আরও ছড়িয়ে পড়া এড়াতে এবিসি নেটওয়ার্কের এই মধ্যরাতের কৌতুক অনুষ্ঠানটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কারণ, আমাদের মনে হয়েছিল, কিমেলের কিছু মন্তব্য “অসময়ে বলে ফেলা বা সংবেদনশীল ছিল।”’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা গত কয়েক দিন এ নিয়ে জিমির সঙ্গে গভীরভাবে আলোচনার পর আজ থেকে শোটি আবার সম্প্রচারে আনার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি।’
আরও পড়ুনট্রাম্পের মিত্র কার্কের হত্যা নিয়ে মন্তব্য করায় জিমি কিমেলের টিভি শো বন্ধ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫এ বিষয়ে জানা আছে এমন দুজন বলেন, ডিজনির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বব আইগার ও ডিজনি এন্টারটেইনমেন্টের সহপ্রধান ডানা ওয়ালডেন এ সপ্তাহান্তে কিমেলের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এবিসি নেটওয়ার্কের মালিকদের চাপে বা যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের গণমাধ্যম ও যোগাযোগব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশনের (এফসিসি) চাপে পড়ে নয়; বরং বিনোদন সংস্থার স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তাঁরা।
আজকের অনুষ্ঠানেই কিমেল বিষয়টি মিটমাট করে ফেলবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। তবে কিমেল বা তাঁর প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি।
আরও পড়ুনবিরোধী টিভি নেটওয়ার্কের লাইসেন্স ‘বাতিল’ করা উচিত: ট্রাম্প১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ন টওয় র ক র অন ষ ঠ ন ব যবস থ ড জন র হয় ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কারো চোখে পানি, ফেলছেন স্বস্তির শ্বাস: মামদানির জয়ে কী বললেন গার্ডিয়ানের পাঠকেরা
‘নিউইয়র্ককে যেন আবার নিউইয়র্ক বলে মনে হচ্ছে। এটা শুধু একটা নির্বাচন ছিল না। সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন, যেন বহুদিন ধরে লাখ লাখ মানুষ তাঁদের শ্বাস আটকে রেখেছিলেন।’ কথাগুলো বলছিলেন নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটান এলাকার বাসিন্দা কেইথ অ্যালান ওয়াটস। শহরের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির জয়ে যারপরনাই খুশি তিনি।
নিউইয়র্কের বাসিন্দারা মামদানির জয়ে খুশি হবেন—এটাই স্বাভাবিক। তাঁদের সমর্থনেই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে মেয়র পদে জিতেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির এই প্রার্থী। তবে নিউইয়র্কের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য শহরের বাসিন্দারাও মামদানিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তাঁর ওপর ভরসা করছেন। তাঁরা বলছেন, ‘মামদানির জয় নির্মল বাতাসে নতুন করে শ্বাস নেওয়ার মতো।’
গত মঙ্গলবার স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে টপকে বিজয়ী হন ৩৪ বছর বয়সী মামদানি। এ নিয়ে পাঠকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। এর জবাবে নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের শত শত পাঠক তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার গার্ডিয়ানের ওয়েবসাইটে সেগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।
তরুণদের আস্থানির্বাচনী প্রচারে নিউইয়র্কবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মামদানি। ম্যানহাটানের বাসিন্দা অ্যালান ওয়াটস দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে নিউইয়র্কবাসী একধরনের গ্লানির মধ্যে ছিলেন। বাড়িভাড়া বাড়ছিল, বেতন বৃদ্ধি থমকে ছিল, আশা হারিয়ে গিয়েছিল। তবে মামদানি যখন মুখ খুললেন, মনে হলো তিনি মানুষের জন্যই কথা বলছেন।’
মামদানিকে নিয়ে একই ধারণা নিউইয়র্কের বাসিন্দা মার্গারেট কোগানের। ৮১ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা এখন অবসর যাপন করছেন। তাঁর আশা—মামদানির নেতৃত্বে নিউইয়র্ক শহরে বসবাস করাটা আরও সাশ্রয়ী হবে; বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণি সুবিধা পাবেন, যাঁদের ওপর সবাইকে নির্ভর করতে হয়। মামদানির জয় ‘ঘুমিয়ে থাকা’ ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য একটি জাগরণের বার্তা বলে মনে করেন তিনি।
মার্গারেট কোগানের বয়স হয়েছে। মার্কিন রাজনীতির বহু কিছু দেখেছেন তিনি। সেদিক দিয়ে ৩২ বছর বয়সী ডিলান এখন তরুণ। তিনি রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছিলেন। তবে মামদানির প্রচারে মুগ্ধ ডিলান বলেন, তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি বা প্রার্থী বাছাইপর্বে ভোট দেননি। শেষ পর্যন্ত প্রচারে মামদানির উৎসাহ–উদ্দীপনা দেখে মেয়র নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।
নিউইয়র্কের বাইরেও আনন্দের ছোঁয়ামার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রক্ষণশীল রাজনীতির মুখে মামদানির এই জয়ের আনন্দে ভাগ বসিয়েছেন নিউইয়র্কের বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা। যেমন ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা স্কট রিচিংয়ের কথা বলা যায়। ‘মেধাবী তরুণ’ মামদানি যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে ট্রাম্প ও ধনকুবেরদের একহাত নিয়েছেন, তা মন জয় করে নিয়েছে ৭৪ বছর বয়সী এই নারীর। রিচিংয়ের এখন নজর নিউইয়র্কের ভবিষ্যতের দিকে।
স্কট রিচিং বলেন, ‘আমি জানি, প্রচারে মামদানি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার সব কটি পূরণ করতে পারবেন না। তবে আশা করি, নিউইয়র্কের যোগাযোগব্যবস্থা ও খাদ্যস্বল্পতার সমস্য নিয়ে কিছু করবেন। পাশাপাশি ধনীদের ওপর কর আরোপ করতে পারবেন। তিনি এগুলো করতে পারলে, আশা করা যায় তা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অন্যান্য নির্বাচনী প্রার্থীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’
মামদানির জয়ের খবরে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি টেনেসি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা কেফিয়াস স্ট্রাচান (৫৪)। তিনি বলেন, বহু বছরের মধ্যে এই প্রথম ঘুম থেকে উঠে কোনো ভালো খবর পেয়েছেন। আর মিশিগানের বাসিন্দা ৩২ বছর বয়সী ডেভন বলেন, ‘মামদানিকে কেন্দ্রীয় সরকার নানাভাবে বাধা দেবে জানি। আশা করি, ভোটাররা তা বুঝতে পারবেন এবং বামপন্থী রাজনীতির প্রতি আশা হারাবেন না।’
আরও পড়ুনপ্রভাবশালী মার্কিন ডানপন্থীরা কীভাবে মামদানিকে আইএসের সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন৭ ঘণ্টা আগেউদ্বিগ্ন অনেকেমামদানিকে নিয়ে আশাবাদের পাশাপাশি তাঁর সামনে থাকা কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন অনেকে। ফ্লোরিডার বাসিন্দা ৭১ বছর বয়সী ব্রুস ওয়েকস বলেন, মামদানির জয় নিউইয়র্ক ও পুরো দেশের জন্য বড় একটি মোড়বদল। তাঁকে এখন বড় লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন যেকোনো উপায়ে মেয়র হিসেবে তাঁর যাত্রায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে।
মেয়র হিসেবে মামদানির কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই—এ বিষয় নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন বলেন, মামদানি নিউইয়র্ক নিয়ে যেসব পরিকল্পনা করেছেন, তার অনেকগুলো ‘অবাস্তব’। তাই ভবিষ্যতে সেগুলো কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে শঙ্কা আছে তাঁর।
তবে উদ্বেগ ও শঙ্কার মধ্যেও সবশেষে নিউইয়র্কের জন্য ভালোটাই হবে বলে গার্ডিয়ান–এর কাছে আশা প্রকাশ করেছেন বেশির ভাগ নিউইয়র্কবাসী। আগামী জানুয়ারিতে মেয়র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন মামদানি। শহরটির বাসিন্দা, ৩৩ বছর বয়সী কিম্বারলি মাইকেল বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, ভালো কিছু হবে। এখন যেটি দরকার, তা হলো আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকা।’
আরও পড়ুনমামদানি একই সঙ্গে ভারতের গর্ব, আবার মোদির মতো নেতাদের কঠোর সমালোচক৩ ঘণ্টা আগে