মানুষ জন্মসূত্রে বিশ্বনাগরিক। মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং মানবাধিকার সুরক্ষা বিশ্বব্যাপী সমানভাবে কার্যকর হওয়া বাঞ্ছনীয়। এর মধ্যে সামাজিক অধিকার, মানবিক অধিকার ও অর্থনৈতিক অধিকার উল্লেখযোগ্য। সামাজিক অধিকারের প্রথম স্তর হলো জীবনের নিরাপত্তার অধিকার। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘যাকে হত্যা করা আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন, বৈধ কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করো না।’ (সুরা-৭ ইসরা, আয়াত: ৩৩)

খাদ্যনিরাপত্তা ও জীবিকার অধিকার মানবাধিকারের অন্যতম। পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘জমিনে এমন কোনো প্রাণী নেই, যার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ গ্রহণ করেননি।’ (সুরা-১১ হুদ, আয়াত: ৬) ‘আমি তোমাদের জীবিকার দায়িত্ব নিয়েছি এবং তোমাদের সন্তানদেরও।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১৫১)

অবাধ, নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ চলাচল মানুষের অধিকার। নাগরিকেরা নিজ রাষ্ট্রসহ অন্যান্য রাষ্ট্রেও সম্পূর্ণ স্বাধীনতায় যাতায়াত, চলাচল ও পরিভ্রমণ করতে পারবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা জমিনে ভ্রমণ করো এবং তার বলে অর্জিত রিজিক থেকে আহার করো।’ (সুরা-৬৭ মুল্‌ক, আয়াত: ১৫)

‘কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদের তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে বাধা না দেয়। অতএব তোমরা ন্যায়বিচার করো। কারণ, তা খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী।’

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ করাও ইসলামি আইনে স্বীকৃত। সব ধর্মাবলম্বীর উপাসনালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠী বা ধর্মের বিরুদ্ধে অশোভন মন্তব্য করা কিংবা ধর্মীয় নেতাদের গালি দেওয়া ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের তারা ডাকে, তোমরা তাদের গালি দিয়ো না। কেননা, তারা তাদের অজ্ঞতাপ্রসূত শত্রুতার বশবর্তী হয়ে আল্লাহকে গালি দেবে।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১০৮)

প্রত্যেক মানুষ কেবল নিজ নিজ অপরাধের জন্য শাস্তি ভোগ করবে। কারও অপরাধের দায়ভার অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া কিছুতেই সমীচীন নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কোনো বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না’। (সুরা-৫৩ নাজম, আয়াত: ৩৮)

অপরাধের উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া কাউকে হয়রানি করা, গ্রেপ্তার করা, মামলা করা, নির্বাসন দেওয়া কিংবা শাস্তি দেওয়া ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! যখন কোনো ফাসিক তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তার সত্যতা যাচাই করে দেখো। যেন এমন না হয় যে—না জেনে তোমরা কারও অসুবিধা সৃষ্টি করবে এবং পরে নিজ কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হবে।’ (সুরা-৪৯ হুজুরাত, আয়াত: ৬) রাসুল (সা.

) বলেছেন, ‘মুসলমান সেই ব্যক্তি যার হাত ও জবান থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি: ৯-১০)

ইসলামি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূলনীতি অনুযায়ী রাষ্ট্র আল্লাহর খিলাফত এবং প্রত্যেক মুসলিম নাগরিক আল্লাহর খলিফা। ইসলামি রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে প্রত্যেক মুসলিমই সমান অধিকারসম্পন্ন। সবার পরামর্শের ভিত্তিতে খিলাফত রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। সরকার শুধু ব্যক্তিকেন্দ্রিক, পারিবারিক তথা রাজতান্ত্রিক অথবা নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর হবে না; বরং তা হতে হবে গোটা জাতি কর্তৃক নির্বাচিত। নাগরিকদের পরামর্শ ছাড়া তাদের ওপর শাসনকাজ পরিচালনার অধিকার কারও নেই। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তাদের কাজ পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতেই স্থির করতে হবে।’ (সুরা-৪২ শুরা, আয়াত: ৩৮) ‘জরুরি প্রয়োজনে তুমি লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করো। অতঃপর যখন তুমি সিদ্ধান্তে উপনীত হবে, তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করে কাজ শুরু করবে।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯)

রাষ্ট্রের সব নাগরিকই ন্যায়বিচার লাভের অধিকারী। যেহেতু আইনের চোখে সবাই সমান। রাষ্ট্রের কোনো নাগরিক যাতে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হন, সে জন্য মহান আল্লাহ তাআলা কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘যখন তোমরা লোকদের মধ্যে বিচার করবে, তখন অবশ্যই সুবিচার করবে।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৫৮)

রাষ্ট্রের ভিন্ন ধর্মের নাগরিক এমনকি কোনো শত্রুও যদি আদালতে বিচারপ্রার্থী হন, তাহলে তিনি তেমন বিচারই পাবেন, যেমনটি পায় একজন মিত্র। পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদের তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে বাধা না দেয়। অতএব তোমরা ন্যায়বিচার করো। কারণ, তা খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী।’ (সুরা-৫ মায়িদা, আয়াত: ৮)

পক্ষপাতহীন ন্যায়বিচার প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেছিলেন, ‘আল্লাহর শপথ! মুহাম্মদ (সা.)–এর কন্যা ফাতিমা (রা.)–ও যদি চুরি করত, তবে অবশ্যই আমি তার হাত কেটে দিতাম।’ (বুখারি: ৩৪৭৫, মুসলিম: ৪৫০৫)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ ত আল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

গাজা যুদ্ধ বন্ধে শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ দ্রুতই শুরু হতে যাচ্ছে: নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজা যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ দ্রুতই শুরু হতে যাচ্ছে। তবে প্রধান প্রধান বিষয়গুলো এখনো সমাধান হয়নি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ডের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে ইসরায়েলকে গাজা থেকে আরও সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। বিনিময়ে হামাসকে অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে এবং সাংগঠনিক পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

সাংবাদিকদের নেতানিয়াহু বলেন, চলতি মাসের শেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবেন তিনি। ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র সোমবার জানিয়েছেন, আগামী ২৯ ডিসেম্বর এ বৈঠক হবে।

জেরুজালেমে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎসের সঙ্গে বৈঠক শেষে নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় হামাসের শাসনের অবসান ঘটতে হবে এবং তাদের অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। অন্য এক অনুষ্ঠানে নেতানিয়াহু আন্তর্জাতিক বাহিনীর মাধ্যমে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ করা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলই শেষ পর্যন্ত হামাসের নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করবে।

হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা বাসেম নাইম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, তারা অস্ত্র সমর্থনের বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। যদিও এর আগে সংগঠনটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন হওয়ার আগ পর্যন্ত অস্ত্র ছাড়তে রাজি ছিল না।

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দুই মাস পরেও উভয় পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিন চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গাজায় ৩৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুনগাজা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত হামাস ও ইসরায়েল১৬ ঘণ্টা আগে

এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী এখনো গাজার অর্ধেকেরও বেশি অংশের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। মানবিক সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বেড়েছে। তবে ইসরায়েলি বিধিনিষেধ ও নিরাপত্তাহীনতা এখনো বিদ্যমান। রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং পুনরায় খোলা নিয়েও মতবিরোধ চলছে।

আরও পড়ুন হামলার মধ্যেই গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরুর পরিকল্পনা০৫ ডিসেম্বর ২০২৫আরও পড়ুনগাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ, দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে সংশয় ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ