বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের পরিচালক ও কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেছেন, ‘‘ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন দেশের মানুষের কাছে বার্তা দিয়েছে, এ দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে এবং নতুন নেতৃত্বের পক্ষে। দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা এখন পরিবর্তন চায়।’’

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নীলফামারী-১ নির্বাচনী আসনের দায়িত্বশীল কর্মশালা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। ডোমার উপজেলা মডেল মসজিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এ কর্মশালায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলরা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

পাথর চুরির ঘটনায় জামায়াত নেতার নামও এসেছে : রিজভী 

সরকার একটি দলের পকেটে ঢোকার চেষ্টা করছে: রফিকুল ইসলাম

মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ‘‘৫৪ বছরের ইতিহাসে যারা দেশ চালিয়েছেন, তারা দুর্নীতিগ্রস্ত। তারা বর্তমান প্রজন্মের আশা ভঙ্গ করেছেন। রাজাকার ইস্যুতে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন। অথচ এখন প্রজন্ম স্লোগান দেয়, তুমি কে, আমি কে? রাজাকার, রাজাকার! বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিবেদ ও হিংসার রাজনীতি বোঝে না। দেশের সকল দলমতের মানুষ আমরা সকলে বাংলাদেশি।’’

জামায়াতে ইসলামীর এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘‘২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে ইনশাআল্লাহ। সেই নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হয়, আনন্দমুখর, উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়; এজন্য আমরা পিআর পদ্ধতির দাবি জানিয়েছি। এটা মানতেই হবে এবং এর আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। আমরা এ বিষয়ে জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। তবে নির্বাচন অবশ্যই ফেব্রুয়ারিতেই হতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে এই দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচন দিতে হবে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরকে নারী বিদ্বেষী বলে অপপ্রচার চালানো হয়েছিল। অথচ সাদিক কায়েমকে সবচেয়ে বেশি ভোট দিয়েছেন নারীরাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের সবচেয়ে বড় হল বেগম রোকেয়া হল, সেখান থেকে সর্বাধিক ভোট পেয়েছেন শিবির সমর্থিত প্রার্থী। ফল ঘোষণার পর মেয়েরা উল্লাস করেছেন। এতে প্রমাণ হয়, এ দেশের ছাত্র-ছাত্রী, নারী-পুরুষসহ সব স্তরের মানুষ পরিবর্তন চায়, নতুন নেতৃত্ব চায়।’’

নীলফামারী-১ আসনের পরিচালক অধ্যাপক মাওলানা মুজিবুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল টিম সদস্য মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, নীলফামারী জেলা আমীর ও নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার, ডোমার উপজেলা আমীর মাওলানা আব্দুল হাকিম প্রমুখ। 
 

ঢাকা/সিথুন/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

কারো চোখে পানি, ফেলছেন স্বস্তির শ্বাস: মামদানির জয়ে কী বললেন গার্ডিয়ানের পাঠকেরা

‘নিউইয়র্ককে যেন আবার নিউইয়র্ক বলে মনে হচ্ছে। এটা শুধু একটা নির্বাচন ছিল না। সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন, যেন বহুদিন ধরে লাখ লাখ মানুষ তাঁদের শ্বাস আটকে রেখেছিলেন।’ কথাগুলো বলছিলেন নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটান এলাকার বাসিন্দা কেইথ অ্যালান ওয়াটস। শহরের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির জয়ে যারপরনাই খুশি তিনি।

নিউইয়র্কের বাসিন্দারা মামদানির জয়ে খুশি হবেন—এটাই স্বাভাবিক। তাঁদের সমর্থনেই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে মেয়র পদে জিতেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির এই প্রার্থী। তবে নিউইয়র্কের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য শহরের বাসিন্দারাও মামদানিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তাঁর ওপর ভরসা করছেন। তাঁরা বলছেন, ‘মামদানির জয় নির্মল বাতাসে নতুন করে শ্বাস নেওয়ার মতো।’

গত মঙ্গলবার স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে টপকে বিজয়ী হন ৩৪ বছর বয়সী মামদানি। এ নিয়ে পাঠকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। এর জবাবে নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের শত শত পাঠক তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার গার্ডিয়ানের ওয়েবসাইটে সেগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।

তরুণদের আস্থা

নির্বাচনী প্রচারে নিউইয়র্কবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মামদানি। ম্যানহাটানের বাসিন্দা অ্যালান ওয়াটস দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে নিউইয়র্কবাসী একধরনের গ্লানির মধ্যে ছিলেন। বাড়িভাড়া বাড়ছিল, বেতন বৃদ্ধি থমকে ছিল, আশা হারিয়ে গিয়েছিল। তবে মামদানি যখন মুখ খুললেন, মনে হলো তিনি মানুষের জন্যই কথা বলছেন।’

মামদানিকে নিয়ে একই ধারণা নিউইয়র্কের বাসিন্দা মার্গারেট কোগানের। ৮১ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা এখন অবসর যাপন করছেন। তাঁর আশা—মামদানির নেতৃত্বে নিউইয়র্ক শহরে বসবাস করাটা আরও সাশ্রয়ী হবে; বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণি সুবিধা পাবেন, যাঁদের ওপর সবাইকে নির্ভর করতে হয়। মামদানির জয় ‘ঘুমিয়ে থাকা’ ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য একটি জাগরণের বার্তা বলে মনে করেন তিনি।

মার্গারেট কোগানের বয়স হয়েছে। মার্কিন রাজনীতির বহু কিছু দেখেছেন তিনি। সেদিক দিয়ে ৩২ বছর বয়সী ডিলান এখন তরুণ। তিনি রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছিলেন। তবে মামদানির প্রচারে মুগ্ধ ডিলান বলেন, তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি বা প্রার্থী বাছাইপর্বে ভোট দেননি। শেষ পর্যন্ত প্রচারে মামদানির উৎসাহ–উদ্দীপনা দেখে মেয়র নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।

নিউইয়র্কের বাইরেও আনন্দের ছোঁয়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রক্ষণশীল রাজনীতির মুখে মামদানির এই জয়ের আনন্দে ভাগ বসিয়েছেন নিউইয়র্কের বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা। যেমন ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা স্কট রিচিংয়ের কথা বলা যায়। ‘মেধাবী তরুণ’ মামদানি যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে ট্রাম্প ও ধনকুবেরদের একহাত নিয়েছেন, তা মন জয় করে নিয়েছে ৭৪ বছর বয়সী এই নারীর। রিচিংয়ের এখন নজর নিউইয়র্কের ভবিষ্যতের দিকে।

স্কট রিচিং বলেন, ‘আমি জানি, প্রচারে মামদানি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার সব কটি পূরণ করতে পারবেন না। তবে আশা করি, নিউইয়র্কের যোগাযোগব্যবস্থা ও খাদ্যস্বল্পতার সমস্য নিয়ে কিছু করবেন। পাশাপাশি ধনীদের ওপর কর আরোপ করতে পারবেন। তিনি এগুলো করতে পারলে, আশা করা যায় তা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অন্যান্য নির্বাচনী প্রার্থীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’

মামদানির জয়ের খবরে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি টেনেসি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা কেফিয়াস স্ট্রাচান (৫৪)। তিনি বলেন, বহু বছরের মধ্যে এই প্রথম ঘুম থেকে উঠে কোনো ভালো খবর পেয়েছেন। আর মিশিগানের বাসিন্দা ৩২ বছর বয়সী ডেভন বলেন, ‘মামদানিকে কেন্দ্রীয় সরকার নানাভাবে বাধা দেবে জানি। আশা করি, ভোটাররা তা বুঝতে পারবেন এবং বামপন্থী রাজনীতির প্রতি আশা হারাবেন না।’

আরও পড়ুনপ্রভাবশালী মার্কিন ডানপন্থীরা কীভাবে মামদানিকে আইএসের সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন৭ ঘণ্টা আগেউদ্বিগ্ন অনেকে

মামদানিকে নিয়ে আশাবাদের পাশাপাশি তাঁর সামনে থাকা কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন অনেকে। ফ্লোরিডার বাসিন্দা ৭১ বছর বয়সী ব্রুস ওয়েকস বলেন, মামদানির জয় নিউইয়র্ক ও পুরো দেশের জন্য বড় একটি মোড়বদল। তাঁকে এখন বড় লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন যেকোনো উপায়ে মেয়র হিসেবে তাঁর যাত্রায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে।

মেয়র হিসেবে মামদানির কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই—এ বিষয় নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন বলেন, মামদানি নিউইয়র্ক নিয়ে যেসব পরিকল্পনা করেছেন, তার অনেকগুলো ‘অবাস্তব’। তাই ভবিষ্যতে সেগুলো কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে শঙ্কা আছে তাঁর।

তবে উদ্বেগ ও শঙ্কার মধ্যেও সবশেষে নিউইয়র্কের জন্য ভালোটাই হবে বলে গার্ডিয়ান–এর কাছে আশা প্রকাশ করেছেন বেশির ভাগ নিউইয়র্কবাসী। আগামী জানুয়ারিতে মেয়র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন মামদানি। শহরটির বাসিন্দা, ৩৩ বছর বয়সী কিম্বারলি মাইকেল বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, ভালো কিছু হবে। এখন যেটি দরকার, তা হলো আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকা।’

আরও পড়ুনমামদানি একই সঙ্গে ভারতের গর্ব, আবার মোদির মতো নেতাদের কঠোর সমালোচক৩ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ