ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার ভালুকজান এলাকায় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটিতে আগুন দিয়েছেন তিন ব্যক্তি। পেট্রল ছিটিয়ে প্রথমে বাসের সামনে আগুন ধরানো হয়। এ ছাড়া একটি লাঠিতে আগুন ধরানো হয়। এর সাহায্যে বাসের ভেতরে আগুন দেওয়া হয়। পরে ওই তিনজন দ্রুত সেখান থেকে চলে যান। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছেন।

ফুলবাড়িয়া-কেশরগঞ্জ সড়কের ভালুকজান এলাকায় মেসার্স ইসলাম ফিলিং স্টেশনে সামনের সড়কে গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়।

এ ঘটনায় বাসচালক জুলহাস মিয়া (৩০) নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার ভালুকজান গ্রামের আবদুল বারেক ও সাজেদা আক্তার দম্পতির ছেলে।

এ ছাড়া আগুনে দগ্ধ হয়েছেন বাসের ভেতরে থাকা দুজন। তাঁরা হলেন উপজেলার চক রাধাকানাই গ্রামের শহিদুল ইসলাম ও তাঁর মা শারমিন সুলতানা। তাঁরা দুজন ঢাকা থেকে ফিরেছিলেন। গভীর রাত হওয়ায় তাঁরা বাড়িতে না গিয়ে বাসে ভোর হওয়ার অপেক্ষা করছিলেন। আগুন দেওয়ার পর মা ও ছেলে দগ্ধ অবস্থায় বাস থেকে নামেন। পরে চিকিৎসার জন্য তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়।

বাসে আগুন দেওয়ার ওই ঘটনা ইসলাম ফিলিং স্টেশনের বিপরীত দিকে একটি ইলেকট্রনিকস পণ্যের শোরুমের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। এতে দেখা যায়, গতকাল রাত ৩টা ১৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ডে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আলম এশিয়া পরিবহনের বাসের সামনে যান দুজন ব্যক্তি। একজনের মাথায় ছিল টুপি, অন্যজনের মুখ ও মাথা কাপড় দিয়ে বাধা। এর ৩১ সেকেন্ড পর পেছন দিক থেকে আসেন আরও এক ব্যক্তি। তাঁদের সঙ্গে ছিল একটি বোতল। ওই বোতলের তরল দাহ্য পদার্থ বাসটির সামনে ও ভেতরে চালকের আসনে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমে বাসের সামনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর একটি লাঠিতে আগুন ধরিয়ে সেটি বাসের ভেতরেও দেওয়া হয়। পরে দ্রুত ওই তিনজন চলে যান।

আগুন দেখে দ্রুত লোকজনকে খবর দেন ফিলিং স্টেশনটির ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিই। তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আমাদের পাম্পের সামনে প্রায়ই বাস থাকে। এখান থেকেই তেল নেয়। গতকাল রাত ৩টার ১০ মিনিট আগে বাসটি এসে দাঁড়ায়। এর কিছু সময়ের মধ্যেই বাসটিতে আগুন দেওয়া হয়। পাম্পের ভেতরের দিকে এ ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেত।’

আরও পড়ুনময়মনসিংহে গভীর রাতে বাসে আগুন, পুড়ে মারা গেলেন ঘুমন্ত একজন ৬ ঘণ্টা আগে

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশে থাকা শোরুমের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেন তিনি। পরে পুলিশ সুপার বলেন, ১১ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগ, অঙ্গসংগঠন ও এবং তাদের নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাত তিনটার পর মুখোশ পরা তিনজন অজ্ঞাত লোক পেট্রল জাতীয় দাহ্য পদার্থ ছিটিয়ে বাসে আগুন দিয়েছেন।

কাজী আখতার উল আলম আরও বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি, কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এগুলো উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করছি। আমরা দ্রুত মামলা নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেব।’

আগুনে পোড়া বাসটি ফুলবাড়িয়া থানার সামনে রাখা হয়েছে। সেটি দেখতে ভিড় করছেন উৎসুক লোকজন। আজ দুপুরে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স মন র ভ তর ইসল ম গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঠেকিয়ে আবার ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চাচ্ছে একটি দল: মামুনুল হক

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, একটি দল জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঠেকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ আবার ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চাচ্ছে। একই সঙ্গে কোনোভাবেই দেশে ফ্যাসিবাদ ফিরতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে ৮ দলের সমাবেশে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন মামুনুল হক। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ জারি ও নভেম্বর মাসেই গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘তারা (বিএনপি) জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঠেকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ আবার ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চাচ্ছে। পরিষ্কার ঘোষণা করছি, রক্ত দিয়ে যে ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছি, প্রয়োজনে আবার রক্তের সাগর প্রবাহিত হবে, তবু বাংলার মাটিতে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে না।’

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের সহস্রাধিক প্রাণের বিনিময়ে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ তৈরি হয়েছে। এই জুলাই সনদকে আমরা কোনো কাগজের সনদ হিসেবে দেখতে চাই না। জুলাই সনদকে আমরা আগামীর বাংলাদেশের রূপরেখা হিসেবে দেখতে চাই।’

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘জুলাই সনদকে সরকারি আদেশের মাধ্যমে এর প্রাথমিক আইনি ভিত্তি প্রদান করতে হবে। এরপর আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদকে চূড়ান্ত আইনি ভিত্তি প্রদান করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে জুলাইপন্থীরা বরদাশত করবে না।’ জুলাই বিপ্লবের বীর শহীদদের রক্ত মাড়িয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের গণভোট ছাড়া বাংলার মাটিতে কোনো কিছুই হতে দেবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

জাতীয় নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের গণভোট হলে কার কী সমস্যা, সেটা বুঝে আসে না বলেও মন্তব্য করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির। তিনি বলেন, গণভোট বাস্তবায়ন ছাড়া যদি জাতীয় নির্বাচন হয়, সেখানে অনেকগুলো বড় জটিলতা সৃষ্টি হবে। সংসদ নির্বাচন হলেও উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন কীভাবে হবে, সেটা স্পষ্ট নয়।

জুলাই সনদের গণভোটকে কেন্দ্র করে সরকারি সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন বলে জানান মামুনুল হক। তিনি বলেন, ‘সরকার ৮ দলের শান্তিপ্রিয় ভাষা বুঝতে যদি ব্যর্থ হয়, যেই ভাষায় বললে সরকার বুঝবে আমরা সেই ভাষায় প্রয়োগ করব; সেই কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির আরও বলেন, ‘স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি, আজ বাংলাদেশ দুই ভাগে বিভক্ত— বাহাত্তরের বাকশালপন্থী আর জুলাইয়ের বিপ্লবপন্থী। বাহাত্তরের পরাজিত শক্তিরা ১৩ নভেম্বর লকডাউনের নামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা দিয়েছে। আমরাও ঘোষণা করতে চাই, ১৩ নভেম্বর কোনো বাকশালপন্থীকে বাংলার রাজপথে নামতে দেব না। যদি কেউ নামার অপচেষ্টা চালায়, আমরা তাদের রাজপথে মোকাবিলা করব।’

আরও পড়ুনছাব্বিশে নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে: জামায়াত আমির১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ