ইসরায়েল দশকের পর দশক ধরে চরম অবিচার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে যুদ্ধ ও দখলদারি চালিয়ে আসছে, তা যুক্তরাষ্ট্র ও বাকি বিশ্বের বাসিন্দারা এই প্রথমবারের মতো সর্বাংশে উপলব্ধি করতে পারছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন সাধারণ মিডিয়ার গৎবাঁধা দৃষ্টিভঙ্গি উড়িয়ে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সেই সত্যগুলো প্রকাশ করেছে, যা আগে দীর্ঘদিন ধরে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। সাধারণ ‘মূলধারার’ সংবাদমাধ্যমে আগে ইসরায়েলকে আক্রমণের শিকার ও ফিলিস্তিনকে আক্রমণকারী হিসেবে দেখানো হতো।

আমেরিকানদের এই জনমতের পরিবর্তনকে প্রথম দিকে অনলাইনে সক্রিয় অল্প কিছু কিশোরের ‘ক্ষণস্থায়ী রোগের’ ফল সাব্যস্ত করে উপেক্ষা করা হয়েছিল। কিছু জায়নবাদী নেতা এটিকে একেবারেই পাত্তা দেননি, কারণ তাঁরা পশ্চিমা মিডিয়ায় দীর্ঘদিনের প্রভাবের কারণে মাত্রাতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, প্রচলিত মিডিয়া ও নির্বাচিত কর্মকর্তাদের যেহেতু তাঁরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন, সেহেতু জনগণের মতামত কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। তাঁরা ভেবেছিলেন, তাঁদের ‘সুপরিকল্পিত’ প্রোপাগান্ডা বরাবরের মতোই মানুষকে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির দিকে ঠিকই ঘুরিয়ে আনতে পারবে।

আরও পড়ুনহার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বনাম আহমদ ছফার গাভী বিত্তান্ত২৯ এপ্রিল ২০২৫

কিন্তু এবার তাঁরা বুঝতে পারলেন, কিছু বিষয় মৌলিকভাবে একেবারে বদলে গেছে। মানুষ এখন সরাসরি ফিল্টারবিহীন ছবি, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা এবং গাজা থেকে আসা কণ্ঠ শুনতে পারছে। কোনো ধরনের প্রচার এগুলোকে মুছে দিতে পারবে না।

নতুন জরিপগুলো দেখাচ্ছে, এই পরিবর্তন কতটা গভীর। কুইনিপিয়াক এবং নিউইয়র্ক টাইমসের নতুন জরিপের তথ্য উল্লেখ করে সিএনএনের প্রধান তথ্য বিশ্লেষক হ্যারি এন্টেন বলেছেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ভোটাররা +৪৮ পয়েন্টে ইসরায়েলের পাশে ছিলেন। অর্থাৎ ইসরায়েলকে সমর্থন করা ভোটারদের সংখ্যা ফিলিস্তিনকে সমর্থন করা ভোটারের তুলনায় ৪৮ পয়েন্ট বেশি ছিল। কিন্তু এখন একই জরিপে দেখা গেছে, ভোটাররা ফিলিস্তিনকে +১ পয়েন্টে সমর্থন করছেন। অর্থাৎ এবার ফিলিস্তিন সামান্য হলেও এগিয়ে আছে। তিনি বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের জনমত জরিপে ইসরায়েলের চেয়ে ফিলিস্তিনের এগিয়ে থাকার এটিই প্রথম ঘটনা।

জনমত এমনভাবে বদলাচ্ছে যে কোনো নিয়ন্ত্রিত কাহিনি তা আটকাতে পারছে না। কোনো মিডিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং যুদ্ধাপরাধ ঢাকতে পারবে না। সোশ্যাল মিডিয়া ইসরায়েলের ভেজালি নৈতিক ছদ্মবেশ ভেঙে দিয়েছে। কোনো বিলিয়নিয়ার তহবিল, কোনো কংগ্রেসে নেতানিয়াহুর জন্য দাঁড়িয়ে প্রশংসা—কিছুই মুছে দিতে পারবে না, যা মানুষ দেখেছে। যে মিথ অনেক বছর ধরে দখল এবং ইহুদি বর্ণবৈষম্যকে টিকিয়ে রেখেছিল, সেই মিথ নিয়ে মানুষ এখন প্রশ্ন তোলা শুরু করেছে।

এই পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে। দুই বছর আগে ডেমোক্র্যাট ভোটাররা +২৬ পয়েন্টে ইসরায়েলের পাশে ছিলেন। অর্থাৎ ইসরায়েল সমর্থনকারী ডেমোক্র্যাটরা ফিলিস্তিন সমর্থকদের তুলনায় ২৬ পয়েন্ট বেশি ছিলেন। এখন একই ডেমোক্র্যাট ভোটাররা +৪৬ পয়েন্টে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান করছেন। অর্থাৎ তাঁরা এখন ফিলিস্তিনকে সমর্থন করছেন এবং সেই সমর্থন ইসরায়েল সমর্থনের তুলনায় ৪৬ পয়েন্ট বেশি।

মাত্র দুই বছরে অবস্থান উল্টে গেছে ৭২ পয়েন্টে। অর্থাৎ, যাঁরা আগে ইসরায়েলের পক্ষে ছিলেন, তাঁরা এখন একই মাত্রায় ফিলিস্তিনের পক্ষে চলে গেছেন। যেন পাল্লাটা সম্পূর্ণ উল্টে গেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র প অর থ ৎ

এছাড়াও পড়ুন:

ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর বাংলাদেশ প্রীতি

আর্জেন্টিনার একজন প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবী, লেখিকা ও নারীবাদী নেত্রী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের কারণে তিনি বাংলাভাষী মানুষের কাছে বিশেষভাবে আলোচিত ও সমাদৃত। বলা হয়ে থাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর কাব্যিক ও আত্মীক সম্পর্ক ছিলো। ওকাম্পো শুধু রবীন্দ্রনাথকেই ভালোবাসতেন তা কিন্তু নয়, না, তিনি ভালোবাসতেন বাংলা ভাষা ও বাঙালিকেও। ভিক্টোরিয়া সেই প্রমাণ রাখেন একাত্তুরে। সেই কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই গুরুত্ববহ। 

১৯৭১-এ ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ না নিলেও তিনি ছিলেন হয়ে উঠেছিলেন একজন শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমর্থক। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ওকাম্পোর বয়স ছিল ৮১ বছর। বয়সের ভারে তিনি তখন দুর্বল, কিন্তু এরপরেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে তিনি পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত নৃশংস গণহত্যার প্রতিবাদে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসে একটি মিছিলের আয়োজন করেছিলেন, শুধু তাই না ওকাম্পো ছিলেন মিছিলের পুরোভাগে। সেদিনের সেই মিছিলেন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো ছাড়াও আরও ছিলেন— হোর্হে লুইস বোর্হেস, এদুয়ার্দো সাবাতো, এদোলফো ওবোইতাসহ আরও অনেকে।

আরো পড়ুন:

আজ শত্রুমুক্ত ফেনীতে প্রথম উড়েছিল লাল সবুজের পতাকা

বাংলাদেশের এক পাগলাটে বন্ধু জঁ ক্যা

একাত্তরের ১১ জুন আর্জেন্টাইন লেখক, বুদ্ধিজীবী, মানবতাবাদী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের শরণার্থীদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইস মারিয়া ডি পাবলো পারডোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি স্মারকলিপি দেন। সেই দাবিনামায় যারা স্বাক্ষর করেছিলেন, তাদের মধ্যে প্রথমেই ছিল ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর নাম। 

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি গণহত্যার প্রতিবাদে আর্জেন্টাইন সরকারের কাছে তিনি আবেদন জানান এবং বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখেন।

ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো শুধু প্রতিবাদ করেই থেমে থাকেননি, বরং নিজের প্রভাব খাটিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত তৈরিতে সহায়তা করেন। তার সম্পাদিত বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা ‘সুর’-এর মাধ্যমে তিনি বিশ্ব সাহিত্য অঙ্গনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার খবর তুলে ধরেন, যা ছিল তার সমর্থনেরই একটি প্রকাশ। 

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর বাংলাদেশ প্রীতি
  • মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত তৈরি করেছিলেন ‘অঁদ্রে মালবো’