দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভিপি প্রার্থী শেখ সাদি হাসান ও জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অন্তত ১২টি অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগ উত্থাপন করেন। এ সময় প্যানেলের অন্য প্রার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

জাবিতে হলের ছাদে মদ ও গাঁজা সেবন করছিলেন ছাত্রদল নেতাসহ ১৫ শিক্ষার্থী

বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় জাবির ৮ শিক্ষক-শিক্ষার্থী

লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত জাকসু নির্বাচনকে গণতন্ত্রের পুনঃযাত্রার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে দেখা হলেও এটি অনিয়ম, কারচুপি, সমন্বয়হীনতা এবং প্রভাবশালী মহলের নকশাকৃত কারসাজির কারণে প্রহসনে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন চলাকালে আটটি অংশগ্রহণকারী প্যানেলের মধ্যে পাঁচটি ভোট বর্জন করে এবং দুইজন নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করেন। কয়েকজন শিক্ষকও ভোটগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সরে দাঁড়ান। অনিয়ম ও কারচুপির কারণে দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়েছে।

তাদের উত্থাপিত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও অমোচনীয় কালির অনুপস্থিতি, এতে জাল ভোটের সুযোগ সৃষ্টি হয়; ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স পাঠানো এবং ভোটারের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যালট পেপার প্রেরণ করা; নির্দিষ্ট দলের সমর্থকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন ক্রয় এবং ৩ হাজার অতিরিক্ত ব্যালট ছাপানোর অভিযোগও রয়েছে; ফজিলাতুন্নেছা, জাহানারা ইমাম ও তাজউদ্দীন হলসহ কয়েকটি হলে জাল ভোট, বুথে লিফলেট রাখা ও প্রাধ্যক্ষদের প্রকাশ্য পক্ষপাতের ঘটনা ঘটে; অনেক পোলিং অফিসার নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন এবং ভুলভ্রান্ত আচরণ করেন।

বাকি অভিযোগগুলো হলো- প্রার্থীদের এজেন্ট নিয়োগে নানা বাধা ও হয়রানি করা হয় এবং প্রথম কয়েক ঘণ্টা অনেক হলে এজেন্ট ছাড়া ভোট হয়, তবে নির্দিষ্ট একটি প্যানেলের এজেন্টরা সুবিধা পান; রফিক-জব্বার হলে ঘোষিত ভোটের সংখ্যা প্রদত্ত ভোটের চেয়ে বেশি পাওয়া যায় এবং মওলানা ভাসানী হলে এক প্রার্থীর ভোট শূন্য দেখানো হয়; কিছু ব্যালটে প্রার্থীর নাম অনুপস্থিত ছিল এবং ভোটারদের হাতে লিখে নাম দিতে বলা হয়, আবার ভোটার তালিকায় নাম না থাকা সত্ত্বেও প্রাধ্যক্ষরা সিল দিয়ে ভোটাধিকার দেন; নির্বাচনের আগের দিন বহিরাগত নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস ঘেরাও করে রাখেন এবং তাদের উপস্থিতি ছিল আক্রমণাত্মক ও ভীতিপ্রদ; কাজী নজরুল ইসলাম হলে ভোটের সংখ্যা গরমিল পাওয়া যায় এবং রাত পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে, শহীদ তাজউদ্দীন হলে ভোট গ্রহণ বিলম্বিত হয়; একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, তাদের ভোট আগেই দিয়ে ফেলা হয়েছে; ভোট শেষে প্রশাসনের কাছে ভোটার তালিকা ও সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হলেও তা সরবরাহ করা হয়নি।

এ সময় ছাত্রদল নেতারা বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি; বরং কারচুপি, অব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক শৈথিল্যের মাধ্যমে তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রহসনের এই নির্বাচনের অভিযোগগুলো তদন্ত করে নেপথ্যের সত্য উন্মোচনে প্রশাসনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে।

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল ছ ত রদল

এছাড়াও পড়ুন:

রাকসু নির্বাচন নিয়ে মুখোমুখি দুইপক্ষ, উত্তেজনা

আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে দুইটি পক্ষ। একপক্ষ ২৫ সেপ্টেম্বরেই নির্বাচন চাচ্ছে, অন্যপক্ষ এটাকে প্রহসনের নির্বাচন বলছে। 

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে দুই পক্ষই রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। সন্ধ্যার পর থেকে সেখানে একপক্ষ ২৫ সেপ্টেম্বরই রাকসু নির্বাচন চেয়ে স্লোগান দিচ্ছে। অন্যপক্ষ স্লোগান দিচ্ছে- ‘প্রহসনের নির্বাচন মানি না, মানব না’। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

আরো পড়ুন:

শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় কর্মবিরতির নেপথ্যে রাকসু বানচালের চেষ্টার অভিযোগ

২৫ তারিখেই রাকসু নির্বাচন চায় ছাত্রশিবির

এদিকে রাকসু কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের ভেতরে নির্বাচন কমিশনের সভা চলছে। আলোচনা বিষয়- রাবিতে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় বা পোষ্য কোটা বাতিলের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউনের মধ্যে রাকসু নির্বাচন করা সম্ভব কি না।

আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা রয়েছে। সে কারণেই কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে সবাই অপেক্ষা করছেন।

সোমবার ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ জানিয়েছেন, তারা ২৫ সেপ্টেম্বরই নির্বাচন চান।

তবে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর জানিয়েছেন, অনেক শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে বাড়ি চলে যাওয়ায় তিনি চান নির্বাচন হোক পূজার ছুটির পরে।

এছাড়া কমপ্লিট শাটডাউনের মধ্যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না দাবি করে নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রদল সমর্থিতসহ চারটি প্যানেলের প্রার্থীরা।

বিকেলে বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি পরিচয়ে অধ্যাপক ড. জে এ এম সকিলউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন প্রেস ব্রিফিং করে জানান, আসন্ন রাকসু নির্বাচনে তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। পুরো শিক্ষক কমিউনিটি এই নির্বাচনে সহায়তা করবে বলেও তারা আশা প্রকাশ করেন। 

বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচয়ে যেসব শিক্ষকরার এ প্রেস ব্রিফিংয়ে যুক্ত ছিলেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত।

অন্যদিকে, শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে শাটডাউন ঘোষণা করা বিএনপিপন্থি সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, শাটডাউনের মধ্যে নির্বাচনের সহযোগিতার বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। তাদের কর্মসূচি বলবৎ রয়েছে।

ঢাকা/কেয়া/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাকসু নির্বাচন নিয়ে মুখোমুখি দুইপক্ষ, উত্তেজনা