ফরিদপুরের বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গার উপজেলা ও পৌর বিএনপির ছয়টি সাংগঠনিক কমিটির অনুমোদন দিয়েছে জেলা বিএনপি।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ও সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ছয়টি কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতিটি উপজেলা ও পৌরসভা কমিটিতে আছেন ১০১ জন করে।

ঘোষিত কমিটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে প্রাধান্য পেয়েছেন ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলামের পক্ষের নেতারা।

ফরিদপুর-১ আসনে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এই দুই নেতার নেতৃত্বে তিনটি উপজেলার বিএনপি বিভক্ত। বোয়ালমারী উপজেলা কমিটিতে শামসুদ্দিন মিয়াকে তিন নম্বর সহসভাপতি করা হয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রে তাঁর অনুসারীদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গায় সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছিল ২০১৫ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে। প্রায় এক দশক পর এবার কোনো সম্মেলন ছাড়াই জেলা আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের যৌথ স্বাক্ষরে নতুন কমিটিগুলো ঘোষণা করা হয়েছে।

বোয়ালমারী উপজেলা কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামকে, আর সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সঞ্জয় সাহা। বোয়ালমারী পৌরসভা কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও পৌর কাউন্সিলর আবদুল কুদ্দুস শেখ এবং সাধারণ সম্পাদক উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে ইমরান হোসেন।‎

মধুখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি করা হয়েছে পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে, আর সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি আবদুল আলিম মানিক। মধুখালী পৌরসভা কমিটির সভাপতি হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হায়দার আলী মোল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইয়াছিন বিশ্বাসকে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছে যথাক্রমে আবদুল মান্নান মিয়া আব্বাস ও মো.

নূরজামাল খসরু। আলফাডাঙ্গা পৌরসভা বিএনপির সভাপতি হয়েছেন মো. রবিউল হক রিপন ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মো. হাসিবুল হাসান হাসীবকে।

বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এবং ঘোষিত কমিটির তিন নম্বর ভাইস চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির লোকজনদের নিয়ে প্রকৃত নিবেদিতপ্রাণ বিএনপির নেতা–কর্মীদের বঞ্চিত করে একপক্ষীয় কমিটি করা হয়েছে।

তবে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বপন বলেন, ‘আমরা সবাইকে নিয়ে কার্যকর কমিটি করার চেষ্টা করেছি। সম্মেলন করে কমিটি হয়নি এ কথা সত্য, তবে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। একাধিকবার কর্মী সম্মেলন করে সবার মতামতের ভিত্তিতে এ কমিটি দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কমিটিতে আছেন আবার তাঁদের আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টির পদ রয়েছে এবং তা যদি সঠিকভাবে প্রমাণ করা যায়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে সে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স ব ক আলফ ড ঙ গ হয় ছ ন কম ট ত কম ট র উপজ ল প রসভ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

৭ বছর পর জাতীয় নির্বাচনে ফিরছে জেএসএস

পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম বড় আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) জাতীয় নির্বাচনের রাজনীতিতে ফিরছে। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও আগামী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দলটি।

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি—তিন আসনেই প্রার্থী দেবে দলটি। তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে জেএসএস।

২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন জেএসএসের সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার। তিনি বলেন, নির্বাচন হলে জেএসএস অংশ নেবে। নির্বাচনে জয়লাভের ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রথমে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ঊষাতন তালুকদার। তবে দেশের ওই সময়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছিলেন তিনি।

২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি আসনে আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) প্রার্থী দীপংকর তালুকদারকে হারিয়ে জিতেছিলেন জেএসএসের সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার।

জেএসএস সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ২০১৮ সালে। ওই বছর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি আসনে দ্বিতীয় হয়েছিলেন জেএসএসের সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার।

জাতীয় নির্বাচনে জেএসএসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণায় পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্বাচনী রাজনীতির হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রগুলো। কেননা, ৫০ বছরের বেশি পুরোনো পাহাড়ের এই রাজনৈতিক দলের স্থানীয় রাজনীতিতে বেশ প্রভাব রয়েছে।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাবনা কার্যত নেই। এতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে মূল লড়াই হওয়ার কথা থাকলেও পাহাড়ে তা হচ্ছে না। এখানে অন্যতম মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকবে জেএসএস। ইউপিডিএফও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারে বলে স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রথমে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ঊষাতন তালুকদার। তবে দেশের ওই সময়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছিলেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা জানান, পাহাড়ের স্থানীয় ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে ভূমিকা রাখে আঞ্চলিক দলগুলো। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) না থাকায় এই দলগুলোর গুরুত্ব আরও বাড়বে।

রাজনৈতিক দল হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৭২ সালে। সক্রিয় রাজনৈতিক দল না হলেও ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উপজাতি কল্যাণ পরিষদের’ ব্যানারে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমা। যিনি জেএসএসের প্রতিষ্ঠাতা।

পার্বত্য চুক্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে গঠিত হয় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। ২০০৭ সালে জেএসএস ভেঙে তৈরি হয় জেএসএস (এম এন লারমা)। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ইউপিডিএফ ভেঙে তৈরি হয় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)।

জেএসএসের সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কিশোরগঞ্জে মনোনয়ন না পাওয়া ৫ নেতা ও দলীয় প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি
  • বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌনমিছিল
  • হবিগঞ্জে বিলের দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ৩০ আহত
  • কিশোরগঞ্জ-১: বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত চার নেতা এক মঞ্চে, একসঙ্গে বিক্ষোভ
  • ফিকির নতুন সভাপতি হচ্ছেন রুপালী হক চৌধুরী
  • গোপালগঞ্জে জামায়াতের হিন্দু শাখা থেকে ৯ নেতার পদত্যাগ
  • ৭ বছর পর জাতীয় নির্বাচনে ফিরছে জেএসএস