জাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ছাত্রদলের
Published: 23rd, September 2025 GMT
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভিপি প্রার্থী শেখ সাদি হাসান ও জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অন্তত ১২টি অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগ উত্থাপন করেন। এ সময় প্যানেলের অন্য প্রার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
জাবিতে হলের ছাদে মদ ও গাঁজা সেবন করছিলেন ছাত্রদল নেতাসহ ১৫ শিক্ষার্থী
বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় জাবির ৮ শিক্ষক-শিক্ষার্থী
লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত জাকসু নির্বাচনকে গণতন্ত্রের পুনঃযাত্রার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে দেখা হলেও এটি অনিয়ম, কারচুপি, সমন্বয়হীনতা এবং প্রভাবশালী মহলের নকশাকৃত কারসাজির কারণে প্রহসনে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন চলাকালে আটটি অংশগ্রহণকারী প্যানেলের মধ্যে পাঁচটি ভোট বর্জন করে এবং দুইজন নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করেন। কয়েকজন শিক্ষকও ভোটগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সরে দাঁড়ান। অনিয়ম ও কারচুপির কারণে দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়েছে।
তাদের উত্থাপিত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও অমোচনীয় কালির অনুপস্থিতি, এতে জাল ভোটের সুযোগ সৃষ্টি হয়; ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স পাঠানো এবং ভোটারের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যালট পেপার প্রেরণ করা; নির্দিষ্ট দলের সমর্থকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন ক্রয় এবং ৩ হাজার অতিরিক্ত ব্যালট ছাপানোর অভিযোগও রয়েছে; ফজিলাতুন্নেছা, জাহানারা ইমাম ও তাজউদ্দীন হলসহ কয়েকটি হলে জাল ভোট, বুথে লিফলেট রাখা ও প্রাধ্যক্ষদের প্রকাশ্য পক্ষপাতের ঘটনা ঘটে; অনেক পোলিং অফিসার নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন এবং ভুলভ্রান্ত আচরণ করেন।
বাকি অভিযোগগুলো হলো- প্রার্থীদের এজেন্ট নিয়োগে নানা বাধা ও হয়রানি করা হয় এবং প্রথম কয়েক ঘণ্টা অনেক হলে এজেন্ট ছাড়া ভোট হয়, তবে নির্দিষ্ট একটি প্যানেলের এজেন্টরা সুবিধা পান; রফিক-জব্বার হলে ঘোষিত ভোটের সংখ্যা প্রদত্ত ভোটের চেয়ে বেশি পাওয়া যায় এবং মওলানা ভাসানী হলে এক প্রার্থীর ভোট শূন্য দেখানো হয়; কিছু ব্যালটে প্রার্থীর নাম অনুপস্থিত ছিল এবং ভোটারদের হাতে লিখে নাম দিতে বলা হয়, আবার ভোটার তালিকায় নাম না থাকা সত্ত্বেও প্রাধ্যক্ষরা সিল দিয়ে ভোটাধিকার দেন; নির্বাচনের আগের দিন বহিরাগত নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস ঘেরাও করে রাখেন এবং তাদের উপস্থিতি ছিল আক্রমণাত্মক ও ভীতিপ্রদ; কাজী নজরুল ইসলাম হলে ভোটের সংখ্যা গরমিল পাওয়া যায় এবং রাত পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে, শহীদ তাজউদ্দীন হলে ভোট গ্রহণ বিলম্বিত হয়; একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, তাদের ভোট আগেই দিয়ে ফেলা হয়েছে; ভোট শেষে প্রশাসনের কাছে ভোটার তালিকা ও সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হলেও তা সরবরাহ করা হয়নি।
এ সময় ছাত্রদল নেতারা বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি; বরং কারচুপি, অব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক শৈথিল্যের মাধ্যমে তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রহসনের এই নির্বাচনের অভিযোগগুলো তদন্ত করে নেপথ্যের সত্য উন্মোচনে প্রশাসনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল ছ ত রদল
এছাড়াও পড়ুন:
কারো চোখে পানি, ফেলছেন স্বস্তির শ্বাস: মামদানির জয়ে কী বললেন গার্ডিয়ানের পাঠকেরা
‘নিউইয়র্ককে যেন আবার নিউইয়র্ক বলে মনে হচ্ছে। এটা শুধু একটা নির্বাচন ছিল না। সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন, যেন বহুদিন ধরে লাখ লাখ মানুষ তাঁদের শ্বাস আটকে রেখেছিলেন।’ কথাগুলো বলছিলেন নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটান এলাকার বাসিন্দা কেইথ অ্যালান ওয়াটস। শহরের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির জয়ে যারপরনাই খুশি তিনি।
নিউইয়র্কের বাসিন্দারা মামদানির জয়ে খুশি হবেন—এটাই স্বাভাবিক। তাঁদের সমর্থনেই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে মেয়র পদে জিতেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির এই প্রার্থী। তবে নিউইয়র্কের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য শহরের বাসিন্দারাও মামদানিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তাঁর ওপর ভরসা করছেন। তাঁরা বলছেন, ‘মামদানির জয় নির্মল বাতাসে নতুন করে শ্বাস নেওয়ার মতো।’
গত মঙ্গলবার স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে টপকে বিজয়ী হন ৩৪ বছর বয়সী মামদানি। এ নিয়ে পাঠকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। এর জবাবে নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের শত শত পাঠক তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার গার্ডিয়ানের ওয়েবসাইটে সেগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।
তরুণদের আস্থানির্বাচনী প্রচারে নিউইয়র্কবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মামদানি। ম্যানহাটানের বাসিন্দা অ্যালান ওয়াটস দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে নিউইয়র্কবাসী একধরনের গ্লানির মধ্যে ছিলেন। বাড়িভাড়া বাড়ছিল, বেতন বৃদ্ধি থমকে ছিল, আশা হারিয়ে গিয়েছিল। তবে মামদানি যখন মুখ খুললেন, মনে হলো তিনি মানুষের জন্যই কথা বলছেন।’
মামদানিকে নিয়ে একই ধারণা নিউইয়র্কের বাসিন্দা মার্গারেট কোগানের। ৮১ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা এখন অবসর যাপন করছেন। তাঁর আশা—মামদানির নেতৃত্বে নিউইয়র্ক শহরে বসবাস করাটা আরও সাশ্রয়ী হবে; বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণি সুবিধা পাবেন, যাঁদের ওপর সবাইকে নির্ভর করতে হয়। মামদানির জয় ‘ঘুমিয়ে থাকা’ ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য একটি জাগরণের বার্তা বলে মনে করেন তিনি।
মার্গারেট কোগানের বয়স হয়েছে। মার্কিন রাজনীতির বহু কিছু দেখেছেন তিনি। সেদিক দিয়ে ৩২ বছর বয়সী ডিলান এখন তরুণ। তিনি রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছিলেন। তবে মামদানির প্রচারে মুগ্ধ ডিলান বলেন, তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি বা প্রার্থী বাছাইপর্বে ভোট দেননি। শেষ পর্যন্ত প্রচারে মামদানির উৎসাহ–উদ্দীপনা দেখে মেয়র নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।
নিউইয়র্কের বাইরেও আনন্দের ছোঁয়ামার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রক্ষণশীল রাজনীতির মুখে মামদানির এই জয়ের আনন্দে ভাগ বসিয়েছেন নিউইয়র্কের বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা। যেমন ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা স্কট রিচিংয়ের কথা বলা যায়। ‘মেধাবী তরুণ’ মামদানি যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে ট্রাম্প ও ধনকুবেরদের একহাত নিয়েছেন, তা মন জয় করে নিয়েছে ৭৪ বছর বয়সী এই নারীর। রিচিংয়ের এখন নজর নিউইয়র্কের ভবিষ্যতের দিকে।
স্কট রিচিং বলেন, ‘আমি জানি, প্রচারে মামদানি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার সব কটি পূরণ করতে পারবেন না। তবে আশা করি, নিউইয়র্কের যোগাযোগব্যবস্থা ও খাদ্যস্বল্পতার সমস্য নিয়ে কিছু করবেন। পাশাপাশি ধনীদের ওপর কর আরোপ করতে পারবেন। তিনি এগুলো করতে পারলে, আশা করা যায় তা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অন্যান্য নির্বাচনী প্রার্থীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’
মামদানির জয়ের খবরে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি টেনেসি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা কেফিয়াস স্ট্রাচান (৫৪)। তিনি বলেন, বহু বছরের মধ্যে এই প্রথম ঘুম থেকে উঠে কোনো ভালো খবর পেয়েছেন। আর মিশিগানের বাসিন্দা ৩২ বছর বয়সী ডেভন বলেন, ‘মামদানিকে কেন্দ্রীয় সরকার নানাভাবে বাধা দেবে জানি। আশা করি, ভোটাররা তা বুঝতে পারবেন এবং বামপন্থী রাজনীতির প্রতি আশা হারাবেন না।’
আরও পড়ুনপ্রভাবশালী মার্কিন ডানপন্থীরা কীভাবে মামদানিকে আইএসের সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন৭ ঘণ্টা আগেউদ্বিগ্ন অনেকেমামদানিকে নিয়ে আশাবাদের পাশাপাশি তাঁর সামনে থাকা কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন অনেকে। ফ্লোরিডার বাসিন্দা ৭১ বছর বয়সী ব্রুস ওয়েকস বলেন, মামদানির জয় নিউইয়র্ক ও পুরো দেশের জন্য বড় একটি মোড়বদল। তাঁকে এখন বড় লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন যেকোনো উপায়ে মেয়র হিসেবে তাঁর যাত্রায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে।
মেয়র হিসেবে মামদানির কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই—এ বিষয় নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন বলেন, মামদানি নিউইয়র্ক নিয়ে যেসব পরিকল্পনা করেছেন, তার অনেকগুলো ‘অবাস্তব’। তাই ভবিষ্যতে সেগুলো কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে শঙ্কা আছে তাঁর।
তবে উদ্বেগ ও শঙ্কার মধ্যেও সবশেষে নিউইয়র্কের জন্য ভালোটাই হবে বলে গার্ডিয়ান–এর কাছে আশা প্রকাশ করেছেন বেশির ভাগ নিউইয়র্কবাসী। আগামী জানুয়ারিতে মেয়র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন মামদানি। শহরটির বাসিন্দা, ৩৩ বছর বয়সী কিম্বারলি মাইকেল বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, ভালো কিছু হবে। এখন যেটি দরকার, তা হলো আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকা।’
আরও পড়ুনমামদানি একই সঙ্গে ভারতের গর্ব, আবার মোদির মতো নেতাদের কঠোর সমালোচক৩ ঘণ্টা আগে