আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা, কিশোরগঞ্জের সেই নেতাকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কার
Published: 24th, October 2025 GMT
আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া কিশোরগঞ্জের সাবেক বিএনপি নেতা ও আইনজীবী ফয়জুল করিমকে জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলাবিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় প্রাথমিক সদস্যপদসহ ফোরামের জেলা যুগ্ম আহ্বায়কের পদ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।
আজ শুক্রবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে কিশোরগঞ্জ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যসচিব শরীফুল ইসলাম বিষয়টি জানান। এ সময় ফোরামের সদস্য শফিউজ্জামান, শেখ মাসুদ ইকবাল, জাহাঙ্গীর মোল্লা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত বুধবার ফেসবুক লাইভে বক্তব্য দেন ফয়জুল করিম। পরে ২ মিনিট ১২ সেকেন্ডের সেই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ফেসবুকে তাঁর দলে যোগদানের খবর প্রচার করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ফয়জুল করিম দলবদলের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।
ফয়জুল করিম কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির উপদপ্তর সম্পাদক, পৌর বিএনপির সদস্য ও জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জেলা বিএনপির সম্মেলনে আগের কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ এখনো চলমান। এর মধ্যে আজ তাঁকে আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কার করা হয়। যদিও ৫ অক্টোবর নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে তিনি পৌর বিএনপি ও আইনজীবী ফোরামের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আইনজীবী ফোরামের সদস্যসচিব শরীফুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও গঠনতন্ত্রবিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় ফয়জুল করিমকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কিশোরগঞ্জের যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।
এ বিষয়ে কথা বলতে ফয়জুল করিমের মুঠোফোন নম্বরে কল করলেও বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুনকিশোরগঞ্জের বিএনপির সাবেক নেতা ফয়জুল করিম যোগ দিলেন আওয়ামী লীগে২৩ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ র র সদস য ব এনপ র আইনজ ব ফ সব ক আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে দ্বৈত প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতা দূর হয়েছে: প্রধান বিচারপতি
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ প্রণয়নের মাধ্যমে বহুদিনের দ্বৈত প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতা দূর হয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রথমবারের মতো পূর্ণ প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বায়ত্তশাসন লাভ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেছেন, এর ফলে বিচার বিভাগ এখন নিজস্বভাবে পদসৃজন, বাজেট বরাদ্দ, প্রশিক্ষণ উন্নয়ন ও নীতিমালা প্রণয়নসহ বিচার সংস্কারকে দীর্ঘমেয়াদি এবং টেকসই ধারা হিসেবে এগিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে।
‘অপারেশনালাইজিং কমার্শিয়াল কোর্ট (বাণিজ্যিক আদালত কার্যকর করা)’ শীর্ষক এক সেমিনারে আজ শনিবার সকালে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে হোটেলের কনফারেন্স কক্ষে ওই সেমিনারের আয়োজন করে বলে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনার হয়।
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ জারি করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা হলে অধস্তন আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত সব প্রশাসনিক ও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে এই সচিবালয়। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বিচারকাজে নিয়োজিত বিচারকদের পদায়ন, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা ও ছুটিবিষয়ক সব সিদ্ধান্ত ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় এই সচিবালয়ের হাতে থাকবে। সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রধান বিচারপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং সচিবালয়ের সচিব প্রশাসনিক প্রধান হবেন।
সেমিনারে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, গত দেড় বছরে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সাংবিধানিক স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বিচারব্যবস্থায় যে মৌলিক রূপান্তর সাধিত হয়েছে, তা দেশের বিচারিক ইতিহাসে এক মাইলফলক। এর মাধ্যমে দেশের বিচার বিভাগ এক নতুন প্রাতিষ্ঠানিক যুগে প্রবেশ করেছে। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বরে তাঁর ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা ও বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা সুদৃঢ় করার একটি দৃঢ় অঙ্গীকার হিসেবে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে আসছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাবগুলো সরকার দ্রুততার সঙ্গে অনুমোদন করেছে, যা শক্তিশালী ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা নির্মাণে জাতীয় ঐকমত্যকে প্রতিফলিত করে।
বাণিজ্যিক আদালত শিগগিরই বাস্তবে রূপ নিতে চলেছেপ্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা দেশের অর্থনীতির জন্য নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে। ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে দ্রুত ও আধুনিক বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি ডেডিকেটেড বা বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার আহ্বান করে এসেছিল, যা শিগগিরই বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে।
সুপ্রিম কোর্টের একটি গবেষক দল বাণিজ্যিক আদালতসংক্রান্ত আইনের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করে। পরে দেশব্যাপী রোড শো, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে নিবিড় পরামর্শ, ব্যবসায়িক আইনবিশেষজ্ঞ ও বাণিজ্যিক অংশীজনদের মতামতের মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধ হয় বলে সেমিনারে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নও গুরুত্বপূর্ণ কারিগরি সহায়তা দিয়েছে। পরবর্তী সময়ে আইন মন্ত্রণালয়ের আরও পরীক্ষণ–পরিমার্জনের পর খসড়াটি এখন চূড়ান্ত আইনগত রূপ পেয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে।
সেমিনারে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ জানান, খসড়া আইনটিতে বাণিজ্যিক বিরোধের সুস্পষ্ট সংজ্ঞা, পর্যাপ্ত সংখ্যক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার বিধান, হাইকোর্ট বিভাগে পৃথক আপিল বেঞ্চ, বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতা, সীমিত মুলতবি, সারসংক্ষেপ বিচার, মামলার পরিসংখ্যান স্বচ্ছভাবে প্রকাশ এবং বিচারক–আইনজীবীদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মতো আধুনিক বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব বিধান দ্রুত, দক্ষ ও স্বচ্ছ বাণিজ্যিক বিচার নিশ্চিত করবে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা–ক্ষমতা বাড়াবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরিসেমিনারে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, কোনো আইন কেবল তখনই কার্যকর হয়, যখন তা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়। এ জন্য বাণিজ্যিক আদালতগুলোর সফল পরিচালনার জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, মানবসম্পদ বিকাশ, ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সব পক্ষ–পেশাজীবীর সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বাণিজ্যিক বিরোধের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় প্র্যাকটিস ডাইরেকশন ও নির্দেশিকা জারি করতে প্রস্তুত। আইনজীবী সমাজ ও বিচার–সম্পর্কিত সব অংশীজনকে সততা, শৃঙ্খলা এবং দক্ষতার সঙ্গে বাণিজ্যিক আদালত আইন বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ইউএনডিপির বাংলাদেশ কার্যালয়ের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকার সুইডেন দূতাবাসের রাজনীতি, বাণিজ্য ও যোগাযোগ বিভাগের প্রধান অলি লুন্ডিন, ঢাকার অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিন্টন পুকি, বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূত অজিত সিং, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। অন্যদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, চট্টগ্রাম বারের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবী এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রধান বিচারপতি চট্টগ্রামের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মতবিনিময় সভা করেন।